Wednesday, 22 July 2020

আপনি ও আমি



দুরাচার, করোনা ও ‘মহান জনগণের’ গল্প

অনিন্দ্য ভট্টাচার্য
 

Whoever fights monsters should see to it that in the process he does not become a monster. And if you gaze long enough into an abyss, the abyss will gaze back into you.

-Friedrich Nietzsche

সেই কবে লিঙ্কন সাহেব বলেছিলেন, ‘অফ দ্য পিপল ফর দ্য পিপল বাই দ্য পিপল’। একটি দেশের শাসনতন্ত্রের এই হওয়াই ছিল বিধি। অর্থাৎ, দেশের লোক ভোট দিয়ে শাসক নির্বাচন করবে যারা সেই জনগণের স্বার্থে দেশ চালাবে। একটি সেরা উদ্ধৃতিযোগ্য বয়ান হিসেবে লিঙ্কনের এই উচ্চারণটুকু তাই ইতিহাসে অমলিন স্থান পেয়েছে। সকলেই কথায় কথায় এ বাচন আওড়ায়, যেন নিজের ও অপরের গণতন্ত্রের পরীক্ষায় সর্বোত্তম প্রশ্নের উত্তর এটিই।

কিন্তু এই ‘পিপল’ বস্তুটি কী, তা নিয়ে বিস্ময়, সংশয় ও আতান্তরেরও শেষ নেই। ফরাসি বিপ্লব কালে কৃষক ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির জনজাগরণে উৎখাত হয়েছিল রাজতন্ত্র। যে গিলোটিনে মারা পড়েছিলেন রাজা ষোড়শ লুই ও তাঁর স্ত্রী, সেই গিলোটিনেই শিরোচ্ছেদ হয়েছিল বিপ্লবের নেতা রোবসপিয়রের। ১৭৯৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের অন্তে ‘কমিটি ফর পাবলিক সেফটি’র হাত থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেপোলিয়ন ফ্রান্সের অধিপতি হয়েছিলেন। আর এই সমস্ত ক্রিয়াকলাপের পেছনে আধুনিক সময়ের ‘পিপল’ বা জনগণের সোৎসাহ সমর্থন বা অংশগ্রহণ ছিল সর্বাধিক।

কিন্তু এই জনগণ কি একীভূত, সমচিন্তার কোনও একরূপী পিণ্ড? এখানেই যত গোল! কারণ, সমাজ নানা শ্রেণিতে বিভক্ত- অভিজাত, রাজ কর্মচারী, ছোট ব্যবসায়ী, বড় বণিক, মধ্যবিত্ত, শ্রমজীবী, কৃষক, বেকার, ভবঘুরে ও নানাবিধ। চিরায়ত ক্ষমতার শিখরে অধিষ্ঠিত অভিজাত বা রাজন্যবর্গের লোকেরা তো আর নিজেদের শাসনের অধিকারকে বিপদাপন্ন করতে চাইবেন না, তাই স্বভাবতই ধরে নেওয়া যেতে পারে, ক্ষমতাহীন সংখ্যাগুরু জনতা অর্থাৎ, গরিব, মধ্যবিত্ত, শ্রমজীবী, কৃষক– এনারাই আধুনিক ‘পিপল’ শব্দের ধারক ও বাহক, যারা ধনতন্ত্রের উত্থানে আগুয়ান সমাজে ক্ষমতার ভাগ পেতে প্রত্যাশী ও সম্ভাব্যতার আকর। নইলে নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনার অভিষেক যে বাকী পড়ে থাকে! আর ফরাসি বিপ্লবের ‘সাম্য মৈত্রী স্বাধীনতা’র আহ্বান তো এই উত্থিত জনতার আশা-আকাঙ্ক্ষাকেই প্রতিফলিত করতে চেয়েছে।

রাজতন্ত্রের বিলোপে বা তার প্রতীকী অবনমনে ‘জনগণ’ শীর্ষক এক নতুন ক্ষমতার বর্গ তৈরি হল বটে কিন্তু ইতিহাসের গতিপথে মার্কসবাদীরা এই জনগণের মধ্যেও কার্যকরী বিভাজন দেখালেন। কারখানায় উৎপাদনরত শ্রমিকদের থেকে কৃষকরা ভিন্ন চরিত্রের। শ্রমিকেরা সমাজ পরিবর্তনের বিপ্লবে কাণ্ডারীর ভূমিকা নিতে পারে, কৃষকেরা দ্বিধাগ্রস্ত ও সংশয়াদীর্ণ। মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত বা পেটি-বুর্জোয়ারা তো সময় বিশেষে সুবিধাবাদী বলেও প্রতিপন্ন। সে ক্ষেত্রে, ‘অফ দ্য পিপল বাই দ্য পিপল ফর দ্য পিপল’ নিঃসন্দেহে এক অতিকথা মাত্র। আসলে, শাসন বা শাসকেরা হল নানা শ্রেণি স্বার্থের প্রতিভূ। কারণ, শ্রমিকেরা যাদের শাসক বলে ভাবতে চাইবেন, কৃষকেরা তাদের থেকে ভিন্ন মতালম্বী হতেই পারেন। অতএব, সংখ্যাগরিষ্ঠতার একটি নিরিখ নির্মিত হয়ে গেল, যেখানে বেশির ভাগ মানুষের পছন্দই শিরোধার্য। আমরা পেলাম ক্রমবিকাশমান সংসদীয় গণতন্ত্রের এক রকমারি মডেল। থেকে গেল বিরোধের বীজ ও অন্তর্দ্বন্দ্বের চোরাস্রোত।

এই বিরোধ কার সঙ্গে কার? জনতার মধ্যকার বিরোধ। মাওসেতুঙ বলেছিলেন, জনতার মধ্যে বিরোধ আছে, কিন্তু তা অবৈরিমূলক। অর্থাৎ, হিংসা বা সংঘর্ষ নয়, আলাপ-আলোচনা, তর্ক-বিতর্কের মধ্যে দিয়ে তা মিটিয়ে নেওয়া যেতে পারে। একটি আদর্শগত ব্যবস্থা বা নৈতিক আকাঙ্ক্ষা হিসেবে তা অতুলনীয়, কিন্তু বাস্তবে তা কি অত সরল-সোজা বা অকপট? দার্শনিক জিড্ডু কৃষ্ণমূর্তি ও পদার্থবিদ ডেভিড বোহম’এর একটি সুগভীর আলোচনা ‘দ্য এন্ডিং অফ টাইম’ গ্রন্থে সুশায়িত আছে। সেই আলোচনা শুরুই করছেন কৃষ্ণমূর্তি এই প্রশ্নটি তুলে যে, মানবসভ্যতা কি ভুল পথে চলেছে? এই ভুল পথে চলা অর্থে কী বোঝায় অথবা কবে থেকে এই চলা শুরু- সেইসব ভাবনাই ধীরে ধীরে আলোচনায় প্রকট হয়েছে। দুই আলোচক ‘অহং’এর তাৎপর্যকে ধরার চেষ্টা করছেন, সেই সাথে মানুষের অন্তর্যাত্রা ও বহির্যাত্রা- এই দুই অভিমুখকেও বুঝতে চাইছেন। মোদ্দা কথায়, দরিদ্র, অসহায়, নিপীড়িত মানুষের যদি গায়েগতরে বেঁচে থাকাটাই মূল যাপন হয়ে পড়ে তাহলে তার কাছে ততটা অবকাশ নেই যাতে করে সে তার প্রতিবেশী বা সমমানের মানুষের সঙ্গে বিবাদ-সংঘর্ষে লিপ্ত হতে পারে। অবশ্য অর্থের জন্য বা অসহনীয় বিপদে খেই হারিয়ে কিছুজন ভয়ানক হিংস্র কাজে লিপ্ত হয় বটে। কিন্তু তা ব্যতিক্রমী। অথচ সেই মানুষটিরই যদি আপাত এক সুস্থির অবস্থা তৈরি হয় তাহলে তার অহং’এর বাসনায় সে দুঃসাধ্য, দুরূহ শুধুমাত্র নয়, বহু দুষ্কর্মও সাধন করতে পারে।

মূল প্রসঙ্গের অবতারণায় এই কথাগুলো বলে নিতে হল, কারণ, শুধুমাত্র শাসক-শাসিতের দ্বন্দ্বের মধ্যেই আমাদের ভালোমন্দের টানাপোড়েনগুলো অন্তর্হিত আছে- এই ভাবনাটি অতীব সংকীর্ণ ও ক্ষীণদৃষ্টিসম্পন্ন। তথাকথিত ‘মহান জনগণ’এর যে গল্পগাছা আমরা গত দু-তিন শতক ধরে শুনে আসছি, তার নির্মাণে সুপ্ত হয়ে আছে অর্ধসত্য। আজকের প্রসারিত ভুবনে নানা কারণে যখন সাধারণ ভাবে বিশ্ব জুড়ে দারিদ্র্য কমে আসছে (যদিও অসাম্য বাড়ছে), তখন আরও বেশি করে প্রতীয়মান হচ্ছে এই যে, সাধারণ মানুষের ব্যক্তিযাপন ও টানাপোড়েনে যে সুতোগুলো ঢিল ছাড়ে ও গুটোয়, তার মধ্যে থাকে নানাবিধ প্রশান্তি ও সর্বনাশ। কিন্তু এতদিন তা অত প্রকট ছিল না; অভাব ছিল তেমন কোনও সর্বগ্রাসী মাধ্যমের যার মধ্য দিয়ে সেইসব ইচ্ছা-অনিচ্ছা, বাস্তবে কার্যকরী হোক বা না হোক, অন্তত দেখা বা শোনা যেতে পারে। পুঁজিবাদ, প্রযুক্তি ও গণতন্ত্রের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে সেইসব বলা-না বলা উপাদানগুলি দানা বেঁধেছে, সাধারণের প্রত্যাশাসমূহের প্রকাশ নানান অবয়ব পেয়েছে, কমবেশি তা নিয়ে আলোড়ন-আন্দোলন হয়েছে। সেই সঙ্গে সঙ্গে জনতার মধ্যকার বিরোধও আরও বেড়েছে, শাসকের মদতে বা জনতারই নিজ আয়োজনে। জনতার যে অংশ কার্যত অর্থনৈতিক বা সামাজিক ভাবে সবল হয়েছে, সে অংশের কেউ কেউ জনতার আরেক অংশের সঙ্গে নতুন নতুন বিরোধে জড়িয়েছে। আজ সোশ্যাল মিডিয়ার সর্বব্যাপী প্রসারের ফলে এই বিরোধ ও কর্তন এক নতুন প্রকাশ ও মাত্রা পেয়েছে।

যে শ্রমিকশ্রেণিকে এক সময় নেতৃত্বকারী বিপ্লবী শ্রেণি বলে মনে করা হত, সেই শ্রেণির একাংশের ওপরেই ‘আভিজাত্যের’ বদনাম চেপেছে। ইউরোপ ও আমেরিকায় শ্রমিকশ্রেণির অবস্থা যখন কিঞ্চিৎ ভালো বলে মনে হচ্ছে তখন তারা বিশ্বের বাকী শ্রমিকশ্রেণির থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে ও তাদের নিজ দেশের পুঁজিপতি শ্রেণির বিশ্ব-বাণিজ্য থেকে আহরিত ধনের অংশবিশেষ তাদের ভাগেও পড়েছে বলে অনুযোগ। কথা উঠেছে, মনু’র ‘স্মৃতি’ভ্রংশে পরিত্যক্ত অন্ত্যজ জাতের প্রতিনিধিরা কেউ কেউ ক্ষমতায় গিয়ে নতুন মাফিয়া রাজ নির্মাণ করেছে, উত্তরপ্রদেশে ‘যাদব’দের কুটিল শাসনের স্মৃতি এখনও বহুজনের মনে টাটকা। জনজাতির কোনও কোনও নেতা ক্ষমতায় গিয়ে অপশাসন ও দুর্নীতির জালে জড়িয়েছেন। নারীর অবমাননায় পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে ওঠা আওয়াজ বহু জায়গাতেই নিরীহ পুরুষ দমনের অযাচিত তন্ত্রে রূপ পেয়েছে। নিরন্ন গ্রামবাসী পঞ্চায়েতের ক্ষমতা পেয়ে রাতারাতি অর্থ ও পেশিশক্তির জোরে নিজস্ব আধিপত্য বলয় তৈরি করেছে। এমনকি, এক সাধারণ চোর বা পকেটমার পেলে তাকে যে নৃশংশ গণপ্রহার দেওয়া হয়, সেখানে সব থেকে নিরীহ, গোবেচারা দর্শকটিও তার নিকৃষ্টতম হিংসার অভিব্যক্তির পরিচয় রাখে। তাহলে এসবের অর্থ কি এই যে, শ্রমজীবী, তপশীলী, উপজাতি, নারী এদের ওপর হওয়া অত্যাচার, বঞ্চনার অবসান হয়েছে? সার্বিক ভাবে, মোটেই নয়। কিন্তু আবার এও বাস্তব, এইসব অত্যাচার, অনাচারের প্রতিরোধে যে রূপকল্প ও বাস্তব আধারগুলো তৈরি হয়েছে তা অনেকাংশেই এক অত্যাচারের অবসানে আরেক অত্যাচারের প্রতিমা গড়েছে। অর্থাৎ, বদলটা এসেছে শাসকে, কর্তৃত্বে, শাসনের আঙ্গিক বা উপচারে নয়। এ এক অখণ্ড ‘দুরভিসন্ধিমূলক’ সমস্যা। গান্ধী হয়তো সে কারণেই শাসক বদলের থেকেও ‘স্বরাজ’ অধিষ্ঠানে আরও বেশি আগ্রহী ছিলেন। যে কারণে, ১৯২১’এর অসহযোগ আন্দোলনের সময় চৌরিচৌরার পুলিশ শিবিরে জনতার আক্রমণে সাত পুলিশ কর্মীর হত্যার ঘটনায় তিনি গোটা আন্দোলনটাকেই প্রত্যাহার করে নেওয়ার সাহস দেখাতে পারেন। কারণ, যে অনাচার ও হিংসার বিরুদ্ধে আন্দোলন ও জাগরণ, তার মধ্যেই লুকিয়ে আছে হিংসার নতুনতর বীজ।

তবে শাসনের মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে জনতা বিদ্রোহ করবে, সেও স্বাভাবিক। কিন্তু সে বিদ্রোহের ফলশ্রুতিতে ক্ষমতার বয়ানে কী বদল হবে, তা অনিশ্চিত। আজকের সোশ্যাল মিডিয়ার জমানায় এসে বোঝা যাচ্ছে, এই অনিশ্চিতি কতটা বাস্তব ও অদৃষ্টপূর্ব। এমন খোলা পরিসর এতদিন কোথায় আর ছিল, যেখানে এসে যা খুশি বলে যাওয়া যেতে পারে। যেন খুলে দিয়েছে মানুষের ভেতর ঘাপটি মেরে বসে থাকা প্রতিহিংসা ও ঘৃণার জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি। প্রায় সকলেরই বক্তা হয়ে ওঠার এমন সুযোগ তাই মানুষের গহন, গভীরে যে বাতায়ন, তার কপাট দিল উন্মুক্ত করে। সত্যি অর্থে, ‘অফ দ্য পিপল বাই দ্য পিপল ফর দ্য পিপল’এর এক ঘোলা জলে আমরা নেমে পড়লাম কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি করতে। আপনার প্রিয় বন্ধু আপনার ফোন ধরেনি, আপনি দু কলম লিখে ফেললেন সকলকে জানান দিয়ে। রেস্তোরাঁয় টেবিলে খাবার সাজিয়ে দিয়েছে, আপনি সে সবের কুৎসিত ছবি তুলে ফেসবুক বা ইন্সটাগ্রামের পেজে সেঁটে দিচ্ছেন। তাও না হয় বোঝা গেল। কিন্তু প্রকাশ্যে বা গোপনে যখন কাউকে খুন বা ধর্ষণ করার হুমকি দিচ্ছেন, কোনও ব্যক্তিকে স্রেফ তাঁর ধর্ম, জাতি বা গায়ের রঙ’এর জন্য ট্রোল করছেন, গণহত্যা বা দাঙ্গায় প্রচ্ছন্ন বা প্রত্যক্ষ মদত দিচ্ছেন, চুরি, খুন, ধর্ষণেরও মিথ্যা অভিযোগ আনছেন, ঈর্ষাপরায়ণতা বা মতের অমিলের জন্যই কাউকে হিংস্রভাবে অপদস্থ করছেন- সেই আপনিই আবার গণতন্ত্রের জন্য সওয়াল করছেন, আপনার অধিকারের পাইপয়সা আদায় করে নিতে সচেষ্ট হচ্ছেন, নিকটজনের কারও ওপরে কোনও অন্যায় হলে চীৎকার করে উঠছেন। আসলে, এই দ্বন্দ্ববিধুর সংশ্লেষে আপনার সত্তা আপনাকে বাধা দিচ্ছে আগামীর কোনও উত্তরণের দোরগোড়ায় পৌঁছতে। সোশ্যাল মিডিয়া এইভাবেই নির্মাণ করছে ‘জনতা’র এক আজানুলম্ব অবয়ব। পঙ্গপালের মতো আরও আরও মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ার এই মায়ামোহ রূপধারিণীর আগুনে ঝাঁপ দিচ্ছে নিজেদের আরও তীব্র ভাবে উলঙ্গ করে। সে আগুনে তার বস্ত্র পুড়ছে। তারপর নিজেও পুড়ছে অনাহূতের মতো, সভয়ে। কারণ, ভয় ছাড়া তার আর কিছুই নেই যে, তাই মেঘের আড়াল থেকেই সে অস্ত্র ছুঁড়তে পটুত্ব অর্জন করেছে।

করোনার এই মাহামারিতেও তাই বেঁচে থাকার সমস্ত অনুষঙ্গগুলিই যেন ক্রমবিষাক্ত হয়ে উঠছে। কথায় বলে, বিপদে পড়লে বাঘে-গরুতেও এক ঘাটে জল খায়। প্রবল বন্যায় একই ভেলায় ভেসে যায় সাপ ও ব্যাঙ। তাই এ অযাচিত নয় যে প্রচণ্ড প্রলয়ে মানুষ সবেগে মানুষের সঙ্গে একাত্ম হয়ে উঠবে। অথচ, এমনতর মহা বিপর্যয়েও ‘মহান জনগণের’ এই দুরাচার কেন? সুস্থ হয়ে ফেরা মানুষকে ঘরে ঢুকতে দিচ্ছে না, পারলে পিটিয়ে দিচ্ছে; করোনা-যুদ্ধে লড়াই করে ফেরা ডাক্তার-নার্স একঘরে হচ্ছে; সামান্য একজন ধান চুরি করেছে বলে তার গায়ে গরম লোহার শিক দিয়ে প্রহার করছে; শত নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাস্তায় মাস্কহীন ঘুরে বেড়াচ্ছে শত শত লোক যাদের বারণ করলে পালটা তেড়ে আসছে, এই অবিশ্রান্ত মৃত্যু মিছিলেও যেন নির্লিপ্ত ভাব। সহযোগী মানুষের থেকে দুর্বিনীত, স্বার্থপরের সংখ্যা কি তাহলে অধিক?

এই ঘোর গোলাকার চক্রব্যূহে আমরা নিশ্চয়ই বারবার শাসকদের ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন করব, তাদের দুষ্ট নীতিমালা নিয়ে অবশ্যই জবাব চাইব, কিন্তু নিজেরা ‘মহান জনগণ’ সেজে আপন আপন বলয়ে ক্ষমতা, হিংসা, ঘৃণা ও কপটতা দেখাব আর আশা করব সুদিনের, তা তো হয় না! নীৎজে’কে আবারও স্মরণ করলে বলতে হয়: ‘যদি রসাতলে নজর দাও, তাহলে রসাতল তোমার দিকে নজর দেবে।’

    

No comments:

Post a Comment