শতবর্ষ ছুঁয়ে
সৌভিক দত্ত
( ১৭ জুন ১৯২৪ - ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০)
কোনও কোনও অর্থনীতির পড়ুয়া বিজ্ঞানের ডিগ্রিধারী, কেউ বা কলা বিভাগের। কে কোন ডিগ্রি পাবেন তা নির্ভর করে তিনি কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করলেন তার ওপর। অর্থাৎ, অর্থনীতি একটি বিজ্ঞান নাকি তার স্থান মানব বিদ্যার অঙ্গনে সেই তর্ক এখনও অমীমাংসীত। তবে অর্থনীতি অধ্যয়ন যত গাণিতিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও মডেল নির্ভর হচ্ছে ততই বোধহয় পোক্ত হচ্ছে একে বিজ্ঞান বলে মনে করবার প্রবণতা। একটি গাণিতিক মডেলের সাহায্যে নিজের মতকে প্রমাণ বা প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে কুলীন অর্থনীতিবিদদের একাডেমিক সমাজে কল্কে পাওয়া কঠিন। এমনকি বিশ্বের সেরা শিরোপা নোবেল পুরস্কারও 'প্রাইজ অন ইকনমিক সায়েন্সেস' বলে দেওয়া হয়। মূলধারার অর্থনীতি চর্চা এখন অনেক বেশি নৈর্ব্যক্তিক ও টেকনিক্যাল। কিন্তু শাস্ত্র হিসেবে অর্থনীতি যত নৈর্ব্যক্তিক হচ্ছে, তত্ত্ব, মেথডোলজি, পরিসংখ্যান, রাশি বিজ্ঞানের মডেল, সূচকের পরিমাপ ইত্যাদির ওপর যত জোর পড়ছে, তত তা বড় বেশি যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে! ততই তার কেন্দ্র থেকে মানুষ সরে যাচ্ছে না তো? এমন একটা শঙ্কার কথা শোনা যাচ্ছে বেশ কিছুকাল।
তবে সুখের কথা, এমন কিছু কৃতী ও সার্থক অর্থনীতিবিদ আছেন যাঁদের চিন্তার কেন্দ্রস্থলে ব্যক্তি মানবের স্থান অবিচল থেকেছে। মানুষকে তাঁরা অর্থনীতির পরিভাষায় কেবল ইকনমিক এজেন্ট বা উৎপাদনের উপকরণ ভাবেন না, অর্থনীতির অর্থ যাঁদের কাছে কেবল কতকগুলো অপটিমাইজেশন এক্সারসাইজ নয়। মানুষের কল্যাণ চিন্তা অগ্রাধিকার পেয়েছে, এমন একটা অর্থনীতি চর্চার ঐতিহ্যও আমাদের সামনে রয়েছে। এ দেশের অর্থনীতিবিদদের মধ্যেও রয়েছে।
এ বিষয়ে অধ্যাপক অম্লান দত্ত ছিলেন অমর্ত্য সেন, কৌশিক বসু, প্রণব বর্ধন, অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, জঁ দ্রেজ প্রমুখদের অগ্রজপ্রতিম। কথাটি বিশেষ ভাবে স্মরণযোগ্য এইজন্য যে, এই ১৭ জুন ২০২৪ অম্লান দত্ত শতবর্ষ পূর্ণ করলেন।
১৯২৪'এ তৎকালীন অবিভক্ত ভারতের কুমিল্লা জেলায় তাঁর জন্ম। স্নাতক স্তরে ভর্তি হওয়ার প্রাক্কালে তাঁর পিতৃদেব তাঁকে ডেকে জানতে চান সে কোন বিষয় নিয়ে পড়বে, কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে কিনা। তরুণ পুত্র তাঁর পিতাকে পাল্টা জিজ্ঞাসা করেন, তাঁর কি কোনও পরামর্শ আছে? পিতা বলেন, তোমার কিছু লেখা আমার হাতে এসেছে। তা পড়ে আমার মনে হয়েছে তুমি ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়ার কথা ভাবতে পারো। তুমিও কি তাই ভাবছ? পুত্র বলেন, না আমি অর্থনীতি নিয়ে পড়ব ভাবছি। স্বভাবতই পিতা মন্তব্য করেন, ও, বিষয় হিসেবে ইংরেজির চেয়ে অর্থনীতি তোমার বেশি পছন্দ? পুত্রের জবাব, একেবারেই না। ইংরেজি সাহিত্য আমি নিজে থেকেই পড়ি। ইতিহাস, দর্শন, বাংলা সাহিত্য, ধর্ম এসব বিষয় আমি নিজের প্রাণের টানেই জেনে নেব। কিন্তু বাধ্য না হলে আমি অর্থনীতির পাঠ্যবই হয়তো হাতে নেব না। অথচ, অর্থনীতি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা না থাকলে এই সমাজ আর এই সময়কে জানাটা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তাই আমি অর্থনীতি নিয়েই পড়ব ভেবেছি।
এই ঘটনা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে অম্লান-চিন্তায় অর্থনীতি চর্চার তাগিদটা ঠিক কোথায়। তাই অম্লান দত্তের চিন্তাভাবনা অর্থনীতির চেনা পরিসর অতিক্রম করেছে অনবরত। কারণ, অর্থনীতি চর্চা তাঁর কাছে বৃহত্তর মানব চর্চার একটি উপকরণ মাত্র ছিল। অর্থনীতির থিসিস রচনায় তিনি কখনও তেমন আগ্রহ বোধ করেননি। বরং তাঁর পছন্দের কাজ ছিল অর্থনীতি পড়ানো- যেখানে মানুষে মানুষে সংলাপের মধ্য দিয়ে বিষয়টা অনেক জীবন্ত হয়ে ওঠে। উনি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করতেন ওনার শিক্ষক বিনয় সরকারের পড়ানোর ধরন, যিনি ক্লাসে এসে অনেকটা এইরকম বলতেন- অ্যাডাম স্মিথ এই বলেছেন, রিকার্ডো এই বলেছেন, মার্কস এই বলেছেন, বিনয় সরকার এই বলছেন, এবার অম্লান কী বলবি বল; ছাত্রের মধ্যে প্রশ্নমুখর, জিজ্ঞাসু মন জাগিয়ে তোলা যে শিক্ষণ পদ্ধতির অন্যতম লক্ষ্য। আবার অম্লানবাবু যখন তাঁর স্বভাবসিদ্ধ নীচু স্বরে পড়াতেন, গোটা ক্লাসে পিন পতনের শব্দও শোনা যেত- ছাত্ররা উৎকর্ণ হয়ে থাকতেন একটি শব্দও যাতে হারিয়ে না যায়।
অম্লান দত্তের ছাত্রদের মধ্যে অনেকেরই তখন বামপন্থার দিকে ঝোঁক। সময়টাই তাই। আবার প্রাতিষ্ঠানিক বামপন্থীরা তাঁকে মনে করতেন ধনতন্ত্রের ধ্বজাধারী। কেমব্রিজের বিশিষ্ট মার্কসবাদী অর্থনীতিবিদ মরিস ডবের সঙ্গে তাঁর সে আমলে আলোড়ন সৃষ্টিকারী বিতর্ক সেই ধারণায় পাকা সিলমোহর বসিয়ে দিয়েছিল। অম্লান দত্তের প্রথম প্রকাশিত যে গ্রন্থ 'ফর ডেমোক্রেসি' যা পড়ে আইনস্টাইন, রাসেলের মতো বুদ্ধিজীবীরা চিঠি লিখে স্বতংস্ফূর্ত অভিনন্দন জানিয়েছিলেন, তাও ছিল স্তালিনীয় স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে ও গণতন্ত্রের পক্ষে জোরালো সওয়াল। অম্লানবাবু আজীবন সোভিয়েত ব্যবস্থার কঠোর সমালোচক ছিলেন এবং এ ব্যবস্থা দীর্ঘকাল টিকতে পারে না এই মত পোষণ করতেন। অম্লান দত্তের ছাত্র বামপন্থী অর্থনীতিক রতন খাসনবীশ সম্প্রতি স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে জানিয়েছেন যে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার অব্যবহিত পরে অম্লানবাবুর বাড়ি গিয়ে জিজ্ঞেস করেন যে বামপন্থার এই বিপর্যয়ে নিশ্চয়ই তিনি খুশি হয়েছেন। তাঁকে অবাক করে দিয়ে অম্লানবাবু বলেন যে না, তিনি হননি। অনেক মানুষের মতো তাঁর মনেও একটি সাম্যবাদী স্বপ্ন সযত্নে লালিত ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের ব্যবস্থায় সেই স্বপ্নের একটি নিপীড়িত প্রতিমূর্তি (অম্লান দত্ত বোধহয় 'tortured embodiment of that dream' কথাটা ব্যবহার করেছিলেন) দেখে তিনি তার বিরোধিতা করতেন মাত্র।
অর্থাৎ, মুনাফা সর্বাধিকীকরণ সর্বস্ব যে মূলধারার ধনতান্ত্রিক অর্থনীতি চর্চা, তাকেই অম্লান দত্ত একমাত্র সত্য বলে মানেননি। বরং তাঁর মনোযোগ বিকল্পের সন্ধানে বারবার আকৃষ্ট হয়েছে গান্ধী ও রবীন্দ্রনাথের চিন্তা ও কর্মধারার দিকে। প্রথাগত অর্থে অর্থনীতির স্বীকৃত তাত্ত্বিক না হলেও এই দুই মনীষীর মানুষের আত্মশক্তি জাগিয়ে তুলে সামাজিক সহযোগের পথে গ্রামীণ উন্নয়ন প্রয়াসকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনার যোগ্য মনে করেছেন। এই বিপুল বিশ্বে সর্বত্র এক মাপে প্রযোজ্য এমন দুনিয়া জোড়া একমাত্রিক মতবাদ গড়ে তোলা কতদূর সঙ্গত এ প্রশ্ন তিনি তুলেছিলেন। এই দিক থেকে তাঁর কাছে শান্তিনিকেতনের চেয়ে শ্রীনিকেতনের মূল্য কম নয়। যেমন তাঁকে উজ্জীবিত করে তুলত রবীন্দ্র প্রেরণায় প্রাণিত পান্নালাল দাশগুপ্ত বা নিরঞ্জন সান্যাল বা অশোক ঘোষের স্বকীয় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। আশু লক্ষ্যে বা কর্মসূচিতে তাঁরা অভিন্ন নয়, কিন্তু সর্বত্র একটা মিল হচ্ছে, যে কোনও অচল বৃহৎ নীতির দাস না হয়ে স্থানীয় সমস্যায় স্থানীয় মানুষকে সামিল করে স্থানীয় সমাধান খোঁজা। এইসব ছোট ছোট স্থানীয় উদ্যোগ নিয়ে তিনি মনে করতেন সেখানে পরীক্ষার পরিসর ছোট বলে ভুল হলেও তাও হবে ছোট মাপের। আর যদি সফল হয়, তাকে ঘিরে তৈরি হবে অনুরূপ উদ্যোগ।
ইতিহাস সাক্ষী, কেন্দ্রীয় কোনও গ্র্যান্ড এক্সপেরিমেন্টের বড় বেশি মূল্য চোকাতে হয়। সমাজতন্ত্র সরাসরি কেন্দ্রীকরণের ওপর দাঁড়িয়ে। আবার ধনতন্ত্র যতই বাজার নির্ভর প্রতিযোগিতার কথা বলুক, দেশে দেশে অভিজ্ঞতা দেখায় যে মুনাফা বৃদ্ধির দৌড়ের একচেটিয়া কারবারের দিকে ঝোঁকটা স্পষ্ট। এটা তাঁর সময়ে রবীন্দ্রনাথও লক্ষ করেছিলেন যে কেন্দ্রিকতা ও রাষ্ট্র নির্ভরতা অতি বৃদ্ধির ফলে সমাজের নিজস্ব সৃজন শক্তি ক্ষীণ হয়ে আসে। প্রাচীন সমাজ যখন এত পরনির্ভরশীল হয়ে পড়েনি তখন, তাঁর ভাষায়, 'দেশের রাজা অন্যমনস্ক হইলে দেশের জল পাত্র একেবারে রিক্ত হইয়া যাইত না।' সমাজ রাজাকে শুধু পিটিশন লিখে হাত গুটিয়ে বসে না থেকে নিজে কূপ খননে প্রবৃত্ত হত।
কেন্দ্রীকরণের সমস্যা বোঝাতে গিয়ে অম্লানবাবু ব্যবহার করেছেন আমাদের রাজ্যের উদাহরণ। কলকাতা এ রাজ্যের প্রধান ব্যবসা কেন্দ্র, প্রশাসনিক কেন্দ্র আবার শিক্ষাকেন্দ্রও। এই ত্রহ্যস্পর্শ ভালো হয়নি। এটি অপ্রয়োজনীয় ও অনাকাঙ্ক্ষিত। যেমন আমেরিকায় ব্যবসা কেন্দ্র ন্যুইয়র্ক, রাজধানী ওয়াশিংটন, আর শিক্ষাকেন্দ্র ক্যালিফোর্নিয়া সহ নানা স্থানে বিস্তৃত। ফলে, সব রক্ত সেখানে এক স্থানে এসে জমা হয়নি। এমনকি প্রতিবেশী পাকিস্তানেও লাহোর, করাচি, ইসলামাবাদ তিন ধরনের কেন্দ্র। কিন্তু কলকাতা সব কিছুর কেন্দ্র হয়ে ওঠায় এই অতিস্ফীত মহানগরী নানা সমস্যায় জর্জরিত। এর পরিকাঠামোগত উন্নতি ও রূপসজ্জার জন্য যদি হাজার হাজার কোটি টাকার পরিকল্পনা গ্রহণ করাও হয়, তবু দুটো প্রশ্ন থেকে যায়।
প্রথমত, সারা বাংলার গ্রামে গ্রামে যেখানে ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধার অভাব সেখানে সরকারের সিংহভাগ সম্পদ শুধু রাজধানীর উন্নতিকল্পে ঢালাটা কতদূর সঙ্গত! দ্বিতীয়ত, রাজ্যের অন্যান্য জায়গার সঙ্গে কলকাতার সমস্ত দিক থেকে ব্যবধান আরও বেড়ে গেলে আরও বেশি বেশি সংখ্যক মানুষ গ্রাম ছেড়ে কলকাতা মুখি হয়ে পড়বে। তাই অম্লানবাবুর পরামর্শ, খুব সচেতন ভাবেই কলকাতা ব্যতিরেকে বাংলার অন্যান্য স্থানে শিক্ষা, প্রশাসনের প্রতিষ্ঠান ধীরে ধীরে সরিয়ে নেওয়া হোক। এতে কলকাতাবাসী মধ্যবিত্ত শ্রেণির অভ্যস্ত ছকে বাঁধা জীবনে কিছু সাময়িক ব্যাঘাত ঘটবে কিন্তু তাঁর মতে সেটাই পশ্চিমবঙ্গের ভবিষ্যতের জন্য সুপথ। তাঁর বক্তব্য, 'কলকাতা উদাহরণ মাত্র। প্রয়োজন পরিকল্পিত বিকেন্দ্রীকরণের। কয়েকটি গ্রামের কেন্দ্রে একটি স্থানীয় বাজার ও ছোট শহর; কয়েকটি ছোট শহরের কেন্দ্রে একটি মাঝারি শহর; এইভাবে পরিকল্পনা অনুযায়ী গ্রাম ও শহরের বিন্যাস ও উন্নয়ন সম্ভব। ...কৃষিতে নিযুক্ত মানুষদের একটা বড় অংশকে গ্রামীণ শিল্পে অথবা কৃষির বাইরে অন্য কোনও উৎপাদক কাজে নিয়ে আসতে হবে তা নইলে গ্রামের আর্থিক সমস্যা ঘুচবে না। কয়েকটি গ্রামের বাইরে যে ছোট শহর সেখানেও সেই শিল্পের সংস্থান হতে পারে। বিকেন্দ্রীকৃত শিল্পায়নের জন্য ব্যাঙ্কের ঋণ নীতি ও পদ্ধতির যেমন পরিবর্তন চাই তেমনি গবেষণার সংগঠনে ও সমস্যার নির্বাচনে নতুন উদ্দেশ্যের প্রতিফলন থাকা প্রয়োজন। পরিকল্পনার এক একটি বৃত্ত তৈরি হতে পারে কিছু গ্রাম ও বাজার সহ ছোট শহর নিয়ে। এক বৃত্তের সঙ্গে বৃহত্তর বৃত্তের যোগ ঘটিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে পারি জাতীয় অর্থনীতির দিকে। আর্থিক ও সামাজিক ক্রিয়াকর্মের এইরকম একটা রূপরেখার ইঙ্গিত ছিল গান্ধীর চিন্তা ও রচনায়। গান্ধী ও রবীন্দ্রনাথ উভয়েই পল্লীকে ভিত্তি হিসেবে মেনে নিয়ে তাঁদের আদর্শ সমাজের সংগঠনের চিত্রটি দেশের সামনে তুলে ধরেছিলেন। এরই সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এঁরা শিক্ষারও রূপায়ণ করেছিলেন। দেশের সঙ্গে নব মধ্যবিত্তের বিচ্ছিন্নতা থেকে উত্তরণের পথ এই।'
এখানে একটা প্রশ্ন উঠতে পারে যে, এই সুপারিশ আমাদের আধুনিক জীবনের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে কতদূর সঙ্গতিপূর্ণ? তাই বোধহয় তিনি বলছেন, 'এইখানে এসে যায় একটা জীবনদর্শনের কথা, যা থেকে অর্থনীতিকে বিচ্ছিন্ন করে দেখলে পরিণামে বিপত্তি ঠেকানো যায় না। আধুনিক অর্থবিজ্ঞানের ভিত্তিতে আছে উপযোগবাদ বা সুখবাদ। উপযোগবাদের প্রধান দুর্বলতা বোধকরি এই যে, সুখ জিনিসটাকে সে খণ্ড খণ্ড করে দেখে। তাতে ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির সুখের প্রতিদ্বন্দ্বিতা বড় হয়ে ওঠে, মানুষে মানুষে আনন্দের পরিপূরকতা তেমন স্বীকৃতি পায় না। অবশেষে সমাজের সংহতি বিপন্ন হয়।'
আজ প্রচলিত পথে হেঁটে জলবায়ু পরিবর্তন, আর্থিক অসাম্য, বেকারত্ব ও আঞ্চলিক বৈষম্য প্রসূত গণ পরিযাণ ইত্যাদি সমস্যায় আমাদের গোটা অস্তিত্ব সত্যিই বিপন্ন তখন অর্থনীতি চিন্তার এই বিকল্প ধারাকে একবার পরীক্ষা করে দেখার সময় এসেছে। গঠনমূলক, কল্যাণকর এই ক্ষীণতণু ভাবনার ঐতিহ্য শতবর্ষ পেরিয়ে চির অম্লান হোক।
খুব সুন্দর ও সংহত বক্তব্য। মনীষী অম্লান দত্তের প্রাসঙ্গিকতাকে সৌভিক নির্ভেজাল যুক্তির সাহায্যেই প্রকাশ করেছেন। যদিও তাকে ছাপিয়ে গেছে তাঁর নির্ভেজাল আন্তরিকতা ও প্রবুদ্ধ প্রজ্ঞা।
ReplyDeleteখুব মনোগ্রাহী
ReplyDelete'বিকল্প সমাজের সন্ধানে ' - স্যার-র ভাবনার রূপরেখা খুবই সুন্দর ভাবে প্রকাশিত হয়েছে।
ReplyDeleteধন্যবাদ।
অম্লান দত্তের ভাবনা বিষয়ে জানার আগ্রহ বা ক্ষিদে যেন মিটতেই চায় না। আলোচ্য লেখাটি অত্যন্ত স্বাদু রূপেই পরিগণিত হবে নিশ্চিত।
ReplyDeleteঅম্লান দত্তের মানবেন্দ্রিক অর্থনীতি চিন্তা, সমাজ গঠনের বিকল্প ভাবনা সুন্দর ভাবে যুক্তি দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে। পড়ে ঋদ্ধ হলাম। তাঁর এই ভাবনা শতবর্ষ ছাপিয়ে ছড়িয়ে পড়ুক, আগামী দিন তাকে কাজে রূপায়ণ দিক।
ReplyDelete