যখন বিরোধী পক্ষই গোলমেলে!
অশোকেন্দু সেনগুপ্ত
বাংলার নির্বাচন সম্পর্কিত নাটকের সমাপ্তি ঘটল। প্রশ্ন, নাটক কেন? এই পুরো পর্বটিকে নাটক বলছি যে তার কারণ কী? সে ব্যখ্যার আগে বলে রাখি, যে ফল আমরা দেখছি তার ওপর বিবদমান মূল রাজনৈতিক দলগুলি মন্তব্য করতে গিয়ে সকলেই স্বীকার করেছে যে (এই ফলে তারা কেউ বিস্মিত হলেও) এই রায়ে জনগণের ইচ্ছেই প্রতিফলিত হয়েছে। অর্থাৎ, ইভিএম বা বুথ দখল ইত্যাদির মতো অজুহাত তোলেনি কেউই। অর্থাৎ,ফল হয়েছে তেমনই যা বাংলার মানুষ চেয়েছিল।
বাংলার মানুষ কী চেয়েছিল? সেটা না বুঝেই ব্রিটিশ সরকার বাংলা ভাগ করার চেষ্টা করে। আর, এই ভূখন্ডের মানুষ দেখেছে এমন উদ্যোগ আদতে যেন হিন্দু থেকে মুসলমানদের দূরে ঠেলার প্রয়াস। সেবারের মতো এবারও যেন সেই উদ্যোগ ধাক্কা খেল। এবারও মানুষই নাটকের মূল চরিত্র। মানুষ বিজেপি পরিচালিত এই নাটকে তাদের নির্দেশ মেনে ভোট দেয়নি, তারা সাম্প্রদায়িক ভাগাভাগি মানতে চায়নি। মার্কস সাহেব যদি বেঁচে থাকতেন তিনি এই নাটককে কী বলতেন! কৌতুক নকশা? হয়তো বলতে পারতেন। অন্তত আমার তেমন কথা বলার ইচ্ছে। কিন্তু কেন? বিজেপি বলেছিল, তারা ২০০-র বেশি আসন পাবে। পায়নি। নির্বাচনী বুলি! সত্য হবার নয়। মমতা চেয়েছিলেন 'ডাবল সেঞ্চুরি' ডাবল ইঞ্জিনের বদলে। সেও তো নির্বাচনী বুলি! তবু তাঁর ইচ্ছেপূরণ হয়েছে। মানুষের ইচ্ছেপূরণ হয়েছে কী? হয়নি বলেই যত উদ্বেগ, এমন কৌতুক নকশা বা নাটক দেখেও মন ভালো নেই। মন ভাসে বেয়াড়া প্রশ্নে।
মানুষ এমন প্রকৃত বিরোধী-শূন্য বিধানসভা চেয়েছিল কী? এটাই আসল প্রশ্ন। পরের বিধানসভায় বিরোধী আসনে বসবে যারা তারা তো সংবিধান, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ইত্যাদি যা কিছু আমাদের প্রিয় ও প্রয়োজনীয় তাই অপছন্দ করে। ওরা বিশ্বাস রাখে সন্ত্রাসে, ষড়যন্ত্রে - সাধারণ মানুষকে বিশ্বাসই করে না। ওরা এমন মানুষকেই বুঝি কেবল বিশ্বাস করে যার ছাপ্পান্ন ইঞ্চি ছাতি, যে মিথ্যা আড়াল করে মিথ্যা দিয়ে, যে সংস্কৃতি শোধনের নামে তার মূলোচ্ছেদ করতে চায়। এরা পারবে কেন, যে নিরন্ন তার অন্নের দায় বহন করতে, বা নিরক্ষরকে অক্ষরের আলো চেনাতে, বা নিরাশ্রয়কে আশ্রয় দিতে? এরা যে মানুষকে ভালবাসে না। এরা শিখেছে বিবেকানন্দের বাণী ভোট প্রচারে ব্যবহার করতে, শেখেনি চণ্ডালকে ভাই বলে বুকে টেনে নিতে।
এসব জানত বামেরা, জানত মানবতাবাদী জাতীয়তাবাদীরা। কিন্তু, দীর্ঘকাল ক্ষমতায় থেকে থেকে এরা সব ভুলেছে। জনতা তাদের যেন ডাকছে - তোরা আয়রে, আয় সবহারাদের মাঝে, শেখ তাদের কথা তাদের মতো করে বলতে।
তারা এখন পথ খুঁজতে পথে নেমেছে। নেমেছে বা জনতা তাদের টেনে নামিয়েছে। কিন্তু, তাদের ঘোর কাটতে সময় লাগবে। স্বর্ণময়, বর্ণময়, আলোকময় ইডেন তারা ভুলতে পারে না। তারা গান্ধিবাদে বিশ্বাস রাখলেও গান্ধির মতো অনাড়ম্বর জীবনযাপন চায় না অথবা তারা মার্কস-এঙ্গেলসের তত্ত্বে ভরসা করলেও ভরসা করে না সর্বহারার চরিত্রে, বিশ্বাস করে না যে কোনও সর্বহারা কেবল শৃঙ্খল নয়, হারাতে চায় না তার সংস্কৃতি, মানবতা। তাদের ফিরতে সময় লাগবে। ততদিন আমাকে, আমার কষ্টে দীর্ণ প্রতিবেশীকে কে দেখবে? রাষ্ট্র? সমাজ? তারা যদি তাদের কর্তব্য না করে? আমরা যে বিজেপিকে রেখেছি বিরোধী ভূমিকা পালনে! তারা করবে? কেন বৃথা আশা। ওদের সে শিক্ষাই নেই, সংস্কৃতি নেই, 'পরম্পরা' নেই। তখন আমাকে, আপনাকে, আমাদের গর্জে উঠতে হবে, প্রতিবাদী বিরোধী পক্ষের ভূমিকা পালন করতে হবে। হবেই। কেবল বিভেদপন্থী বিজেপি বিদায় নয়, বামপন্থী বা জাতীয়তাবাদীদের নব বা পুনর্জন্মের জন্য অপেক্ষা নয় - সে দায় বহন করতে হবে আমাদের। নইলে যে এই নাটক হবে কৌতুক নকশা।
বিরোধী না আয়ারাম-গয়ারাম? ৩৫-তৃন + ২৫-বাম + ১২-কং
ReplyDeleteসম্পাদক/সম্পাদিকা উগ্র বিজেপিবিরোধী | তাই মনখুলে বিজেপিকে গাল দিয়েছেন, যুক্তির কোন ধার ধারেননি |বামেরা কেন শূন্য হয়েগেল, তার কোন ব্যাখ্যা নেই | মুসলিমরা সংঘবদ্ধভাবে তৃণমূল কে সমর্থন করেছে |তাই এই ফলাফল |কংগ্রেস ও বামেদের সমর্থন করতো যে মুসলিম ভোটাররাও,আজকে তারাও মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে, কারণ তারাও মনে করছে, যে এরা বিজেপি কে আটকাতে পারবে না |তাই এই ফলাফল |
ReplyDelete