Sunday, 19 September 2021

‘দ্য গ্রেট রেজিগনেশন’!

চাকরি ছাড়ার হিড়িক কেন?

অনিন্দ্য ভট্টাচার্য

 

এই বছরের গোড়া থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য বহু দেশে ‘গ্রেট রেজিগনেশন’ বা ‘ইস্তফার মহাহিড়িক’ এক রেওয়াজ হয়ে উঠেছে। দলে দলে কর্মীরা বিভিন্ন কর্মক্ষেত্র থেকে ইস্তফা দিচ্ছেন। মার্কিন ব্যুরো অফ লেবর স্ট্যাটিসটিক্স’এর (বিএলএস) তথ্য অনুযায়ী, আমেরিকায় এই বছরের শুধুমাত্র জুন মাসেই ১ লক্ষ ৬৪ হাজার কর্মী স্ব স্ব কর্মক্ষেত্র থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। মাইক্রোসফট’এর একটি সমীক্ষা বলছে, চলতি বছরে কর্মরত ৪১ শতাংশ কর্মী কাজ ছেড়ে দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। বিএলএস’এর আরেকটি তথ্য বলছে, মার্কিন দেশে গত এপ্রিল ২০২০’তে যেখানে ৪০ লক্ষ কাজের সুযোগ ছিল তা জুন ২০২১’এ এসে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটিতে। অর্থাৎ, প্রাতিষ্ঠানিক কর্মক্ষেত্রে কাজের সুযোগ অফুরান কিন্তু কাজের লোক অপ্রতুল। ব্যাপারটি অদ্ভুত হলেও বাস্তব। এমনকি কাজের লোক পেতে ম্যাকডোনাল্ড ও অ্যামাজন’এর মতো সংস্থা তাদের দেয় বোনাস ২০০ থেকে ১০০০ ডলার পর্যন্ত বাড়াতে সম্মত হয়েছে। তবুও যথেষ্ট কর্মী পাওয়া যাচ্ছে না। প্রশ্ন হল, লোকজন সব যাচ্ছে কোথায়?

বদলে যাওয়া রাজনৈতিক-অর্থনীতির আঙ্গিকের সঙ্গে এই উদ্ভুত পরিস্থিতির গভীর সম্পর্ক রয়েছে। বহুবার বলা হয়েছে, গত এক দশকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত তথ্য-কেন্দ্রিক ভার্চুয়াল বিপ্লবের যে ধারা অপ্রতিহত গতিতে অর্থনীতির প্রায় সমস্ত আঙিনাকে ছেয়ে ফেলেছে, সেখানে কোভিডের উদয় গত দেড় বছরে এই চলমানতাকে আরও তীব্র ও ব্যাপ্ত করেছে। বাড়ি থেকে কাজ, ডিজিটাল মাধ্যমের বহুল ব্যবহার, অ্যাপ’এর ছড়াছড়ি, বাড়ি থেকে দোকানদারি, সোশ্যাল মিডিয়ার গণসংযোগ, বাড়িতে বসেই খেলাধুলো, ঘর থেকেই সেমিনার-আলোচনাসভা-সম্মেলন, ভার্চুয়াল মাধ্যমে স্কুল-কলেজের পড়াশোনা, চিকিৎসকের পরামর্শ, ব্যাঙ্কের লেনদেন, বিনোদনের রকমফের- সব মিলিয়ে এমন এক নতুন পরিসর নির্মিত হয়েছে যে কাজের বয়ান ও কর্মজগতের সম্পর্কগুলিই গেছে আমূল বদলে। মূলত পরিষেবা ও রিটেল’এর কর্মজগতে এই অভাবনীয় পরিবর্তন এক যুগ সন্ধিক্ষণের আবাহন করেছে। যেন, কর্মজগতের এ তাবৎ আঙ্গিক ও সম্পর্কগুলিই তছনছ হয়ে যেতে বসেছে। তার অর্থ অবশ্য এই নয় যে, ব্যবস্থাটাই বুঝি ভেঙে পড়ছে।

আসলে, পরিষেবা ও রিটেল ক্ষেত্র অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্রে চলে আসায় এবং তদুপরি প্রায়-সম্পূর্ণত ডিজিটাল ও ভার্চুয়াল হয়ে ওঠায় যে কাজের পরিসর তৈরি হয়েছে তা আরও আরও নতুন কাজেরও সুযোগ সৃষ্টি করেছে। উদাহরণস্বরূপ, বাড়ি বাড়ি বিবিধ পণ্য বা খাবার পৌঁছে দেওয়ার যে ব্যবস্থাপনা, তাকে কেন্দ্র করেই কাজের বহু নতুন আয়োজন তৈরি হয়েছে- যেমন, ডেলিভারি বয় নিযুক্তি থেকে স্বয়ংক্রিয় অ্যাপ’এর ব্যবস্থাদি, টাকাপয়সার অনলাইন লেনদেন থেকে পণ্যের চাহিদা-জোগানের শৃঙ্খল গড়ে তোলা ও নানাবিধ- তা শুধুমাত্র নতুন কর্মসংস্থানই জোগায়নি, এক জোরালো অর্থনৈতিক সত্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এই উদ্ভুত ব্যবস্থাপনা, কোভিডে মানুষের বাধ্যত ঘরবন্দী দশায় আরও বেশি অভিনব হয়ে উঠে মানুষকে ঘরকুনো করে দিয়েছে; আর তা করতে গিয়ে তাকে আবার এমন এমন কাজের আঙ্গিক ও পরিসর নির্মাণ করতে হয়েছে যার স্থায়িত্ব স্বল্পস্থায়ী ও নিযুক্ত কর্মীবাহিনীও চুক্তিভিত্তিক। যারা নিযুক্ত হলেন, তাদের সামনে কাজের এক অপার বিচিত্র দুনিয়া খুলে গেল বটে কিন্তু সেখানে এতই অনিশ্চয়তা ও চাপ যে তারাও মানিয়ে নিতে নিতে এমন ভাবে অভ্যস্ত হয়ে উঠলেন যে তাঁদের পক্ষে কাজ ছেড়ে দেওয়া ও নতুন কাজে যোগ দেওয়া রীতিমতো দস্তুর হয়ে উঠল। কর্মের এই গতিময়তায় ও কাজের অফুরান বিস্তারে, দেখা গেল, বহু ক্ষেত্রেই কর্মীর চাহিদা তাদের জোগানের থেকে অধিক হয়ে উঠছে। ফলে, কর্মীদের দরকষাকষির আপাত সুযোগও গেল বেড়ে। অবশ্য তার অর্থ এই নয় যে এমন পরিস্থিতিই সর্বদা বিরাজ করবে। ভবিষ্যতে এর উল্টোটাও ঘটতে পারে। সে আলোচনায় পরে আসছি।

তদুপরি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আগ্রাসী বিচরণে অন্যতর কাজেরও এমন আঙ্গিক নির্মিত হতে থেকেছে যেখানে স্বাধীন ভাবে সাফল্যের সঙ্গে কর্মরত হতে পারলে রোজগারের পথ উন্মুক্ত হয়ে যেতে পারে। যেমন, ইউটিউবার’এর সাফল্য এখন আকাশচুম্বী। সম্প্রতি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতিন গড়কড়ি জানিয়েছেন, তাঁর বক্তৃতা ইউটিউবে জনপ্রিয় হওয়ায় তিনি সেখান থেকে রয়্যালটি বাবদ মাসে চার লক্ষ টাকা করে পাচ্ছেন। শুধু তিনি কেন, বহু বহু মানুষ ইউটিউব’এ ভিডিও আপলোড করে (যদি জনপ্রিয়তার মানদণ্ড অতিক্রম করতে পারে) যথেষ্ট রোজগারের উপায় পেয়েছেন। কিছুদিন আগে খবরে প্রকাশ, বাঁকুড়ার এক ঠাকুমা তাঁর নাতির সাহায্যে ইউটিউব’এ রান্নার নানান কলাকৌশলের ভিডিও আপলোড করে বেশ কয়েক লক্ষ টাকা উপার্জনের ব্যবস্থা করেছেন। বলার কথা এই, কাজের এমনতর বহুমাত্রিক বিবিধ ধারা এসে পড়েছে যে তা মানুষের মধ্যে কাজকর্ম সম্পর্কে এক নতুন সংজ্ঞা হাজির করছে। এই কাজগুলি আচম্বিত, স্বল্পস্থায়ী কিন্তু অনেক সময়েই প্রভূত অর্থের হাতছানিতে ভরপুর। ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করে অর্থ রোজগারের আশায় যেহেতু বহু মানুষ সামিল হয়েছেন, ফলে, ভিডিও-মেকিং’এর কারুকৌশল জানাটাও এখন হয়ে উঠেছে রোজগারের অন্যতম আরেক উপায়। এইভাবে অর্থ উপার্জনের একেকটি ক্ষেত্র উন্মোচিত হচ্ছে আর তার পিছু ধরে কাজের আরও কতকগুলি প্রয়োজনীয় পরিসর নির্মাণ হয়ে যাচ্ছে যেখান থেকে আবার রোজগারের সংস্থান হচ্ছে।

ধরা যাক, স্বউদ্যোগী হয়ে ওঠার স্বপ্ন- যা ‘স্টার্ট-আপ’ অভিধায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে বহু মানুষকে প্রণোদিত করেছে ও এই পথে নামিয়েছে। যে কোনও পরিষেবা প্রদান বা পণ্য উৎপাদনকে কেন্দ্র করে নতুন নতুন স্বউদ্যোগ গড়ে ওঠাটা আজ প্রকৃতই বাস্তব এবং তার জন্য যে খুব বেশি মূলধনের দরকার পড়ে তাও সব সময় নয়। অতীতে যে কোনও স্বউদ্যোগ গড়ে তোলার পিছনে বাজারের লভ্যতা খুব বড় বিষয় ছিল। কিন্তু আজ সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইন ক্রয়-বিক্রয়ের এক সুদূরপ্রসারী আন্তর্জালের দৌলতে ব্যাপারটা খুব অনায়াস হয়ে উঠেছে। ফলে দেখা যাচ্ছে, বহুজনে চাকরি অথবা চুক্তি-ভিত্তিক কাজ ছেড়ে নিজস্ব উদ্যোগ গড়ে তুলতে ব্রতী হয়েছেন। এই কারণেও ইদানীং অনেকে চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন।

 

এ এক আশ্চর্য রাজনৈতিক-অর্থনীতির গলিপথে আমাদের প্রবেশ। যে গলিপথ থেকে আরও হাজারে হাজারে অলিগলি নির্গত হয়ে আমাদের নিয়ে চলেছে এক লোভনীয় অথচ অনিশ্চয়তার ভুবনে। যে গলিতে প্রবেশ করা গেল (কাজের সংস্থান হল), সে গলির পথ কিছুটা গিয়ে যদি দেখা যায় রুদ্ধ, তবে আরও কোনও গলি সে গলি থেকে নির্গত হয়েছে। এইভাবে অলিতে গলিতে ঘুরে নুড়ি কুড়িয়ে কুড়িয়ে তবেই আজকের নিত্য যাপনকর্ম। এইভাবেই শ্রম আজ যন্ত্রের অ্যালগরিদমে হন্যে হয়ে এ-কাজ সে-কাজে পরিব্যাপ্ত থেকে কিছু না কিছু রোজগারের পথ করে নিচ্ছে। তবে, চুক্তির শর্তানুযায়ী যেটুকু ব্যবসা শ্রমের অধিকারী ব্যক্তি-শ্রমিক কোম্পানিকে দিতে পারছেন তার কিয়দংশ মাত্রই তিনি ফেরত পাচ্ছেন। অন্যত্র ভাগের কড়ি যদি বেশি হয় তবে অনায়াসে তিনি সেদিকে গমন করতে পারেন। তাই গলির ভেতর গলি, অযূত গলির ভেতর দিয়ে শ্রমের অনির্দেশ্য যাত্রাপথ। আর এই যাত্রাপথের দিকনির্দেশ ক্রমেই হাতে নিয়ে নিচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত এমন এক ডিজিটাল যন্ত্রব্যবস্থা যা কৃষ্ণ গহ্বরের মতো প্রবল আকর্ষণে পুঁজির সিংহভাগকে টেনে নিচ্ছে নিজ কক্ষে। পুঁজির কাছে এই প্রবল আকর্ষণটি হল মুনাফার ক্রম উচ্চ হার যা অর্জিত হয় শ্রম-ব্যয়কে সংকুচিত করে। শ্রম ঘুরে বেড়াচ্ছে ফ্রি মলিকিউলের মতো, তার দায়-দায়িত্ব আর পুঁজির নেই।

কিন্তু এই ব্যবস্থাপনার অভ্যন্তরেই আবার শ্রমের চাহিদা-জোগানের নিজস্ব চালিকাশক্তিটিও সক্রিয়। যদি শ্রমের সামনে প্রভূত কাজের সম্ভাবনা তৈরি হয়ে যায়, তবে শ্রমের এক নিজস্ব প্রতিরোধ শক্তি গড়ে ওঠে। তা এই অর্থে, শ্রম তখন এক কাজ ছেড়ে অন্য কাজে চলে যাওয়ার ফুরসত ও ভরসা পায়। আর যেহেতু আজ মনুষ্য শ্রমের একটা বড় অংশ বিশেষ দক্ষতা ও জ্ঞান নির্ভর, অতএব, কোনও কোনও সন্ধিক্ষণে বিশেষ দক্ষতা-জ্ঞানলব্ধ শ্রমের আকাল পুঁজির পক্ষে সমস্যাসঙ্কুল হয়ে উঠতে পারে। আজকের ‘গ্রেট রেজিগনেশন’ বা ‘ইস্তফার মহাহিড়িক’এর প্রবণতা সেই সমস্যার দিকেই ইঙ্গিত করছে। আর তা শুধু উন্নত দেশেই নয়, আমাদের দেশেও সক্রিয় হয়েছে। কারণ, আধুনিক রাজনৈতিক-অর্থনীতি কোনও দেশের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নেই আর। তার ভার্চুয়াল অস্তিত্ব তাকে বিশ্বায়িত করেছে বহু আগেই।

 

খবরে প্রকাশ, সম্প্রতি দেশের বড় বড় আইটি কোম্পানিগুলির (টিসিএস, উইপ্রো, ইনফোসিস ইত্যাদি) কর্মী চাহিদা প্রায় ৪০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। কর্মীদের তারা বেশ উচ্চ হারে বেতন ও বোনাস (৭০ থেকে ১২০ শতাংশ বর্ধিত হারে) দিতে রাজী হয়েছে। অথচ, মাত্র গত বছরেই এই সময়ে তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে নিয়োগের হার ৫০ শতাংশেরও বেশি পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু প্রযুক্তির ক্রম বিবর্তনে, বিশেষত কোভিড কালে আরও উন্নত প্রযুক্তির আবাহনে, এমন সমস্ত দক্ষতা ও জ্ঞানলব্ধ শ্রমের দরকার পড়েছে যে তা না হলে বৃহৎ ডিজিটাল ও তথ্য প্রযুক্তি কোম্পানিগুলির পক্ষে পুঁজির বাজারে অগ্রণী হয়ে টিকে থাকাটা কষ্টকর। যে দক্ষতা-নির্ভর মনুষ্য শ্রমের চাহিদা সব থেকে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে: অ্যাপলিকেশন ডেভেলপার, সেলসফোর্স ডেভেলপার ও সাইট রিলায়েবিলিটি ইঞ্জিনিয়ার। এই চাহিদা ও খরচের ফলে ২০২১-২২ সালের আর্থিক বছরে মজুরি খাতে আইটি কোম্পানিগুলির প্রায় ১.৬ থেকে ১.৭ বিলিয়ন ডলার ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। যদি শ্রমের পিছনে এই ব্যয় বৃদ্ধি করতে কোম্পানিগুলি বিন্দুমাত্র কুন্ঠিত হত, তবে তারা আগামী দিনে পুঁজির বাজার থেকে ছিটকে বেরিয়ে যেত। ‘ইস্তফার মহাহিড়িকে’ তারা জেরবার হত। বা হয়তো, কিছুটা হয়েওছে।

অর্থাৎ, এক শ্রেণির দক্ষতা-জ্ঞানলব্ধ শ্রমের যে উচ্চমূল্যের বাজার তৈরি হয়েছে, তার বাধ্যত ব্যবহারের কারণেই এই উচ্চমূল্যের ধারক শ্রমিক বা কর্মীরা শ্রমের বাজারে পুঁজির সঙ্গে বেশ জোরালো দর কষাকষিতে নিযুক্ত হতে পারছেন। তাঁদের ট্রেড ইউনিয়নের কোনও দরকার পড়ছে না, নিজেদের জ্ঞানমূল্যের জোরেই তাঁরা আদায় করে নিচ্ছেন সম্ভ্রম ও উচ্চ মজুরি। এঁরাই এক অর্থে আজকের আধুনিক শ্রমিকের এক বড় অংশ। আর তা পুরনো জমানার মতো গুটি কয়েক পেশাদারি লোকজনের এক্তিয়ারভুক্ত নয়, লাখে লাখে এমনতর শ্রমিক-কর্মীর উপস্থিতি। তথ্য প্রযুক্তি ও ডিজিটাল দুনিয়ায় পুঁজির বিপুল সমাবেশ ও অপ্রতিরোধ্য গতির পক্ষেই তাই এই ধরনের উচ্চ মজুরি প্রদান করা বাস্তবে সম্ভব। কারণ, নিকট ভবিষ্যতে এই দক্ষতা-জ্ঞানলব্ধ শ্রমের কার্যকারিতা ফুরিয়ে আসবে কোনও উন্নততর যন্ত্র-প্রযুক্তিতে উত্তরণের মাধ্যমে আর তখন আবার দেখা যাবে যে মনুষ্য শ্রমের আপেক্ষিক প্রয়োজন কমে এসেছে এবং ‘গ্রেট রেজিগনেশন’এর ইতি ঘটেছে। এইভাবেই আমরা প্রযুক্তির নবতর উন্মেষের মধ্য দিয়ে আজকের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জগতে প্রবেশ করেছি যেখানে চেষ্টা চলেছে মনুষ্য শ্রমের ভারকে লাঘব করে মজুরি খরচ কমিয়ে মুনাফার হারকে উর্ধ্বমুখি রাখা। কিন্তু মানুষ ছাড়া যেহেতু উন্নত প্রযুক্তির নির্মাণ ও তার ব্যবহার প্রায়শই অসম্ভব, তাই নিয়ম করেই এমন এমন সময় আসে যখন মনুষ্য শ্রমের চাহিদা কিছু সময়ের জন্য বেড়ে যায়- আখেরে দীর্ঘমেয়াদে মনুষ্য শ্রমকে বাতিল, অকেজো অথবা দুঃস্থ করে দিতেই।

কিন্তু প্রশ্ন হল, আমাদের মতো দেশে এখনও যারা নিতান্তই মুটে-মজুর, গায়ে গতরে খাটা শ্রমজীবী মানুষ, যাদের দক্ষতার মূল্য প্রায় বিলীন, সাবেক কর্মক্ষেত্রে যাদের বিচরণ- তাহলে তাদের বেঁচে থাকার উপায় কী? এই প্রশ্নটির উত্তর নিয়েই সকলের এখন মাথাব্যথা। সে আবার অন্যত্র আলোচনা করা যাবে। কিন্তু গিগ অর্থনীতি যে ধীরে ধীরে সমাজ জীবনকে ছেয়ে ফেলছে, সে বাস্তবতাকে অস্বীকার করার আর কোনও উপায় নেই। কারণ, পুঁজি ও মুনাফার বৃহদাংশ এখন গুটি কয়েক কর্পোরেটের কাছেই গচ্ছিত। তারা ভার্চুয়াল ও ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে দখল নিচ্ছে বিশ্বের সমগ্র রাজনৈতিক-অর্থনীতিকে।     

 

2 comments:

  1. আমার একটি প্রশ্ন, তাহলে কি ম্যানিফ্যকচারিং শিল্প সংকটের মুখে? গিগ অর্থনীতি কি এই শিল্প কেউ গ্রাস করছে ধীরে ধীরে? চিন্তার বিষয়।

    ReplyDelete