Friday, 22 May 2020

উমফুন!

বিবর্ধিত ঘূর্ণিঝড়
ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায়
সাধারণত গ্রীষ্মে ও শরতের শুরুতে উষ্ণ ক্রান্তীয় সমুদ্রে সৃষ্ট ঘূর্ণাবর্ত স্থলভাগে প্রবেশ করে। সুবিস্তৃত উষ্ণ সমুদ্রপৃষ্ঠে বাষ্পীভবনের ফলে বায়ুতে মুক্ত লীনতাপ ঘূর্ণাবর্তের শক্তি যোগায়। সম্প্রতি 'আমফান' নামক ঘূর্ণিঝড়টিও এমন এক ক্রান্তীয় ঘূর্ণাবর্ত যার উৎপত্তিস্থল বঙ্গোপসাগর।

আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, যে মহাসাগরে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয় তার অববাহিকায় থাকা দেশগুলি আগে থেকেই ঝড়ের নামের তালিকা তৈরি রাখে। সেই অনুযায়ী ২০০৪ সালেই বর্তমানের বিধ্বংসী 'আমফান' ঝড়টির নামকরণ করে থাইল্যান্ড। 'আমফান' শব্দটির অর্থ আকাশ।

কোনও ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ সদা সর্বতো পরিবর্তনশীল হলেও বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট আমফানের গতিপথ এগিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের দীঘা, উড়িষ্যার পারাদীপ ও বাংলাদেশের হাতিয়ার দিকে। বুধবার ২০ মে বিকেলের পর থেকে আমফান পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা, হাওড়া, হুগলি এই জেলাগুলিতে তাণ্ডব দেখায়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই এর গতি উত্তরবঙ্গের দিকে এগিয়ে যায়।

প্রতি বছর একটা বা দুটো ঘূর্ণিঝড় উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের জন্য কোনও নতুন ঘটনা নয়। কিছুদিন আগেই ফণী, বুলবুল প্রভৃতি ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ দেখেছে উপকূলীয় এলাকার মানুষ। তবে আয়লার ভয়ঙ্করতার ছবি ভুলতে না ভুলতেই সুন্দরবন ও তৎসংলগ্ন সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জ, যোগেশগঞ্জের অধিবাসীরা আবার আমফানের করাল রূপ দেখল। এই আমফান স্থলভাগে ১৩০ কিমি বেগে প্রবাহিত হয়ে যাত্রাপথে লণ্ডভণ্ড করেছে জনজীবন। যদিও সতর্কতামূলক প্রচারের জন্য জনগণ যথেষ্ট সচেতন ছিল।

এখন প্রশ্ন তো আসেই, কেন সম্প্রতি ঘন ঘন এমন ঘূর্ণিঝড়ের দাপট। এখানে কাঠগড়ায় অবশ্যই এক শ্রেণির ক্ষমতাশালী মানুষের অবিবেচকতা এবং অপরিমেয় লোভ। তথাকথিত উন্নয়নের জোয়ারে ক্রমশ বেড়েছে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ যার ফলস্বরূপ বিশ্ব উষ্ণায়ন। এই বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরেই সমুদ্রের জলতলের উচ্চতা যেমন বাড়ে তেমন বাড়ে জলের উষ্ণতা। ক্রান্তীয় মণ্ডলে সমুদ্রগুলিতে এই উষ্ণ জলই ঘূর্ণাবর্তের ক্ষেত্রে শক্তি যোগায়। তাই জলের তাপমাত্রা যত বেড়েছে তাতে ঘূর্ণাবর্তের কেন্দ্রের গতি কমেছে ফলে দীর্ঘ সময় ধরে সমুদ্রের উপর অবস্থানে ঘূর্ণাবর্তের নিজস্ব শক্তি ও আর্দ্রতা বেড়েছে যাতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণও বাড়ে। ফলে, ১৯৭৯ থেকে ২০১৭ এই ৩৯ বছরে ক্রমশ ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে ('দ্য গার্ডিয়ান')।

এমনিতেই করোনার প্রকোপ মনুষ্য জীবনের চেনা ছন্দ সম্পূর্ণ পাল্টে দিয়েছে, তার উপরে আমফানের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় অবশ্যই গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে আমাদের জীবনকে নাস্তানাবুদ করছে নিঃসন্দেহে।

1 comment:

  1. Manushher atmasukher sandhan ar sbarthaparatai sab kichhur moole

    ReplyDelete