Sunday 5 September 2021

আত্মঘাতী মূল্যায়ন!

প্রাচুর্যই যখন সমস্যা

অভিষিক্তা রায়চৌধুরী


অর্থনীতিতে একটা কথা আছে, 'যত বেশি তত ভালো'। কিন্তু এবার দ্বাদশ শ্রেণির বিভিন্ন বোর্ডে বেশির ভাগ স্কুলের উদার হাতে নম্বর দেওয়ায় দেখা গেল এক চরম বৈষম্য তৈরি হল। এক স্কুলের মধ্য মেধার ছাত্র বা ছাত্রীরা অন্য এক স্কুলের এগিয়ে থাকা পড়ুয়াদের থেকে নম্বর পেল অনেক বেশি। মূল্যায়ন-সংযমের (moderation) কোনও উদ্যোগ নেওয়া হল না। সবাই জানে, একাদশ শ্রেণির পঠনপাঠন এখন বোর্ডের হাতে থাকে না আর একাদশের বার্ষিক পরীক্ষায় খুব রক্ষণশীল ভাবেই নম্বর দেয় স্কুলগুলো। কিন্তু, অনেক স্কুলই বোর্ডে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে নম্বর পাঠাল। ফলত, যে বাচ্চাটি হয়তো দশম শ্রেণির বোর্ডে পেয়েছে ৮৪ শতাংশ, একাদশ শ্রেণিতে ৭২ শতাংশ এবং দ্বাদশ প্রি-বোর্ডে ৮৮ শতাংশ, দশম এবং একাদশ শ্রেণির ৩০ শতাংশ করে এবং দ্বাদশ প্রি-বোর্ডের ৪০ শতাংশ হিসেবে যার নম্বর হবার কথা ৮২ শতাংশ, সে হয়তো স্কুলের দক্ষিণ্যে নম্বর পেয়ে বসল ৯৪ কিংবা ৯৬ শতাংশ। আবার কোনও মেধাবী ছাত্র যে হয়তো দশম আর দ্বাদশ শ্রেণিতে ৯৫ শতাংশ থেকে বেশি পেয়েছে, শুধুমাত্র একাদশে সে ৭০'এর কোঠায় নম্বর পাওয়ায় তার নম্বর হয়তো কোনওক্রমে ৯০ শতাংশ ছাড়ালো আর সেই নম্বর এবারের নম্বরের বন্যায় নেহাতই অন্ত্যজ।

ভোটপর্ব চলার পর করোনার হার বাড়ল বলে সাত তাড়াতাড়ি পরীক্ষা বাতিল হয়েছিল। এবং এই এলোপাথাড়ি নম্বরের যুগে কোনও ভাল কলেজকেও ভর্তির পরীক্ষা তো দূরের কথা, নেহাৎ অনলাইনে মৌখিকও নিতে দেওয়া হল না। ফলে, ভালো কলেজে আদতে ভালো ছাত্র-ছাত্রী ছাড়াও অন্যায্য নম্বর পাওয়া পড়ুয়াদের ঠাঁই হবে যারা উচ্চমানের পঠনপাঠন নিতে হয়তো বা প্রস্তুতই নয়।

এদিকে অ্যাডভান্সড জয়েন্ট হয়নি এখনও, নীট'ও নয়। তাই, ডিগ্রি কোর্স'এ বেজায় ভীড়। ফলে, যে সব বাচ্চারা অন্য কোনওবার হলে অনায়াসে নামীদামী কলেজে হাসিমুখে ঢুকে যেত, তারা একের পর এক লিস্ট হাতরাচ্ছে নিজের নামটা দেখার আশায়। এদিকে যে মধ্য মেধার বাচ্চাটি একরাশ নম্বর পেয়ে শুধু ওপরের দিকের কলেজেই আবেদন করেছে, তারও স্বপ্ন চুরচুর হয়ে যাচ্ছে, কারণ, সেই কলেজগুলোয় মেধা তালিকায় তার ওপরে হয়তো আছে চারশো জন আর আসন মাত্রই ১৮টা।

তর্কের খাতিরে ধরা যেতেই পারে, গড়পড়তা কলেজের বাচ্চারা কি জীবনে দাঁড়ায় না, নাকি সে সব কলেজে ভালো শিক্ষক নেই? প্রশ্নটা সেখানে নয়। এই আঠারো বছরের সংবেদনশীল কিশোর-কিশোরীদের মনে জীবনের শুরুতেই প্রশ্ন জাগলো- পড়াশোনা, কেরিয়ার সবই কি তাহলে ভাগ্য-নির্ভর? আর এই সমগ্র ব্যবস্থাটার প্রতি জমা হল তাদের পুঞ্জীভূত অভিমান। কিন্তু, এর বিচার কার কাছে চাইবে- এই অসহায় কচিকাঁচা ও তাদের অভিভাবকেরা তা জানেন না। 


4 comments:

  1. ‼️🥳
    মুড়ি মিছরির একই দর !!!!! সৌজন্যে করোনা মাসি আর অনুপ্রেরণায় আমাদের সবার প্রিয় পিসিমণি যিনি অনেকের ক্যারিয়ার সারা জীবনের জন্য নষ্ট করে দিলেন অথচ নিজের আসন পাকা করার জন্য কাঙালীর মত বারে বারে নির্বাচন কমিশনে দরবার করে গেলেন !!!!!! অসভ্যতামির চূড়ান্ত ।
    😡😡😡😡😡👘👑

    ReplyDelete
    Replies
    1. "একচক্ষুও রাজা জেন সেই অন্ধদের দেশে". মুড়ির দাম মিছরির তেজে বেশি

      Delete
  2. ডজন খানেক টিউশন পড়ার পয়সা না থাকলে ছাত্ররা কি মেধাবী হতে পারে আদৌ? মুড়ি মিছরির এক দর হয়ে যাওয়ায় মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরা, যারা প্রতি বিষয়ে দুটো করে টিউশন পড়েছে তাদের সমস্যা হয়েছে। গরিবদের ভালই হয়েছে কারণ স্কুল বন্ধ থাকায় তাদের ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা ঠিক মত হয়নি। তাদের টাকাও নেই যে টিউশন দেবে ছেলেমেয়েকে। সেন্ট্রাল বোর্ডে তো 60 /70 হাজার খরচা annually. পয়সা ফেললে উচ্চ মানের শিক্ষা আছে, এমন শিক্ষা যাতে মেধারও বিকাশ হয়। 99 percent কে বাদ দিয়ে শুধু top 1 percent মানুষের সমস্যা সমাধান করা কি যুক্তিযুক্ত হতো?

    ReplyDelete
    Replies
    1. যে চল্লিশ পাবার মত শিখল তার নব্বই পেয়ে কি লাভ হল? সমাধান তা কি নম্বর দেয়া না সবাইকে পড়ান?

      Delete