Friday, 16 April 2021

অশনি সংকেত?

হিন্দু জাতীয়তা ও পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন

শোভনলাল চক্রবর্তী



অবশেষে নীল শেয়ালের গায়ের রং মুুছে গেল শীতলকুুুচিতে। এই বঙ্গে প্রচারে এসে বিজেপির সর্বভারতীয় নেতারা হিন্দুত্ব নিয়ে প্রথম দিকে 'রা কাটেন নি। ছোট, বড়, মেজ নেতা নেত্রীরাও ছিলেন এই ব্যাপারে নীরব। ভাবটা এমন যেন, বিজেপি ব্যাপারটা শুধুই বাংলার উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত, হিন্দু রাষ্ট্রের প্রকল্পের সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই। এটা যে এক ধরনের ভাবের ঘরে চুরি, বা জেনেশুনে চোখ বুঁজে থাকা, তা প্রমাণিত হল। শীতলকুুুচির পর এক দল বিজেপি নেতা চরম উস্কানিমুলক কথা বলেন, যা আগে আমরা কখনও শুনিনি। কমিশন কোনও কিছুই কানে তুললেন না। শীতলকুুুচিতে ছেড়ে দেওয়া হল অপরাধীদের। তার ভিডিও সামনে এসেছে। প্রমাণ হয়েছে বিজেপির বলা সব কথা ভুল। 

আসলে কেন্দ্রীভূত হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র গঠনের কাজ সমান তালে এগিয়ে চলেছে। এটা সুকৌশলে করে চলেছে বিজেপি-আরএসএস। ২০১৪ সালে ক্ষমতা দখল করে মোদি হিন্দুত্বের কথা বলেননি। কিন্তু তলে তলে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে মুসলিম-খ্রিস্টান বিরোধিতা বেড়ে চলল। ২০১৭ সালে যোগী আদিত্যনাথ উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হয়ে গোরক্ষা, লাভ জিহাদ প্রভৃতি বিভিন্ন ছুতোতে মুসলিমদের উপর অত্যাচার বাড়াতে লাগল। ২০১৯-এর নির্বাচনের পর কেন্দ্রীয় সরকার হিন্দুত্ববাদীদের দাবি একে একে পূরণ করতে শুরু করে দিল। 'তিন তালাক' বে-আইনি ঘোষণা, জম্মু কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা রদ, অযোধ্যায় নতুন রাম মন্দির নির্মাণে সরকারি সাহায্য, নাগরিকত্ব আইন সংশোধন- সবই হিন্দুত্ব প্রকল্পের অঙ্গ। পাশাপাশি এল বড় পুঁজিপতিদের আবদার মেনে নতুন কৃষিপণ্য আইন, সংশোধিত শ্রম আইন, বড় বড় সরকারি উদ্যোগ, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, বীমা কোম্পানি বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার প্রস্তাব। রাষ্ট্রনীতির এই গতিপথ মসৃণ করার জন্য দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে কেন্দ্রীভূত করার কাজ চলছে। এমনিতেই আর্থিক ব্যাপারে কেন্দ্রের পাল্লা ভারী ছিল, জিএসটি আসার পর তা আরও বেড়ে গেল। 

পাশাপাশি, কেন্দ্রের প্রশাসনিক নির্দেশ রাজ্যের উপর চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। যে সব বিষয়ে রাজ্যেরই একমাত্র সাংবিধানিক অধিকার, তাতেও কেন্দ্রীয় সরকার আইন পাশ করছে, একের পর এক নির্দেশ দিয়ে চলেছে। এই যে ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ, এর পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক কারণ। ২০১৪ সালে সারা ভারতে বিজেপি পেয়েছিল ৩১ শতাংশ ভোট, ২০১৯-এ তা বেড়ে হয় ৩৭ শতাংশ। তাতেই বিজেপি লোকসভায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। অথচ, দেশের বৃহত্তর অংশে (৬৩ শতাংশ) এবং বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিজেপির সমর্থন বিশেষ নেই। সুতরাং, কেন্দ্রের ক্ষমতাকেই যত দূর সম্ভব ব্যবহার করে বিজেপিকে তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যসাধন করতে হচ্ছে। অনেক রাজ্যে নির্বাচনে হারার পর বিধায়ক ভাঙিয়ে সরকার গঠন করেছে বিজেপি। কিছু রাজ্যে সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। দিল্লিতে পরের পর নির্বাচনে পরাজিত হয়ে অবশেষে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুবিধা নিয়ে, আইন পাশ করিয়ে দিল্লির রাজ্য সরকারকে ক্ষমতাহীন করার ব্যবস্থা করা হল ক'দিন আগে। 

উপরন্তু, বিচারব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশন, সিবিআই ইত্যাদি যত স্বাধীন সংস্থা ছিল সেগুলোকে একে একে পকেটে পুরছে হিন্দুত্ববাদীরা। এই প্রসঙ্গেই হিন্দুরাষ্ট্রের কল্পনায় পশ্চিমবঙ্গের স্থান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। হিন্দু জাতীয়তাবাদী উত্থানে এক সময় বাংলার উচ্চবর্ণের হিন্দু নেতারা বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন। হিন্দু মহাসভার সামনের সারির বহু নেতা ছিলেন বাঙালি। বাংলায় কংগ্রেসের প্রাদেশিক নেতৃত্ব ছিল ধনী উচ্চবর্ণ হিন্দুদের হাতে, ব্যতিক্রম ছিল চিত্তরঞ্জন দাশের নেতৃত্বে অল্প কয়েক বছরের শাসনকাল। ১৯৪৭-এর বাংলা ভাগের দাবি মুসলিম দলগুলো করেনি, করেছিল শ্যামাপ্রসাদের নেতৃত্বে বাংলার হিন্দুবাদীরা। তাই হিন্দুত্ববাদীদের কাছে বাংলার একটা আলাদা গুরুত্ব আছে। সুতরাং, বাংলায় পালাবদল হলে এখানে হিন্দুত্বের রাজনীতি জাঁকিয়ে বসবে, তা অবধারিত। 

জনবাদী প্রকল্পে যে অঢেল টাকা আসবে সে গুড়ে বালি, কারণ  কোনও বিজেপি শাসিত রাজ্যে এমন অঢেল খরচের ব্যবস্থা নেই। কিন্তু অনুপ্রবেশ আর মুসলিম তোষণ নিয়ে অভিযোগ ছাড়াও গোরক্ষা, লাভ জেহাদ, ধর্মান্তরের উপর নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদি নানা ব্যাপারে সংখ্যালঘু মানুষকে কোণঠাসা করা হবে। শিক্ষা, চাকরিতে সংরক্ষণ নিয়ে দলিত-ওবিসি বনাম মুসলিম বিভাজন সৃষ্টি করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের কাঠামোর যা অবস্থা তাতে কেন্দ্রে-রাজ্যে বিজেপি শাসন কায়েম হলে পুরো শাসনের রাশ চলে যাবে কেন্দ্রের হাতে। পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির সংগঠন ও নেতৃত্বের যা হাল দেখা যাচ্ছে তাতে রাজ্যের নেতাদের কেন্দ্রের নেতাদের সর্বদা জো-হুজুর করে চলতে হবে, নতজানু হয়ে থাকতে হবে। বৃহৎ কর্পোরেট পুঁজিনির্ভর অর্থনীতি আর উত্তর ভারত মার্কা হিন্দু জাতীয়তাবাদী গুটকা সংস্কৃতি সেই রাজার ঘাড়ে চেপে থাকা বেতাল ভূতের মতো বাংলার ঘাড়ে চেপে বসবে। 

অতএব, এবার যদি পালাবদল হয়  তবে তা শুধু রাজনীতি নয়, বাংলার অর্থনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি সব কিছু আপাদমস্তক বদলে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে আসবে। হিন্দিতে যাকে বলে হিন্দুরাষ্ট্র, বাংলায় তাকে বলা যায় হিন্দু জাতীয়তা যেখানে বহুত্বের কোনও স্থান নেই। তার মন্ত্র 'এক দেশ, এক ধর্ম, এক ভাষা'। এই হিন্দুরাষ্ট্রের দেহে বাংলার মানুষ নিজেদের সঁপে দেবেন কিনা তা আপাতত লাখ টাকার প্রশ্ন। তার পরীক্ষা এই নির্বাচন। সেই অর্থে এ এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণ বাংলার মানুষের কাছে। আগামীর অশনি সংকেত কি দেখতে পাচ্ছেন বাংলার মানুষ ?


7 comments:

  1. Will Mr. Shovonlal Chakraborty explain the genesis of Division of India?
    He did hit a nerve on Bharat as a land of the Hindus (All people except Muslims as defined in 1947 split).
    এই হিন্দুরাষ্ট্রের দেহে বাংলার মানুষ নিজেদের সঁপে দেবেন কিনা তা আপাতত লাখ টাকার প্রশ্ন। তার পরীক্ষা এই নির্বাচন। সেই অর্থে এ এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণ বাংলার মানুষের কাছে।

    ReplyDelete
  2. "পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির সংগঠন ও নেতৃত্বের যা হাল দেখা যাচ্ছে তাতে রাজ্যের নেতাদের কেন্দ্রের নেতাদের সর্বদা জো-হুজুর করে চলতে হবে, নতজানু হয়ে থাকতে হবে।"

    এই ডাইমেনশনে সত্যিই ভাবিনি। ভীষণ প্রয়োজনীয় কিছু দিক আলোচিত হয়েছে৷ আমি সমৃদ্ধ হয়েছি৷

    ReplyDelete
    Replies
    1. All Bengali Buddhijibis (like Aparna , Subhaprasanna, Joy Goswami) all do জো-হুজুর (HOOJURANI). 4 lakh Bengalis work in Chennai (source: Manash Ghosh) + 4 Lakh in Gujarat.
      So what's the problem with your EGO or AhAMKAR BANGALI?

      Delete
  3. Ambani giving oxygen
    Adani giving ventilators
    Commies giving opinions Flexed biceps

    ReplyDelete
  4. A Communist is a leech who sucks the blood in stealth confusing its victim.
    He has no skills to be employed in a job.
    They will be gone after Hindutvabadi BJP is ELECTED by the HINDU. BENGALIS.
    Any question anybody?

    ReplyDelete
  5. শ্যামল বাবু খুব রেগে গেছেন দেখছি, উনি বিজেপি নয়, আদানি, আম্বানি যাঁদের কাছে সরকার, অক্সিজেন,ভেন্টিলেটর সব বেচে দিয়েছে তাঁদের হয়ে ঢাক পেটাচ্ছেন, কত লক্ষ বাঙালি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে আছেন জানেন? আপনি গুটকা খেকোদের পা চাটতে চান চাটুন, সবাই কে ডাক দেবেন না। আর হ্যাঁ আপনি মোটেই হিন্দু বাঙালি নন, আপনি সাম্প্রদায়িক বাঙালি। সত্যটা মেনে নিতে একটু কষ্ট হয় বৈকি, তাই তো আপনি ফুঁসছেন।

    ReplyDelete
  6. Yes, I am a Hindu and proud of that fact. Any problem ?
    A Communist is a leech - sucks blood of poor people. Proved in breaking up Soviet Nation into 17 countries.
    Look at Venezuela.
    বলছেন "আপনি গুটকা খেকোদের পা চাটতে চান চাটুন, সবাই কে ডাক দেবেন না। "
    কিন্তু আপনার মমতা দিদি তো গুটকা খেকো প্রশান্ত কিশোর এর পা চাটছে। আর লা ইল্লাহ বলছে।

    Thanks.

    ReplyDelete