কর্পোরেট জমানার লক্ষ্যে
অনিন্দ্য ভট্টাচার্য
৮ নভেম্বর কালো টাকার বিরুদ্ধে মোদির তথাকথিত
অভিযান ঘোষণার পর গত ৯ নভেম্বর এই ব্লগে একটি তাৎক্ষনিক লেখা লিখেছিলাম। তারপর বেশ
কিছুদিন পার হয়েছে। যে আশঙ্কাগুলি প্রকাশ করেছিলাম তা কড়কড়ে বাস্তব রূপ নেওয়ায়
অনেকে অনুরোধ করেছেন এ বিষয়ে আরও কিছু আলোকপাত করতে। ইতিমধ্যে রিজার্ভ ব্যাংকের
প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন ও অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু একই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
গতকাল একটি টুইটে রঘুরাম এও জানিয়েছেন, আদানির কোম্পানির ওপর পরিবেশ মন্ত্রকের লাগু
করা ২০০ কোটি টাকার জরিমানা মোদি প্রত্যাহার করে নিয়েছে। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে,
কার টাকা কার ঘরে তুলে দিতে মোদি আগ্রহী এবং কেন এই অভিযান।
দু-তিনটি বিষয় খুব স্পষ্ট। এক, উত্তরপ্রদেশের
নির্বাচনে 'ক্যাশ অ্যাডভান্টেজে' থাকার জন্য নিজেদের কালো টাকাগুলিকে নিরাপদে
সরিয়ে বিরোধীদের কালো টাকা নিয়ে বিপদে ফেলার জন্য এ এক রাজনৈতিক চাল। এ কথা আগের
লেখাতেও বলেছি। দুই, এই অভিযানকে যে খুব গোপনে রাখা হয়েছিল তাও নয়। গত ২১ অক্টোবর
'বিজনেস লাইন' পত্রিকায় একটি প্রতিবেদনে স্পষ্ট ইঙ্গিত ছিল। খুবই পরিকল্পিত ভাবে,
মোদি ঘনিষ্ট শিল্পপতিদের টাকা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বিদেশে গত দশ মাস ধরে এবং নিজ পার্টির
কালো টাকাগুলোও নানা ভাবে সরিয়ে বা সাদা করে স্বস্তিকর অবস্থায় পৌঁছে তবে এই
অভিযানে মোদি নেমেছে। তিন, গত আড়াই বছরে প্রায় সর্বস্তরে ব্যর্থ মোদির এমন একটা
চালের দরকার ছিল যা দিয়ে বিরোধীদের বিপদে ফেলা যায় আবার নিজের হারানো জনপ্রিয়তা
কিছুটা পুনরুদ্ধার করা যায়। কারণ, উত্তরপ্রদেশ ও ২০১৯'এর লোকসভা নির্বাচন যদি তার
পার্টি জিততে না পারে তবে আগামী ভবিষ্যৎ তাদের পক্ষে অন্ধকারময়। আর
আদানি-আম্বানিরা যে পরিমাণ অর্থ মোদির পেছনে খরচ করেছে তার উশুল তারা তুলতে না
পারলে মোদির পক্ষে সমূহ বিপদ।
এ তো গেল রাজনৈতিক কূটকচালির কথা। কিন্তু
অর্থনীতিরও একটি মোড় তিনি কর্পোরেটদের অনুকূলে ঘোরাতে চাইছেন। সেটিই সব থেকে
গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, মন্দায় চলা ভারতীয় অর্থনীতির পরিপ্রেক্ষিতে তার সামনে পথ
ছিল একটিই – সাধারণ মানুষের সঞ্চিত অর্থ সব ব্যাংকে এনে ফেলা এবং বিপুল অর্থ
সমাগমে যে চাপ ব্যাংকের ওপর পড়বে তা লঘু করতে অবিলম্বে ব্যাংকগুলিকে সুদের হার
কমাতে বাধ্য করা। আর তা সুযোগ করে দেবে বড় বড় কর্পোরেটদের কম সুদে ব্যাংক থেকে ঋণ
গ্রহণে এবং যথারীতি এতদিনের পরম্পরা মেনে তা শোধ না করে আত্মসাৎ করতে।
দ্বিতীয়ত,
নিজ অর্জিত অর্থের ওপর সাধারণ মানুষের যাতে পূর্ণ অধিকার না থাকে এবং তা কর্পোরেট-নির্ভর
হয় তা সুনিশ্চিত করতে প্লাস্টিক মানি ও অনলাইন ব্যবস্থার দিকে তাদের ঠেলে দেওয়া। এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। আমরা জানি, আমেরিকার অর্থনীতি এখন ৮০ শতাংশই পরিষেবা
শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। এর অর্থ, তথ্য প্রযুক্তি ও ফিনান্সিয়াল লেনদেনই এখন
অর্থনীতির মুখ্য কার্যাবলী ও মুনাফার উৎস। যদি প্লাস্টিক মানি ও অনলাইন ক্রয়ের
সঙ্গে ভারতীয় বিশাল জনগোষ্ঠীকে জুড়ে দেওয়া যায় তবে প্রতিটি কেনাবেচায় ইন্টারনেট
গেটওয়ে, ডিজিটাল ওয়ালেট, ইন্টারনেট ব্রাউজার, ইমেল ব্যবস্থা, স্মার্ট ফোন ইত্যাদি
কর্পোরেটওয়ালাদের যে প্রভূত মুনাফার সঞ্চার হয় তা যে কোনও খোঁজখবর রাখা মানুষই
জানেন। সমস্ত অর্থ যাবে এই ডিজিটাল পরিষেবাওয়ালাদের কাছে আর এই প্রক্রিয়ায় শুকিয়ে
মরবে দেশের বিরাট সংখ্যক ছোট উৎপাদক, ছোট চাষী, ছোট দোকানদার, খুচরো ব্যবসায়ী
প্রমুখ যারা অনেকটাই নগদে লেনদেন ভিত্তিক অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীল। তবে তাঁদেরও এই
প্লাস্টিক-নির্ভর ডিজিটাল অর্থনীতির আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা চলবে। কারণ, যত
মানুষকে এই ব্যবস্থায় আনা যাবে তত তাঁদের অর্থ সঞ্চয়ের ওপর ডিজিটাল
পরিষেবাওয়ালাদের কর্তৃত্ব চেপে বসবে এবং তাঁদের প্রতিটি লেনদেন থেকে তারা মুনাফা
লুটবে। এইভাবে এক সার্বিক মার্কিন-অনুকূল কর্পোরেট ব্যবস্থার আওতায় ভারতীয় অর্থনীতিকে নিয়ে আসতে
মোদি বদ্ধপরিকর। ভারতীয় অর্থনীতির পরম্পরা, মানুষের ব্যবসার ঐতিহ্য, আপেক্ষিক
অর্থনৈতিক স্বাধীনতা- এসবের নিরিখে এই কাজটি সম্পাদন করা অতীব জটিল ও দুঃসাধ্য
কিন্তু ভারতকে আমেরিকার ধাঁচে একটি সম্পূর্ণ কর্পোরেট-নির্ভর দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে
মোদি তৎপর। আর এ কাজে যে তার সম্পূর্ণ ভরাডুবি হবে তাও বেশ নিশ্চিত করে বলা যায়। ইতিমধ্যে, দেশের জল জমি ও জঙ্গল
লুন্ঠনের যে কর্পোরেট কার্যাবলী ছিল তা মানুষের প্রতিরোধের সামনে পিছু হঠেছে; এখন
তাই এইভাবে মানুষের সঞ্চয় কেড়ে তাকে স্থায়ী ভাবে কর্পোরেট ব্যবস্থার সঙ্গে জুড়তে
না পারলে মুনাফা অর্জনের আর বিশেষ কোনও উপায় পাওয়া যাচ্ছে না। তাই, আরও একটি
লড়াইয়ের সূত্রপাত হল– যে, আমরা কর্পোরেটের নাগপাশ বাঁধনে আষ্টেপৃষ্টে বাঁধা পড়ব না
অর্থনৈতিক স্বাধীনতার জন্য নতুন লড়াইয়ে জয়ী হব।
কালো টাকার বিরুদ্ধে অভিযানের
নাম করে মোদি আসলে একটি অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে লাগু করতে চাইছে যা সার্বিক ভাবে মার্কিন অর্থনীতির পরিষেবা-নির্ভর কর্পোরেট
দ্বারা ও কর্পোরেটদের জন্য একটি মেগা প্রকল্প। কালো টাকা উদ্ধারের কোনও পরিকল্পনা তার
নেই, শুধুমাত্র নির্বাচনে বিরোধীদের এ নিয়ে কিছুটা বিপদে ফেলা ও মানুষকে ধোঁকা দিয়ে,
কেঁদেকেটে আসল কাজটি সমাধা করা।
একদম একমত । ফেসবুকে শেয়ার করতে চাই ।
ReplyDeleteঅবশ্যই শেয়ার করুন।
DeleteCould Not Agree
ReplyDeleteশেয়ার করলাম
ReplyDeleteশেয়ার করলাম
ReplyDeleteবেশ।
DeleteThanks for exposing the conspiracy behind demonetization.
ReplyDeleteThanks Sumantada
Delete21st October er Business Line er kon article ektu bolben??
ReplyDeletehttp://www.thehindubusinessline.com/money-and-banking/coming-soon-to-your-wallet-2000-notes/article9252371.ece
DeleteThe Reserve Bank of India has very nearly completed preparations for introducing this new high-value currency, sources said.
DeleteThe notes have already been printed, and their despatch from the currency printing press in Mysuru has commenced.
The move assumes significance in the wake of a demand from some quarters that notes of ₹1,000 and ₹500 denominations be withdrawn to prevent hoarding of black money.
প্রথম প্যারা সম্পর্কেঃ ওটা রঘুরাম রাজন নয়, রাজনের ফেক অ্যাকাউন্ট। আর খবরটা ২০১৪ সালের। ঐ ২০০ কোটি টাকার জরিমানা প্রত্যাহারের নিউজটা।
ReplyDeleteরঘুরাম রাজনকে টুইটে ফলো করি। ওর টুইটে গেলে পাবেন। এখানে লিংক দেওয়ার চেষ্টা করছি। ফেক নয়।
Deletehttps://twitter.com/ArunSFan/status/798035201007894528
DeletePlease see the 'Business Standard' news here below of July 2, 2016, the news is real:
Deletehttp://wap.business-standard.com/article/current-affairs/govt-cancels-rs-200-crore-green-fine-on-adani-116070101477_1.html
https://twitter.com/ArunSFan/status/798035201007894528
ReplyDeletehttp://www.thehindubusinessline.com/money-and-banking/coming-soon-to-your-wallet-2000-notes/article9252371.ece
ReplyDeleteThe Reserve Bank of India has very nearly completed preparations for introducing this new high-value currency, sources said.
The notes have already been printed, and their despatch from the currency printing press in Mysuru has commenced.
The move assumes significance in the wake of a demand from some quarters that notes of ₹1,000 and ₹500 denominations be withdrawn to prevent hoarding of black money.
21st October er Business Line er kon article ektu bolben??
ReplyDeleteওপরে তো দেওয়া আছে লিংক। আবার দিলাম এই নিচেঃ
Deletehttp://www.thehindubusinessline.com/money-and-banking/coming-soon-to-your-wallet-2000-notes/article9252371.ece
The Reserve Bank of India has very nearly completed preparations for introducing this new high-value currency, sources said.
The notes have already been printed, and their despatch from the currency printing press in Mysuru has commenced.
The move assumes significance in the wake of a demand from some quarters that notes of ₹1,000 and ₹500 denominations be withdrawn to prevent hoarding of black money.
Excellent write up. Standing in the queue at ATM counters on three occasions I found some bengali youngsters speaking in favor of Modi's move accusing congress for all the black money piling up under their patronage. I had to ask few rude questions to stop them on all occasions. Who are they? Are they grafted to mobilize opinion? Also notable is that none of the electronic news channels found anyone for interview who is really angered. It seems Bengalis, who are known for their slant towards universal critique are coming of age to join the development band wagon unshackled by MODI!!
ReplyDeleteAm I cynical if I find a design in it? - Anindya Sen
Its not true that Bengalees are joining the development band wagon unshackled by Modi! Yes, a few affluent Bengalees who are prone to online transaction and keep heaps of plastic money in their wallet are supporting this move. But the poor folks are getting angry as the day passes as their business and income are getting dry. At the first instance, a lot many people supported this move of Modi due to its melodramatic elements, but its now waning away!!
Delete