আমরা অবশ্যই অসাধু-অসৎ হব
অর্ধেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়
বিবর্তনবাদের ধারণায় অব্যবহৃত অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলি সম্পর্কে ডারউইন বলেছিলেন, যে-অঙ্গগুলির ব্যবহার ক্রমাগত কমতে কমতে একেবারেই অপ্রয়োজনীয় হয়ে যায় সেগুলি হয় প্রকৃতির নিয়মেই সম্পূর্ণ বিলুপ্তি পায়, নয়তো গৌণ ভূমিকায় অস্তিত্ব বজায় রাখে। মানুষের ক্ষেত্রে যেমন লেজ সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়েছে, আবার অ্যাপেন্ডিক্স কিংবা আক্কেল দাঁত গৌণ ভূমিকায় থেকে গিয়েছে। গৌণ ভূমিকায় থাকলেও মাঝে মধ্যে সেগুলি মানুষের জীবনে যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তখন অর্থ ও সময় ব্যয় করে, কিছু শারীরিক বেদনা সহ্য করে হলেও সেগুলিকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ছেঁটে বাদ দিতে হয়। আর এই নিয়ম কেবলমাত্র মানুষের শরীরের জন্যই যে প্রযোজ্য তা নয়, সমগ্র সমাজশরীরেও সমান অর্থবহ। প্রগতি ও উন্নয়নের ধারায় সমাজের জন্য সততা, নৈতিকতা, সত্য ভাষণ, সহনশীলতা ও ঔদার্যের মতো গুণগুলিও ক্রমাগত ভেস্টিজিয়াল হয়ে গিয়েছে। এর অর্থ এই নয় যে, প্রাচীনকালে এগুলি ভীষণ দৃঢ় ছিল, কিছুতেই তার ব্যত্যয় হত না। এ প্রসঙ্গে ১৯১১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের ভাষণটির কথা স্মরণ করা যেতে পারে। তিনি বলেছিলেন,
'এ কথা মনে করার কোনো কারণ নেই প্রাচীন ভারতবর্ষে সবাই ছিলেন সম্পূর্ণ নির্ভুল ও আদর্শ মানুষ, তাঁরাই শিল্প ও বিজ্ঞানের আবিষ্কার করেছিলেন সর্বপ্রথম আর পুরানো যুগ ছিল সোনায় গড়া, ক্ষুন্নিবৃত্তির জন্য ছিল সুমিষ্ট ফল আর কূপে ছিল অমৃত।'
সুতরাং, গুণের পাশাপাশি দোষ সর্বদা ও সর্বত্র বিদ্যমান ছিল। কিন্তু তুলনামূলক অনুপাতের হিসাবে বলা যায়, গুণগুলি একটা সময় অবধি মুখ্য ভূমিকায় বহাল ছিল। মানুষজনের মধ্যেও এগুলিকে পালন করা ও যতদূর সম্ভব রক্ষা করার তাগিদ ছিল। শিক্ষা ও আচার-ব্যবহারে এগুলির প্রকাশ যে মানুষের চরিত্রের অবশ্য প্রয়োজনীয় কর্তব্য সে-সম্বন্ধে সবিশেষ মতান্তর ছিল না। সভ্য সমাজের বৈশিষ্ট্য হিসাবেও সেগুলির কদর ছিল। কিন্তু ধীরে-ধীরে ভারতের সমাজ-অর্থনীতির পরিবর্তন ও বৈশ্বিক রাজনীতির পালাবদলের আবহে সে-চল অস্তাচলে যেতে শুরু করেছিল। বাংলার ক্ষেত্রে যদি ইংরেজ আগমনের পরবর্তী সময়কে বিচারের যবনিকা উন্মোচনকাল হিসাবে ধরে নেওয়া যায়, তাহলে নবজাগরণের দরুণ বঙ্গজীবনে একদিকে রাজা রামমোহন রায়, বিদ্যাসাগর, অক্ষয়কুমার দত্ত প্রমুখ মানুষদের উত্থান যেমন দেখতে পাওয়া যায়, তেমনই অন্যদিকে এঁদের জীবনকে পর্যালোচনা করলে স্পষ্টই বোঝা যায় যে এঁরা কেউই সুখী ছিলেন না, হতেও পারেননি। সাময়িক আর্থিক অনটন কিংবা আজীবন দারিদ্রের বিচারে সুখের কথা ছেড়ে দিলেও ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে এঁরা প্রত্যেকেই প্রায় তীব্র একাকিত্ব ও ভয়াবহ মনঃকষ্টের আগুনে প্রতিনিয়ত জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়েছেন।
উনিশ শতকের ব্যতিক্রমী মনীষা ও বলিষ্ঠতম মানুষ বিদ্যাসাগরের কথাই যদি ধরে নিই, তাহলেই প্রায় প্রত্যেকের জীবনে অর্জিত যন্ত্রণার আঁচের আভাস পাওয়া যাবে। বিদ্যাসাগরের চরিত্রে ছিল এমন মহৎ গুণ যা পৃথিবী চষে ফেললেও পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। পক্ষান্তরে, তাঁর আপসহীন জীবনযাপনের দৃঢ় প্রত্যয়ের কথাও কারও অজানা নয়। এমনকি তাঁর মমত্বে ভরা নিটোল হৃদয়খানি যে আমৃত্যু দয়াপরবশতায় অবিচল ছিল, সে-কথাও বহু চর্চিত। অর্থাৎ, সর্বার্থে তিনি একজন শ্রেষ্ঠতম মানুষ ছিলেন। আর এই মানুষটিই জীবিত অবস্থায় কী পেয়েছেন? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন,
'বিদ্যাসাগর এই বঙ্গদেশে একক ছিলেন। এখানে যেন তাঁহার স্বজাতি-সোদর কেহ ছিল না। এ দেশে তিনি তাঁহার সমযোগ্য সহযোগীর অভাবে আমৃত্যুকাল নির্বাসন ভোগ করিয়া গিয়াছেন। তিনি সুখী ছিলেন না।'
কিন্তু সমাজের জন্য এত কিছু করার পরে ও নিজের জীবনকে শ্রেষ্ঠতম আদর্শে আমৃত্যু শাসন করেও কেন বিদ্যাসাগর সুখী হতে পারেননি? রবীন্দ্রনাথই লিখেছেন,
'তিনি নিজের মধ্যে যে এক অকৃত্রিম মনুষ্যত্ব সর্বদাই অনুভব করিতেন চারিদিকের জনমণ্ডলীর মধ্যে তাহার আভাস দেখিতে পান নাই। তিনি উপকার করিয়া কৃতঘ্নতা পাইয়াছেন, কার্যকালে সহায়তা প্রাপ্ত হন নাই। তিনি প্রতিদিন দেখিয়াছেন– আমরা আরম্ভ করি, শেষ করি না; আড়ম্বর করি, কাজ করি না; যাহা অনুষ্ঠান করি তাহা বিশ্বাস করি না; যাহা বিশ্বাস করি তাহা পালন করি না; ভূরিপরিমাণ বাক্যরচনা করিতে পারি, তিলপরিমাণ আত্মত্যাগ করিতে পারি না; আমরা অহংকার দেখাইয়া পরিতৃপ্ত থাকি, যোগ্যতালাভের চেষ্টা করি না; আমরা সকল কাজেই পরের প্রত্যাশা করি, অথচ পরের ত্রুটি লইয়া আকাশ বিদীর্ণ করিতে থাকি; পরের অনুকরণে আমাদের গর্ব, পরের অনুগ্রহে আমাদের সম্মান, পরের চক্ষে ধূলিনিক্ষেপ করিয়া আমাদের পলিটিকস্, এবং নিজের বাক্চাতুর্যে নিজের প্রতি ভক্তিবিহ্বল হইয়া উঠাই আমাদের জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য। এই দুর্বল, ক্ষুদ্র, হৃদয়হীন, কর্মহীন, দাম্ভিক, তার্কিক জাতির প্রতি বিদ্যাসাগরের এক সুগভীর ধিক্কার ছিল। কারণ, তিনি সর্ববিষয়েই ইহাদের বিপরীত ছিলেন।'
আর এই কথা স্বয়ং বিদ্যাসাগর মশায়ও গোপন করেননি। তিনি জীবনের শেষভাগে এসে বন্ধু দুর্গাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়েছেন,
'আমাদের দেশের লোক এত অসার ও অপদার্থ বলিয়া পূর্বে জানিলে আমি কখনই বিধবাবিবাহ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করিতাম না।'
শুধুমাত্র বিধবা বিবাহ নয়, তাঁর জীবনের প্রধানতম ব্রত শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রেও তিনি কাউকেই পাশে পাননি। একাই প্রায় সমস্ত কাজ নির্বাহ করেছেন। তারপরেও জীবনসায়াহ্নে প্রাণপ্রিয় বীরসিংহ থেকেও তাঁকে গ্রামছাড়া হতে হয়। ইন্দ্র মিত্র লিখেছেন,
'কয়েকদিন বীরসিংহে থেকে বিদ্যালয়, চিকিৎসালয়, রাখাল স্কুল, বালিকা বিদ্যালয় প্রভৃতি সকল বিষয়ের বন্দোবস্ত করে বিদ্যাসাগর চিরদিনের জন্য বীরসিংহ ত্যাগ করলেন।'
তাই-ই নয়, তাঁকে ছেড়ে দিতে হয়েছিল বাবা-মা-ভাই ও স্ত্রীকেও (পুত্রকে তো আগেই ত্যাগ করেছিলেন)। প্রায় প্রত্যেককেই স্বতন্ত্র চিঠি লিখে তিনি জানিয়েছিলেন যে,
'নানা কারণে আমার মনে সম্পূর্ণ বৈরাগ্য জন্মিয়াছে- আর আমার ক্ষণকালের জন্যও সাংসারিক কোন বিষয়ে লিপ্ত থাকিতে বা কাহারও সহিত কোন সংশ্রব রাখিতে ইচ্ছা নাই। ...সাংসারিক বিষয়ে আমার মতো হতভাগ্য আর দেখিতে পাওয়া যায় না।'
জীবিতকালে তাঁর বেদনাদগ্ধ জীবন সম্পর্কে চণ্ডীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন,
'দীর্ঘকাল ধরিয়া লোকের প্রবঞ্চনা, প্রতারণা, মিথ্যাচারণ প্রভৃতি দেখিয়া মানুষের আচরণের প্রতি তাঁহার এক প্রকার বিজাতীয় ঘৃণার সঞ্চার হইয়াছিল। একদিকে প্রেমিকহৃদয় বিদ্যাসাগর মহাশয় মানবের প্রতি মহাপ্রেমে অনুপ্রাণিত, অপরদিকে মানুষের আচরণে ভগ্নহৃদয় ও বিশ্বাসবিহীন।'
তাছাড়া জীবিতকালেই শুধু নয়, মৃত্যুর পরেও তিনি যে খুব সুখী হয়েছিলেন এমনটা হয়তো নয়। 'বিদ্যাসাগর'-এর মতো মানুষের মহাপ্রয়াণের যে-ছবি পাওয়া যায় সেখানে দেখা যায় শ্মশানে উপস্থিত মানুষের সংখ্যা মোটে পাঁচজন- শম্ভুচন্দ্র, ঈশানচন্দ্র, সূর্যকুমার, নারায়ণ ও সম্ভবত অঘোরনাথ বা কার্তিকচন্দ্র। না সমকালীন বঙ্গীয় বিদগ্ধজনেদের কেউ, না বিপুল জনসমাজ যাদের জন্য বিদ্যাসাগরের সম্পূর্ণ জীবনটাই ব্যয়িত, কেউ নয়। প্রায় কেউ জানতেই পারল না এই ধরাধাম থেকে কে চিরজীবনের মতো বিদায় নিল! পক্ষান্তরে যদি মৃত্যু পরবর্তী প্রাপ্তির কথাও ধরা হয় তাহলে প্রথমেই মনে করতে হয় তাঁর পুত্র নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারা সম্পত্তির আত্মসাতের ঘটনা। বিদ্যাসাগর স্বয়ং তাঁর উইলের ২৫ নম্বর ধারায় নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘যারপরনাই যথেচ্ছাচারী ও কুপথগামী’ বলে সম্পত্তি থেকে উত্তরাধিকারী বলে বাদ দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, উইলের কার্যদর্শীও নিযুক্ত করেননি। অথচ তাঁর ইচ্ছাকে মর্যাদাটুকুও কেউ দেয়নি, উপরন্তু উইলে সাক্ষী হিসাবে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে বেশিরভাগই বিদ্যাসাগরের ইচ্ছার পক্ষে সাক্ষ্যও দেননি, কেবলমাত্র কালীচরণ ঘোষ ও যোগেশচন্দ্র দে ব্যতীত। এছাড়াও আমরা অহরহ আজও তাঁর মূর্তির ভূপতিত দশার সাক্ষী হই, এমনকি আজকের দিনের বেশিরভাগ নারীরই তিনি পূজ্য হয়ে উঠতে পারেননি, আর সমাজও যে ভারী পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছে তাও তো নয়।
এই যখন অবস্থা তখন কেন মানুষ যেচে এই জীবনযন্ত্রণাকে ডেকে আনতে যাবে! কীসের প্রত্যাশায়? ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে চরমতম একাকিত্ব ও বিচ্ছিন্নতা চেয়ে কেন কেউ এই আদর্শকে আয়ুধ বলে গ্রহণ করবে? করার তো কথা নয়। আর তাই করছেও না। কেউই বিদ্যাসাগরের মতো ছেলে আর প্রীতিলতার মতো মেয়ে প্রত্যাশা করছেন না। আজকাল প্রায় কেউই ‘কথার ও কাজের সাযুজ্য পালন করেন না, ইচ্ছাকে মেরুদণ্ডের সঙ্গে মেলাতে গিয়ে সমাজব্যবস্থার সঙ্গে অহেতুক টক্কর’ নিতে চান না। কেননা, একদিকে মহামানবদের জীবনের পরিণতি থেকে শিক্ষা, অন্যদিকে সংসদীয় গণতন্ত্রের দলীয় কাঠামোয় যেখানে দীর্ঘদিনের বাম রাজত্ব থেকে শুরু হওয়া রীতি অনুযায়ী ‘আমাদের লোক’ হওয়ার সুবিধাগুলি ছেড়ে ‘ওদের লোক’ হয়ে খামোকা মাথা ফাটানো কিংবা আইনি ফ্যাসাদের জালে জড়ানোকে কেউই বুদ্ধিমানের কাজ বলে প্রশ্রয় দিতে রাজি হয় না। হওয়া উচিতও নয়। এ তো জানা কথা যে, অতীত থেকে মানুষকে শিক্ষা নিয়েই সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে হবে।
বিদ্যাসাগর এত কাণ্ড করেও কিছুই প্রায় পাননি, কয়েকজনের লেখা প্রবন্ধ, খানকতক বই আর কিছু মূর্তি নির্মাণ ছাড়া (কেউ আমাকে নিয়ে এককালে বই-প্রবন্ধ লিখবে, মূর্তি গড়বে, এ নিশ্চয় তাঁর মনোবাঞ্ছা ছিল না, যার জন্য গোটা জীবনটাকেই তিনি বিলিয়ে দিয়েছিলেন অকাতরে, আর বিলিয়ে দিয়েও ভারি অসুখী হয়েছিলেন)। পক্ষান্তরে, এখন যদি কেউ সেরকম আদর্শে জীবনযাপনের চেষ্টা করে তবে দিনের শেষে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক একাকিত্ব ছাড়াও প্রায় না খেতে পেয়ে মরবে, না পাবে চাকরি না নির্বিঘ্নে ব্যবসা করে পাড়ায় টিকতে পারবে। সুতরাং, শেক্সপিয়ারের হ্যামলেটে প্রাপ্ত আদর্শ মানুষের ধারণা, 'What a piece of work is a man! How noble in reason, how infinite in faculty! In form and moving how express and admirable! In action how like an angel, in apprehension how like a god! The beauty of the world. The paragon of animals!' আজ একেবারেই বাতিল। ডারউইনের তত্ত্বানুযায়ী মহান গুণগুলি অব্যবহারের ফলে আজ হয় সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে, নয়তো গৌণরূপে টিকে আছে। যাঁদের জীবনে সেগুলি গৌণ তাঁরা জানেন কী যন্ত্রণা তাঁদের সহ্য করতে হয়, অ্যাপেন্ডিক্সের ব্যথা কি চাট্টিখানি! ফলে, ধীরে-ধীরে প্রায় সকলেই মানসিক অস্ত্রোপচারের দ্বারা এগুলিকে বর্জন করছেন।
এমন আজেবাজে মূল্যবোধের ব্যামোহীন এক সমাজ গড়ার দিকে আমরা আজ ধাবমান ও প্রায় সফল। তাছাড়া ডারউইনেরই তত্ত্ব তো অস্তিত্বের জন্য সংঘর্ষের কথাও বলেছে। এই প্রজন্মের নাগরিকের কাছে বেশিরভাগ পূর্বপুরুষরা তো অসততা, অনৈতিকতা, মিথ্যা ভাষণ, অসহিষ্ণুতা, দুর্নীতি ও রক্ষণশীলতাকেই জীবনধারণের উপায় হিসাবে নির্দিষ্ট করেছেন। আর তাই তো এই দেশ গান্ধীর হত্যা দেখেছে কিন্তু নেতাজির মৃত্যু রহস্যের কিনারা দেখেনি, দেশভাগ-দাঙ্গা দেখেছে কিন্তু আজও হিন্দু-মুসলমানের দূরত্বের নিষ্পত্তি দেখেনি, এমারজেন্সি-বোফর্স দেখেছে কিন্তু ভিখারিহীন অনাহারবিহীন হাসিমুখের জনকল্যানকামী দেশ দেখেনি। একের পর এক কারখানা বন্ধ থেকে মরিচঝাঁপি-বানতলা দেখেছে কিন্তু ঘুষহীন সরকারি দফতর দেখেনি, নোটবন্দী-এনআরসি-রাফায়েল-পেগাসাস-সারদা-নারদা-কামদুনি-সিন্ডিকেট-জনপ্রতিনিধিদের কটূভাষ ইত্যাদি তো শুধু দেখছে, দেখছে এবং দেখেই চলেছে। তাই যুগধর্ম অনুযায়ী যখন অসাধুতাই টিকে থাকার মূল সংঘর্ষ তখন এই প্রকৃতি তাদেরই নির্বাচন করবে যারা যোগ্যতম। সুতরাং, আজ আমাদের তীব্রতম, চরমতমভাবে অসাধু ও অসৎ হতেই হবে, নইলে অস্তিত্ব সংকটে ফসিল হয়ে যেতে হবে।
নীতি নৈতিকতার এক অনালোকিত দিক উদ্ভাসিত হয়েছে প্রবন্ধে। লেখককে ধন্যবাদ জানাই।
ReplyDeleteলেখা খুবই ভালো কিন্তু তবুও জীবন এত একপেশে নয়। আশা নিরাশা দুটোই আছে। চারিপাশে নৈরাশ্য এতোই প্রকট যে আমাদের ভ্রম হয়, হতাশা গ্রাস করে। বিধবা বিবাহ আজ অপ্রত্যাশিত কোনো ঘটনা নয়, শিক্ষা ক্ষেত্রে মেয়েরা তো ছেলেদের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে। তাই তো বিদ্যাসাগর অমর হয়ে আছেন।
ReplyDeleteবিদ্যাসাগর বা অন্যান্যরা সমাজ সংস্কারের গতিটাকে ত্বরান্বিত করেছিলেন ঠিকই, তবে তাঁরা না থাকলে সময়ের চাহিদা মেটাতে সমাজ অর্থনীতির দাবিতে সেসব এমনিতেই হত। দুনিয়ার সব দেশেই তো আর বিদ্যাসাগরের মত ব্যক্তিত্বের জন্ম হয়নি, সেসব দেশও তো উন্নতি করেছে নাকি!
Delete