Monday 13 August 2018

GKCEIT ছাত্র-ছাত্রীদের আবেদন

এই বিপন্ন ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে দাঁড়ান
কলকাতায় একাদেমি অফ ফাইন আর্টস'এর সামনে ধর্ণায় বসা ছাত্র-ছাত্রীরা


আমরা কারা -
আমরা মালদা জেলার কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান GKCIET'র সাধারণ ছাত্রছাত্রী।
আমাদের সাথে কী হয়েছে -
(২+২+২) মডিউলার প্যাটার্নে ৬ বছর পড়বার পর জানতে পারলাম আমাদেরকে দেওয়া সার্টিফিকেটটি চাকরি ক্ষেত্রে বা উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার যোগ্যই নয়, অর্থাৎ অবৈধ।
তাহলে আমরা এখন কোন জায়গায়?? -
৬টি বছর, অগুন্তি টাকা ও ঘামঝরানো পরিশ্রম নষ্ট করে আমরা এখন কার্যত মাধ্যমিক পাশ করা ৮০০ জন ছাত্র-ছাত্রী, যাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।
আমাদের কী দোষ?? -
আমরা প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি ও মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রীর ওপর অন্ধ বিশ্বাস রেখেছিলাম। উল্লেখ্য, GKCIET'র উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি ও মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী।
আমাদের মূল দাবী কী কী?? -
১) ন্যায্য বৈধ সার্টিফিকেট চাই।
২) বিটেক'এর দ্বিতীয় বর্ষে কলেজেই ল্যাটেরাল এন্ট্রির মাধ্যমে যোগ্য ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি নিতে হবে।
আমরা আমাদের দাবি আদায়ের জন্য কী কী পদক্ষেপ নিয়েছি -
আমরা আমাদের দাবি আদায়ের জন্য GKCIET কর্তৃপক্ষ, MHRD, NIT দুর্গাপূর কর্তৃপক্ষ, MAKAUT কর্তৃপক্ষ, UGC'র আঞ্চলিক কার্যালয় (কলকাতা) ও শেষত রাজ্যপালের দোরে ঘুরেছি। শুধু তাইই নয়, জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছেও গেছি।
আমরা কীভাবে পদক্ষেপ নিয়েছি?? -
চিঠি পাঠানো, অবস্থান, অনশন, মিছিল, প্রতীকী রেল ও পথ অবরোধ ইত্যাদি আমাদের করতে হয়েছে।
আমরা কী পেয়েছি?? -
শুধু আশ্বাস আর আশ্বাস। আর, পুলিশের লাঠি, কর্তৃপক্ষের চোখ রাঙানি উপেক্ষা ও অমানবিক আচরণ এবং জেলা প্রশাসনের ভুয়ো প্রতিশ্রুতি। আন্দোলন করার কারণে কতবার যে হসপিটালে ভর্তি হতে হয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। এত কিছু সত্ত্বেও আমাদের সাহস যুগিয়েছে সাধারণ মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন।
আমরা এখন কোথায়?? -
আমাদের কিছু বন্ধু মালদাতেই এখন অনশন-অবস্থান করছে এবং অন্যদিকে কিছু বন্ধু কলকাতায় এসেছে দাবি ছিনিয়ে নেওয়ার লড়াই লড়তে।
আমাদের এই মুহূর্তের স্লোগান -
হয় বৈধ সার্টিফিকেট নিয়ে বাড়ি ফিরব, নয় আমাদের লাশ ফিরবে
---------------------------
সরকার, প্রশাসন, আইনের প্রতি আমাদের আর আস্থা নেই। আমরা আমাদের ন্যায্য লড়াই লড়ে যেতে চাই আপনার সক্রিয় সমর্থনের ওপর দাঁড়িয়ে। ছেলে-মেয়ে বা ভাই-বোনের মত এই ৮০০ ছাত্রছাত্রীর পাশে সমাজের একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আপনাকে পাশে চাই।

সৌজন্যঃ অর্ণব ঘোষ।

Tuesday 7 August 2018

বাংলাদেশঃ রাস্তা বন্ধ

রাষ্ট্র মেরামত হচ্ছে
রাণু ঘোষ

'কী ছিলেন মুজিব ? বীর ? প্রতারক ? অনমনীয় একগুঁয়ে উচ্চাকাঙ্খী, চরম ক্ষমতালোভী একজন একনায়ক ? একটা জবাব টেনে বের করে আনতে না পারলে বাংলার ভাবী ইতিহাসের পরিরেখাটি স্পষ্ট হয়ে উঠবে না। বারংবার শেখ মুজিবের ঐতিহাসিক ভূমিকাটি অনির্ণীত থেকে যাচ্ছে বলেই বাংলার, বাঙালি জাতির, ইতিহাসের পরিক্রমণ পথটি ক্রমাগত ঝাপসা, অস্পষ্ট এবং কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে উঠছে। এই ঐতিহাসিক অলাতচক্র যার মধ্যে দিনের আলোতে সবাই পথ হারায়, রাতে রাতকানা হয়ে থাকে। তবে ভেতর থেকে কেটে চিরে সামনে চলার পাথেয় স্বরূপ একটা অবলম্বন অবশ্যই খাড়া করতে হবে।....' -- আহমদ ছফা, ‘শেখ মুজিবর রহমান’।

এ তো গেল মুজিব প্রসঙ্গ। কিন্তু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ন্যাপ, ছাত্র ইউনিয়ন, সিপিবি’র ভূমিকার কথাও কেউ তোলেন না। লিবারালের মুখোশ পরে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনকে যেভাবে ছুরি মেরেছে তার ভোগান্তি স্বরূপ বাঙালি ছাত্র সমাজ যদি উগ্রতাও দেখিয়ে থাকে তবে তাদের দাবি সম্পূর্ণ উপড়ে ফেলা মুশকিল হবে সরকারের পক্ষে। আবার দুই বাংলার মানুষ‌ই আগে বিএনপি জামাতকেই গাল দিত, আওয়ামী লীগের লাগামছাড়া স্বৈরাচার হয় নজর এড়িয়ে যেত অথবা তাকে ঢেকে রাখত মুক্তিযুদ্ধের সুবিশাল ছায়া । মুক্তিযুদ্ধ কি লীগের সম্পত্তি? স্বাধীন বাংলাদেশ কি শেখ মুজিবের একার কৃতিত্ব? তাছাড়া মওলানা ভাসানী এবং কৃষক সমিতিগুলো নিয়েও তো তেমন কথা উঠল না! কোথায় গেল 'লাল মওলানা'র দল? একাত্তরের ইতিহাসে মতিউল-কাদের-আওলাদ হোসেন- আবদুল কাইয়ুম-সিরাজ শিকদার-ক্রাচের কর্ণেল তাহের-শহীদ রাজুর মূর্তির সামনে নতজানু হন কতজন বাঙালি? বাংলাদেশের ইতিহাস টেনে বারবার বিকৃত করেন যাঁরা, তাঁদের জবানীতে লাগাম দেন না কেউ?

গত ২৯ জুলাই শুরু হওয়া শিশু-কিশোর-সর্বোপরি ছাত্র পরিচালিত আন্দোলনে স্লোগান উঠেছে-

'যদি তুমি ভয় পাও
তবে তুমি শেষ,
যদি তুমি রুখে দাঁড়াও
তুমিই বাংলাদেশ।'

হ্যাঁ, ওরা তো ইতিহাসই তৈরি করছে। আওয়ামী লীগের প্রবল প্রতাপশালী মন্ত্রী তোয়াফেল আহমেদ শাহবাগের কাছে উল্টো রুট ধরে গাড়ি নিয়ে গেলে শিক্ষার্থীরা জানায় ‘আইন সবার জন্য সমান’, তিনি গাড়ি ঘোরাতে বাধ্য হন। ঢাকা শহরের বিশাল অংশ এখন স্কুল-কলেজের পড়ুয়ার দখলে। অভিভাবকরাও সমর্থন করছেন, পরোক্ষে যোগ দিচ্ছেন আন্দোলনে। এদের জয় কে আটকাবে ! বঙ্গবন্ধু তো নিজেই বলেছিলেন বাঙালিকে দাবায়ে রাখা সম্ভব হবে না ... যদিও ছাত্র আন্দোলন মিডিয়া কভারেজ পাচ্ছে না, কখনও ইন্টারনেটের গতি ২জি তো কখনও পুরো বন্ধ। ছাত্র লীগের পাশাপাশি পুলিশকেও লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর যদি আতঙ্কে, উৎকণ্ঠায় গুজব ছড়ায় তার দায় কার ? সরকারের নয় ? একবিংশের ছাত্রছাত্রীর এই আন্দোলন অহিংস, ডায়নামিক ও আধুনিক পন্থায় পরিচালিত হচ্ছে বলেই মনে করি।

ঢাকার ধানমণ্ডি থেকে জিগাতলা, এলিফ্যান্ট রোড থেকে সায়েন্স ল্যাব, শাহবাগ থেকে উত্তরা অবধি এখন হাজারো ছাত্রছাত্রীর মিছিলের ধ্বনি। পোস্টারে লেখা আছে, 'নিরাপদ সড়ক চাই; আশ্বাস নয়, দ্রুত সুষ্ঠু কার্যক্রম সচক্ষে দেখতে চাই', 'সন্ত্রাসী ছাত্র লীগের বিচার চাই এবং প্রশাসন থেকে তাদের কার্যকলাপের সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণ চাই'। নির্মম পেটোয়া পুলিশবাহিনী কি এদের আটকাতে পারবে ! বাচ্চাদের দাবি ছিল ৯ দফা, যেগুলো আমি বাংলাদেশের‌ই একজন ছাত্র আহমদ ফয়জলের থেকে পেয়েছি :

১) বেপরোয়া চালককে ফাঁসি দিতে হবে এবং এই শাস্তি সংবিধানে সংযোজন করতে হবে।

২) নৌপরিবহনমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার করে শিক্ষার্থীদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে।

৩) শিক্ষার্থীদের চলাচলে এমইএস ফুটওভারব্রিজ বা বিকল্প নিরাপদ ব্যবস্থা নিতে হবে।

৪) প্রত্যেক সড়কের দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকায় স্পিড ব্রেকার দিতে হবে।

৫) সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্র-ছাত্রীদের দায়ভার সরকারকে নিতে হবে।

৬) শিক্ষার্থীরা বাস থামানোর সিগন্যাল দিলে থামিয়ে তাদের বাসে তুলতে হবে।

৭) শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

৮) রাস্তায় ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল এবং লাইসেন্স ছাড়া চালকদের গাড়ি চালনা বন্ধ করতে হবে।

৯) বাসে অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া যাবে না।

ছাত্র ফয়জলের থেকে আরও অনেক কিছু জানা গেল। দেশের নৌপরিবহণমন্ত্রী শাহজাহান খান একই সাথে আবার পরিবহন শ্রমিক সমিতির প্রধান। তিনি নানা ভাবে এই আন্দোলন প্রভাবিত করতে চাইছেন। এমনও বলেছেন 'ইন্ডিয়ায় ৩৩ জন মারা গেলেও কিছু হয় না আমাদের এখানে মাত্র দুইজন মারা গেলে এত কথা কেন?' অন‍্যদিকে শিক্ষক বা স্কুল প্রশাসন কেউ সাহায্য করছে না বরং তারা নানাপ্রকার ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে ছাত্রদের। দুই একটা স্কুল অবশ‍্য এর ব্যতিক্রম। জিগাতলায় যেখানে সংঘর্ষ হয়েছে তার পাশেই বিজিবি হেডকোয়ার্টার। বিজিবির দু'টি কলেজ আছে। ছাত্ররা সেই কলেজের প্রিন্সিপালকে ফোন করে কান্নাকাটি করেছে। বলছিল যে বিজিবি যেন গেট খুলে তাদের আশ্রয় দেয় কিন্তু প্রিন্সিপাল বলেছেন তাঁদের কিছুই করার নেই। সখেদে ফয়জল জানায় বাচ্চাদের সাহায্য করছে না কেউ। তবে আন্দোলনে যে অনেক বাচ্চাই আহত হবে তা নিশ্চিত। কিন্তু তার প্রকৃত সংখ্যা আমরা কতখানি জানতে পারব শেষ অবধি, জানা নেই, কারণ খবর পাওয়ার মাধ্যমগুলোকে নিষ্ক্রিয় করার জন্য সরকার যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে আগেই অকেজো করে রাখছে। যে সমস্ত সংগঠন এগিয়ে আসছে, তারা কমবেশি দুর্নীতিগ্ৰস্ত। ৬ অগস্ট ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে ব্যাপক হামলা করেছে ছাত্র ও যুব লীগ। ওরা ক্যাম্পাসে অবরুদ্ধ অবস্থায় আছে বলে জেনেছি। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের একাংশ বলছেন সড়ক দুর্ঘটনা সেখানকার নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা, দেশের সর্বস্তরের মানুষই এর প্রতিকার চায়। কিন্তু একটা মহল এটাকেও রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত করতে চাইছে। তারা ঘরে-বাইরে এটাকে সরকার পতনের ইস্যুতে পরিণত করতে ব্যতিব্যস্ত। এবং জামাত বিএনপি’ই নাকি সেই চক্র।

তবে আন্দোলন চলাকালীন BAL Secretary মৌখিক আশ্বাস দিয়েছেন প্রেস ব্রিফিং'য়ে। তবে ছাত্ররা তার রূপায়ন না দেখে আন্দোলন বন্ধ করবে এমন আশা নেই। ছাত্রপক্ষ থেকে এই ঐতিহাসিক আন্দোলনের গতি যে কতদূর পর্যন্ত বিস্তার পাবে এবং তার গোড়ার শিকড়ই বা কতদূর গেছে তা বুঝতে হলে বাংলাদেশের রক্তের ইতিহাস জানতে লাগে বৈকি। রাজনৈতিক ব্যাখ্যার সঙ্গে ওই পিচ্চিগুলোর শক্তি জানাও জরুরি। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ‘চিলেকোঠার সেপাই’এও মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে দেখিয়েছিলেন ওদের ক্ষমতা কতখানি। ওরা যেমন আইয়ুব-মোনেমকে গুঁড়িয়ে ফেলতে পারে, তেমন হাজারো অন্যায়ের বিরুদ্ধে ওরা আজন্ম লড়ে যেতেও পারে।

বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীমহলও দেখছি এর সমর্থনে :

১) 'দীর্ঘদিনের ক্ষোভ থেকে শিশুরা-শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছে। এর আগেও সড়কে শিক্ষার্থী মারা গেছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, পরিবহন খাতে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। এবং সেই হত্যাকাণ্ডকে সরকার আমলে নিচ্ছে না। আগের অনেক ঘটনার বিচার না হওয়ায় এখনকার ঘটনাগুলো ঘটছে।
শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামলে পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা গেছে, পুলিশ ছাত্রীদের গায়ে হাত দিয়েছে। এগুলো ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা দেখেছে, রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল মানুষ ঠিকমতো দায়িত্ব পালন না করে মৃত্যুর ঘটনায় হেসেছেন। শিশুরা বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি। তারা ক্ষুব্ধ হয়েছে।' – আন্দোলন সম্পর্কে বললেন ইলিয়াস কাঞ্চন ( প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, 'নিরাপদ সড়ক চাই' )।

২) 'ছাত্রদের প্রতিবাদের ধরন সম্পর্কে সমালোচনা থাকতে পারে, কিন্তু এর কারণ সম্পর্কে আমি সম্পূর্ণ একমত; এর কারণ ন্যায্য বলে মনে করি। সড়কপথে যে নৈরাজ্য চলছে, তা অবিলম্বে এবং স্থায়ীভাবে বন্ধ হওয়া দরকার। যে সব সন্তানের প্রাণ ঝরে গেছে, তার জন্য আমি গভীর শোক অনুভব করি। এবং তাদের পরিবারের প্রতি আন্তরিক সহানুভূতি জানাই।' -- ‘প্রথম আলো’কে জানিয়েছেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।

৩) শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বললেন -- 'সড়ক নিরাপদ নেই। যাত্রী মেরে পানিতে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। সর্বশেষ দুজন শিক্ষার্থীকে বাস চাপা দিল। সড়ক নিরাপদ ছিল না এই বিষয়টি অনেক দিন চাপা পড়ে ছিল। শিক্ষার্থীরা সবার সামনে নিয়ে এসেছে। দুর্ঘটনার খবরে মন্ত্রীরা যখন মুখে হাসি এনে কথা বলেন, তখন এটা পরিষ্কার হয় যে রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থায় কোনো জবাবদিহি নেই। জবাবদিহি নেই পুলিশেরও। পুলিশের সদস্যরা তাঁদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করেন না। অন্যদিকে দুর্ঘটনায় পুলিশের আয় বাড়ে। রাষ্ট্র ও পুলিশের জবাবদিহি না থাকার প্রভাব পড়ে চালকের ওপর। একসময় শ্রমিকনেতা মালিক হয়। এখন মালিকেরাই রাষ্ট্রক্ষমতায়। অদক্ষতা ও নৈরাজ্য জায়গা করে নিয়েছে সবখানে। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাস্তবতা উন্মোচিত হয়েছে। ছেলেমেয়েরা নিঃস্বার্থভাবে পথে নেমেছে। তাদের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ততা আছে। তাদের মুনাফার কোনো লোভ নেই। তারা দেখিয়েছে, মানুষের মধ্যে অনেক শক্তি আছে, তারা অনেক কিছু করতে পারে। দেশের মানুষের এই শক্তিকে সব সময় চাপা দিয়ে বা দমিয়ে রাখা যায় না। সড়কে ট্রাফিক বাতি কোনো কাজে লাগে না, এই অভিজ্ঞতা নগরবাসীর আছে। আবার শিক্ষার্থীরা দেখিয়েছে, সড়কে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা সম্ভব। পরিস্থিতির উন্নতি করার মূল দায়িত্ব সরকারের। সরকারের সঙ্গে মালিকের সম্পর্ক আছে। আর মালিকের আশকারা আর উসকানিতে চালকেরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। সরকারের উচিত মালিকদের জবাবদিহির আওতায় আনা। তাহলে চালকও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আসবে। একমাত্র জবাবদিহিই পারে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে।'

এদিকে গতকাল সোমবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা রাস্তা ছেড়ে ক্লাসে ফেরার ডাক দিয়েছে। কিন্তু অন‍্যদিকে শাহবাগে বিক্ষোভরত ছাত্রছাত্রীদের ওপর নির্বিচারে লাঠি ও কাঁদানে গ‍্যাস প্রয়োগ করা হয়েছে। এই ডামাডোলের মধ‍্যেই গত রোববার রাতে দেশের ভাবমূর্তিতে চুনকালি লাগানোর অপরাধে প্রখ‍্যাত বর্ষীয়ান ফোটোগ্ৰাফার শহিদুল ইসলাম ৭ দিনের জন‍্য গ্ৰেফতার হয়েছেন।

হ্যাঁ, এটা ঠিকই দেশে পারিবারিক বলয়ে নারী ফতোয়ার শিকার হচ্ছে, প্রকাশ্যে বাড়ছে বোরখার ব্যবহার, ক্ষুদ্র ঋণের নামে সর্বস্বান্ত হচ্ছে গরিব মানুষ, বিশ্বায়নের জোয়ারে প্রকৃতি থেকে উধাও হয়েছে জীব বৈচিত্র্য, কোমল শিশুমন নিপীড়িত হয়ে চলেছে, ইন্টারনেটের যৌনজগতে অবাধ বিচরণশীল তরুণ-তরুণীরা। কিন্তু লুম্পেনশ্রেণি যতই শক্তিশালী হয়ে উঠুক একগোছা তারুণ্য ওদের উড়িয়ে পুড়িয়ে লুটিয়ে দিতে পারে। কারণ এই শিশু-কিশোর-তরুণরাই বুকে পুষে রাখে যথার্থ বিচারের আকাঙ্ক্ষা। ওরাই তো নতুন এক আধুনিক বিজ্ঞানধর্মী বাংলাদেশের স্বপ্ন। ওরাই বুঝিয়ে দেয় বাংলাদেশ কোনও 'মনোরম মনোটোনাস'-দেশ নয়, যেখানে চা পানের নেমন্তন্ন প্রশ্রয় দেয় অন্যায়কে।

অন‍্যদিকে এই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ভীড়ে সংযোজন ঘটেছে রাজনৈতিক দলের, অন্তত দেশের নেতা-মন্ত্রীরা তাই বলে যাচ্ছেন ('প্রথম আলো'র তথ্য অনুসারে)। আগেই বলেছি যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার ক্ষোভ থেকে যদি এখন গুজব ছড়ায় তার দায় নিশ্চয় দেশের সরকারের, দেশের শান্তি রক্ষার দায় সাধারণ মানুষেরও, কিন্তু সুগঠিত নেতৃত্ব, সুষ্ঠু পরিকাঠামো ছাড়া দেশ তো অরাজকতার নামান্তর। ব্যক্তি বা রাজনৈতিক স্বার্থে সরকার কী দায় এড়াচ্ছেন না? কী তাদের ভূমিকা তারা কী জানেন না? খবর-উড়োখবরের জালে আমরা বোধহয় এখন‌ও জানি না আদতে যে 'কোমলমতি'রা আন্দোলন শুরু করেছিল, আন্দোলনে এখন রয়েছে তার কতটুকু, আর কতটুকু দলীয় !

ইতোমধ্যে দেখছি কার্টুন মুভমেন্ট তৈরি হয়েছে ‘Government violence in Bangladesh'-এর ছাত্র আন্দোলনের ভিত্তিতে। গতরাতে মোহাম্মদপুরের রিং রোড টোকিও স্কোয়ারে আন্দোলন ছিল শান্তিপূর্ণ মোমবাতি মিছিলের আধারে, হ্যাঁ, ওরা রাতেও বেরিয়েছে। হ্যাঁ, ওরা আরও এগিয়ে যাবে বহু বহুদূর অবধি। এই বাংলা’র ধার ঘেঁষে থাকা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ও দাবি তুলেছে ‘নিরাপদ সড়ক না নিরাপদ জীবন চাই’ – এই দাবিই তো চিরকালের ... চিরকালের মানুষ তো এভাবেই উঠে দাঁড়াতে পারে, ছুঁয়ে ফেলে আকাশ, মানুষ বড় রতন যে, যার আরেক মাত্রা পিচ্চিগুলো, যার আরেক মাত্রা ছাত্রসমাজ।