Tuesday, 26 July 2016

জলবায়ুর পরিবর্তন - আড্ডা তর্ক আলোচনা

পল্লবী ব্যানার্জী

২৩শে জুলাই শনিবার, 'একক মাত্রা'র বন্ধুরা মিলে 'জলবায়ুর পরিবর্তন' নিয়ে আলাপ আলোচনা করতে বসেছিলাম বই-চিত্র সভাঘরে। সঞ্চালকের আসনে ছিলেন পত্রিকার দীর্ঘদিনের শুভাকাঙ্ক্ষী ও সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য - বুড়োশিব দাশগুপ্ত। একে একে জয়ন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, পুলক লাহিড়ী, তুষার চক্রবর্তী, চন্দ্রশেখর ভট্টাচার্য প্রমূখ যাঁরা 'একক মাত্রা' জুলাই সংখ্যায় এই বিষয় নিয়ে লিখেছেন তাঁরা শুরু করলেন। জয়ন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়ের একদম গোড়ায় গিয়ে ঝরঝরে সাবলীল ভাষায় আমাদের এই ভূলোকের গড় তাপমাত্রা গত বেশ কয়েক বছরে .৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাওয়ার কারণের পেছনে কয়লা ও পেট্রোলিয়ামের অবাধ ব্যবহারের প্রসঙ্গ তুললেন। জলবায়ুর পরিবর্তন প্রাকৃতিক নিয়মে একটি স্বাভাবিক প্রবণতা হলেও এখনকার যে পরিবর্তন তা মানুষ প্রসূত, সেই কথাই তিনি নানান উদাহরণ দিয়ে দেখালেন। পুলক লাহিড়ীর থেকে আমরা শুনলাম জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে জীবজগতের ভারসাম্যে কী ভয়ঙ্কর পরিণতি ঘটে চলেছে। তুষার চক্রবর্তী বললেন ক্লোরো ফ্লুরো কার্বন'এর ফলে ওজোন স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা, বড় পুঁজির কর্পোরেট সংস্থার লোভের কাছে হার মেনে নাইট্রোজেন সাইকেল ভেঙে যাওয়ার কথা। জানালেন, পৃথিবীর পরিবেশের ইতিহাসের অধিকাংশটাই কেটেছে তুষার যুগ হিসেবে এবং বর্তমানের উষ্ণ সময়কালকে হলোসিন বলে চিহ্নিত করা হয়। চন্দ্রশেখর ভট্টাচার্য বললেন সুন্দরবনের ঘোড়ামারা, হাসিমারা, লোহাচরা দ্বীপগুলির কথা যেগুলো হলদিয়া বন্দর বাঁচাতে এখন সম্পূর্ণ অথবা আংশিক ডুবে গেছে।

এছাড়াও আড্ডার মেজাজে আমরা শুনলাম অনিরুদ্ধ মুখোপাধ্যায়কে যিনি মানবপ্রজাতির এক নতুন বিবর্তনের দিকে ইঙ্গিত করলেন। প্রযুক্তিগত নির্ভরশীলতার ফলে দু'রকমের মানুষ উপ-প্রজাতি তৈরি হচ্ছে। একটি homo-sapiens technologicus যারা উন্নত দেশের বাসিন্দা; আরেকটি homo-sapiens biologicus যারা তথাকথিত অনুন্নত অঞ্চলে বসবাস করেন। মোটের ওপর সকলেই কর্পোরেট সংস্থার লোভের সামনে প্রকৃতির বিনাশ এবং বিনাশের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবার বিষয়ে সহমত পোষণ করলেও, গোল বাধলো জিও-ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। শ্রোতার আসনে থাকা সায়ন ভট্টাচার্য প্রশ্ন করেছিলেন জিও টেকনোলজি ব্যবহার করে দূষণ আয়ত্তে আনার ভাবনাচিন্তা কতদূর ফলপ্রসূ? তুষার চক্রবর্তী সরাসরি এই পন্থার বিরোধিতা করে বলেন, যে ক্ষয় প্রযুক্তির কারণে হচ্ছে, তা রোধ করার জন্য আবার প্রযুক্তিকে ব্যবহার করার চিন্তা করা বাতুলতা। কিন্তু অমিত চৌধুরি, যিনি পেশায় ইঞ্জিনিয়ার, জোরের সঙ্গে বললেন প্রযুক্তি ব্যবহার করেই মানুষকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে উদ্ধার করা হয়ে থাকে। এও বললেন, যে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির হাত ধরেই আমাদের অর্থাৎ মানবসভ্যতার উত্থান তাকে আমরা একেবারে ফেলে দিতে পারি না। বিকল্প সন্ধানই হচ্ছে সময়ের দাবি। প্রত্যাশা মতোই অমিতবাবুর বক্তব্যে গরম তেলে জল পড়ার মতোই প্রায় হুড়মুড়িয়ে প্রতিবাদের ভাষারা কেঁপে ওঠে ঘরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। সব মিলিয়ে প্রচলিত জ্ঞানগর্ভ সেমিনারের গাম্ভীর্যের ধার না ধেরে জমাটি তর্কে মুখর হয়ে শেষ হয় 'জলবায়ুর পরিবর্তন' বিষয়ক এই সভা।