গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘন ও সন্ত্রাস
অনিন্দ্য ভট্টাচার্য
কৃষকদের বিরুদ্ধে প্রকারান্তরে যুদ্ধ ঘোষণা করে, সারা দেশে কোভিড পরিস্থিতিকে বিপজ্জনক ও মারণঘাতী করে তুলে এবং অবশেষে পশ্চিমবঙ্গে মুখে ঝামা-ঘষা খেয়ে আরএসএস-বিজেপি এখন মরীয়া হয়ে উঠেছে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী সমস্ত কাজ ফেলে উত্তরপ্রদেশে ছুটে গেছেন অমিত শাহ ও যোগীর সঙ্গে জরুরি বৈঠক করতে- কীভাবে সাম্প্রতিক পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপি’র ভরাডুবির ড্যামেজ কন্ট্রোল আগামী বিধানসভা নির্বাচনে করা যায়। বোঝাই যাচ্ছে, উদ্ভ্রান্ত ও বিপর্যস্ত বিজেপি এখন সর্বতোভাবে আরও উন্মত্তের মতো ঝাঁপিয়ে পড়বে চারপাশের বিকাশমান পরিস্থিতির ওপর।
এতদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশাল দলবল নিয়ে বিজেপি’র আইটি সেল বিপুল ছড়ি ঘুরিয়েছে। মিথ্যা ভিডিও বানিয়ে, অর্ধসত্য বয়ান লিখে দিকে দিকে বিভাজন ও দাঙ্গা ঘটিয়েছে, দেশের এক বড় অংশের মানুষকে কিছুদিনের জন্য হলেও বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে দেশের মূল শত্রু একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয় সম্প্রদায় ও প্রতিবেশী পাকিস্তান। এতটাই সংঘটিত ভাবে তারা এই কর্ম করেছে যে, সোশ্যাল মিডিয়ায় অসংগঠিত বিবেকবান মানুষজনের পক্ষে বহুল চেষ্টা সত্ত্বেও, একটা পর্যায় অবধি তা মোকাবিলা করা সম্ভব হয়নি। দিল্লিতে গত বিধানসভা নির্বাচনের সময় তাদের নেতা কপিল মিশ্র ‘গোলি মারো শালে কো’ বলে দাঙ্গা ছড়িয়েও এখনও পুলিশের নাগালের বাইরে। অথচ, যারা দাঙ্গাকে ঠেকাবার চেষ্টা করেছেন, তাঁদের পোস্ট করা বিভিন্ন মেসেজ ও বক্তব্যকে হাতিয়ার করে তাঁদেরই কারান্তরালে নিক্ষেপ করেছে দিল্লির পুলিশ-প্রশাসন।
সুখের কথা, আপাতত সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের সেই দাপট গেছে। সারা দেশ জুড়ে যে গণজাগরণ শুরু হয়েছে, তার উত্তাপে এখন বিজেপি ও তাদের সরকারের (প্রধানমন্ত্রী সহ) নিভু নিভু অবস্থা। এই বিপর্যয়ের আঁচ সোশ্যাল মিডিয়াতেও এসে পড়েছে। যে ভাবে দেশ জুড়ে ও বিজেপি শাসিত রাজ্যে মতামত প্রকাশের ওপর জুলুম নামিয়ে আনা হচ্ছে, সেই একই পথে তারা সোশ্যাল মিডিয়ার ওপরও তা নামিয়ে আনতে চাইছে। কারণ, সেখানে তাদের সেই পুরনো আধিপত্য আর নেই যে! তাদের আইটি সেল এখন বানপ্রস্থের পথে। তাই একমাত্র হাতিয়ার দেশদ্রোহিতার আইন, যার অজুহাতে যে কোনও বক্তা ও বক্তব্যকেই অপরাধের প্রকোষ্ঠে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। আর তা করতে গেলে জানতে হবে, সোশ্যাল মিডিয়ায় কে কী বলছে, লিখছে, কে কোথায় জনমত নির্মাণ করছে। যাকে বলে, ফেলতে হবে শকুনের দৃষ্টি! কিন্তু প্রযুক্তির বলয়ে অত গভীর ও নিখুঁত দৃষ্টি তো ফেলা যায় না, যদি না সোশ্যাল মিডিয়ার কারবারীরা সহযোগিতা করে অথবা তাদের আইনত বাধ্য করা যায়। আর এবার সে কাজটি করতেই দলবল নিয়ে, আইনের কবচ-মাদুলি পরে, মন্ত্রী-সান্ত্রী-পুলিশের ভয় দেখিয়ে ‘হাল্লা চলেছে যুদ্ধে’।
শুরু হয়েছিল বিজেপি মুখপাত্র সম্বিত পাত্রের একটি কু-কাজ দিয়ে। যেখানে কংগ্রেসের লেটার হেড’কে নকল করে ও তাতে একটি সাজানো ‘টুলকিট’ লিপিবদ্ধ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হয়েছিল, যা দেখে মনে হতে পারে, কংগ্রেস কতকগুলি অপপ্রচারের আঙ্গিক গড়ে তুলে দলবদ্ধ ভাবে বিজেপি সরকারকে অপদস্থ করতে চাইছে। সে ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে এসব মিথ্যা এবং নকলনবিশি করে ছড়ানো হয়েছে। ট্যুইটার কর্তৃপক্ষ বিচার করে দেখে যে উক্ত ‘টুলকিট’টি সত্যিই নকল। অতএব, সম্বিত পাত্র ছবি সহ ‘টুলকিট’এর যে মিথ্যা পোস্ট দিয়ে বাজার গরম করতে চেয়েছিলেন, তার গায়ে ট্যুইটার কর্তৃপক্ষ ‘ম্যানিপুলেটেড মিডিয়া’ বলে একটি ছাপ্পা মেরে দেয়। এতেই আইটি সেলের মাথা একেবারে গরম হয়ে যায়। বিজেপি’র পক্ষ থেকে প্রথমে হুমকি দেওয়া হয় ওই ছাপ্পাটি সরিয়ে নেওয়ার জন্য। তাজ্জব কি বাত! যেখানে সম্বিত পাত্রের উচিত ছিল ধরা পড়ে যাওয়া নকল পোস্টটি সরিয়ে দেওয়া, সেখানে তারা উল্টে ট্যুইটার’কে হুমকি দিতে থাকে ‘ম্যানিপুলেটেড মিডিয়া’ ছাপ্পাটি সরিয়ে দেওয়ার জন্য। ট্যুইটার কর্তৃপক্ষ তাতে রাজী না হওয়ায় দিল্লি পুলিশ ট্যুইটারের দিল্লিস্থ অফিসে রেইড করে এবং ভয় দেখায়।
এই ঘটনার পাশাপাশি আরও একটি স্রোত বইছিল। গত ফেব্রুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় সরকার ‘ইনফরমেশন টেকনোলজি (ইন্টারমিডিয়ারি গাইডলাইন্স অ্যান্ড মিডিয়া এথিকস কোড) রুলস’ নামক একটি নোটিফিকেশন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলির উদ্দেশ্যে জারি করে যেখানে প্রতিটি এমনতর সংস্থাকে এই নতুন রুলস (যা ২৬ মে ২০২১ থেকে কার্যকরী হয়েছে) মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়। এই রুলস মোতাবেক প্রতিটি সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাকে একজন করে চিফ কমপ্লায়েন্স অফিসার, রেসিডেন্ট গ্রিভান্স অফিসার ও নোডাল কন্টাক্ট পার্সন নিযুক্ত করতে হবে। এই অফিসারদের কাজ হল, সরকার কর্তৃক নির্দিষ্ট যে কোনও আপত্তিকর পোস্টের প্রথম উৎস কোথা থেকে, তা ৭২ ঘন্টার মধ্যে জানাতে হবে। অর্থাৎ, সরকার যদি মনে করে ভাইরাল হয়ে যাওয়া কোনও পোস্ট (অথবা সরকারের নজরে আসা কোনও পোস্ট) দেশের আইনশৃঙ্খলা ও জাতীয় নিরাপত্তার পক্ষে হানিকর, তাহলে সেই পোস্টের জনকের হদিশ সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম (যেখানে পোস্ট হয়েছে) চিহ্নিত করে সরকারকে জানাবে। উপরন্তু, এতদিন আইন মোতাবেক, সোশ্যাল মিডিয়ায় যে কোনও ‘আপত্তিকর’ পোস্টের দায় বর্তাতো যিনি পোস্ট করেছেন তাঁর ওপর; সোরগোল উঠলে বা নিজেদের বিচারে আপত্তিকর মনে হলে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম বড়জোর সেই পোস্টটিকে সরিয়ে দিত এবং প্রয়োজনে প্রেরকের ওপর নানারকম নিষেধাজ্ঞা জারি করত। কিন্তু এবারে, যে কোনও পোস্টের দায় শুধু যিনি পোস্ট করছেন তাঁর ওপরই বর্তাবে না, যে প্ল্যাটফর্মে তিনি পোস্ট করেছেন তাদেরও দায়ভাগ থাকবে। চাইলে আইন মোতাবেক সরকার সম দায়ে সেই প্ল্যাটফর্মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।
ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, হোয়াটসআপ, ট্যুইটার- এখন পর্যন্ত কেউই সরকারি নির্দেশ মাফিক উক্ত অফিসারদের নিযুক্ত করেনি। শোনা যাচ্ছে, ফেসবুক বা ইন্সটাগ্রাম হয়তো আপাত ভাবে তাদের কর্মীদের মধ্য থেকেই এই পদগুলিতে কাউকে নিয়োজিত করবে। কিন্তু এই নির্দেশকে তারা ভালো ভাবে নেয়নি। কারণ, এই ত্রি-অফিসার নিয়োগের মাধ্যমে সরকার চাইছে তাদের প্ল্যাটফর্মে দেয় কোনও পোস্ট যদি সরকারের কাছে ‘আপত্তিকর’ মনে হয়, তাহলে সরাসরি সেই অফিসারদেরই দায়বদ্ধ করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হতেই পারে, প্রধানমন্ত্রীর কোনও নীতিকে সমালোচনা করে কোনও একাডেমিক পোস্টকেও সরকার ‘আপত্তিকর’ চিহ্নিত করে যিনি পোস্ট করলেন তাঁকে এবং কেন তা পোস্ট করতে দেওয়া হয়েছে সেই অজুহাতে প্ল্যাটফর্মের অফিসারদের জেলে পুরে দিল। নিঃসন্দেহে, মতামত প্রকাশের ওপর এ এক চরম আঘাত। এতদিন চলটা ছিল, যারা সাহসী তাঁরা সরকারি দমন-পীড়নের সম্ভাবনাকে মাথায় রেখেই নিজেদের মতামত জাহির করতেন। এবার সেই কোপটা এসে পড়ছে যেখানে পোস্ট হচ্ছে তাদেরও ওপর, অথচ সে মতামতের দায় তাদের নয়। আসলে, এইভাবে ভয় দেখিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিকে কাবু করে রাখা যাতে তারা তথাকথিত ‘আপত্তিকর’ পোস্টগুলিকে অঙ্কুরেই মুছে দেয়। এই অনুশীলনে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিও ‘বুঝে যাবে’ যে ‘আপত্তিকর’ পোস্ট কোনগুলি ও কারা করেন। জনমতকে নৃশংস ভাবে পিষ্ট করার এ হল আধুনিক ফ্যাসিবাদী কৌশল।
কিন্তু ভবি কি অত সহজে ভুলবে? ইতিমধ্যেই ট্যুইটার এই মারাত্মক আইনি বিধানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক স্তরে সওয়াল করতে শুরু করেছে। তারা ‘ইউএস-ইন্ডিয়া বিজনেস কাউন্সিল’ ও ‘ইউএস-ইন্ডিয়া স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ ফোরাম’এর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার সাহায্য পাওয়ার চেষ্টা করছে। এ নিয়ে অবশ্যই আন্তর্জাতিক স্তরে হৈ-হট্টগোল শুরু হবে। কারণ, সরকারের এই পদক্ষেপ গণতন্ত্রের টুঁটি চেপে ধরার সামিল। কোনও সাংবাদিক তদন্তমূলক সংবাদ নির্মাণে ভীত হয়ে পড়বেন। তিনি শুধু ভীত হবেন না, সে সংবাদ সোশ্যাল মিডিয়ার কোনও প্ল্যাটফর্মেও হয়তো প্রকাশ পাবে না। কারণ, সে সংবাদের প্রথম উৎস তিনিই এবং তা যদি সরকারের চোখে ‘আপত্তিকর’ মনে হয় তাহলে তিনি তো দোষী সাব্যস্ত হবেনই, উপরন্তু, সে সংবাদ প্রকাশের জন্য প্ল্যাটফর্মেরও গলা কাটা যাবে। বলাই বাহুল্য, এ এক ভয়াবহ পরিস্থিতি। কংগ্রেস নেতা অভিষেক সিঙ্ঘভী জানিয়েছেন, এ হল সম্পূর্ণ সেনসরশিপ, সম্পূর্ণ চিন্তা-নিয়ন্ত্রক এবং সম্পূর্ণত সোশ্যাল মিডিয়াকে সন্ত্রস্ত করার প্রয়াস।
সরকারের এই বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে হোয়াটসআপ দিল্লি হাইকোর্টে মামলা করেছে। তারা জানিয়েছে, এই বিধানের ফলে ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হবে। কারণ, হোয়াটসআপ ‘এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন’ রীতি মেনে চলে যেখানে প্রেরক ও প্রাপক ছাড়া পাঠানো মেসেজে কী আছে তা কারও পক্ষে জানা সম্ভব নয়, এমনকি তারা নিজেরাও জানে না। যদি সরকারি বিধানকে মানতে হয় তাহলে এই ‘এন্ড এনক্রিপশন’এর রীতিকে ভেঙে ফেলতে হবে (না হলে কোনও পোস্ট বা মেসেজের প্রথম উৎসকে জানা সম্ভব নয়) যা গোপনীয়তার পক্ষে ভয়ানক বিপজ্জনক ও তাদের সংস্থারও রীতিবিরুদ্ধ। আদালতে তারা এই নতুন বিধানের ৪(২) ধারাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে, যেখানে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মকে বাধ্য করা হয়েছে মেসেজের উৎস খুঁজে বের করতে, যা বর্তমান ‘এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন’এর প্রযুক্তি রীতিতে আদৌ সম্ভব নয়। তারা এও বলেছে, এই নববিধান ভারতীয় সংবিধানের ১৪ ও ২১ ধারাকে লঙঘন করছে এবং তা কার্যকরী হলে দেশের ৪০ কোটি হোয়াটসআপ ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তার অধিকার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কেন্দ্রীয় সরকার হোয়াটসআপ’এর দায়ের করা এই মামলাকে বলেছে ‘একটি অমান্যকর কাজ’। বুঝে দেখুন, আদালতে সাংবিধানিক ও আইনি সুরক্ষা নেওয়ার চেষ্টাকেও তারা বরদাস্ত করতে রাজী নয়। তথ্যমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেছেন, গোপনীয়তার অধিকারকেও ‘যুক্তিযুক্ত নিয়ন্ত্রণের’ অধীনে থাকতে হবে। কী কাণ্ড! সেই যুক্তিযুক্ত নিয়ন্ত্রণ থাকবে একমাত্র দিল্লির শাহেনশাহদের হাতে।
আমরা জানি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উত্থানে ও ভার্চুয়াল দুনিয়ার সর্বগ্রাসী অস্তিত্বে আজ সোশ্যাল মিডিয়া এক অত্যন্ত শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে সমাজে বিরাজমান। তাকে অস্বীকার করে কার সাধ্য! আর এই সোশ্যাল মিডিয়া ও ভার্চুয়াল দুনিয়া একযোগে এক নবতর রাষ্ট্র হিসেবে সারা বিশ্ব জুড়েই আত্মপ্রকাশ করছে। সাবেকি রাষ্ট্রের কর্ণধার যারা, যেমন ডোনাল্ড ট্রাম্প’এর মতো অতি-প্রতিক্রিয়াশীল রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে এই সোশ্যাল মিডিয়ার দ্বৈরথ সুবিদিত। তাঁকে ট্যুইটার চিরকালের জন্য বহিষ্কার করেছে। একই ভাবে এ দেশেও ট্রাম্প-অনুরাগী ক্ষমতা-উন্মত্ত মোদি-শাহ জুটি সোশ্যাল মিডিয়ার এই আপেক্ষিক স্বাধীন পরিসরকে মেনে নিতে রাজী নন। তাই, ট্রাম্পের মতোই তাঁরাও সোশ্যাল মিডিয়ার বিরুদ্ধে এক সর্বাত্মক যুদ্ধে নামতে চাইছেন। কিন্তু তাঁরা কি শেষমেশ পেরে উঠবেন? যদিও এ কথাটা বলতে কোনও কুন্ঠা নেই যে, সোশ্যাল মিডিয়াগুলি নানা সময়ে দেশে দেশে শাসকদের সঙ্গে নানারকম অসৎ আঁতাতে সামিল হয়ে নিজেদের ব্যবসার স্ফীতির কথাই ভেবেছে। তা সত্ত্বেও আপেক্ষিক অর্থে সাবেকি রাষ্ট্রের অন্যায়ের বিরুদ্ধে এই প্ল্যাটফর্মগুলি জনমত গঠনের এক অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে, তাও বাস্তব সত্য। অতএব, সোশ্যাল মিডিয়াকে তার সীমাবদ্ধতা সমেতই আমাদের মেনে নিতে হবে। তাদের গাফিলতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধেও সোচ্চার থাকতে হবে। কিন্তু কোনও অবস্থাতেই গোপনীয়তার অধিকারকে লঙ্ঘন করতে দেওয়া যাবে না- সে বিপদ রাষ্ট্রের দিক থেকেই আসুক অথবা সোশ্যাল মিডিয়ার তরফে। কারণ, আমরা জানি, এইসব সোশ্যাল মিডিয়াগুলি ব্যবহারকারীদের তথ্য নিয়ে গোপনে আরেক দফা বাণিজ্য করে। তা নিয়ে সারা বিশ্ব জুড়েই আওয়াজ ও আলোড়নও যথেষ্ট শক্তিশালী।
কথা হল, আমাদের শীর্ষ আদালতের নয় সদস্যের বেঞ্চ ২০১৭ সালে এক ঐতিহাসিক রায়ে গোপনীয়তার অধিকারকে সংবিধানের ২১ ধারার অধীনে এক মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। প্রখ্যাত প্রযুক্তি-সংক্রান্ত আইনবিদ মিশি চৌধুরি’র মতে, ভারত সরকারের এই নতুন আইটি রুলস’এর প্রণয়ন পুরোপুরি সংবিধান বিরোধী। এর আসল উদ্দেশ্য হল রাজনৈতিক; দিল্লিতে ট্যুইটার অফিসে হানা দিয়ে সরকার তার নজির রেখেছে। মানুষের কণ্ঠরোধ করার শাসকের এই নতুন কৌশলের বিরুদ্ধে জনমত আরও তীব্র হয়ে উঠুক। আশা করি, দিল্লি আদালত সংবিধানের মৌলিক সত্তাকে প্রাণপণে রক্ষার চেষ্টা করবে। মিথ্যাচার, হুমকি ও অমিত মালব্য’র আইটি সেল চুলোয় যাক।
অসাধারণ ‼️‼️‼️‼️👌🏼👌🏼👌🏼👌🏼👌🏼👌🏼👌🏼👌🏼👌🏼👌🏼একটি কমপ্লিট ও বলিষ্ঠ লেখা, সেই সাথে অত্যন্ত সময়োপযোগী । যেকোনো বড় হাউস এরকম লেখা পেলে লুফে নিতে পারে কিন্তু ইদানিং তারা সে কৌলিন্য হারিয়েছে । এ ভালো লেখা সোশ্যাল মাধ্যমেই দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ুক । আমাদেরই সে দায়িত্ব নিতে হবে । 🤝🏼🌹
ReplyDeleteখুব ভালো। বর্তমান পরিস্থিতিতে খুব প্রাসঙ্গিক একটি লেখা। এমন বলিষ্ঠ লেখার খুবই প্রয়োজন বর্তমানে। মানুষ আজ প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। এমনি আরো লেখা পড়ার অপেক্ষায় রইলাম। share করলাম।
ReplyDeleteখুব ভালো ও প্রয়োজনীয় লেখা। শেয়ার করলাম।
ReplyDeleteগনতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় আমাদের সর্বশক্তি দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে....এখানে নত হওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না...আপনাদের সকলের কাছে আমার বিনীত আবেদন বিষয়টির প্রতি সবাই সজাগ দৃষ্টি রাখুন ও এই অন্যায় এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হন।
ReplyDeleteঅত্যন্ত প্রয়োজনীয় লেখা।
ReplyDeleteবিষয়টা পরিষ্কার হলো।
ReplyDeleteঅনিন্দ্যদা এবং সমসাময়িক ঘটনার সঠিক সময়ে বুদ্ধিবৃত্তির আতস কাঁচে বিশ্লেষণ, আমার কাছে সমার্থক। আবার তার প্রমাণ পেলাম। পেটোয়া কর্পোরেট হাউসকে দিয়ে মেইনস্ট্রিম মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণে করা আর সোশ্যাল মিডিয়ার পায়ে বেড়ি পরানো তো এক নয়। খুবই মুশকিল। তাহলে তো দুনিয়া কাঁপানো তথ্যপ্রযুক্তি দৈত্যদের পকেটে ভরতে হয়। সে তো পয়সার অঙ্কে অসম্ভব। অতএব আইনের চাবুক একমাত্র রাস্তা। ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপ টুইটার অবাধ্যতা করছে, এটা যেমন লক্ষণীয়। ঠিক তেমনি গুগল, সুবোধ বালকের মতো মেনে নিচ্ছে, সেটা আরো বেশি লক্ষণীয়। আপাতত প্রতিবাদ চলতে থাকুক।
ReplyDelete