Saturday 29 May 2021

পুনরুদ্ধার সম্ভব

ইয়াসের ধাক্কায় কী আদিগঙ্গার কপাল খুলবে?

কৌস্তুভ বসু

 

বরাত জোড়ে বাঁচল কলকাতা। ইয়াসের গতিপথ একটু ডানদিকে বাঁক খেলেই কল্লোলিনীর কপাল পুড়ত। তারপরেও দেখলাম কলকাতার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জলে প্লাবিত। আর এই পরিপ্রেক্ষিতেই ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে কলকাতার উপেক্ষিত জলপথ- বিশেষ করে শহরের লাইফলাইন হুগলি নদীর শাখা আদিগঙ্গা। 

এক সময় পূর্ব বাংলা (অধুনা বাংলাদেশ) ও পশ্চিমবাংলার মাঝামাঝি এই প্রধান বাণিজ্য-যোগপথটিকে মেট্রো রেলের তলা থেকে পুনরুদ্ধারের দাবিতে বিস্তর আন্দোলন হয়েছে, তবে আখেরে লাভ কিছু হয়নি। অতএব, যে ঐতিহ্যবাহী নদীপথে চাঁদ সওদাগর একদিন নৌকো করে সমুদ্রে যেতেন, কিংবা বেহুলা লখিন্দরের মৃতদেহ নিয়ে সাগরে গিয়েছিলেন, এখন সেখানে আবর্জনা-কাদায় একটা ঘটি পর্যন্ত পুরোপুরি ডোবে না। জীবন্মৃত শুয়ে আছে স্রেফ একটি নর্দমা! মজার কথা, কেন্দ্রের জলশক্তি মন্ত্রকের অধীনে ‘ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গা’র অন্তর্গত ‘নমামি গঙ্গে’ প্রকল্পের ২০১৮-১৯ সালের বার্ষিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৭ আগস্ট ২০১৭য় আদিগঙ্গার দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও সংস্কার বাবদ মোট ৩০৭.১২২ কোটি টাকা মঞ্জুর করা হয়েছে। তবে এই কোটি অর্থের সৎকার কীভাবে হয়েছে বা হচ্ছে বা হবে, সে উত্তর মা গঙ্গাই জানেন। 

সোজা কথা, শহরের অন্যতম প্রধান জলপথের স্বাভাবিক গতি রোধ করে ও ভারী বর্ষণে বন্যার প্রবণতাকে উস্কে দিয়ে শহরের প্রশাসক মায় রাজনীতির অভিভাবকেরা একাধারে নিজেদের পায়ে যেমন কুড়ুল মারছেন, শহরবাসীকেও তেমন ঠেলে দিচ্ছেন চরম বিপদের মুখে। ইয়াসের ছোট্ট ধাক্কায় কী তাঁদের টনক নড়বে? 

কোথায় গেল ‘জলের মালা’  

ঘটনা হল, আজ থেকে ষাট-সত্তর বছর আগেও, যখন সড়কপথের এত রমরমা ছিল না, তখন নদী-নালাই ছিল শহরের পরিবহন-ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান মাধ্যম। আমাদের প্রজন্মের দুর্ভাগ্য, সেই সুন্দরী তিলোত্তমাকে দেখতে পেলাম না। এখনকার রাজনৈতিক অভিভাবকেরা মুখে ‘বিলাত’ নির্মাণের কথা বলেন; তবে বাস্তবে ব্রিটিশরা শহরটাকে যা দিয়ে গিয়েছে, সেটুকু ঐশ্বর্য রক্ষা করতেও এঁরা ব্যর্থ। শহরকে আঁকতে লাগে বিশ্বকর্মার চোখ, দূরদৃষ্টি আর ক্ষুরধার বুদ্ধি যা ছিল ব্রিটিশ প্রযুক্তিবিদদের। ভৌগোলিক ভাবে কলকাতা যে পূর্ব দিকে ঢালু, সে কথা মাথায় রেখে ওরা গোটা শহরটাকে তিনটি প্রধান জলপথে (বাগবাজার, বাগজোলা ও আদিগঙ্গা) বাঁধার পরিকল্পনা করেছিল। এই খালগুলি শহরের বর্জ্য-জল নিষ্কাশনে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

সংক্ষেপে, বাগবাজার ক্যানাল সিস্টেম হুগলি নদীতে চিৎপুর লক থেকে জন্ম নিয়ে কৃষ্ণপুর খালের হাত ধরে ঘুষিঘাটার কাছে কুলটি নদীতে পড়েছে। অন্যদিকে বাগজোলা আড়িয়াদহ থেকে বেরিয়ে ঘুষিঘাটার কাছে কুলটি নদীতে মিশেছে। আর তৃতীয় আদিগঙ্গা, দইঘাট বা জিরাট ব্রিজের কাছে হেস্টিংসে হুগলি নদী থেকে বেরিয়ে খিদিরপুর, নিউ আলিপুর, টালিগঞ্জ হয়ে কুঁদঘাটের কাছে দুটো শাখায় বেঁকে একটি গড়িয়ার দিকে গিয়ে শামুকপোতায় পড়েছে ও অন্যটি ক্যাওড়াপুকুর খাল নাম নিয়ে ক্যানিং-এর দিকে গিয়ে মাতলা নদীতে মিশেছে। সব মিলিয়ে, হুগলি, কুলটি আর মাতলা নদীর মাঝে কলকাতাকে তিনটি জলপথ এমন বৃত্তাকারে ঘিরে রেখেছে, দেখলে মনে হবে কল্লোলিনীর কন্ঠে যেন কেউ জলের মালা পরিয়ে দিয়েছে (ছবি দেখুন)। 

  ব্রিটিশ প্রযুক্তিবিদের হাতে আঁকা কলকাতার জলের মালার ব্লু-প্রিন্ট

নদীপথে বাণিজ্যের সুবিধের কথা মাথায় রেখে সাহেবরা এমন ভাবেই কলকাতা শহরকে সাজিয়েছিল। দুর্ভাগ্য, আমাদের প্রশাসক ও রাজনীতির কারবারিরা সাহেবদের মূল উদ্দেশ্য অনুধাবন দূরে থাক, শহরের অকৃত্রিম সৌন্দর্যকে ধরে রাখতেও ডাহা ফেল। ঘন জনবসতি, সড়কপথে বাণিজ্যিক চাহিদা ও নগরোন্নয়নের জাঁতাকলে কালক্রমে হারিয়ে গিয়েছে তিলোত্তমার কন্ঠ-হার। এই মৃতপ্রায় খালগুলির সংস্কার কেবল কলকাতার সৌন্দর্যই বৃদ্ধি করবে না, প্রবল বর্ষণে শহরকে জমা জলের হাত থেকে দিতে পারে পরম মুক্তি।

এভাবেও ফিরে আসা যায়

প্রশ্ন উঠতে পারে, মেট্রো রেলের তলা থেকে মৃত আদিগঙ্গাকে কীভাবে বাঁচানো যায়? আপাতভাবে ‘অসম্ভব’ ঠেকলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্নেবেক বা এলওয়া নদী কিংবা দক্ষিণ কোরিয়ায় চোঙ্গিচোন নদী আশার কথাই শোনায়। কেন্নেবেক নদীর কথাই ধরুন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম-কেন্দ্র মেইন রাজ্যে প্রবাহিত। মুজহেড হ্রদের মুখ থেকে জন্মে দক্ষিণ মেইন উপসাগরে মিশেছে। এর আশপাশে অনেক হেভিওয়েট শহর রয়েছে, যেমন ম্যাডিসন, অগস্টা, স্কোহেগান, ওয়াটারভিলি ইত্যাদি। ১৮৩৭ সালে মূলত নৌবহন ও শক্তি উৎপাদনের সুবিধার্থে অগস্টায় এই নদীর বুকে এডওয়ার্ড বাঁধ নির্মাণ করা হয়। পূর্বে এখানে নানান প্রজাতির পরিযায়ী মাছ পাওয়া যেত, যেমন আটলান্টিক স্যামন, আমেরিকান শ্যাড, অনেক ধরনের হেরিঙ, অ্যালেওয়াইফ, সর্টনোজ, আটলান্টিক স্টার্গিয়ন ইত্যাদি। বিশাল বাঁধ নির্মাণের ফলে গোটা নদীর প্রতিবেশ একেবারে বদলে যায়। পাশাপাশি এডওয়ার্ড বাঁধের সাহায্যে প্রায় ৩.৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হত, যা মেইনের মোট বিদ্যুতের এক শতাংশের এক দশমাংশেরও কিছুটা কম। অতএব, এই বাঁধের ফলে লাভ বই ক্ষতিই বেশি হত। এডওয়ার্ড বাঁধ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করত ফেডেরাল এনার্জি রেগুলেটারি কমিশন (এফইআরসি) এবং পরিবেশের সুরক্ষার্থে এরা এক ফোঁটাও বিধিনিষেধ মানত না। অতএব, কেন্নেবেক নদীর প্রতিবেশ বিপুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এডওয়ার্ড বাঁধ কেন্নেবেক নদীর গলায় একপ্রকার ফাঁস হয়ে আটকেছিল। 

১৯৯৩ সালে এফইআরসি’র বাঁধ নিয়ন্ত্রণের ছাড়পত্রের মেয়াদ ফুরোলে নদী উদ্ধারে আসরে নামে চারটি পরিবেশ সংস্থা – আমেরিকান রিভার্স, মেইনের প্রাকৃতিক সম্পদ কাউন্সিল, আটলান্টিক স্যামন ফেডারেশন এবং ট্রাউট আনলিমিটেড ও তাদের কেন্নেবেক ভ্যালি শাখা। অবশ্যই কাজটি খুব একটা সহজসিদ্ধ ছিল না। অনেক টালবাহানার পর ২৫ নভেম্বর ১৯৯৭ এফইআরসি এডওয়ার্ড বাঁধ সরিয়ে ফেলার নির্দেশ জারি করে। ১ জুলাই ১৯৯৯- বাঁধটি পুরোপুরি ভেঙে ফেলা হয়। বাঁধের ভাঙনে বন্ধ নদী খেলে ওঠে। ফিরে পায় স্বাভাবিক প্রবাহ, ছন্দ। এরপর দেখা যায় ম্যাজিক। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নদীতীর সুফলা হয়ে ওঠে। ফিরে আসে অ্যালেওয়াইফ মাছের দল। দশ বছরের মধ্যে লক্ষাধিক মাছ কেন্নেবেক নদীতে বংশ বিস্তার করে। নদীটার গোটা বাস্তুতন্ত্রটাই আমুল পালটে যায়। নদীর জলের স্বাভাবিক প্রবাহে ঈগল থেকে শুরু করে বক, এমনকী কালো ভালুক প্রত্যেকে উপকৃত হয়। জলের মানও ব্যাপক উন্নত হয়। কেবল নদী নয়, নদীর সন্নিকটস্থ এলাকার চেহারাটাও পালটে যায়। নদীর সামনে প্রায় ১৭ একর জমিতে বাঁধ ও একটা টেক্সটাইল কারখানা ছিল। এখন সেখানে মুক্ত উদ্যান। এখানে গ্রীষ্মকালে কার্নিভাল হয়, প্রতি সপ্তাহে চাষীদের হাট বসে। সব মিলিয়ে এডওয়ার্ড বাঁধের বিদায়ে পুনর্জীবন লাভ করেছে কেন্নেবেক নদী।    

এলওয়া নদীর ফিরে আসার গল্পটাও আকর্ষণীয়। বাহাত্তর কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ওয়াশিংটনে অলিম্পিক পেনিনসুলায় প্রবাহিত। বিশ শতকের গোড়ায় এলওয়া নদীর উপর তৈরি হয় এলওয়া ও গ্লাইন ক্যানিয়ন বাঁধ। মূল উদ্দেশ্য, নিকটবর্তী পোর্ট এঞ্জেলেস শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ। কিন্তু বাঁধ নির্মাণের ফলে সব থেকে বিপাকে পড়ে স্যামন মাছ। ১৯৮০-র মধ্যে সমগ্র প্যাসিফিক নর্থওয়েস্ট অঞ্চলে স্যামনের সংখ্যা ব্যাপক হারে কমতে থাকে। এছাড়াও জলের নাব্যতা কমে ও নদীর আশপাশের এলাকায় বানের জল উঠে আসে। এক কথায় জোড়া বাঁধ নির্মাণে এলওয়া নদীর গোটা বাস্তুতন্ত্রটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরিবর্তন আসে ১৯৯২-এ। পাশ হয় ‘এলওয়া রিভার ইকোসিস্টেম অ্যান্ড ফিসারিজ অ্যাক্ট’। এই আইনে নদীর উপর থেকে এলওয়া ও গ্লাইন ক্যানিয়ন বাঁধ তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। প্রায় দু’ দশকের পরিকল্পনার পর ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১১'য় মার্কিন মুলুকের সব থেকে বড় বাঁধ ধ্বংসের কাজ শুরু হয়। এলওয়া বাঁধ ভাঙতে প্রায় ছ’ মাস লাগে। ২০১৪য় ভাঙা হয় গ্লাইন ক্যানিয়ন বাঁধ। আজকে এলওয়া নদী পুরোপুরি মুক্ত। ফিরে এসেছে হারিয়ে যাওয়া স্যামন। পোকামাকড় থেকে শুরু করে, পাখি, মাছ, এমনকী বড় স্তন্যপায়ী, প্রায় একশো তিরিশ রকম প্রজাতির জীব নির্ভর করে স্যামনের উপর। অতএব স্যামনের প্রত্যাবর্তনে এলওয়া নদীর গোটা বাস্তুতন্ত্রটাই বদলে গিয়েছে। 

দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সাওলে প্রবাহিত প্রায় এগারো কিলোমিটার দীর্ঘ চোঙ্গিচোন নদী যেন ফিনিক্স পাখি। এই নদী মাঝপথে হাত ধরেছে হ্যান নদীর, তারপর মিশেছে হলুদ সাগরে। ১৯৫০-৫৩-এ কোরিয়ার যুদ্ধের পর অসংখ্য মানুষ চোঙ্গিচোনের ধারে অস্থায়ী আশ্রয় নেয়। এই সময় দৈনন্দিন আবর্জনা, বালি, পলি ইত্যাদি জমতে জমতে নদীটা ক্রমশ একটা নোংরা নালায় পরিণত হয়। শহরের উন্নয়নে সাওল সরকার সিদ্ধান্ত নেয় নদীর উপর রাস্তা গড়বে। পার্ক চাঙ হি’র আমলে ১৯৫৮ থেকে শুরু করে প্রায় কুড়ি বছর ধরে চোঙ্গিচোন নদীর উপর প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার লম্বা ও ষোলো মিটার চওড়া রাস্তা বা হাইওয়ে তৈরি হয়। ধীরে ধীরে দক্ষিণ কোরিয়ার এই অঞ্চলটি হয়ে ওঠে শিল্পায়ন ও আধুনিকীকরণের এক সার্থক বিজ্ঞাপন। 

২০০৩-র জুলাই মাসে সাওলের মেয়র লী মিউঙ বাক সিদ্ধান্ত নেন চোঙ্গিচোন নদী পুনরুদ্ধার করা হবে। এটি বাস্তব রূপায়ন মোটেই সহজ কাজ ছিল না, কারণ নদীটি ততদিনে মজে মরে গিয়েছিল। তবুও সাওল সরকার পিছিয়ে যায়নি। শহরের অর্থনীতিতে নতুন জোয়ার আনতে এবং পরিবেশবান্ধব নগর-পরিকল্পনা বাস্তবায়নের স্বার্থে মৃত নদী উদ্ধারে তারা ছিল বদ্ধপরিকর। গোটা কাজটা ঠিকঠাক দেখাশোনার জন্য সাওল মেট্রোপলিটান সরকার অনেকগুলি কমিটি গঠন করে। যেমন, গোটা প্রকল্পটি তদারকির দায়িত্ব ছিল চোঙ্গিচোন রেস্টোরেশন প্রোজেক্ট হেডকোয়ার্টারের কাঁধে। আবার নাগরিক কমিটির উপর ভার ছিল নদীর পুনরুদ্ধারের ফলে সাওল মেট্রোপলিটান সরকার ও শহরের বণিককুলের ভিতর বিবাদ মেটানো। একটা ব্যস্ত শহরের মধ্যে এত বড় প্রকল্পে কাজ করার সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল যানজট নিয়ন্ত্রণ। চোঙ্গিচোন রেস্টোরেশন প্রোজেক্ট হেডকোয়ার্টার এই কাজটি চমৎকার মুন্সিয়ানার সঙ্গে পালন করে। নদী উদ্ধারের পাশাপাশি শহরের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও ঐতিহাসিক সম্পদের সংরক্ষণ ছিল গোটা প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য। সেই সূত্র ধরে চোঙ্গিচোন নদীকে কেন্দ্র করে ঐতিহাসিক সেতুদ্বয় গোয়াঙটোঙ্গো ও স্যুপিয়োগো এবং হাঁটার জন্য অনেক পথ সংরক্ষণ বিশেষ গুরুত্ব পায়। সব মিলিয়ে পাক্কা দু’বছর পর ২০০৫’র সেপ্টেম্বরে নতুন জীবন নিয়ে পুনরায় আত্মপ্রকাশ করে চোঙ্গিচোন নদী। বেঁচে ওঠা নদীর বাস্তুতন্ত্রের খোলনলচে কেবল পালটে যায় না, সাওলের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় চোঙ্গিচোন সংলগ্ন এলাকার তাপমাত্রা গড়ে প্রায় সাড়ে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে যায়। এক কথায়, একটা নদীকে কেন্দ্র করে একটা গোটা শহরের চেহারাই আমূল পালটে যায়।  

শেষ কথা

চুম্বকে কেন্নেবেক, এলওয়া কিংবা চোঙ্গিচোন নদী’র গল্প বলে, ইচ্ছে থাকলে সব সম্ভব। অতএব, মৃত আদিগঙ্গাকে এখনও বাঁচিয়ে তোলা যায়। একটা নদী কেবল একটা জলাশয় নয়, একটি শহরের ধমনী। ধমনীতে রক্ত চলাচল সহজে না হলে, যে রোগ দানা বাঁধে তাতে কেবল রক্তনালীর ক্ষতি হয় না, গোটা শরীরটা অসুস্থ হয়ে পড়ে। আদিগঙ্গার পুনরুদ্ধার গোটা শহরের ছবি পালটে দিতে পারে। কেবল নদীর বাস্তুতন্ত্র নয়, কলকাতা শহরের আর্থনীতিক চালচিত্র, মানুষের জীবনের মান বিপুলভাবে উন্নত হতে পারে। ইয়াসের খোঁচাকে ‘লাল সঙ্কেত’ মেনে ব্রিটিশ প্রযুক্তিবিদের হাতে আঁকা শহরের ব্লুপ্রিন্টকে মূলধন করে আমাদের প্রশাসকরা তাৎক্ষণিক ক্ষতিকে প্রশ্রয় না দিয়ে দীর্ঘকালীন লাভের আশায় শহরের নদীপথ নিয়ে অবিলম্বে অন্য রকম ভাবুন। চাগিয়ে তুলুন জলপথে বাণিজ্যের সম্ভাবনা, বাঁচান কলকাতার প্রতিবেশ।          

ছবির সূত্র: এ কে ঘোষ। মার্চ ১৯৯৭। ক্যালকাটা এনভায়রনমেন্টাল ম্যানেজমেন্ট স্ট্র্যাটেজি এন্ড অ্যাকসন প্ল্যান (সিইএমস্যাপ)।


2 comments:

  1. তথ্য ও যুক্তির সংমিশ্রণে খুব কার্যকরী প্রস্তাব লেখায় তুলে ধরা হয়েছে। প্রাসঙ্গিক তো বটেই। এই প্রকল্প সরকার দেশীয় বা বিদেশী প্রযুক্তি, যেভাবেই করুন না কেন, পরিবেশ রক্ষা অবশ্যই হবে, তার সাথে মহার্ঘ জ্বালানি সাশ্রয় এবং কর্মসংস্থানের নতুন দিক খুলবে। জলপথ পরিবহনের সুফল বিশ্বের তাবড় উন্নত দেশ ভোগ করছেন। আমরাই বা বঞ্চিত হব কেন? এই লেখা পরিবেশ রক্ষার গুরুত্বকে সঠিকভাবে তুলে ধরেছে। উদাহরণস্বরূপ, মাছের ভেড়ি এবং জনপদ বিস্তারের তাগিদে নির্বিচারে ম্যানগ্রোভ অরণ্য ধ্বংস, এবং সৌন্দর্যায়নের গুঁতোয় দীঘা শঙ্করপুরে সমুদ্রতীরবর্তী ঝাউবন ও অন্যান্য গাছ কেটে ফেলার বিষফল 'যশ' পরবর্তী অধ্যায়ে মোক্ষম টের পাওয়া যাবে বলাই বাহুল্য।

    ReplyDelete
  2. খুব ভালো লেখা । অত্যন্ত প্রয়োজনীয় । একাডেমিক । তথ্যপূর্ণ । কৌস্তভ বসুকে ও একক মাত্রাকে সেলাম । 🙏🏼

    পরিবেশ রক্ষায় আমাদের সকলকে (সরকারকেও) অনেকবেশি মনোযোগী হতে হবে । সাময়িক লাভ-লোকসানের কথা না ভেবে, জোড়াতালি দিয়ে ম্যানেজ করার প্রবণতা ত্যাগ করে সুস্থ স্বাভাবিক উন্নত ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে কর্মসূচী নিতে হবে । হ্যাঁ এ লেখায় শুধু সমস্যার কথাই বলা হয়নি, সাথে উদাহরণ দিয়ে (বিদেশের হলেও) দেখানো হয়েছে সমাধানের পথও । তাই এটি একটি তথ্যনিষ্ঠ স্বয়ংসম্পূর্ণ লেখা । আরো এরকম লেখা পাঠ করার আশা রাখি । 🌹😊

    ReplyDelete