The most popular blog of our bi-monthly magazine (একক মাত্রা) in Bangla on contemporary socio-economic and cultural issues.. মগজে দিন শান/ নয়তো মিলিয়ে যান... Also visit our online version: https://www.ekakmatra.in
Thursday, 31 October 2013
Tuesday, 29 October 2013
Monday, 28 October 2013
অর্থনীতির আলোচনা
অর্থনীতিতে শ্রমের পরিকাঠামো গুরুত্ব পাবে কী ?
অনিন্দ্য ভট্টাচার্য
নিচের এই লিঙ্কটি ক্লিক করুন -
অনিন্দ্য ভট্টাচার্য
নিচের এই লিঙ্কটি ক্লিক করুন -
Tuesday, 8 October 2013
সুন্দরবনের কোনও বিকল্প নেই
সুন্দরবনে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র কেন?
ইন্দ্রনীল সাহা
সুন্দরবন দুই বাংলা জুড়ে বিস্তৃত। প্রায় ৬০ শতাংশ বাংলাদেশে আর ৪০ শতাংশ পশ্চিমবঙ্গে। স্বাভাবিকভাবেই এপারে যেসব মাছ আসে তার অনেকাংশেরই জন্ম হয় বাংলাদেশের সুন্দরবনে। এভাবেই চলছে। গত ২০০ বছরে সভ্যতার অগ্রগতির কোপ গিয়ে পড়েছে সুন্দরবনের উপরে। প্রায় ৬৬ শতাংশ বনভূমি আজ লুপ্ত। এই আক্রান্ত বনভূমির উপর আজ নতুন আক্রমণ- বাংলাদেশ সুন্দরবন ঘোষিত বনভূমির মাত্র ১৪ কিমি দূরে ভারত বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে তৈরি হতে চলেছে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন এক বিশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। পুরো পরিকল্পনা অনুসারে অধিগৃহীত ১৮৩৭ একর জমিতে দুই ধাপে তৈরি হবে মোট ২৬৪০ মেগাওয়াট উৎপন্নকারি তাপবিদ্যুৎ-কেন্দ্র। প্রথম ধাপে তৈরি হবে দুটি ইউনিট ৬৬০ মেঃওঃ ক্ষমতার। সময় ধার্য করা হয়েছে সাড়ে চার বছর। পুরো কাজটি হবে ভারতের NTPC এবং বাংলাদেশের BPDBর যৌথ উদ্যোগে। ২০শে এপ্রিল ২০১৩ সালে এই মর্মে চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে ঢাকাতে। সরকারি আইন অনুযায়ী, এই ধরনের প্রকল্পের জন্য যে কোনওরকম কাজ শুরু হবার আগেই পরিবেশগত সমীক্ষা (ইআইএ) ও তার ছাড়পত্র পাওয়া আবশ্যিক। এক্ষেত্রে কিন্তু প্রকল্পের স্থান চূড়ান্তকরণ ও জমি অধিগ্রহণ থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষর ইত্যাদি যাবতীয় কাজ শেষ হওয়ার পর কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ বা এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট(ইআইএ) করা ও তার জন্য জনসাধারণের কাছে মতামত চাওয়া হয়! এই তামাশার অবশ্যম্ভাবী ফলাফল যা হবার তাই হয়েছে। অর্থাৎ, অনেক অস্বস্তিকর প্রশ্নগুলিকে হয় সম্পূর্ণ এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে নয়তো বিভ্রান্তিকর উত্তর দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ আজ পথে নেমেছেন। জাতীয় কমিটি (NCBD) র নেতৃত্বে ঢাকা থেকে সুন্দরবন এক বিশাল লং মার্চে যোগ দিতে চলেছেন ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ। এই মিছিল মনে করিয়ে দিচ্ছে ফুলবাড়ির কথা। সেদিনের সেই লং মার্চ আটকে দিয়েছিল ফুলবাড়ি প্রকল্পকে। এই মিছিল সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করতে পারবে কিনা ইতিহাস তার জবাব দেবে। ৫ লাখ মানুষের রুটি রুজি, ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে নেড়া বনভূমি, ৬৩,৬৩৮ টন ধান, ৫৭৮৭ মেট্রিক টন মাছ এবং নগদ বার্ষিক ৫০০০ কোটি টাকার সম্পদের বিনিময়ে পাওয়া যাবে বিদ্যুৎ। এদিকে এপার বাংলাতেও গড়ে উঠছে প্রতিরোধ। এপার বাংলার উদ্যোগে ইন্টারনেটে একটি অনলাইন পিটিশন করা হয়েছে। সই সংগ্রহ করা হচ্ছে ইন্টারনেটের বাইরেও। অনলাইন ও সংগৃহীত সই সহ সম্পূর্ণ পিটিশনটি দিতে যাওয়া হয়েছিল NTPC র কলকাতা অফিসে ২৭শে সেপ্টেম্বর। সেখানে কী ঘটেছে তার বিস্তারিত খবর আমরা নিচে দিচ্ছি। বড় মিডিয়ার চুপ করে থাকার কারণে বেশিরভাগ মানুষই এই প্রকল্পের কথা জানেনই না। আশার কথা, এগিয়ে এসেছেন বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিন ও পত্র পত্রিকা। রামপালের খবর পৌঁছে যাচ্ছে দুই বাংলার ঘরে ঘরে। মানুষ এগিয়ে আসছেন, এর বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন। একটাই কথা- দুই দেশের সরকারকে সবাই বলতে চাইছেন 'বিদ্যুৎ উৎপাদনের বহু বিকল্প আছে, সুন্দরবণের কোনও বিকল্প নাই'।
NTPC কেন পিটিশন গ্রহণ করল না?
ইন্দ্রনীল সাহা
আমরা মোটামুটি ২৫ জন প্রিটোরিয়া স্ট্রীটের NTPC অফিসের সামনে জড়ো হই ২৭ সেপ্টেম্বর দুপুর আড়াইটে নাগাদ। জায়গাটা একটু নির্জন। থিয়েটার রোড, ক্যামাক স্ট্রীট অঞ্চলে একটু অভিজাত এলাকায়। স্বাভাবিকভাবেই একটার পর একটা বড় সুদৃশ্য গাড়ির যাতায়াত, কিন্তু বাস বা পথচারী প্রায় নেই বললেই চলে। এমনকি চায়ের দোকানও অনেকটা দূরে মোড়ের মাথায়। আমাদের সাথে ছিল ২৫টা প্ল্যাকার্ড। একটা ছবিতে ইআইএ রিপোর্ট ১১টা প্ল্যাকার্ডের আর লং মার্চের খবর, এবেলায় প্রকাশিত রিপোর্ট এইসব। কোনো প্ল্যাকার্ডেই কোনো সংগঠন বা ওই জাতীয় কিছুর উল্লেখ ছিল না। প্ল্যাকার্ডের ছবিগুলো একজন তুলেছে মেলে পেলেই শেয়ার করব। আমরা চটপট প্ল্যাকার্ডগুলো সাজিয়ে ফেলি NTPC র গেটের উল্টো দিকের ফুটে আর আশপাশের গেট ইত্যাদিতে। কোনো মাইক বা কিছু ছিল না, ছিল না কোনো শ্লোগান বা অযথা চিৎকার। গ্রুপের সবাই প্ল্যাকার্ডগুলো হাতে নিয়ে দেখছিল নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছিল এই সব। আমরা অপেক্ষা করছিলাম ১০৯ পাতা সই এর প্রিন্ট আউট নিয়ে পৌছানোর কথা দুজনের জন্য।
বেলা ৩.৩০ নাগাদ সই-এর প্রিন্ট আউট নিয়ে এলে আমাদের মধ্য থেকে ১০ জন মতো NTPCর অফিসে চার তলায় আস্তে আ্স্তে উঠে আসি। আমাদের লিড করছিলেন শান্তনুদা (শান্তনু চক্রবর্ত্তী) আর বঙ্কিমদা (বঙ্কিম দত্ত)। কাঁচের দরজা পেরিয়ে সিকিউরিটির কাছে গিয়ে আমরা জানালাম ডেপুটেশন দিতে এসেছি, কোনো পদস্থ অফিসারকে ডেকে দিতে। সিকিউরিটি বললেন DGM (HR) যিনি কলকাতা অফিসের হেড, নেই অতএব ডেপুটেশন নেওয়া যাবে না। আমরা বলএটা কী লাম ওনার অনুপস্থিতিতে যিনি ইন-চার্জ তাকে ডেকে দিতে। এর উত্তরে শুনলাম কেউই নাকি নেই! একটা কেন্দ্রীয় সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজের দিনে এটা কি সম্ভব? এই কথাটা আমরা তুললাম। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন কর্মচারি আমাদের সাথে কথা বলতে শুরু করলেন – আমরা কে? কী চাই, ইত্যাদি। কথায় বুঝলাম এরা Personnel department এর লোক ভালোই খবর রাখে কেননা ওরা রামপাল বলছিল না, বলছিল খুলনা প্রজেক্ট এবং আরো এমন কিছু কথা যা মোটামুটি দুই বাংলার রামপাল সংক্রান্ত ঘটনার স্টাডি না থাকলে বলা যায় না। যাই হোক পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল এদের কোনো কথা শোনার মুড নেই।
শেষ পর্যন্ত আমরা ঠিক করলাম ডেপুটেশনটা কাউন্টারে জমা করে দেব। তাতে সবাই মানে NTPCর সবাই রাজি হল। আমরা বললাম একটা প্রাপ্তি স্বীকার দিন। এইখান থেকেই ঘটনা এক নতুন মোড় নেয়। শুরুটা হল প্রতীপকে দিয়ে। ও সিকিউরিটিকে বলেছিল “আরে ছাড়ো না নিয়ে নাও ঝামেলা হাঠাও”। এই কথাতে হঠাৎ ওখানকার একজন বলশালী স্টাফ খেপে যায়; প্রায় মারতে আসে, প্রতীপকে বলে বেরিয়ে যেতে এবং আক্রমনাত্মকভাবে চিৎকার জুড়ে দেয়। প্রতীপ ক্ষমা চায়, ওর কথা উইথড্র করে, কিন্তু কাকস্য পরিবেদনা। ওকে প্রায় ফুটবলে যেভাবে ডিফেন্ডাররা গায়ে হাত না দিয়েও চাপতে থাকে সেভাবে ঠেলে কাঁচের দরজার কাছে নিয়ে যান তিনি। এইসবের মধ্যে একটু হট্টগোল শুরু হয়ে যায়, দু-একটা চিৎকার চ্যাচ্যামেচি হয়। অবস্থা যেদিকে গড়াচ্ছে সেটা ভালো ঠেকছিল না। আমি আমার মোবাইলের ক্যামেরা অন করার চেষ্টা করি আর বলার চেষ্টা করি “আপনি যা বলছেন অন রেকর্ড বলুন।” কিন্তু আমি আমার কথা শেষ করার আগেই একজন বেশ শক্তিশালী কর্মচারী আমার উপরে, বাস্তবত, হাতে পায়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আমার মোবাইল কেড়ে নিয়ে ফেলে দেবার চেষ্টা করে ও আমাকে শারীরীকভাবে আদর করবার নানা চেষ্টা করতে থাকে। বাকিদের কাছে ঘটনাটা এতটাই অপ্রত্যাশিত যে কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারছিল না এমনকি সিনিয়ররাও কেমন হতভম্ব হয়ে যান। আমাকে জোর করে ধাক্কা দিয়ে বার করে দেওয়া হয়। আমরা সবাই গেটের বাইরে বেরিয়ে আসি। মেসেজটা পরিষ্কার – আমাদের কথা শুনবেও না আর ডেপুটেশনও নেবেনা। মিনিট দশেক অপেক্ষা করার পর আমরা বেরিয়ে যাই। ঠিক হয় সোমবার এটা কুরিয়ার করে দেওয়া হবে।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দুটো কাজ তৎক্ষনাৎ করা যেত – ১. মিডিয়াতে গলা ফাটানো যেত আর ২. পুলিশে কমপ্লেন করা যেত। দুটোর কোনোটাই করিনি তার কারণগুলো এইরকম- ১. NTPCর কর্মচারী বা তাদের কোনো ইউনিয়ন আমাদের শত্রু নয়। এসব করলে ভুল বোঝাবুঝি আরো বাড়ত। ২. আমাদের কোনো ছাতা নেই, কোনো সংগঠন নেই এমনকি সবাই সবাইকে ভালো মতো চিনিও না। NTPCর সাথে লড়াই মুখের কথা না। আমরা প্রস্তুত ছিলাম না বা এখনো নেই। ৩. এই ঘটনাটাকে বড় ইস্যু করলে রামপাল যেটা আরো অনেক অনেক বড় বিপর্যয়, সেটা পিছনে চলে যাবার একটা সম্ভাবনা থেকে যায়। দীর্ঘদিনের চেষ্টায় আস্তে আস্তে রামপাল নিয়ে মানুষ কথা বলতে শুরু করেছে সেটা হয়তো ধাক্কা খেত। এখানে এমন মানুষ আছেন যারা এই ঘটনার সাক্ষী। ভাবছিলাম, শহর কলকাতার ইংরাজি বলা ভদ্রলোকের সাথে যদি NTPC এইভাবে কথাবার্তা বলেন তাহলে সুন্দরবনের মানুষগুলির সাথে তারা কী করেন? জানতে ইচ্ছা রইল আর রামপাল নিয়ে লড়াই যেটা হয়তো এই ঘটনাটা না ঘটলে আর বেশি এগোতাম না সেটা আমি জারি রাখব।
ইন্দ্রনীল সাহা
সুন্দরবন দুই বাংলা জুড়ে বিস্তৃত। প্রায় ৬০ শতাংশ বাংলাদেশে আর ৪০ শতাংশ পশ্চিমবঙ্গে। স্বাভাবিকভাবেই এপারে যেসব মাছ আসে তার অনেকাংশেরই জন্ম হয় বাংলাদেশের সুন্দরবনে। এভাবেই চলছে। গত ২০০ বছরে সভ্যতার অগ্রগতির কোপ গিয়ে পড়েছে সুন্দরবনের উপরে। প্রায় ৬৬ শতাংশ বনভূমি আজ লুপ্ত। এই আক্রান্ত বনভূমির উপর আজ নতুন আক্রমণ- বাংলাদেশ সুন্দরবন ঘোষিত বনভূমির মাত্র ১৪ কিমি দূরে ভারত বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে তৈরি হতে চলেছে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন এক বিশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। পুরো পরিকল্পনা অনুসারে অধিগৃহীত ১৮৩৭ একর জমিতে দুই ধাপে তৈরি হবে মোট ২৬৪০ মেগাওয়াট উৎপন্নকারি তাপবিদ্যুৎ-কেন্দ্র। প্রথম ধাপে তৈরি হবে দুটি ইউনিট ৬৬০ মেঃওঃ ক্ষমতার। সময় ধার্য করা হয়েছে সাড়ে চার বছর। পুরো কাজটি হবে ভারতের NTPC এবং বাংলাদেশের BPDBর যৌথ উদ্যোগে। ২০শে এপ্রিল ২০১৩ সালে এই মর্মে চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে ঢাকাতে। সরকারি আইন অনুযায়ী, এই ধরনের প্রকল্পের জন্য যে কোনওরকম কাজ শুরু হবার আগেই পরিবেশগত সমীক্ষা (ইআইএ) ও তার ছাড়পত্র পাওয়া আবশ্যিক। এক্ষেত্রে কিন্তু প্রকল্পের স্থান চূড়ান্তকরণ ও জমি অধিগ্রহণ থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষর ইত্যাদি যাবতীয় কাজ শেষ হওয়ার পর কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ বা এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট(ইআইএ) করা ও তার জন্য জনসাধারণের কাছে মতামত চাওয়া হয়! এই তামাশার অবশ্যম্ভাবী ফলাফল যা হবার তাই হয়েছে। অর্থাৎ, অনেক অস্বস্তিকর প্রশ্নগুলিকে হয় সম্পূর্ণ এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে নয়তো বিভ্রান্তিকর উত্তর দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ আজ পথে নেমেছেন। জাতীয় কমিটি (NCBD) র নেতৃত্বে ঢাকা থেকে সুন্দরবন এক বিশাল লং মার্চে যোগ দিতে চলেছেন ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ। এই মিছিল মনে করিয়ে দিচ্ছে ফুলবাড়ির কথা। সেদিনের সেই লং মার্চ আটকে দিয়েছিল ফুলবাড়ি প্রকল্পকে। এই মিছিল সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করতে পারবে কিনা ইতিহাস তার জবাব দেবে। ৫ লাখ মানুষের রুটি রুজি, ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে নেড়া বনভূমি, ৬৩,৬৩৮ টন ধান, ৫৭৮৭ মেট্রিক টন মাছ এবং নগদ বার্ষিক ৫০০০ কোটি টাকার সম্পদের বিনিময়ে পাওয়া যাবে বিদ্যুৎ। এদিকে এপার বাংলাতেও গড়ে উঠছে প্রতিরোধ। এপার বাংলার উদ্যোগে ইন্টারনেটে একটি অনলাইন পিটিশন করা হয়েছে। সই সংগ্রহ করা হচ্ছে ইন্টারনেটের বাইরেও। অনলাইন ও সংগৃহীত সই সহ সম্পূর্ণ পিটিশনটি দিতে যাওয়া হয়েছিল NTPC র কলকাতা অফিসে ২৭শে সেপ্টেম্বর। সেখানে কী ঘটেছে তার বিস্তারিত খবর আমরা নিচে দিচ্ছি। বড় মিডিয়ার চুপ করে থাকার কারণে বেশিরভাগ মানুষই এই প্রকল্পের কথা জানেনই না। আশার কথা, এগিয়ে এসেছেন বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিন ও পত্র পত্রিকা। রামপালের খবর পৌঁছে যাচ্ছে দুই বাংলার ঘরে ঘরে। মানুষ এগিয়ে আসছেন, এর বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন। একটাই কথা- দুই দেশের সরকারকে সবাই বলতে চাইছেন 'বিদ্যুৎ উৎপাদনের বহু বিকল্প আছে, সুন্দরবণের কোনও বিকল্প নাই'।
NTPC কেন পিটিশন গ্রহণ করল না?
ইন্দ্রনীল সাহা
আমরা মোটামুটি ২৫ জন প্রিটোরিয়া স্ট্রীটের NTPC অফিসের সামনে জড়ো হই ২৭ সেপ্টেম্বর দুপুর আড়াইটে নাগাদ। জায়গাটা একটু নির্জন। থিয়েটার রোড, ক্যামাক স্ট্রীট অঞ্চলে একটু অভিজাত এলাকায়। স্বাভাবিকভাবেই একটার পর একটা বড় সুদৃশ্য গাড়ির যাতায়াত, কিন্তু বাস বা পথচারী প্রায় নেই বললেই চলে। এমনকি চায়ের দোকানও অনেকটা দূরে মোড়ের মাথায়। আমাদের সাথে ছিল ২৫টা প্ল্যাকার্ড। একটা ছবিতে ইআইএ রিপোর্ট ১১টা প্ল্যাকার্ডের আর লং মার্চের খবর, এবেলায় প্রকাশিত রিপোর্ট এইসব। কোনো প্ল্যাকার্ডেই কোনো সংগঠন বা ওই জাতীয় কিছুর উল্লেখ ছিল না। প্ল্যাকার্ডের ছবিগুলো একজন তুলেছে মেলে পেলেই শেয়ার করব। আমরা চটপট প্ল্যাকার্ডগুলো সাজিয়ে ফেলি NTPC র গেটের উল্টো দিকের ফুটে আর আশপাশের গেট ইত্যাদিতে। কোনো মাইক বা কিছু ছিল না, ছিল না কোনো শ্লোগান বা অযথা চিৎকার। গ্রুপের সবাই প্ল্যাকার্ডগুলো হাতে নিয়ে দেখছিল নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছিল এই সব। আমরা অপেক্ষা করছিলাম ১০৯ পাতা সই এর প্রিন্ট আউট নিয়ে পৌছানোর কথা দুজনের জন্য।
বেলা ৩.৩০ নাগাদ সই-এর প্রিন্ট আউট নিয়ে এলে আমাদের মধ্য থেকে ১০ জন মতো NTPCর অফিসে চার তলায় আস্তে আ্স্তে উঠে আসি। আমাদের লিড করছিলেন শান্তনুদা (শান্তনু চক্রবর্ত্তী) আর বঙ্কিমদা (বঙ্কিম দত্ত)। কাঁচের দরজা পেরিয়ে সিকিউরিটির কাছে গিয়ে আমরা জানালাম ডেপুটেশন দিতে এসেছি, কোনো পদস্থ অফিসারকে ডেকে দিতে। সিকিউরিটি বললেন DGM (HR) যিনি কলকাতা অফিসের হেড, নেই অতএব ডেপুটেশন নেওয়া যাবে না। আমরা বলএটা কী লাম ওনার অনুপস্থিতিতে যিনি ইন-চার্জ তাকে ডেকে দিতে। এর উত্তরে শুনলাম কেউই নাকি নেই! একটা কেন্দ্রীয় সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজের দিনে এটা কি সম্ভব? এই কথাটা আমরা তুললাম। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন কর্মচারি আমাদের সাথে কথা বলতে শুরু করলেন – আমরা কে? কী চাই, ইত্যাদি। কথায় বুঝলাম এরা Personnel department এর লোক ভালোই খবর রাখে কেননা ওরা রামপাল বলছিল না, বলছিল খুলনা প্রজেক্ট এবং আরো এমন কিছু কথা যা মোটামুটি দুই বাংলার রামপাল সংক্রান্ত ঘটনার স্টাডি না থাকলে বলা যায় না। যাই হোক পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল এদের কোনো কথা শোনার মুড নেই।
শেষ পর্যন্ত আমরা ঠিক করলাম ডেপুটেশনটা কাউন্টারে জমা করে দেব। তাতে সবাই মানে NTPCর সবাই রাজি হল। আমরা বললাম একটা প্রাপ্তি স্বীকার দিন। এইখান থেকেই ঘটনা এক নতুন মোড় নেয়। শুরুটা হল প্রতীপকে দিয়ে। ও সিকিউরিটিকে বলেছিল “আরে ছাড়ো না নিয়ে নাও ঝামেলা হাঠাও”। এই কথাতে হঠাৎ ওখানকার একজন বলশালী স্টাফ খেপে যায়; প্রায় মারতে আসে, প্রতীপকে বলে বেরিয়ে যেতে এবং আক্রমনাত্মকভাবে চিৎকার জুড়ে দেয়। প্রতীপ ক্ষমা চায়, ওর কথা উইথড্র করে, কিন্তু কাকস্য পরিবেদনা। ওকে প্রায় ফুটবলে যেভাবে ডিফেন্ডাররা গায়ে হাত না দিয়েও চাপতে থাকে সেভাবে ঠেলে কাঁচের দরজার কাছে নিয়ে যান তিনি। এইসবের মধ্যে একটু হট্টগোল শুরু হয়ে যায়, দু-একটা চিৎকার চ্যাচ্যামেচি হয়। অবস্থা যেদিকে গড়াচ্ছে সেটা ভালো ঠেকছিল না। আমি আমার মোবাইলের ক্যামেরা অন করার চেষ্টা করি আর বলার চেষ্টা করি “আপনি যা বলছেন অন রেকর্ড বলুন।” কিন্তু আমি আমার কথা শেষ করার আগেই একজন বেশ শক্তিশালী কর্মচারী আমার উপরে, বাস্তবত, হাতে পায়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আমার মোবাইল কেড়ে নিয়ে ফেলে দেবার চেষ্টা করে ও আমাকে শারীরীকভাবে আদর করবার নানা চেষ্টা করতে থাকে। বাকিদের কাছে ঘটনাটা এতটাই অপ্রত্যাশিত যে কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারছিল না এমনকি সিনিয়ররাও কেমন হতভম্ব হয়ে যান। আমাকে জোর করে ধাক্কা দিয়ে বার করে দেওয়া হয়। আমরা সবাই গেটের বাইরে বেরিয়ে আসি। মেসেজটা পরিষ্কার – আমাদের কথা শুনবেও না আর ডেপুটেশনও নেবেনা। মিনিট দশেক অপেক্ষা করার পর আমরা বেরিয়ে যাই। ঠিক হয় সোমবার এটা কুরিয়ার করে দেওয়া হবে।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দুটো কাজ তৎক্ষনাৎ করা যেত – ১. মিডিয়াতে গলা ফাটানো যেত আর ২. পুলিশে কমপ্লেন করা যেত। দুটোর কোনোটাই করিনি তার কারণগুলো এইরকম- ১. NTPCর কর্মচারী বা তাদের কোনো ইউনিয়ন আমাদের শত্রু নয়। এসব করলে ভুল বোঝাবুঝি আরো বাড়ত। ২. আমাদের কোনো ছাতা নেই, কোনো সংগঠন নেই এমনকি সবাই সবাইকে ভালো মতো চিনিও না। NTPCর সাথে লড়াই মুখের কথা না। আমরা প্রস্তুত ছিলাম না বা এখনো নেই। ৩. এই ঘটনাটাকে বড় ইস্যু করলে রামপাল যেটা আরো অনেক অনেক বড় বিপর্যয়, সেটা পিছনে চলে যাবার একটা সম্ভাবনা থেকে যায়। দীর্ঘদিনের চেষ্টায় আস্তে আস্তে রামপাল নিয়ে মানুষ কথা বলতে শুরু করেছে সেটা হয়তো ধাক্কা খেত। এখানে এমন মানুষ আছেন যারা এই ঘটনার সাক্ষী। ভাবছিলাম, শহর কলকাতার ইংরাজি বলা ভদ্রলোকের সাথে যদি NTPC এইভাবে কথাবার্তা বলেন তাহলে সুন্দরবনের মানুষগুলির সাথে তারা কী করেন? জানতে ইচ্ছা রইল আর রামপাল নিয়ে লড়াই যেটা হয়তো এই ঘটনাটা না ঘটলে আর বেশি এগোতাম না সেটা আমি জারি রাখব।
Subscribe to:
Posts (Atom)