Thursday 31 July 2014

নবারুণ ভট্টাচার্য



আপনি আছেন, আমরা আছি, ফ্যাতারুরা আছে - 


 

Monday 28 July 2014

একটি কারখানা বাঁচানোর আন্দোলন



ইলেক্ট্রো মেডিক্যালের শ্রমিক-কর্মচারীদের আন্দোলন 

সঞ্জয় পাঠক




বেশ কদিন হল ইলেক্ট্রো মেডিক্যালের শ্রমিক-কর্মচারীরা গণেশ চন্দ্র এভেনিউ-র সিটি অফিসে অবস্থান-ধর্ণা চালাচ্ছেন। ব্লাড ব্যাগ তৈরীর এই কারখানাটি ২০০৮-এ 'বাম জামানায়' পরিকল্পিত ভাবে উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখনই শ্রমিক-কর্মচারীরা উৎপাদন চালু করার কথা বলেছিলেন। কেউ কথা রাখেননি। নতুন সরকার গঠনের আগে আজকের মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বন্ধ কারখানা খোলার ব্যাপারে উদ্দ্যোগ গ্রহণ করবেন। মুখ্যমন্ত্রী কথা রাখেননি। উল্টে হিন্দুস্তান মোটর, ডানলপ, জেসপ সহ বেশ কিছু কারখানা বন্ধ তালিকার সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে। গত ৩ মাস হল ইলেক্ট্রো মেডিক্যালের শ্রমিক-কর্মচারীরা বেতন পাচ্ছেন না। স্বাস্থ্য দপ্তর বিভিন্ন হাসপাতালের জন্য প্রয়োজন প্রতিদিন ৪৮ হাজার ব্লাড ব্যাগ। সেই ব্যাগ বাইরে থেকে বেশী দাম দিয়ে কেনার প্রচলন যেভাবে 'বাম জামানায়' শুরু হয়েছিল, তা আজও অব্যাহত। শ্রমিক-কর্মচারীদের অভিযোগ, এর পিছনে 'কাট মানি'র গল্প আছে। তাঁরা বলেছেন, উৎপাদন চালু কর, শ্রমিক-কর্মচারীদের স্থায়ী কর, বকেয়া বেতন দাও। প্রশ্ন উঠেছে, ১৯ বছর ধরে কাজ করার পরেও একটি সরকারী সংস্থা কেন স্থায়ী করবেন না। অথচ সরকারী আইন বলছে, ২৪০ দিন কাজ করলে স্থায়ী করতে হয়। এই কারখানার শ্রমিকরা এমন একটি পণ্য তৈরী করতেন, যা যে কোন নাগরিকদের শারীরিক অবস্থা সংকটের সময়ে রক্ত গ্রহণ/দানের প্রক্রিয়াতে একটি অন্যতম প্রয়োজনীয় উপাদান। আজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা যেন সিটি অফিসের কর্মচারীদের যাতায়াতে কোন বাধা সৃষ্টি না করেন। অথচ শ্রমিক-কর্মচারীদের দাবীর বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে প্রশাসন। একটি সাধারণ সভায় শ্রমিক-কর্মচারীরা স্বিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যতদিন না পর্যন্ত সরকার কোন ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন, ততদিন এখানেই অবস্থান চলবে। গত তিন মাস ধরে শ্রমিকদের কোন রোজগার নেই, এখানে থাকা-খাওয়া-প্রচার ইত্যাদি নিয়ে প্রচুর ব্যয় হচ্ছে ও হবে। ইলেক্ট্রো মেডিক্যাল কন্ট্রাক্ট লেবর ইউনিয়নের পক্ষ থেকে সমস্ত শুভানুধ্যায়ী বন্ধুদের কাছে সাধ্যমত আর্থিক সহায়তার আবেদন রাখা হয়েছে। চাঁদনি চক মেট্রো স্টেশনের কাছে সিএসটিসি বিল্ডিং-এর নীচে অবস্থান চলছে। আপনারা আসুন, এই মহতি আন্দোলনে সংহতি জানান, সাহায্য করুন এবং শ্রমিকদের পক্ষে প্রচার করুন।

Monday 21 July 2014

Read Little Magazines!!


BOYCOTT PATIRAM!
(self-proclaimed hub of Little Magazines in College Street area of Kolkata)
They r damaging Little Magazines.. 

1) Patiram is charging extra money from little magazines for display 2) They are keeping the magazines of low cost in the backyard and saying to the customer that it is not available 3) They are only interested to display and sell magazines of higher cost 4) Even denying entry of new magazines 5) Even not paying the price of the magazines if sold.. et al
 
In College Street there are lot many shops and stalls who possess better & versatile stock of Little Magazines and display them elegantly.. Like..
1) The Earth (30 Surya Sen Street)
2) Book Mark (Beside University Institute Hall)
3) Dhyanbindu (Behind College Sq, Opp to Paramount Sorbot)
4) BoiChitro (2nd Floor, Coffee House)..


Please try these..

কারখানা বন্ধের নেপথ্যে


মালিকের তুঘলকি আচরণের খোঁজ কে নেবে?

প্রবুদ্ধ বাগচী

শালিমারের রং কারখানায় কোনও শ্রমিক অশান্তির সংবাদ ছিল না । পুরনো এই কারখানায় কর্মীরা পুরুষানুক্রমে চাকরি করে আসছিলেন । সেই প্রথাটা তৈরি করেছিলেন মালিকরাই । কিন্তু শ্রমিক মালিকের এই আপাত-সৌহার্দ্য যে একটা কারখানার নিরাপত্তার পক্ষে যথেষ্ট নয় এই সহজ কথাটা অনেকে বুঝতেই চান না । যেমন ধরা যাক, শ্রীরামপুরের স্ট্যান্ডার্ড ফারমাসিউটিক্যালস এর কথা । সারাভাই গ্রুপের এই কারখানাটিতে কোনও শ্রমিক অসন্তোষ ছিল না । যেহেতু এঁরা পেনিসিলিন তৈরি করতেন তাদের পণ্যের বাজারের কোনও অনিশ্চিত অবস্থা ছিল না । তবু কী এক অজ্ঞাত কারণে নব্বই দশকের গোড়ায় এই প্রাচীন কারখানাটি বন্ধ হয়ে যায় । বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েন । সুত্র খুঁজতে গিয়েছিলেন আমাদের এক সিনিয়র দাদা । একটি তথ্যচিত্র করবেন বলে । করেওছিলেন । সেই তথ্যচিত্রের শুরুতে একটি গান ছিল । যিনি বিনা পারিশ্রমিকে গানটি গেয়ে দিয়েছিলেন তাঁকে তখন বিশেষ কেউ চিনতেন না । তার নাম সুমন চট্টোপাধ্যায় । কিন্তু এই রুগ্নতার কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেল স্রেফ নিজেদের মর্জিমাফিক শ্রীরামপুরের কারখানায় আর কোনও বিনিয়োগ করবেন না বলেই তারা কারখানার পাততাড়ি গুটোলেন । এবং গুজরাটে নতুন কারখানা খুলে ফেললেন । এই হিসেবগুলো বোঝা খুব কঠিন ।

শালিমারের রং কোম্পানির কারখানা বন্ধ করার পেছনে এইরকম একটা মর্জি কাজ করছে বোঝা যায় । পূর্বাঞ্চলে রং'এর বাজার নেই, এ বড় আশ্চর্য অজুহাত । বিশ্বায়নের এই যুগে পণ্যের আঞ্চলিক বাজারের গুরুত্ব কতটুকু ? আরও মজার কথা, জামুরিয়াতে কারা শ্যাম স্টীলের কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে টাকা চেয়েছে না চেয়েছে তাই নিয়ে সংবাদমাধ্যম সরগরম , চেম্বার অফ কমার্স আশঙ্কা প্রকাশ করে বসেছেন রাজ্যের শিল্পের হাল নিয়ে । কিন্তু শালিমারের রং কোম্পানির মালিক তাদের সদস্য নন ? তিনি খেয়ালখুশির বশে কারখানা বন্ধ করে দিলে চেম্বার অফ কমার্সের গায়ে একটুও ফোস্কা পড়ে না কেন ? তাঁরা উদ্বিগ্ন হন না কেন ? শালিমার কোম্পানি অর্থাভাবে হাওড়ার কারখানা সারাতে পারছেন না কিন্তু চেন্নাইতে নতুন কারখানা খোলার জন্য অর্থের অভাব হচ্ছে না ।

হিন্দুস্থান মোটরস ও এই একই অজুহাতে হিন্দমোটরের কারখানা বন্ধ করে অন্যত্র কারখানা খুলে বসেছেন । শিল্পের বিকাশের জন্য কী কী চাই এইসব নিয়ে মাঝে মাঝেই গম্ভীর আলোচনা শুনি । জমি চাই, স্বল্প মূল্যে বিদ্যুৎ চাই, সরকারি সদিচ্ছা চাই, অসন্তোষহীন শ্রমিক চাই, যখন তখন ছাঁটাই এর অধিকার চাই... এখন এমনকি শ্রম আইনের সংস্কারও চাই! না হলে ওই কড়া আইন মেনে চলা মালিকের পক্ষে সত্যি বড় কষ্টের । আহা, কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা বিনিয়োগ করে, যার বেশিটা আসলে ধার দেন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক, তাঁরা কাজের সুযোগ দিচ্ছেন তাঁদের ওপর এমন কঠিন আইনি ফাঁস চাপালে তাঁদের শ্বাসকষ্ট হবে না ! সবই চাই, কিন্তু সব থেকে আগে চাই মালিক ও বিনিয়োগকারীর তুঘলকি আচরণের জন্য নিটোল ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টি --- নইলে শিল্প বাঁচে না ! শালিমার কারখানার সামনে যারা নাছোড়বান্দা অনশন করছেন তাঁদের না বাঁচলেও চলে , তাই না ? প্রায় বছর পঁচিশ আগে ইন্ডিয়ান অ্যালুমিনিয়াম কোম্পানির সর্বোচ্চ কর্তাকে একটা সেমিনারে মুখোমুখি পেয়েছিলাম । এই প্রশ্নটা তাঁকে করেছিলাম । তিনি চড়া গলায় বলেছিলেন , এইসব অবান্তর প্রশ্ন কেন করছেন ? ঠিক, অবান্তরই তো । পরে ওই ব্যক্তিটি হলদিয়া পেট্রোকেমের উঁচু পদে বসেছিলেন । নামটা না হয় নাই করলাম । প্রশ্নের উত্তরটা তো আর ওই নামের আড়ালে নেই ...

Monday 14 July 2014

২০০ কোটির মূর্তি !


বল্লভভাই বনাম গান্ধী 

প্রবুদ্ধ বাগচী



সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ঠিক কাদের সর্দার ছিলেন ইতিহাসে হয়তো তার বিশদ বিবরণ আছে । কিন্তু ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের একেবারে শেষ পর্যায়ে যখন মুম্বাইয়ে ভারতীয় নৌ সেনারাও ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বসে, সেটা ১৯৪৬এর সম্ভবত ফেব্রুয়ারি মাস, তখন ব্রিটিশ সরকারও বুঝে গিয়েছিলেন যে তাঁদের চলে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে । নৌবিদ্রোহ শুধু নৌসেনাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, অন্যান্য শাখাতেও তার বিস্তার ঘটে । পাশাপাশি, মহারাষ্ট্রের সাধারণ মানুষও এই বিদ্রোহের সমর্থনে তাঁদের সংহতি জানিয়েছিলেন, বাংলাও পিছিয়ে ছিল না। মুম্বাইয়ের রাস্তায় মিছিল ও সমাবেশ করে, হরতাল পালন করে তাঁরা জানান দেন যে এই লড়াই স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার চূড়ান্ত লড়াই । নৌসেনারা সেই লড়াইয়ের দিনগুলিতে বারবার কংগ্রেস নেতৃত্বের কাছে আহ্বান জানিয়ে ছিলেন তাঁদের এই সংগ্রামে সমর্থন জানাতে ও জনমত গড়ে তুলতে। সেই সময়ের কংগ্রেসের নেতারা এতে কর্ণপাত করেননি। শোনা যায়, নেহেরু নাকি কিছুটা দোলাচলে ছিলেন কিন্তু বল্লভভাই সরাসরি ওই বিদ্রোহী সেনাদের বিপক্ষে দাঁড়ান। যেহেতু ক্যাবিনেট মিশনের ঘোষণা হয়ে গেছে তাই তাঁর মনে হয়েছিল এই সেনাবিদ্রোহ সময়-উপযোগী নয়। কার্যত তাঁর প্রত্যক্ষ অসহযোগিতায় নৌসেনারা অত্যন্ত অপমানজনক অবস্থায় আত্মসমর্পণ করেন এবং ভারতের স্বাধীনতার একটা গৌরবময় লড়াইয়ের অপমৃত্যু ঘটে। এর অল্প পরেই ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক হানাহানি ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। এহেন সর্দার'এর একটি অতিকায় মূর্তি নির্মাণকল্পে এইবারের কেন্দ্রীয় বাজেটে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যা নাকি স্ট্যাচু অফ লিবার্টির দ্বিগুণ উচ্চতার ।
রাজনৈতিকভাবে সারা পৃথিবীর মানুষ ভারতবর্ষকে মহাত্মা গান্ধীর দেশ হিসেবেই জানে । তাঁর রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে নানা বিতর্ক থাকলেও স্বাধীনতার আন্দোলনে তাঁর অবদান কেউই আজও একদম অস্বীকার করে উঠতে পারেননি। অবশ্য আন্তর্জাতিক পরিসরে তাঁর এই পরিচিতির জন্য আমাদের কোনো অতিকায় প্রস্তরমূর্তি বানাতে হয়নি। নিজের পরিচয়ে আর জীবনেই তিনি বিশ্বব্যাপী মানুষের শ্রদ্ধা ও সম্মানের পাত্র হয়ে আছেন আজও। আজও কোনও বিদেশী রাষ্ট্রনায়ক নয়াদিল্লিতে এলে রাজঘাটে একবার শ্রদ্ধা জানাতে যান।
জানি না আগামী ভারতের আইডল হিসেবে তিনি অস্পৃশ্য হয়ে যাবেন কিনা। কিন্তু ইতিহাস তো অর্থের বরাদ্দ দিয়ে মুছে ফেলা যায় না। রোমা রঁলা গান্ধী সম্বন্ধে যা লিখেছিলেন তা সকলেই জানেন। কিন্তু বলার কথা এইটাই যে তিনি সকলকে বাদ রেখে গান্ধী সম্বন্ধেই ওই কথা বলেছিলেন । সেই সময়কালের মধ্যে দেশের সব রাজনৈতিক নেতারাই ছিলেন যারা হয়তো রাজনীতির পরিচয়ের বাইরে কোনও আলাদা ভুবনের নাগরিক হয়ে উঠতে পারেননি, গান্ধী পেরেছিলেন। তাই যে স্বাধীনতার জন্য ছিল তাঁর জীবনপণ তার প্রথম সম্ভাবনাতেই যখন দেশ হিংসায় উদ্বেল তিনি শুরু করলেন তার নতুন যাত্রা। তিনি একলা হলেন, মুক্ত হলেন। নোয়াখালিতে যখন কোনও রাজনৈতিক নেতা নেই তিনি ছুটে গেলেন সেখানে। আর দেশভাগের স্বাধীনতার তুমুল উৎসবের দিন তিনি মূক হয়ে রইলেন এই বাংলায়। অথচ বল্লভভাই তখন সরাসরি হিন্দুত্বের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন, নেহেরু ক্ষমতা পাওয়ার নেশায় তালকানা। বুদ্ধদেব বসু লিখেছিলেন, ‘সেই স্বর্গ, যা মানুষ সৃষ্টি করে একলা তার আপন মনে, সব মানুষ নয়, অনেক মানুষও নয়, কেউ কেউ যার একটুমাত্র আভাস হয়তো মাঝে মাঝে পায়, কিন্তু যাকে জীবনের মধ্যে উপলব্ধি করতে যিনি পারেন, তেমন মানুষ কমই আসেন পৃথিবীতে; আর তেমনই একজনকে আজ আমরা চোখের ওপর দেখছি বিদীর্ণ বিহ্বল নোয়াখালির জলে, জঙ্গলে, ধুলোয় ।’
জনগণের ২০০ কোটি টাকায় তৈরি ঘোষিত হিন্দুত্ববাদী সর্দারের মূর্তি কি ঢেকে দিতে পারবে এই মানুষটির ভুবনজোড়া মূর্তিকে ?   

Censors sitting upon u!!




Tuesday 8 July 2014

তাপসী মালিক, তপন দত্ত, বরুণ বিশ্বাস, সৌরভ চৌধুরীকে স্মরণে রেখে


মস্তানির সে যুগ এ যুগ

প্রবুদ্ধ বাগচী

গত শতকের আশির দশকের গোড়ার দিক । রেলপথে কলকাতা থেকে পঁচিশ কিলোমিটার দূরের বৈদ্যবাটি এলাকার একটি উদ্বাস্তু অধ্যুষিত এলাকা রাজারবাগান কলোনি । সেখানকার অধিকাংশ বাসিন্দাই নিম্নবিত্ত, জীবিকার নানা বিচিত্র ধান্দায় তাঁদের সারাদিন ঘুরে বেড়াতে হয় । অতদিন আগে দূরবর্তী মফস্বলে প্রোমোটারি বা জমির দালালির কোনও গল্প ছিল না, ছিল না সিন্ডিকেট যেখানে কাঁচা টাকার গন্ধ থাকে । কলোনির মধ্যে ছিল না পাকা রাস্তা, আলো, ঠিকঠাক পানীয় জলের উৎস । কিন্তু এত কিছু না-থাকার মধ্যেও সেখানে শুরু হল একদল দুষ্কৃতীর দামালপনা । তারা এলাকায় যা খুশি করে বেড়াতেই পারে । এলাকার দোকান থেকে তোলা আদায়, চোলাই মদ, আর যা যা মস্তিবাজি করা যায় । তবে বলতেই হবে প্রাক-বিশ্বায়ন যুগের এই সমাজবন্ধুরা মহিলাদের সম্ভ্রম নিয়ে কিছু করেনি । কিন্তু এলাকার মানুষের কাছে উৎপাত তো উৎপাতই, তার আবার ভাল মন্দ কী ? আমাদের এক বন্ধুর দাদা সিইএসসি'র ইঞ্জিনিয়ার, তখনই তিনি একটা গাড়ি কিনেছিলেন । ওই দলের একজন উঠতি দাদা একদিন সকালে তাঁদের বাড়িতে গিয়ে গাড়ির চাবিটা চাইল । বিনা বাক্যে তিনি চাবি দিলেন । গাড়ি চালিয়ে তারা সেদিন বেড়িয়ে এল । সন্ধেবেলা গাড়ি ফিরে এল বাড়িতে । পুলিশে জানিয়ে তখনও কিছু সুবিধে হত না । তাছাড়া তখনকার প্রগতিশীল শাসক দল আদর্শগতভাবেই ছিল এই সমাজের বিরোধী, ফলে ‘সমাজবিরোধী’ কথাটাই ছিল প্রগতির তাপে উষ্ণ । তাই, সমাজ বদলের লড়াইয়ে এরা ছিল তাঁদের সুহৃদ ।
কিন্তু মানুষ তো জ্বলে পুড়ে মরছেন । নিত্যদিন এদের অত্যাচার কত আর সহ্য করা যায় ? দেওয়ালে পিঠ ঠেকলে তারা তৈরি করলেন প্রতিরোধ বাহিনী । নিজেরা রাত পাহারা দিতে থাকলেন এলাকায় । এই কর্মকাণ্ডের নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে এসেছিল এক তরুণ তাঁকে সবাই সমু নামেই চিনত । ঠিক কোনো রাজনীতির পক্ষপাত তার ছিল না । এলাকার মানুষকে যারা উত্যক্ত করছে অথচ প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না এই দমবন্ধ অসহায় অবস্থাটা তাঁকে আলোড়িত করত নিশ্চয়ই । সৌরভের মতোই । সে সংগঠিত করেছিল এলাকার মানুষকে । প্রাথমিকভাবে মাতব্বররা একটু পিছু হঠেছিল কিন্তু তাদের বাড়া ভাতে ছাই দেওয়া তো তাদের মেনে নেওয়ার কথা নয় । তারা মানলও না । একদিন রাতে খুন হয়ে গেল সমু । তার পাড়ায় । তার তৈরি করা প্রতিরোধ বাহিনীর চালাঘরের সামনে । সেটা ১৯৮৫ সাল ২ জানুয়ারি ।
তারপর তৈরি হয়েছিল ‘সমু স্মৃতি সমিতি’। তারা ওই দিনটায় সমুকে মনে করত । অনেকদিন । রাজারবাগানের স্কুল মাঠে একটা অনুষ্ঠান হত ওইদিন । ততদিনে পুলিশ আর প্রশাসনের কাছে প্রয়োজন ফুরিয়েছিল ওই দামালদের, তারা ওদের নিকেশ করে দিয়েছিল । শুনেছিলাম শ্রীরামপুর থানার আইসি নাকি নিজে হাতে ...
আর জানি না । কেবলই দৃশ্যের জন্ম হয় । আজও ...