ভালো লেখক ও আগ্রহী পাঠকের অভাব নেই
অনিন্দ্য ভট্টাচার্য
১৯৯৮ সাল থেকে বাংলা একাডেমির লিটল ম্যাগাজিন মেলা শুরু। তার আগে লিটল ম্যাগজিন মেলার তেমন কোনও আসর ছিল না। প্রায় সমস্ত লিটল ম্যাগাজিন বসে থাকত বইমেলার অপেক্ষায়, লিটল ম্যাগাজিন প্যাভিলিয়নে একটি টেবিল পাওয়ার জন্য। আবার অনেক লিটল ম্যাগ ২৫ বৈশাখ রবীন্দ্র সদন চত্বরের খোলা প্রাঙ্গণে রবি স্মরণে এসে জড়ো হত। এই ছিল লিটল ম্যাগাজিনের মেলায় আসার ধরন। এছাড়া কেউ আর অন্য কোনও উপায় ভেবেও দেখেননি। এইভাবেই দীর্ঘদিন বইমেলার আঙ্গিকে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল লিটল ম্যাগাজিনের দুনিয়া।
পরে ২০০০ সাল থেকে পুরুলিয়া লিটল ম্যাগ মেলার শুরু ও ইতোমধ্যে নন্দন চত্বরের মেলাও বেশ জমে উঠেছে। ধীরে ধীরে আরও দু-একটা জেলায় মেলার আয়োজন হল। এভাবেই শনৈ শনৈ এগোতে গিয়ে একবিংশ শতকের প্রথম দশকের দ্বিতীয় ভাগ নানা উথালপাতাল নিয়ে হাজির হয়ে গেল। একদিকে সোশ্যাল মিডিয়ার দ্রুত বিস্তার, অন্যদিকে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের আন্দোলন রাজনীতি-অর্থনীতির প্রাঙ্গণে বহু নতুন প্রশ্ন নিয়ে লিটল ম্যাগাজিনের আঙ্গিনায় ঢুকে পড়ল। সেই আন্দোলনের প্রেরণায় ২০০৮ থেকে কলকাতার বুকে (প্রথমে প্রেসিডেন্সি প্রাঙ্গণ পরে কলেজ স্কোয়ার) শুরু হল 'লিটল ম্যাগাজিন সমন্বয় মঞ্চ'এর চাঁদা তুলে লিটল ম্যাগাজিন কর্মীদের নিজস্ব মেলা।
আর পেছনে তাকানো নেই। দেখা গেল, লিটল ম্যাগাজিন মেলা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে জেলা থেকে জেলায়। অথচ, পুরনো সেই বইমেলার আঙ্গিকে লিটল ম্যাগাজিনের প্যাভিলিয়নে বসার অভ্যেসটি অধিকাংশ লিটল ম্যাগাজিনওয়ালাদের পুরোপুরি গেল না। তার কারণও আছে এবং সেগুলো খানিক সঙ্গতও- এক, লিটল ম্যাগাজিনের মেলাগুলির ওপর যথেষ্ট আস্থা গড়ে না ওঠা; দুই, জেলার লিটল ম্যাগাজিন মেলাগুলিতে সকলের পক্ষে পৌঁছে যেতে পারায় সীমাবদ্ধতা; তিন, বইমেলায় পাঠকের ভিড়। মূলত এই তিনটি উপাদান মিলেমিশে তৈরি হল এক অযাচিত মিথ যে শেষমেশ বইমেলাই সব থেকে বড় ভরসা। ধরে নেওয়া যাক, এমন একটি মিথ বেশ অনেকের মধ্যে না হয় থেকেই গেল। অতএব, আরও এক দল না হয় তৈরি হল যারা এই মিথটিকে অতিক্রম করে যাওয়ার স্পর্ধা দেখাতে পারে। তারা ভাবল, না, লিটল ম্যাগাজিন মেলাগুলিই আমাদের সব থেকে বড় ভরসা। আমরা সেখানেই যাব এবং সে ভরসাকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলব। কারণ, লিটল ম্যাগাজিন তো যা খুশি ছাপিয়ে ক্রেতা ঠকানো পণ্য নয়; এখানে থাকে নিবিড়, গভীর অনুশীলন, কিছু একটা খুঁজে ফেরার প্রয়াস ও সমাজকে দেখার ভিন্ন দৃষ্টি। তাই নিজেদের সুনিবিড় পরিসর নির্মাণ করতে অসুবিধা কোথায়?
তাই কিছুটা হইহই। এ বছর সারা রাজ্য জুড়ে প্রায় ২০টি লিটল ম্যাগাজিন মেলা, যা চলবে মার্চের শেষ পর্যন্ত। অনেক লিটল ম্যাগের কাছেই তাই বইমেলায় যাওয়ার প্রতীক্ষা শেষ, বরং কুলিয়ে ওঠা যাচ্ছে না সমস্ত লিটল ম্যাগাজিন মেলা।
ভরসা থাকুক লিটল ম্যাগাজিন মেলাতেই। সসম্মানে ও কাজের জোরে। ভাল লেখক ও আগ্রহী পাঠকের অভাব নেই!