যে ভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক তা আমাদের সাথীও
স্থবির দাশগুপ্ত
কুকুরটা ডাকেনি! এটাই ছিল কোনান ডয়েল-এর রহস্যগল্পে শার্লক হোমস-এর ‘ক্লু’। ওই সূত্র ধরেই তিনি একটি খুনের রহস্যের সমাধান করে ফেললেন।
কুকুরের ডাক নিয়ে অমন কিছু রহস্যঘন মুহূর্ত কোভিড-১৯-এর অতিমারীতেও! যেমন ধরা যাক, অতিমারীর প্রথম দিকে দেখা গেল, বেশির ভাগ এশীয় এবং আফ্রিকান দেশের তুলনায় অতিমারীর দাপট পশ্চিমা দেশগুলিতে অনেক বেশি। সেখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব কম, প্রতিবেশ পরিচ্ছন্ন। ৯/১১-এর মতো সাংঘাতিক কিছু ঘটে না-গেলে এইসব দেশে কুকুর সাধারণত ডেকে ওঠে না। অথচ ২০২০ সালের প্রত্যুষে ওই দেশগুলিতেই কুকুর ডেকে উঠল। আর উলটোদিকে ধরা যাক, আমাদের দেশ- আকারের দিক থেকে আমেরিকার তুলনায় তিন গুণ ছোট, লোকসংখ্যার চাপ যেখানে অন্তত চার গুণ বেশি, মানে জনঘনত্ব অনেক বেশি। সেখানে কুকুর শান্ত, নিশ্চুপ, নিদ্রাতুর। সাক্ষাৎ রহস্যই, কেননা শ্বাসতন্ত্রীয় ভাইরাস তো ভিড়ের ব্যাধি (‘ক্রাউড ডিজিজ’); তাই এখানেই বরং কুকুর ডেকে উঠবে। ডাকল না, কেন?
আমাদের সরকারি, অসরকারি বিশেষজ্ঞ, পারদর্শীরা গলা মিলিয়ে জানালেন, চোপ, ঘন ঘন সাবান চাই, প্রত্যেকে অন্তত ছয় ফুট দূরত্বে থাক, নইলে কুকুর এক্ষুনি এমনভাবে ডাকতে থাকবে যে শিউড়ে উঠবে। একশো আটত্রিশ কোটি মানুষের ঘরে ঘরে খিল তুলে দিয়ে বলা হল, পশ্চিম থেকে দেখে শেখ, নইলে দেশটা শ্মশান হয়ে যাবে। শুধু পশ্চিম না, আমরা চতুর্দিক দেখলাম; কই, ‘কিচ্ছু মিলছে না’! কেউ কেউ বললাম, নাক-মুখ ঢেকে, যথেচ্ছ ‘টেস্ট’, দূরত্ব রচনা, কাঁরাটিন আর দরজায় খিল দিয়ে যে শ্বাসতন্ত্রীয় ভাইরাস আটকানো যায়, এমন তথ্যপ্রমাণ তো কোথাও নেই। এখানে যখন অতিমারীতে মৃত্যুর সংখ্যা দশ লক্ষে এক, পশ্চিমা দেশগুলোতে তখন একশো ছাড়িয়ে গেছে। এখানে বস্তিবাসীর সংখ্যা সাড়ে ছয় কোটির বেশি, ইংল্যান্ড বা ইতালির জনসংখ্যার প্রায় সমান। কীসের তুলনা, শিখবটা কী?
ভাইরাস এবং সংক্রমণ বিদ্যায় পারদর্শীরাও জানালেন, একই মাপের জুতো সবার পায়ে গলিয়ে দিতে হবে এমন উচ্চ বিজ্ঞানের হদিশ জানা নেই। একটা বুদ্ধিমান ভাইরাস প্রজাতি সর্বত্র একইরকম আচরণ করবেই বা কেন? সংক্রমণের গতিবিধি বুঝতে গেলে কিছু জনতাত্ত্বিক (‘ডেমোগ্রাফি’) যুক্তি আছে, জনবয়স (‘মিডিয়ান এজ’) আর জনস্বাস্থ্যের হিসেব নিকেশ আছে। যেমন, পৃথুলতা যে শ্বাসতন্ত্রীয় সংক্রমণের পক্ষে উপযুক্ত, সে কথা জানাই ছিল। আর সবচেয়ে বড় কথা, যে সব অঞ্চলে অন্যান্য করোনা ভাইরাসের পরিক্রমণ ঘটে গেছে সেখানে এক ধরনের অনাক্রম্যতাও (‘ইমিউনিটি’) আছে; সেই ক্ষমতা ‘নভেল’ ভাইরাসের বিরুদ্ধেও খাটে। কারণ, আমাদের শারীরবৃত্তের (‘ফিজিওলজি’) স্মৃতিশক্তি অতি প্রখর, স্মৃতিমেদুরতাই তার মাহাত্ম্য। নইলে ভাইরাস পরিবৃত হয়ে হাজার হাজার বছর ধরে টিকে থাকা আমাদের পক্ষে অসম্ভব ছিল।
কিন্তু এসব কথা শোনার মতো কান শাসক সমাজে নেই। তার ওপর চলছে 'অতিবিশেষজ্ঞতার' যুগ, সেখানে ক্যানসার, হৃদরোগ, মধুমেহ, কিডনি আর পৈষ্টিক তন্ত্র বিষয়ে পারঙ্গমদের রমরমা; সংক্রমণ বিশেষজ্ঞরা পিছনের সারিতে। আমরা বুঝলাম, জুতো একই মাপের হতে হবে, একই নকশারও। অতএব বস্তিবাসীদের নিয়ে চলল কয়েক মাস ধরে এক নির্মম পরীক্ষা-নিরীক্ষা। সাবান, দূরত্ব আর মুখোশ যে তাঁদের কাছে এক নিষ্ঠুর বিড়ম্বনা, তা ক্ষীণদৃষ্টি, অতি-বিশেষজ্ঞদের বোধবুদ্ধির বাইরে। শ্বাসতন্ত্রীয় ভাইরাস নিয়ে বহুকালের অর্জিত, অধীত বিদ্যা ভুলতে হল, কেননা একটা অযৌক্তিক ছক জোর করে খাটাতে গেলে কাণ্ডজ্ঞান ভুলতেই হয়। এ কথাও ভুলতে হয় যে, অনিশ্চয়তার উপাদান ভাইরাসের চরিত্রেও থাকে; ধরিত্রীর আদিম সন্তান হিসেবে সেও নিয়মে বাঁধা। সেই উপাদানগুলোকে, নিয়মগুলোকে বুঝে নেওয়ার নামই বিজ্ঞান চর্চা।
কিন্তু বিজ্ঞান চর্চার সেই ময়দান এখন মরুভূমির মতো মনে হয়। তাই বুদ্ধিবিলাসী, আত্মরতিমগ্ন মানুষজনের আতঙ্ক দীর্ঘস্থায়ী হয়ে যায়। যাঁরা ভেবেছিলেন একশো মিটারের দৌড়, তাঁরা এখন ম্যারাথনে ব্যস্ত; প্রান্তিক মানুষজন ক্লান্ত, বিধ্বস্ত। এদিকে গবেষণা চলছে অবিরাম। তাতে শুধু কাঁচ না, মণি-মুক্তোও জুটছে। ‘লকডাউন’ করে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে আর দূরত্ব রচনা করে যে ভাইরাসকে বোকা বানানো যায়, এই আধুনিক বুদ্ধির উৎস ছিল প্রায় চৌদ্দ বছর আগে, এক আমেরিকান বিজ্ঞানীর স্কুল ছাত্রী কন্যার অবদান। স্কুলে ওই ‘কম্পিউটার সিমুলেশন প্রোজেক্ট’ জমা দিয়ে সেই কিশোরী পুরস্কারও পেয়েছিলেন। মুখোশ পরে সংক্রমণ রোধ করার বুদ্ধি এসেছিল গবেষণাগার থেকে, ধেঁড়ে ইঁদুরের উপর পরীক্ষায়। কিন্তু গবেষণাগারের পরীক্ষার ফল যে জনজীবনে খাটে না সে কথা পরে প্রমাণিত হয়েছে।
তাতে কী? বরং এগুলোই এখন ‘কোভিড সুলভ ব্যবহার’-এর নমুনা। এখন দেখছি, দু’ তিনটি মুখোশ, তার উপর ঢাকনা আর দস্তানা– বর্ণাঢ্য ‘কোভিড যোদ্ধা’। কিন্তু এত করেও সংক্রমণের সংখ্যা দ্রুত বাড়ল, মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ল; কুকুর এবার ডেকে উঠল– ‘দ্বিতীয় ঢেউ’। তার কারণ নিয়ে চলল চাপান-উতোর; ভোটের ভিড়, নাকি মেলা, নাকি অসভ্য, অশিক্ষিত জনমানুষের অবিমৃশ্যকারিতা? গ্রাম্য কোন্দল। আর সেই অবসরে ঢেউয়ের পর ঢেউ যে ভাইরাসের আবক্রপথের অংশ, সেই ভাইরাস বিজ্ঞান রসাতলে গেল। যাঁরা নিজেদেরকে ভাইরাসের চেয়েও শুধু শক্তিমান না, তীক্ষ্ণতর বুদ্ধিমান বলে ভেবেছিলেন, তাঁদের অনেকের কপালে এখন ভাঁজ- ভাইরাসকে তাড়া করে বেড়াবার, নির্মূল করে দেওয়ার নীতিই কি তাহলে সর্বনেশে? এখন যেন মানসম্মান বাঁচানোর প্রশ্ন, সরকার এবং বিজ্ঞানদরদী, যুদ্ধনিপুণ মানুষজনের। কিন্তু কেন?
সব কিছু বন্ধ করে, গোল গোল গণ্ডির মধ্যে ঢুকে পড়লেই অক্ষয় জীবন- এমন ধারণা যাঁদের মনে সঞ্জাত হল সেই পাণ্ডিত্যাভিমানী ডাক্তাররা কেন ভাবলেন না যে, আঙ্কিক মডেল যত দুর্ধর্ষ, যত কেতাদুরস্তই হোক, চলমান জনসমাজে তা খাপে খাপে খাটে না কোনওদিন? কেন তাঁরা ভাবলেন না যে, জনমানুষ কোনও গবেষণাগারে পালিত ধেঁড়ে ইঁদুর না? আসলে সর্বাগ্রে তাঁরাই আতঙ্কিত হয়েছেন, তারপর সেই আতঙ্কের বোঝা চাপিয়েছেন জনমানুষের কাঁধে- জনসচেতনতার রিহার্সাল। যা ছিল ভাইরাসের অতিমারী তা হয়ে গেছে আতঙ্কের অতিমারী। শাস্ত্রজ্ঞানীদের এমন স্মৃতিলোপ, একই সঙ্গে মননশীল মানুষজনের বিবেচনাশক্তির এমন অন্তর্জলী যাত্রার পূর্বেতিহাস নেই। এখন তাই অপার শূন্যতা, আর সেই অবসরে বধির সরকার তার যাবতীয় জনবিরোধী কর্মকাণ্ড নির্দ্বিধায় সেরে ফেলছে।
আর আমরা মেতে আছি ‘মিউটেশন’ চর্চায়। ভাইরাসের ‘মিউটেশন’ ঘটছে, ঘরে ঘরে ‘সেই বার্তা রটি গেল ক্রমে’! অথচ মিউটেশন মানেই নরখাদক, জীববিদ্যা কখনও সে কথা বলেনি। ডারউইন স্মরণে থাকলে আমরা বুঝতাম, ভাইরাস আমাদের ক্ষুধার্ত অতিথি হলেও প্রকৃতির নিয়মের অবাধ্য নয়। গৃহস্বামী মারা পড়লে যে তারও মৃত্যু অনিবার্য এ কথা তার জানা। তাই বাঁচবার জন্য সে রূপ পালটায়, স্বভাবও– ‘মিউটেশন’। তার ফল নানাবিধ। কেউ কেউ যেমন অতি ক্রূর, অতি ভয়ংকর হয়, তেমনি তাদের গতিও শ্লথ হয়; তারা সংখ্যায় কম, মারে প্রচুর, মারাও পড়ে। আবার কেউ হয়ে যায় যেন নিছক নিরামিষাশী, সজ্জন; হয়তো বিবর্তনের নিয়ম মেনে একদিন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। কিন্তু বাকিরাই সংখ্যাধিক, অগণন। খিদে না-মিটলে তারা বারবার আসে, ঢেউয়ের মতো।
তারা কিছুদিন সংক্রমণ ঘটায়, কিছু মানুষ বেঘোরে মারাও যান; কিন্তু বেশির ভাগই বেঁচে থাকেন, বহাল তবিয়তে। সংক্রমণের হার বেশি, কিন্তু মারণ ক্ষমতা কম বলেই তারা দীর্ঘজীবী হয়ে আমাদের সঙ্গে থেকে যায়। কেউ কেউ খিদে মিটলেও নিজ নিজ কুঞ্জে ফিরে যেতে যেতে বলে যায়, ‘আবার আসিব ফিরে’। এইভাবে সমাজসংসারে তৈরি হয় এক অনাক্রম্যতা (‘ইমিউনিটি’), যা জৈবিক, স্বাভাবিক। এই অর্জিত ক্ষমতা নতুন ভাইরাসকে করমর্দন করে বেঁধে ফেলতে পারে, নিস্তেজ করে দিতে পারে। সব অতিমারীতেই একই শিক্ষা। যে-ভাইরাস নিয়ে এত আতঙ্ক, তার বেশির ভাগই থেকে যাবে আমাদের সাথী হয়ে, মরশুমি ফ্লু-এর মতো। হাজার বছর ধরে এই একই খেলা চলছে, নতুন কিছু ঘটেনি। বরং নতুন খেলায় মেতেছে কর্পোরেট ভাবনাপুষ্ট, নিরীহমনা, বিজ্ঞানভক্তের দল।
তাঁরা নতুন যুগ রচনা করবেন, নতুন শাস্ত্র। সেখানে শুধু ভাইরাস না, সমস্ত জীব এবং মানুষও মানুষের গোপন শত্রু। নতুন শাস্ত্রে আমাদের অরুচি নেই, যদি তা জনমানুষের উপযোগী হয়, কল্যাণকর হয়। কিন্তু তাঁদের বাকচাতুরতা শুনে মনে হচ্ছে, আমাদের স্বাভাবিক, জৈবিক সংঘটনগুলো (‘বায়োলজিকাল ফেনোমেনন’) তাঁরা ভুলিয়ে ছাড়বেন; এই শরীর যেন মাত্র গতকাল জন্মানো শিশু, অসহায়, তার ‘পূর্বপুরুষ অনুপস্থিত’। তাঁরা প্রচার করবেন, এই ঘনঘোর অমাবস্যায় টিকা ছাড়া গতি নেই। অস্বাভাবিক জীবনের একমাত্র বিকল্প, টিকা। আমাদের অসহায় শরীরে টিকাই অনাক্রম্যতা এনে দেবে, নইলে সর্বনাশ। কারণ, এই ভাইরাস ‘নতুন’, লেলিহান তার জিহ্বা, গলায় মুণ্ডমালা, এমন ভয়ানক দৃশ্য মানুষ আগে দেখেনি; টিকাই তার একমাত্র শোধনমন্ত্র। এই শোধনমন্ত্র একবার না, বারবার উচ্চারণ করে যেতে হবে।
টিকা মহৎ, সে বিজ্ঞানেরই দান; এখন তা বিনামূল্যে, তাই দায়ে পড়ে সরকারেরও দান। কিন্তু দান গবেষণাগার থেকে আসুক বা সরকারি কোষাগার থেকে, তার উপযোগিতা বুঝব না? হিসেব কষতে হবে না? একটি নতুন সংক্রমণ রোধ করতে যদি অন্তত ছিয়াত্তর থেকে একশো সতেরো জনকে টিকা নিতে হয়, তাহলে দানের মাহাত্ম্য কতটা?
মহাকালীর রূপ দেখে কমলাকান্ত প্রশ্ন করেছিলেন, ‘ব্রহ্মাণ্ড ছিল না যখন, মুণ্ডমালা কোথায় পেলি?’ নির্বিরোধী, বুনিয়াদি প্রশ্ন। টিকা কপালে ঠেকিয়েও অমন বুনিয়াদি প্রশ্ন কি আমরা তুলতে পারব– ‘নতুন’ ভাইরাসটি এল কোন গোপন গুহা থেকে?
দোহাই:
১) Dr Amitav Banerjee. (Professor and Head, Community Medicine, DY Patil Medical College, Pune) 29 May 2021, https://www.nationalheraldindia.com/india/expert-view-what-evolutionary-biology-tells-us-about-coronavirus-mutants
২) Mia Rozenbaum. Masks reduce COVID-19 transmission between hamsters. 26 May 2020. https://www.understandinganimalresearch.org.uk/news/research-medical-benefits/masks-reduce-covid-19-transmission-between-hamsters/
৩) Ollie Reed Jr. Social distancing born in ABQ teen’s science project. https://www.abqjournal.com/1450579/social-distancing-born-in-abq-teens-science-project.html.
৪) Piero Olliaro, Els Torreele, Michel Vaillant. Comment. COVID-19 vaccine efficacy and effectiveness—the elephant (not) in the room. Lancet Microbe. April 20, 2021. https://doi.org/10.1016/S2666-5247(21)00069-0
🩺👌🏼👌🏼👌🏼👌🏼👌🏼🌹
ReplyDeleteডাক্তারবাবুর লেখা আমি যেখানেই পাই গোগ্রাসে গিলে ফেলি নিমিষেই । এটাও তাই করলাম । উনি যেমনটা বলে আসছিলেন প্রথম থেকে সেগুলিই বললেন সহজভাবে । কিন্তু অধিকাংশ নির্বোধ মানুষের মাথায় এগুলো কি ঢুকবে ??????? তারা তো আশেপাশের ধান্দাবাজ রক্তচোষাদের ঢাক ঢোলের আওয়াজে সেগুলোকেই বিশ্বাস করে বসে আছেন । তাই এইসব বললে বা লিখলে কিছু লোকের হাতে চোখ খুলবে হয়ত, কিন্তু অধিকাংশ মানুষই নিজেকে বলি দেওয়ার জন্য হাড়িকাঠে তুলে দেবেন । খেলা চলছে তো..... খেলা হোক । 🤸🏻♂️
ঠিক বলেছো কৌশিক। আমরা আমাদের এ পৃথিবী থেকে দূরে চলে যাচ্ছি -
Deleteক্রমশ দূর , আরো দূর। আমাদের সামাজিকতা , সংঘবদ্ধতা এই নতুন সমাজ নাকচ করে। মানুষ নিশ্চয়ই চায়না তা। কিন্তু তা চাওয়াতেই হবে। চাওয়াতে হলে কি করতে হবে ? আতঙ্কিত করে যাওয়া। রাষ্ট্র। লেফট্- রাইট মিলিটারি বুটের রাষ্ট্র। এটা প্রথম পদক্ষেপ। দ্বিতীয় পদক্ষেপ হলো তোমার কাছের লোক , তোমার প্রতিবেশীই তোমাকে আতঙ্কিত করবে। এই নাগপাশ কিন্তু সন্দেহের। কিন্তু এই কথা কে বলবে? কাউকে তো বলতেই হবে !
কাউকে তো বলে যেতেই হবে !
Amader samaje ei bhabna bojhano khub muskil.proshno karikei jabab tairee korte hai....kintu teeka nie ei gano magoj dholai amader sotti lajja dichche.apnader lekha sachol thaklei manusher keo keo to bujhbe ekdin ei katha gulor sarmarmo o gurutwo.kintu ajker dunia coronabilase akranto.,jader kichuo karar nei tader magoj dholai hoe geche.kabe j gano kshov habe sei dikei takate hochche.
ReplyDeleteডাক্তারবাবুর লেখাগুলো পড়ব, আত্মস্থ করব,প্রশ্নগসা করব, আবার ইংরেজি হরফে বাংলা লিখে যাব; এটা পরস্পর বিরোধী নয় কি, ভাবের ঘরে চুরি করা নয় কি?
Deleteপ্রশ্ন,নিরন্তর প্রশ্ন করে যাওয়াই বিজ্ঞান। অথচ সর্বত্র দ্বিধাহীন বশ্যতা। আপনি কিন্তু প্রশ্ন করে চলেছেন। ভাইরাসের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে জিজ্ঞাসাও অবিরাম ��
ReplyDeleteপড়লাম। মানসিক জোর পেলাম।
ReplyDeleteআমি ড. দাশগুপ্তর সাথে সম্পূর্ণ সহমত পোষণ করে, আরও কয়েকটি প্রশ্ন আপনাদের সাথে ভাগ করে নিতে চাই। ১) প্যানিক অ্যাটাকের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হলো শ্বাসকষ্ট। করোনা উপসর্গের সাথে বহুক্ষেত্রেই আলাদা করার কোনো উৎসাহ চিকিৎসকেরা দেখাচ্ছেন না।
ReplyDelete২) আমি কাজের সূত্রে বেশ কিছু সিলিকোসিস আক্রান্ত রোগী দেখেছি, যাঁদের শ্বাস কষ্টের লক্ষণ প্রকট হলে তাঁদের দুর্বল শরীরে করোনা টেস্ট পজিটিভ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। অনেক সময় এই সিলিকোসিস রোগীদের টিবি আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকে। সুতরাং, এই রোগীদের চিকিৎসা হবে করোনা তাড়ানোর এবং মারা যাবেন যথারীতি করোনা রোগী হিসেবে। একই ভাবে, করোনার প্রাথমিক উপসর্গ আর ডেঙ্গু, টাইফয়েড, কালাজ্বর, ম্যালেরিয়া ইত্যাদি রোগের প্রাথমিক উপসর্গ কাছা কাছি। এই রোগাক্রান্ত মানুষদের উত্তর-প্রাথমিক সংক্রমণ হিসেবে করোনার সংক্রমণ স্বাভাবিক। ফলতঃ, করোনা অতিমারী উৎসব পালনের বিভৎস মজায় গ্রামীণ, সদর, স্পেশালিটি সব হাসপাতাল এই সব রোগের চিকিৎসা বন্ধ করে শুধুমাত্র করোনা চিকিৎসার নামে একটি কুুনাট্য মঞ্চস্থ করে চলেছেন। গত দু বছর যাবৎ বাংলা সহ গোটা দেশে কোনো ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, টাইফয়েড ইত্যাদির মহামারী দুরস্ত, খুঁজে পাওয়াই গেল না। করোনা ভাইরাস কি তা হলে এমন একটি বন্ধু ভাইরাস যা লাখ দুয়েকের প্রাণ নিয়ে সারা বছর দেশ জুড়ে লক্ষ লক্ষ ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, টাইফয়েড, ম্যানেনজাইটিস রোগ-ঘটিত মৃত্যুকে আটকে দিচ্ছে?
প্রশ্নগুলো সহজ। এই প্রশ্নগুলো প্রাসঙ্গিক মনে হলে, স্থবির দা চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই প্রশ্ন গুলো আরও স্পষ্ট ভাবে যুক্ত করতে পারেন।
আপনি কি ডাঃ কুনাল দত্ত? কিছু মনে করবেন না। এমনি জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছে হলো।
Deleteকুণাল দত্ত আমার বন্ধু। আমি কুণা।ল দেব। বীরভূমের পাথর খাদান অঞ্চলের আদিবাসীদের নিয়ে পরিবেশ ও জীবিকা সংক্রান্ত বিষয়ে কাজ করি।
Deleteবিজ্ঞানের কথা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভংগীতে সোজা সরল ভাষায় আমজনতার কাছে নিরলস ভাবে বলে চলেছেন। এই বক্তব্যের প্রতি-বক্তব্য যাঁরা রাখছেন তাঁরাও এই বক্তব্য মানুন না-মানুন ignore করতে পারবেন না। এই রকমই তীক্ষ্ণ যুক্তি ও রসবোধ সম্পন্ন পরবর্তী লেখার অপেক্ষায় রইলাম।
ReplyDeleteকরোনা নামক ভাইরাস তাড়ানোর 'কঠোর বিজ্ঞানে'র শুষ্ক প্রবন্ধ পড়তে গিয়ে উঁচু দড়ের সাহিত্য পড়লাম। এত সুখপাঠ্য সরস লেখা বড় কম পড়াযায়৷ 'অযৌক্তিক ছককে জোর করে চাপাতে গিয়ে কাণ্ডজ্ঞান ' বিশারদারা বর্জন করেছেন। আপনার আগের একটা লেখায় পরেছিলাম, বোধের মহাপ্রলয় ঘটে গেছে। ফলত রাষ্ট্র আর কর্পোরেট জনবিরোধী কাজ-কাম সেরে ফেলছে।
ReplyDeleteএমন উৎকৃষ্ট, মননশীল ও অতি সময়োপযোগী লেখাটির জন্যে অসংখ্য ধন্যবাদ স্থবির বাবু।
ReplyDeleteতবে মড়ক একটা সত্যিই লেগেছে এ কথায় কোনও ভুল নেই। সে মড়ক অতি ভয়ানক। তা লেগেছে চেতনায়... মানুষের চেতনায় অতি মড়ক লেগেছে।
ভাবনার যন্ত্রটিকে সচল করল আপনার এই প্রতিবেদন, অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ReplyDeleteঅসম্ভব ভালো ও সময়োপযোগী লেখা।কিন্তু হায়,আমরা সংখ্যালঘু।
ReplyDeleteআপনি অনেকদিন আগে থেকেই এই ভাইরাস সম্পর্কে ভুল ধারণাগুলো ভাঙবার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কর্পোরেট দুনিয়ার ভাইরাস ব্যবসায়ী আর তাদের সহযোগী শাসককুল সেকথা মনবে কেন? তাতে মুনাফা আসবে কি?
ReplyDeleteএকেবারে অন্তরের কথা এমন ছাপার অক্ষরে দেখতে পাবো স্বপ্নেও ভাবিনি। তাই, ২০২০র মার্চের শেষ থেকে আমার মতো করে রসদ একত্র করছিলাম দেশি বিদেশি লেখা, সমাচার থেকে। আজ হৃদয়বাসনা পূর্ণ হলো। লেখকের উদ্দেশে নমস্কার।
ReplyDeleteভাবতে বিস্ময় জাগে মানুষ কিভাবে প্রশ্ন করতে ভুলে গেলো।বিজ্ঞান ভুলে মানুষ প্রযুক্তির দাস হলে এই পৃথিবীটা নির্বোধের জগতে পরিণত হবে, এ কথা তো আইনস্টাইন একশো বছর আগেই বলেছিলেন।আমরা শুধু সেটাই প্রমাণ করতে ব্যগ্র এখন।
ReplyDeleteসম্প্রতি করোনাভাইরাসের টিকা, এবং টিকা দেওয়া-নেওয়া নিয়ে নানান রকম বিভ্রান্তিমূলক তথ্য চোখে পড়ছে। তাদের মধ্যে কয়েকটি নিয়ে এই আলোচনা। প্রতিটি “ভ্রান্ত ধারণা” (“মিথ”) প্রথমে উল্লেখ করে তারপর সেটিকে নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হয়েছে। স্থবিরবাবুর প্রবন্ধটির পরিসরে এই আলোচনাটিও সুপ্রযুক্ত মনে হলো। সুস্থ, বিশদ আলোচনা হোক এটাই কাম্য।
ReplyDeletehttps://www.guruchandali.com/comment.php?topic=21382
সত্যিই চিন্তায় পড়লাম।
ReplyDeleteভালো লাগলো পড়ে
ReplyDeleteখুব ভালো লাগল।আমি একমত।আরো লেখা আরো জাগরন চাই।
ReplyDeleteকোভিড অতিমারীর কারণ ও তার বাস্তব সমাধানের পথ সম্পর্কে এই লেখায় কিছুই খুঁজে পেলাম না, যদিও লেখাটি সুপাঠ্য ও সাহিত্য রসে ভরপুর।
ReplyDeleteযদিও ভাইরাসের ফসিল পাওয়া যায়না তবুও প্রমান পাওয়া গেছে ৩০ হাজার বছর আগেও বহাল তবিয়তে ছিলো। সৃষ্টির শুরুর কথা বাদ দিলাম। তা আমারাতো এতগুলো বছর যখন ডাক্তার, বৈদ্য, হাকিম কেউ ছিলোনা বেঁচেতো ছিলাম। হ্যাঁ এই চিকিৎসক কুল এসে যে রোগ ৭দিনে সারতো সেটা এক সপ্তাহে সারার ব্যবস্থা করেছেন। ব্যতিক্রম নিশ্চই আছে জীবাণু ঘটিত, বিষক্রিয়া বা শল্য চিকিৎসা ইত্যাদির জন্য মানুষের আয়ু অনেক বেড়েছে। ভাইরাস ঘটিত রোগ হয় নির্মূল বা দমিয়ে রাখা গেছে। কিন্তু যদি ইতিহাস ঘাটা যায় তাহলে দেখা যাবে যে কোনো রাসায়নিক ওষুধ হোক বা শল্য চিকিৎসা পদ্ধতি হোক তার জন্য অনেক পরীক্ষা ও নিরীক্ষা কোরে তার পর প্রয়োগ করা হয়েছে।
ReplyDeleteবর্তমান যে ভাইরাস নিয়ে আমরা গেলো গেলো রব তুলে মেতে আছি কখনো একবারও কি বলেছি এটা গোদা বাংলায় সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জার একটা রকম ফের। সাধারণ স্বাস্থ্য সচেতনতা থাকলেই অন্য অনেক রোগের মত একেও ঠেকিয়ে রাখা যায়। অবশ্য যেখানে বহু মানুষের মাথায় ছাদ নেই, দুবেলা ঠিক মতো খাবার নেই সর্বপরি পরিশুদ্ধ খাবার জল নেই সেখানে স্বাস্থ্য সচেতনতা মেরু প্রদেশে refrigerator এ খাবার রাখার মতো।
এই ভাইরাস এর মৃত্যু মিছিলকে সংবাদের শিরোনামে এনে শনি ঠাকুরের থান বানিয়ে দেওয়া এক ধরনের ব্যবসাহিক চাল। হয় আমাকে পুজো দাও নাহলে মুন্ডু উড়ে যাবে। একবারো বলিনা সাধারণ টি বি বা পথ দুর্ঘটনায় আরও অনেক বেশি মৃত্যু হয়।
পরিশেষে ভ্যাকসিন নিয়ে নাচানাচি হোলো উন্মুক্ত ছুরি নিয়ে খেলতে নামা। এটা এক ধরনের জিন কাটার অস্ত্র একটু বেহিসাবী হলেই তাণ্ডব নৃত্য। তাই প্রয়োগের আগে দরকার অনেক স্থিতধি, অনেক সাধনা। চট জলদি সিদ্ধি লাভ করার চেষ্টা লোক ঠকানোরই নামান্তর। স্থবিরকে সাধু বাদ।
আমি ডাক্তারবাবুর লেখা প্রথম বই পড়ি "স্বপ্নের সত্তর মায়া রহিয়া গেল"তারপরথেকে ওঁর পেশেন্ট হবার দৌলতে শংকর কে সব লেখা পড়াতে।বলতেন লেখা গুলো অন্যদের পড়াতে। আমরা আপনার মতোই পাঠাতাম। কিন্তু আমাদের তথাকথিত শিক্ষিত উটপাখির মত বালিতে মুখ গুঁজে থাকে মানুষগুলোকে বোঝানো দূরে থাক বেশ কিছু বিরূপ কথা শুনতে হয়েছে ।তবে আমাদের চোখ খুলেছে অযথা আতঙ্ক থেকে মুক্ত হয়েছি এটাই বড় পাওয়া।
ReplyDeleteযেটা বুঝলাম এই নয়া-কোভিড মোকাবিলার নামে মুখোশ দূরত্ব হাতধোয়া ভ্যাক্সিন ইত্যাদি সবই রাষ্ট্রীয় ছল কিংবা কর্পোরেট ধোঁকাবাজি। কিন্তু সাধারণ জনগণ হিসেবে আমরা কি ওই চার পন্থাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব? সেটা স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। আবার অনেক তাবড় রাষ্ট্রপ্রধানকে দেখেছে মুখোশ ইত্যাদি নিয়ে তাচ্ছিল্য করতে। যেমন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিজেও মুখোশ পড়তেন না। ইংল্যান্ড ইতালির রাষ্ট্র প্রথমে 'স্বাভাবিক ইমিউনিটি' অর্জনের লক্ষ্যে প্রথমে কোন মুখোশ/মেলামেশার বিধিনিষেধ রাখেনি। আবারও প্রশ্ন, একজন অ-ভাইরোলজিস্ট অ-চিকিৎসক অপগন্ড হিসেবে আমি কোন পথে যাব?
ReplyDeleteসাহিত্য হিসাবে ভালো । বৈজ্ঞানিক যুক্তিগুলি দুর্বল । সেই ফিরে চল মাটির টানে গোছের
ReplyDeleteআপনি যদি দয়া করে বিরুদ্ধ সবল বৈজ্ঞানিক যুক্তি কিছু আমাদের মত নিম্ন বুনিয়াদি শিক্ষিত সাধারনের জন্য জ্ঞাপন করেন তাহলে আমরা কিছুটা এই ব্যাপারে আলোকপ্রাপ্ত হতে পারি।
Deleteআমি আপনাদের পড়াশোনা ও আলোচনা পড়লাম । সব কথা বোঝবার মতো শিক্ষাগত যোগ্যতা আমার নেই। তবু ও জানতে চাই এই কোভিড ১৯ এ পজিটিভ হয়ে এত মানুষ তাহলে মারা গেল কেন? এখনও তাহলে পজিটিভ হচ্ছে কেন ? ভ্যাকসিন নেওয়ার প্রয়োজন নেই মনে করেন ? আপনারা গভর্নিং বডির সদস্য হয়ে আপনাদের মতামত দিলে জন সাধারণের উপকার হতো না ? আমি কোভিড পেশেন্ট ছিলাম জানুয়ারি মাসে। আমি ভ্যাকসিন নিতে চাই। তাহলে নেওয়ার দরকার নেই বলছেন? আমি সিওপিডি ,কো মর্বিডিটির পেশেন্ট । আমার বয়স ৬১+ ।কোভিডে প্রায় চলে যাচ্ছিলাম । পরিবারের দুজন সদস্য কে হারিয়েছি ঐ জানুয়ারি মাসে । সেই জন্য আপনারা যে আলোচনা করছেন তা নিয়ে সংশয় রয়েই গেল। আপনারা সবাই বিদগ্ধ মানুষ তাই কোভিড কে শুধু মাত্র আলোচনা স্তরে না রেখে আপনাদের দৃষ্টিকোন থেকে কি করে সাধারণ মানুষকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করা যায় , সরকারি স্তরে জানান
ReplyDeleteসম্পূর্ণ সহমত পোষণ করি।
Deleteসহমত, সোজা করে বলুন ভ্যাকসিন নেওয়া উচিৎ না উচিৎ না? এটা স্পষ্ট করুন. দ্বার্থহীন ভাষায় গ্রামের চাষী রা যে ভাষায় বুঝবে সে ভাষায় বলুন, এই সংকট সময় পেরিয়ে গেলে আবার আমরা সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করবো.
Deleteযাদের বাড়িতে কেও মারা যাইনি তাদের জন্য করোনা নেই আর যাদের মারা গেছে তারা জানে এর ভয়ঙ্কর দিক, তাদের আর বোঝাতে হয়নি. বিরুদ্ধ মতের একটা জনপ্রিয়তা থাকে, এটাই স্বাবাভিক কিন্তূ এই জনপ্রিয়তা কুড়োবার সময় এখন নয়. অত্যান্ত সম্মানের সাথে জানাই হেয়াঁলি না করে সোজা সাপ্টা বলুন.
কিছু প্রশ্ন আছে, কিছু মন্তব্য। তার জন্য আলাদা করে নিবন্ধ রচনার দরকার দেখি না।
ReplyDeleteকেউ কেউ আমার নিবন্ধে সাহিত্যরস যতটা পেয়েছেন, বিজ্ঞানবার্তা ততটা পাননি। সেটা হয়তো আমারই দুর্বলতা। তবে সাধারণ জনসমাজে বিজ্ঞান আলোচনায় "কঠিন কঠোর গদ্য" এবং ব্যাকরণ কৌমুদি পরিহার করাই ঠিক বলে আমি মনে করি। সেই শিক্ষা আমি পেয়েছি পুরনো যুগের বিজ্ঞানলেখকদের কাছ থেকে। আমি নিজেই প্রাচীন, তাই সেই পথই আমার কাছে উপাদেয়। তাতে অতিসরলীকরণের ভয় থাকে ঠিকই; তাই যথাসম্ভব সেই ভয়ংকর পথ এড়িয়েও যেতে হয়। কাজটা দুরূহ, কিন্তু তাতে কাজ হয়।
কেউ আমার নিবন্ধে বর্তমান সংকট থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজতে চেয়েছেন, এবং হতাশ হয়েছেন। হওয়ারই কথা, কেননা একটি সংক্ষিপ্ত নিবন্ধে সেই আলোচনা করা যায় না। তাই উপায় বাতলে দেওয়ার দুঃসাহস এই নিবন্ধে দেখাইনি। আমি শুধু এভোলিউশনারি বায়োলজির দৃষ্টিকোণ থেকে বর্তমান সংকটকে কীভাবে দেখা সম্ভব সেইটুকু আলোচনা করেছি। পরিত্রাণের পথ নিয়ে অন্য কখনও আলোচনা হতে পারে।
কেউ আবার বলেছেন, এই নিবন্ধে নাকি "বৈজ্ঞানিক যুক্তিগুলি দুর্বল"। দুর্বলতাগুলি দেখাননি। দেখালে সবল হওয়ার চেষ্টা করব নিশ্চয়ই।
মুখোশ, দূরত্ব, সাবান আর ভ্যাক্সিনকে স্রেফ "কর্পোরেট ধোঁকাবাজি" হিসেবে দেখতে চেয়েছেন। তা হতে পারে বটে, নিশ্চয়ই পারে; কিন্তু শুধু সেটুকু বললে চলে না। আরও ব্যাখ্যা দরকার। ব্যাখ্যা ছাড়া বিজ্ঞান অচল, বিজ্ঞান আলোচনাও। সেই সুযোগ এই নিবন্ধে আসেনি।
"এত মানুষ মারা গেল কেন", তা নিয়ে কেউ বিমর্ষ। সহানুভূতি জানিয়ে শুধু এই কথা মনে করিয়ে দিতে চাই যে, স্বাভাবিক সময়েই আমাদের দেশে প্রতিদিন আটাশ হাজার মানুষ মারা যান। শুধু নিউমোনিয়াতেই প্রতি বছর কয়েক লক্ষ মারা যান। আর গত এক বছরে কে যে সত্যিই কীসে মারা গেলেন তার হিসেব আমরা জানি না; যেন কোভিড এসেছে বলে মৃত্যুর অন্যান্য দূতগুলো পগাড় পার!
কেউ ভ্যাক্সিন নেবেন কিনা সেকথা অন্য কেউ বলে দেবে কেন? সব দিক ভেবে-চিন্তে যদি মনে করেন, ভ্যাক্সিন আপনাকে রেহাই দেবে তাহলে নেবেন। আর যদি সংশয় থাকে তাহলে, না। তবে ইদানীং মনে হচ্ছে, সংশয়ের স্বাধীনতাও খর্ব হতে চলেছে।
তাই একটু ভাবতে বলা ছাড়া আমার মতো অতিক্ষুদ্র লেখকের পক্ষে কীই বা করার আছে। ভাবলে উত্তরণের পথও বেরোবে।
অন্য যারা আমার লেখার প্রশংসা করেছেন, তাঁরা সুস্থ থাকুন, আনন্দে থাকুন, এই কামনা করি।
নমস্কার।
ঠিক উপরের পোস্টটি ডাঃ স্থবির দাশগুপ্তের। ওনার নামটি টেকনিকাল কোনও কারণে দ্রষ্টব্য হয়নি।
ReplyDeleteওনার এই অসাধারণ লেখাটি তুমুল ভাইরাল ও চর্চিত হয়েছে। উৎসুক পাঠকেরা বহু নতুন উপাদান ও উন্মোচনের সন্ধান পেয়েছেন। স্বভাবতই কিছু প্রশ্ন ও তর্কও উঠেছে। উনি সে সবের একটি সার সংকলন করে উপরে উত্তর দিয়েছেন। এই কঠিন সময়ে স্থবিরদার আলোকোজ্জ্বল নিবন্ধটি আগামী দিনে পথ প্রদর্শক হবে। তর্ক-বিতর্ক, উপলব্ধি অর্জনও চলবে। এইভাবেই মানুষের জ্ঞানভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়। স্থবিরদাকে ধন্যবাদ। ওনার আরও লেখায় আগামী দিনে এই ব্লগ পুষ্ট হবে।
'একক মাত্রা' র সুচিন্তিত দায়িত্বসম্পাদনে লেখাটি প্রকাশিত হলেও , রচনাটি নিঃসন্দেহে বহুমাত্রিক ।
ReplyDeleteচিকিৎসা শাস্ত্র, তার বাজার , জীববিদ্যার খুঁটিনাটি , সরকারি বেসরকারি সমাজনীতি (পড়ুন পলিটিক্স ), রাজ্য কেন্দ্র পরস্পর চাপানউতোর ইত্যাদি প্রভৃতি বাদ দিয়েও স্বল্প অঙ্গনে রচনাটি যে বিরাট এক দিকনির্দেশ করে গেল অবলীলায় , কোন " শৃন্বন্তু বিশ্বে ..." অথবা "শুনহ মানুষ ভাই ..." " মিত্রো ...." বা " কমরেড... " ছাড়াই তা হল এক মানবজীবনের বহু আয়াসসঞ্জাত আত্মবিশ্বাস এবং সাধারণ-জ্ঞান নির্ভর জীবনশৈলী । দুটির কোনটিই বিগ বা স্মল বাজার এ পাওয়া যায় না , অ্যামাজন বা ফ্লিপকারটেও নয় । বহু যুগ ধরে তারা অর্জিত । স্পষ্টদৃষ্ট না হলেও যারা বয়ে চলে নিরন্তর কাটা-ছেঁড়ায় , বর্জনে মিশেলে , শিক্ষা ও অভিগ্মতায় ভর করে আমাদের পূর্বমানুষের বোধ ও লালনে পালনে অভ্যেস সেজে ।
লেখাটি তে আমি পড়লাম জ্যান্ত মানুষ এর চেতনা র কথাটা, আরও অনেক কিছুর সাথে । অজান্তে পুতুল না বনে যাওয়ার সাবধানবাণীটি ও । সমাজে থাকতে গেলে তিন বাঁদরের মিশেল যে হতেই হয় প্রায়ই আমাদের সব্বাইকেই কমবেশি - সে অসহয়তাটুকু ও । শুধু চেতনাই পারে অনেক মুশকিল আসান করতে এবং তা যে সবসময় আমাদের চিরচেনা পাঠ্যশিক্ষার দু'মলাটেই রয়ে গেছে এমনটা নয় , তা ছড়িয়ে রয়েছে চারপাশে , বিশেষতঃ অনাবিল প্রকৃতিতে, আমাদের জীবনচর্চায় স্বাস্থ্যবিধিতে । অনাক্রম্যতা হটাৎ অনুশাসনে যে সহজলভ্য নয় , প্রতিদিনের জীবনচর্চার পুঙ্খানুপুঙ্খে - যা বাবা মা দাদু ঠাকুমারা পই পই করে গেছেন বলে তার ই পরতে পরতে অনেকটাই - সে কথাটাও খানিকটা । ভুল বললাম ?
এই চেতনা একমাত্রিক নয়, বহুমাত্রিক । শিক্ষিতর ভাবার দায়িত্ব যতটা শেখানোর দায়িত্বও মনে হয় ততটাই ।
তাই লেখকচিকিৎসক এবং প্রকাশক কে আমার শ্রদ্ধা জানাই ।
ধন্যবাদ ও ।
অনির্বাণ পুরকায়স্থ
পরিষ্কার করে বুঝতে পারলাম না। আচ্ছা তাহলে কি আমরা:
ReplyDelete১) টিকা নেবো না?
২) মাস্ক পড়বো না?
৩) হাত sanitize করবো না?
একটু পরিষ্কার করে বললে আমাদের মতো মানুষদের সুবিধা হয়।
ডক্টর স্থবির দাশগুপ্তের এই প্রতিবেদন শুধুই প্রাসঙ্গিক নয়,যথেষ্ট ভাবনাপুষ্ট মননঋদ্ধ।আমি বরাবর কোদালকে ফুলমালা না বলে কোদাল বলতে ভালবাসি।কিন্তু সমাজ সাহিত্য রাজনীতি কিছুটা আয়ত্ব করলেও চিকিৎসাবিদ্যার মানুষও নই এ ব্যাপারে তেমন কিছু জানাও নেই।তথাপি বারবার যে প্রশ্ন উত্থাপন,চলতি সুশিক্ষিত বিশেষজ্ঞদের কথার মধ্যে এমনকি W.H.O. বা অন্য নামকরা মহল থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম কথা শুনে (অসঙ্গতিপূর্ণ) প্রচণ্ড অস্বস্তির এক মরুভূমিতে জ্ঞানতৃষ্ঞায় ছটফট করছিলাম,ঠিক সেই সময় স্থবির দাশগুপ্তের এ লেখায় মরুদ্যান পেলাম।উনি অন্য অনেক সুশিক্ষিত উচ্চশিক্ষিত যশস্বী মানুষের মতো কোদালকে ফুলমালা না বলে কোদাল বলেছেন আর আজকের এই কোভিড 19 প্যানডেমিক ও তার নানারকম চলতি বিধিনিষেধ,ভাবনার অন্তঃসারশূন্যতা সম্পর্কে আমাকে/আমাদের অনেককেই মনে হয় অন্তর্দৃষ্টি দান করলেন।এ জন্য স্থবিরবাবুর কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
ReplyDeleteসুখপাঠ্য। তবে, 'কোথা হইতে কী হইয়া গেল, দস্যু মোহন পলাইয়া গেল' সিনড্রোমে আক্রান্ত। ভাইরাস আয়ে কাঁহা সে, ভাইরাস যায়ে কাঁহা রে সম্যক জানা, নিদেনপক্ষে বোঝা গেলে এককমাত্রীয় হতে পারত। হা হতোস্মি!
ReplyDelete