Tuesday, 8 July 2014

তাপসী মালিক, তপন দত্ত, বরুণ বিশ্বাস, সৌরভ চৌধুরীকে স্মরণে রেখে


মস্তানির সে যুগ এ যুগ

প্রবুদ্ধ বাগচী

গত শতকের আশির দশকের গোড়ার দিক । রেলপথে কলকাতা থেকে পঁচিশ কিলোমিটার দূরের বৈদ্যবাটি এলাকার একটি উদ্বাস্তু অধ্যুষিত এলাকা রাজারবাগান কলোনি । সেখানকার অধিকাংশ বাসিন্দাই নিম্নবিত্ত, জীবিকার নানা বিচিত্র ধান্দায় তাঁদের সারাদিন ঘুরে বেড়াতে হয় । অতদিন আগে দূরবর্তী মফস্বলে প্রোমোটারি বা জমির দালালির কোনও গল্প ছিল না, ছিল না সিন্ডিকেট যেখানে কাঁচা টাকার গন্ধ থাকে । কলোনির মধ্যে ছিল না পাকা রাস্তা, আলো, ঠিকঠাক পানীয় জলের উৎস । কিন্তু এত কিছু না-থাকার মধ্যেও সেখানে শুরু হল একদল দুষ্কৃতীর দামালপনা । তারা এলাকায় যা খুশি করে বেড়াতেই পারে । এলাকার দোকান থেকে তোলা আদায়, চোলাই মদ, আর যা যা মস্তিবাজি করা যায় । তবে বলতেই হবে প্রাক-বিশ্বায়ন যুগের এই সমাজবন্ধুরা মহিলাদের সম্ভ্রম নিয়ে কিছু করেনি । কিন্তু এলাকার মানুষের কাছে উৎপাত তো উৎপাতই, তার আবার ভাল মন্দ কী ? আমাদের এক বন্ধুর দাদা সিইএসসি'র ইঞ্জিনিয়ার, তখনই তিনি একটা গাড়ি কিনেছিলেন । ওই দলের একজন উঠতি দাদা একদিন সকালে তাঁদের বাড়িতে গিয়ে গাড়ির চাবিটা চাইল । বিনা বাক্যে তিনি চাবি দিলেন । গাড়ি চালিয়ে তারা সেদিন বেড়িয়ে এল । সন্ধেবেলা গাড়ি ফিরে এল বাড়িতে । পুলিশে জানিয়ে তখনও কিছু সুবিধে হত না । তাছাড়া তখনকার প্রগতিশীল শাসক দল আদর্শগতভাবেই ছিল এই সমাজের বিরোধী, ফলে ‘সমাজবিরোধী’ কথাটাই ছিল প্রগতির তাপে উষ্ণ । তাই, সমাজ বদলের লড়াইয়ে এরা ছিল তাঁদের সুহৃদ ।
কিন্তু মানুষ তো জ্বলে পুড়ে মরছেন । নিত্যদিন এদের অত্যাচার কত আর সহ্য করা যায় ? দেওয়ালে পিঠ ঠেকলে তারা তৈরি করলেন প্রতিরোধ বাহিনী । নিজেরা রাত পাহারা দিতে থাকলেন এলাকায় । এই কর্মকাণ্ডের নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে এসেছিল এক তরুণ তাঁকে সবাই সমু নামেই চিনত । ঠিক কোনো রাজনীতির পক্ষপাত তার ছিল না । এলাকার মানুষকে যারা উত্যক্ত করছে অথচ প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না এই দমবন্ধ অসহায় অবস্থাটা তাঁকে আলোড়িত করত নিশ্চয়ই । সৌরভের মতোই । সে সংগঠিত করেছিল এলাকার মানুষকে । প্রাথমিকভাবে মাতব্বররা একটু পিছু হঠেছিল কিন্তু তাদের বাড়া ভাতে ছাই দেওয়া তো তাদের মেনে নেওয়ার কথা নয় । তারা মানলও না । একদিন রাতে খুন হয়ে গেল সমু । তার পাড়ায় । তার তৈরি করা প্রতিরোধ বাহিনীর চালাঘরের সামনে । সেটা ১৯৮৫ সাল ২ জানুয়ারি ।
তারপর তৈরি হয়েছিল ‘সমু স্মৃতি সমিতি’। তারা ওই দিনটায় সমুকে মনে করত । অনেকদিন । রাজারবাগানের স্কুল মাঠে একটা অনুষ্ঠান হত ওইদিন । ততদিনে পুলিশ আর প্রশাসনের কাছে প্রয়োজন ফুরিয়েছিল ওই দামালদের, তারা ওদের নিকেশ করে দিয়েছিল । শুনেছিলাম শ্রীরামপুর থানার আইসি নাকি নিজে হাতে ...
আর জানি না । কেবলই দৃশ্যের জন্ম হয় । আজও ...

No comments:

Post a Comment