Saturday 18 September 2021

বাণিজ্যে বসতে ক্রিকেট

১৯৭১ থেকে ২০২১

ভারতীয় ক্রিকেটের বিস্ময়বর্ষ থেকে অধঃপতন

শোভনলাল চক্রবর্তী


১৯৭১-এর শুরুতে ভারতীয় ক্রিকেট দল সফর করে প্রথমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং পরে ইংল্যান্ড। বিদেশের মাটিতে উপর্যুপরি দুটি সিরিজ জয় ভারতীয় ক্রিকেটকে রাতারাতি বিশ্ব ক্রিকেটের আঙিনায় এক স্থায়ী আসনে প্রতিষ্ঠিত করে। ওই বছরটি ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসে স্থান পায় বিস্ময়বর্ষ হিসাবে।

আজ ৫০ বছর পর বদলে গেছে ক্রিকেটের খোলনলচে। সম্প্রতি ভারতীয় ক্রিকেট দলের ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওভাল টেস্ট জয়ের পর অনেক ক্রিকেট প্রতিবেদক এই জয়কে ১৯৭১-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন। কিন্তু ঈগল আর চিলের মধ্যে কি তুলনা টানা চলে? ক্রিকেটের বাণিজ্যকরণের ঠেলায় আজ তো ক্রিকেট থেকে ক্রিকেটটাই বাদ পড়তে বসেছে। যে ভাবে এবং যে সব কারণে ইংল্যান্ডের সঙ্গে পঞ্চম টেস্ট বাতিল হল, তাতে ভারতীয়  ক্রিকেটের অধঃপতন স্পষ্টভাবে লেখা রয়ে যাবে। যে ভাবে রাতারাতি ক্রিকেটারদের ইংল্যান্ড থেকে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হল আইপিএল খেলার জন্য, তাতে বলাই যায় যে ছোট ফরম্যাটের ক্রিকেট- যেমন ৫০ ওভারের বা ২০ ওভারের- টেস্ট ক্রিকেটকে হত্যা করেছে।

১৯৭১ আজও স্মৃতিতে উজ্জ্বল, কিন্তু তার পাশে ২০২১ নেহাতই সাধারণ আর একটা জয়। ১৯৭১-এর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের  দল ঘোষণার পর দেশ জুড়ে শুরু হয়েছিল প্রবল বিতর্ক। কারণ, দল থেকে বাদ পড়েছিলেন ব্যাটসম্যান মনসুর আলি খান পতৌদি, চাঁদু বোরদে, স্পিন বোলার চন্দ্রশেখর, অলরাউন্ডার রুসি সুর্তি এবং উইকেটরক্ষক ফারুখ ইঞ্জিনিয়ার। ওয়েস্ট ইন্ডিজ তখনও ততটা শক্তিশালী দল হয়ে ওঠেনি। সেই সময়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলেও চলছিল একটা পর্বান্তর। গ্যারি সোবার্স, রোহান কানহাই'রা তখন তাঁদের ব্যাটন তুলে দিচ্ছেন নতুনদের হাতে যাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য ক্লাইভ লয়েড, রয় ফ্রেডরিক্স এবং ভ্যানবার্ন হোল্ডার। ছয় টেস্টের সিরিজে ভারতীয় দলের নতুন অধিনায়ক অজিত ওয়াদেকর, সহ-অধিনায়ক ভেঙ্কটরাঘবন এবং বেশ কিছু নতুন মুখ। 

ভারতীয় দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ পৌঁছতেই কাগজের হেডলাইন হল- দল পৌঁছেছে কিন্তু পুরো টিমের কিটস সব লোপাট, পাওয়া যাচ্ছে না। নিউ ইয়র্কের বিমানবন্দরে বিমান বদলের সময় নাকি দলের সব খেলোয়াড়ের কিটস ভুল বিমানে তুলে দেওয়া হয়েছে। এই নিয়ে ভারতীয় মিডিয়া তোলপাড়। এদিকে কিংস্টন, জামাইকা পৌঁছে বসে আছে দল, প্র্যাকটিস করতে পারছে না। এর মধ্যেই চলে এল আরও এক দুঃসংবাদ। দলের দুই নতুন সদস্য সুনীল গাভাস্কার ও গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ অসুস্থ। গাভাস্কারকে নাকি অস্ত্রোপচার করাতে হবে! শেষে জানা গেল, গাভাস্কারের একটি আঙুলে নখকুনি হয়ে তাতে পুঁজ জমে গেছে, তার জন্য তাঁর একটা ছোট্ট অস্ত্রোপচার জরুরি। এদিকে নিউ ইয়র্কের বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ চিঠি লিখে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডকে জানিয়ে দিল যে তাদের তরফে কোনও ভুল হয়নি, তারা ঠিক বিমানেই কিটস তুলে দিয়েছে এবং সেই নথিও তারা তুলে দিল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের হাতে। ভারতীয় দলের সেই সফরের ম্যানেজার ছিলেন কেকি তারাপোরে। তিনি তখন কাগজপত্র নিয়ে ছুটলেন কিংস্টন বিমানবন্দরে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর দেখা গেল, বেওয়ারিশ মালপত্রের ভিড়ে পরে আছে ভারতীয় খেলোয়াড়দের সমস্ত কিটস! আর একদিন পরেই  সেগুলো ফেলে দেওয়া হত আবর্জনার স্তূপে। 

এই অবস্থায় শুরু হল সিরিজ। সাবিনা পার্ক, কিংস্টনের প্রথম টেস্টের প্রথম দিন ভেস্তে যায় বৃষ্টির কারণে। দ্বিতীয় দিনে টসে জিতে ভারতকে দুরমুশ করার অভিসন্ধি নিয়ে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের অধিনায়ক জীবন্ত কিংবদন্তি গ্যারি সোবার্স। ভারতের পাঁচ উইকেট পড়ে যায় মাত্র ৭৫ রানে। মনে আছে ইংরেজি ধারাবিবরণী দিচ্ছিলেন টনি কোজিয়ার। তিনি বলেছিলেন, এই ভারতীয় দল ওয়েস্ট ইন্ডিজের যে কোনও ক্লাব দলের বিপক্ষেও খেলার অযোগ্য। সেই কথা কি পৌঁছেছিল মাঠে ব্যাটিংরত দিলীপ সারদেশাই-এর কানে? কোজিয়ারকে মোক্ষম জবাব দিয়েছিল সারদেশাইয়ের অনবদ্য ব্যাটিং। তাঁর চওড়া ব্যাটের কল্যাণে ভারত ইনিংস শেষ করল ৩৮৭-তে, সারদেশাই অপরাজিত ২১২! সঙ্গে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছিলেন সোলকার ও ভেঙ্কটরাঘবন।

দিলীপ সারদেশাই
 

এর পর আরও চমক বাকি ছিল। ভারতের স্পিন বোলিংয়ে কুপোকাত হলেন সোবার্স, কানহাইয়ের ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ভারতের অধিনায়ক অজিত ওয়াদেকার যখন সোবার্সের কাছে গিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ফলো-অন করতে বলছিলেন, তখন নাকি তাঁর গলা কাঁপছিল। কারণ? কারণ বাঁ-হাতি ওয়াদেকারের খেলোয়াড় জীবনের রোল মডেল ছিলেন বাঁ-হাতি সোবার্স। সেই গুরুকে ফলো-অন করাতে লজ্জিত হয়েছিলেন ওয়াদেকার। এই ছিল সেদিনের ক্রিকেট ও এক খেলোয়াড়ের প্রতি অন্যের সম্মানের নমুনা।

আসলে ক্রিকেট একটা সংস্কৃতি, একটা বোধ। এসব আজ ক্রিকেট থেকে বিদায় নিয়েছে আরও অনেক কিছুর মতো। ফলো-অন করতে নেমে অবশ্য চোখ ঝলসানো ক্যালিপসো ব্যাটিং করেছিলেন রোহান কানহাই, খেলেছিলেন ১৫৮ রানের একটি শৈল্পিক ইনিংস। ওই টেস্ট ড্র হয়েছিল। কিন্তু ভারতীয় ড্রেসিংরুমে রোহান কানহাইয়ের সেই অপরূপ ব্যাটিং এক ২১ বছরের নবাগত ভারতীয় ব্যাটসম্যানকে এমন উদ্বুদ্ধ করেছিল যে সারা জীবন তিনি তা ভোলেননি। অনেক পরে নিজ পুত্রের নাম রেখেছিলেন তাঁর নামে: রোহান। প্রথম টেস্টে সেই নবাগতের দলে স্থান হয়নি। তাঁর অভিষেক হয়েছিল দ্বিতীয় টেস্টে। একদম ঠিক ধরেছেন। সেই নবাগতের নাম সুনীল গাভাস্কার। 

সেই ঐতিহাসিক টেস্টটি খেলা হয়েছিল পোর্ট অফ স্পেনের কুইন্স পার্ক ওভাল মাঠে। সোবার্স টসে জিতে এবার ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ভারতীয় স্পিন বোলিংয়ের সামনে তাঁর দল ধরাশায়ী হয় ২১৪ রানে। অন্য দিকে সারদেশাই প্রথম টেস্টে যেখানে শেষ করেছিলেন, শুরু করলেন ঠিক সেখান থেকে। খেললেন ১১২ রানের একটি অসামান্য ইনিংস। যার দৌলতে ভারতের রান উঠল ৩৫২। ওয়েস্ট ইন্ডিজের নবাগত অফ স্পিনার জ্যাক নরেইগা পেলেন ৯৫ রানের বিনিময়ে ৯ উইকেট, যা আজও ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলিংয়ে এক রেকর্ড। দ্বিতীয় ইনিংসেও তেমন দাঁড়াতে পারল না ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ইনিংস শেষ হয়ে গেল ২৬১ রানে। ভেঙ্কটরাঘবন পেলেন পাঁচ উইকেট। সেলিম দুরানি বল হাতে শূন্য রানে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন সোবার্সকে, আর খুব অল্প রানে ক্লাইভ লয়েডকে। ভারতের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১২৪ রানের। তিন উইকেট হারিয়ে ভারতের রান হল ১২৫। গাভাস্কার করেছিলেন ৬৭। ভারত ৭ উইকেটে টেস্ট ম্যাচ জিতল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে ভারত সেদিন এক অনন্য কীর্তি স্থাপন করল। 

সেই সময়ে কলকাতার পরিস্থিতি রাজনৈতিক ভাবে ছিল অশান্ত। নকশাল আন্দোলনের সঙ্গে যোগ হয়েছে বাংলাদেশের মাটিতে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ। প্রতিদিন সীমান্ত পেরিয়ে আসছেন মানুষ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরকারী ভারতীয় ক্রিকেট দলে ছিলেন কলকাতার রুসি জিজিবয়। তাঁর মন পরে থাকত কলকাতায়। সঙ্গে গোটা দলের। ওয়েস্ট ইন্ডিজে তৃতীয় টেস্ট চলাকালীন স্বাধীন হল বাংলাদেশ। পাকিস্তান বাহিনী আত্মসমর্পণ করল ভারতের হাতে। জর্জটাউনের ওই তৃতীয় টেস্ট ড্র হয়েছিল, কিন্তু গাভাস্কার করেছিলেন জীবনের প্রথম টেস্ট শতরান। 

ব্রিজটাউনের চতুর্থ টেস্টও ড্র হল। ত্রিনিদাদের পঞ্চম ও শেষ টেস্টে প্রথমে ব্যাট করে ভারত রান তোলে ৩৬০। গাভাস্কার সেঞ্চুরি করেন (১২৪) ও সারদেশাই ৭৫। ব্যাট হাতে মূল্যবান ৫১ রান করেন ভেঙ্কটরাঘবন। জেতার জন্য মরিয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংসে রান তোলে ৫২৬। ম্যাচ বাঁচাতে মরিয়া ভারতের নবাগত গাভাস্কার অসহ্য দাঁতের ব্যথা নিয়ে খেলেছিলেন সিরিজের শ্রেষ্ঠ ইনিংস। ভারতের ৪২৭ রানে গাভাস্কারের অবদান ছিল ২২০। এই ইনিংস খেলার পর গাভাস্কারকে নিয়ে রচিত হয় ক্যালিপসো সংগীত। ছয় দিনের ওই টেস্টের শেষ দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২৬২ রানের। কিন্তু ভারতের স্পিন ও মিডিয়াম পেস বোলিংয়ে আবার ধরাশায়ী হয় ক্যারিবিয়ানরা। আবিদ আলি পেয়েছিলেন তিন উইকেট। দিনের শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ছিল ৮ উইকেটে ১৬৫। সোবার্সের দলের হাত থেকে সিরিজ ছিনিয়ে নেয় ভারত। ওই সিরিজের সর্বোচ্চ রান প্রাপক ছিলেন গাভাস্কার (৭৭৪), দ্বিতীয় ছিলেন সারদেশাই (৬৪২) এবং তৃতীয় ছিলেন সোবার্স (৫৯৭)। সিরিজের সর্বোচ্চ উইকেট প্রাপক ছিলেন ভেঙ্কটরাঘবন, পেয়েছিলেন ২২টি উইকেট। ভারতের তিন স্পিনার বেদী, প্রসন্ন ও ভেঙ্কট মিলে পেয়েছিলেন ৪৮টি উইকেট। 

এরপর ভারত আগস্ট মাসে যায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ খেলতে। সাউথ আফ্রিকা ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ানোয় তখন রে ইলিংওয়ার্থ-এর ইংল্যান্ড টানা ২৪ টেস্টে অপরাজিত বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ক্রিকেট দল। ইংল্যান্ডগামী দলে জায়গা পেলেন গুগলি বোলার চন্দ্রশেখর, উইকেটরক্ষক ফারুখ ইঞ্জিনিয়ার। এই দুজনেই উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন ওই সিরিজে। ইংল্যান্ড সফরে লর্ডসের প্রথম টেস্ট ড্র হয়েছিল। কিন্তু ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে গাভাস্কার যখন ইংল্যান্ডের পেস বোলার জন স্নো-এর একটি বলকে কভার অঞ্চলে ঠেলে দিয়েই একটি দ্রুত রান নিচ্ছিলেন, তখন স্নো বিচ্ছিরি ভাবে গাভাস্কারের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটান। গাভাস্কারের হাত থেকে ছিটকে যায় ব্যাট। স্নো ব্যাটটি মাটি থেকে তুলে ছুঁড়ে দেন গাভাস্কারের দিকে। এই ঘটনায় তোলপাড় পড়ে যায়। ইংল্যান্ডের মিডিয়া সহ বিশ্বের সমস্ত মিডিয়া স্নোকে এমন অখেলোয়াড়চিত মনোভাব দেখানোর জন্য ক্ষমা চাওয়ার দাবি করেন। ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট আলেক্স ডেক্সস্টার স্নোকে দ্বিতীয় টেস্টে দল থেকে বাদ দিয়ে ব্যাপারটা সামলে দেন। 

ওল্ড ট্রাফোর্ডে দ্বিতীয় টেস্টে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক ইলিংওয়ার্থ সেঞ্চুরি করেন। ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসের ৩৮৬ রানের জবাবে ভারতের স্কোরবোর্ডে ওঠে ২১২। গাভাস্কার অর্ধশতরান করেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ডের ব্রায়ান লাকহার্স্ট সেঞ্চুরি করেন। ম্যাচের শেষ দিনে লাঞ্চের কিছু পরে ইংল্যান্ড তিন উইকেটে ২৪৫ তুলে ডিক্লারেশন দেয়। ভারত বাকি সময় ব্যাট করায় ম্যাচ ড্র হয়। ওভালে তৃতীয় টেস্টে দলে ফিরে আসেন জন স্নো। দুটি ইনিংসেই গাভাস্কারের উইকেট নেন স্নো। প্রথম ইনিংসে ছয় রানে এবং দ্বিতীয় ইনিংসে শূন্য রানে। প্রথম ইনিংসে গাভাস্কারকে একটি বাউন্সার দিয়ে মাটিতে ফেলে দেন স্নো। গাভাস্কারের গলার চেন ছিঁড়ে গিয়েছিল সেই বাউন্সারে, বলটি গাভাস্কারের গলা বা থুতনিতে লাগলে খুব বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেত। ইংল্যান্ড অধিনায়ক রে ইলিংওয়ার্থ এই ঘটনায় স্নো'কে প্রকাশ্যে সাবধান করেন। এই টেস্টে টসে জিতে ইংল্যান্ড প্রথমে ব্যাট করে তোলে ৩৫৫ রান। অল্প কয়েক রানের জন্য সেঞ্চুরি হাতছাড়া করেন ইংল্যান্ডের উইকেট রক্ষক এলান নট। ভারতের প্রথম ইনিংস থেমে যায় ২৮৪ রানে। ভারতীয় ক্রিকেট দলের উইকেটরক্ষক ফারুখ ইঞ্জিনিয়ার খেলেন ৬৯ রানের এক মূল্যবান ইনিংস। ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংস ১০১ রানে মুড়িয়ে দেন একা চন্দ্রশেখর। তাঁর গুগলির কোনও নাগাল পাননি ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা। মাত্র ৩৮ রানে ৬টি উইকেট নেন তিনি। চন্দ্রশেখরের বলের কমেন্টারি করতে গিয়ে রিচি বেনো কোনও কথা বলতেন না। কিছুক্ষণ থেমে থেকে বলতেন, ব্যাপারটা কী হল বুঝে আপনাদের বলার চেষ্টা করব। দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের জয়ের জন্য দরকার ছিল ১৭৩ রান। ছয় উইকেট হারিয়ে ভারত তুলে নেয় ১৭৪ রান। অধিনায়ক অজিত ওয়াদেকার খেলেছিলেন ৪৫ রানের এক ধৈর্যশীল ইনিংস। ইংল্যান্ডের মাটিতে ভারতের টেস্ট জয়ের মুহূর্তে ইংরেজি কমেন্টারি করছিলেন জন আর্লট। আজও কানে বাজে তাঁর সেই দৃপ্ত কণ্ঠস্বর: ইন্ডিয়া ক্রিয়েটস হিস্ট্রি। 

ইংল্যান্ডের ২৬ টেস্টে অপরাজিতের দৌড় থামিয়ে দিয়েছিল ভারত। কানে রেডিও নিয়ে বিভিন্ন ভাবে ঘুরে ঘুরে একটা বিশেষ অবস্থানে এলে শোনা যেত কমেন্টারি। সেও ছিল এক মজার ব্যাপার। আজ সবই এতই সহজলভ্য যে জীবন থেকে নতুন কিছু পাওয়ার আনন্দটাই চলে গেছে। ১৯৭১ আমাদের কাছে নিছক দুটি ক্রিকেট সিরিজ জয় নয়, মনের মণিকোঠায় সাজিয়ে রাখা দুটি অমূল্যরতন, আজও যার দীপ্তি মনকে রাঙিয়ে তোলে।


No comments:

Post a Comment