Wednesday 12 August 2020

অশনি সঙ্কেত স্পষ্ট

নয়া শিক্ষানীতিতে স্কুল শিক্ষা

সুমনকল‍্যাণ মৌলিক

 

পরিবর্তন জীবনের ধর্ম। তাই দীর্ঘ ৩৪ বছর পরে সারা দেশের শিক্ষাব্যবস্থার 'ভোল' পাল্টানোর লক্ষ্যে যে নয়া শিক্ষা নীতি দেশবাসীর কাছে পেশ করা হয়েছে তা নিয়ে সর্বস্তরে আলোচনা হওয়া স্বাভাবিক। যদিও এই 'যুগান্তকারী' শিক্ষানীতি পেশ করার সময় যে ভাবে রাজ্য সরকারগুলোর সঙ্গে আলোচনা না করে (অথচ এখনও পর্যন্ত শিক্ষা সংবিধানের যুগ্ম তালিকায় আছে), সংসদে পেশ না করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার সম্মতি দেওয়া হয়েছে, তাতে শিক্ষানীতির 'গণতান্ত্রিক' চরিত্রটি যে অনেকের কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এই শিক্ষানীতি এক বহু স্তরীয় নথি যা প্রাক-প্রাথমিক থেকে পিএইচডি পর্যন্ত শিক্ষার রূপরেখাকে নির্দিষ্ট করেছে। আমরা বর্তমান নিবন্ধে আলোচনা স্কুল শিক্ষার ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ রাখছি।

শুরুতেই নতুন শিক্ষানীতিতে স্কুল শিক্ষা নিয়ে যে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো করা হয়েছে তা দেখে নেওয়া যাক:

১) স্কুলের আগে তিন বছরের প্রাক স্কুল শিক্ষা;

২) প্রচলিত ১০+২ এর বদলে ৫+৩+৩+৪ ব্যবস্থা;

৩) পঞ্চম শ্রেণি (সম্ভব হলে অষ্টম) পর্যন্ত মাতৃভাষায়/ স্থানীয় ভাষায় ক্লাসে পড়ানো, তবে বিষয় হিসাবে ইংরেজি থাকছেই;

৪) তৃতীয় থেকে পঞ্চম প্রস্তুতি পর্ব;

৫) ষষ্ঠ থেকে অষ্টম মাঝারি পর্বের শিক্ষা;

৬) নবম থেকে দ্বাদশ  চারটি সেমিস্টার ভিত্তিক একটি পরীক্ষা;

৭) তৃতীয় পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে বিশেষ পরীক্ষা;

৮) অনেক বেশি ও বিভিন্ন রকম বিষয় একসাথে পড়ার সুযোগ;

৯) ২০৩০'এর মধ্যে সকলকে স্কুলে টেনে আনা;

১০) ২ কোটি স্কুলছুটকে শিক্ষার আঙিনায় ফিরিয়ে আনা।

এই সুপারিশগুলো এবং সার্বিকভাবে দলিলটিতে স্কুল শিক্ষার ভবিষ্যতের ছবিটা যেভাবে আঁকা হয়েছে তা আমরা পয়েন্ট ভিত্তিক আলোচনা করব।

প্রথমত, আশা করি এই কথাটির সঙ্গে কেউ দ্বিমত হবেন না যে শিক্ষার সর্বজনীকরণ এবং রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা নির্ধারণে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হল শিক্ষার অধিকার আইন (২০০৯)। এই আইনের মাধ্যমে প্রজাতান্ত্রিক ভারতে সর্বপ্রথম শিক্ষার অধিকার আইনি ন্যায্যতা পায়। সেই আইনে বলা হয়েছিল, শিশুর বাসস্থানের এক কিলোমিটারের ব্যাসার্ধের মধ্যে অবশ্যই একটি প্রাথমিক স্কুল থাকবে। কিন্তু প্রস্তাবিত শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম সেই স্কুলগুলিকে দূরের  স্কুলের সঙ্গে সংযুক্ত করে স্কুল কমপ্লেক্স তৈরি করতে হবে। শিক্ষার্থীরা কোন সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণে স্কুলে ভর্তি হতে পারছে না, তা অনুসন্ধান না করে এই বিদ্যালয়গুলি বন্ধ করে দেওয়ার অর্থ শিক্ষার সংকোচন; এবং এই শিক্ষানীতির ঘোষণা ২০৩০'এর মধ্যে সকল শিশুর জন্য শিক্ষাদানের ব্যবস্থার তা সম্পূর্ণ বিরোধী। ইতিমধ্যে আমরা দেখেছি, ঝাড়খণ্ডে বিগত বিজেপি সরকার বস্টন কনসালটেন্সি নামে এক বহুজাতিক সংস্থার পরামর্শে ৬০০০ প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক স্কুল বন্ধ করে ছাত্র-ছাত্রীদের অন্য স্কুলে জুড়ে দিয়েছে, যার ফলে সে রাজ্যে ড্রপ-আউটের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। রাজস্থানেও ৩০ শতাংশ স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্তে সিলমোহর পড়ে গিয়েছে।

দ্বিতীয়ত, প্রস্তাবিত শিক্ষানীতিতে স্কুলের আগে তিন বছরের প্রাক-স্কুল শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যা অবশ্যই শিশু মনস্তত্ত্বের বিরোধী। শিক্ষাবিদরা বহু আগেই বলেছেন যে শিশু ৫-৬ বছর বয়স হলে তবেই স্কুলে যাবে। এরপরেও সরকার যদি জোর করে প্রাক-স্কুল শিক্ষাকে প্রাথমিক স্কুলের সাথে যুক্ত করে তাহলে সেই শিক্ষার দায়িত্ব কে নেবে? এমনিতেই সরকার পরিচালিত স্কুলগুলোতে শিক্ষকের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম এবং স্কুল পিছু অন্তত নতুন তিনটি শ্রেণিকক্ষের প্রয়োজন। সেই অর্থের সংস্থান কোথা থেকে হবে? বলা হচ্ছে, চার মাসের প্রশিক্ষণ দিয়ে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের এই কাজ করানো হবে যা বাস্তবত অসম্ভব। এতদিন পর্যন্ত শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের পুষ্টি ও যত্নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা। কিন্তু সরকার তাদের মাইনে বাড়ানো তো দূরে থাক, তাদের সরকারি ক্যাজুয়াল কর্মীর স্বীকৃতিটুকু দেয়নি। ফলে, আজও তারা সরকার নির্ধারিত বেতনটুকুও পায় না। এর মধ্যে তাদের জন্য নতুন ভূমিকা পুষ্টি প্রকল্পকে যেমন দুর্বল করবে তেমনি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাতে নৈরাজ্য সৃষ্টি করবে। এমনিতেই আজ (বিশেষত শহরাঞ্চলে) নিম্ন মধ্যবিত্তরাও প্রাইভেট স্কুলমুখি। নতুন নীতির ফলে জোয়ার আসবে বেসরকারি প্রি-স্কুল বাণিজ্যে। বণিক সভাগুলির মতে, ২০১৬ সাল থেকে বার্ষিক ৩০ শতাংশ হারে বাড়তে থাকা প্রি-স্কুলের ব্যবসা নয়া নীতির দৌলতে এক লাফে ৫০ শতাংশ বৃদ্ধির মুখ দেখবে।

তৃতীয়ত, এতদিন পর্যন্ত শিক্ষাব্যবস্থায় সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যবস্থা ছিল এবং সে ক্ষেত্রেও একটি নির্দিষ্ট বয়স থেকে সেই শিক্ষা শুরু করা যেত (অষ্টম ও দশম)। কিন্তু বর্তমান শিক্ষা নীতিতে এই বিভাজন তুলে দিয়ে শিক্ষায় প্রায়োগিক অভিজ্ঞতা বাড়ানোর জন্য (application based learning) সবাইকে একই শিক্ষাক্রমের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে যতই চটকদার শোনাক না কেন, বাস্তবত দেখা যাচ্ছে, ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে (শিক্ষার্থীর বয়স যখন ১১) ভোকেশনাল কোর্সে (কার্পেন্ট্রি, ইলেকট্রিক বা মেটাল ওয়ার্ক, গার্ডেনিং) শিক্ষানবিশি শুরু হবে। এর পরিষ্কার লক্ষ্য, কর্পোরেট পুঁজির স্বার্থে কম পয়সার অর্ধদক্ষ শ্রমিক তৈরি করা। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও প্রশ্নটা আজকের ভারতবর্ষের নিরিখে বিচার করা উচিত। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ৫৩ বছরে বেকারি বর্তমান জমানায় সর্বোচ্চ। সোজা কথায়, চাকরির সংখ্যার চেয়ে কর্মক্ষম হাতের সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি। এই সময়ে গরিব, সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণিগুলিকে উচ্চশিক্ষার জন্য নিরুৎসাহিত করে তাদের শ্রমের বাজারে ছেড়ে দেওয়াই এই শিক্ষানীতির প্রকৃত লক্ষ্য।

চতুর্থত, একই ভাবে বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোনও 'কঠিন' নিয়ম থাকবে না। অর্থাৎ, কোনও শিক্ষার্থী পদার্থবিদ্যার সঙ্গে কত্থক নাচও বিষয় নির্বাচন করতে পারবে। এর বাস্তবিক প্রয়োগ কী? উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক স্তরে ২০১৩ সালে এই কোর্স চালু করেছিল। কিন্তু দেখা যায়,  ফাউন্ডেশন কোর্স করতে এতটা সময় চলে যাচ্ছে যে কোনও বিষয়েই নিবিড় পাঠ সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষার্থীরা তার কোনও প্রায়োগিক মূল্য পাচ্ছে না। ফলে, কিছুদিনের মধ্যেই সেই কোর্স উঠে যায়। স্কুল শিক্ষার ক্ষেত্রেও একই বিপর্যয় ঘটবে।

পঞ্চমত, এই শিক্ষানীতিতে এক সংহত মূল্যায়ন ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, বোর্ডের পরীক্ষার গুরুত্ব কমানো। এই শিক্ষানীতির ফলে সারা দেশেই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা বলে আর কিছু থাকবে না, তার বদলে চারটি সেমিস্টার ভিত্তিক একটি পরীক্ষা হবে। আসলে, এই প্রস্তাবটি দ্বিচারিতাপূর্ণ ও এক কেন্দ্রিক। পরীক্ষা ব্যবস্থার মূল্যায়ন পদ্ধতির কেন্দ্রীকরণের জন্য একটি নীতি তৈরি হবে যার নাম PARAKH (Performance Assessment, Review and Analysis of Knowledge for Holistic Development)। আর সেই মূল্যায়ন পদ্ধতি মেনে তৃতীয়, পঞ্চম, অষ্টম, দশম ও দ্বাদশ শ্রেণিতে মড্যুলার ভিত্তিক মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু হবে। এর পিছনে দুটো উদ্দেশ্য আছে। একটি হল, ভারতের মতো বহু ভাষাভাষী ও সংস্কৃতির দেশে রাজ্য স্তরের বোর্ডগুলি সেই রাজ্যের বৈশিষ্ট্য সমূহ মাথায় রেখে যে ভাবে পাঠ্যক্রম তৈরি, পরীক্ষা পরিচালনা করছিল, তাকে ধ্বংস করে সংঘ পরিবারের দাবি মেনে 'এক দেশ, এক শিক্ষা' চালু করা। দ্বিতীয়টি হল, ড্রপ-আউটের সংখ্যাকে লুকিয়ে রাখা। 'অল ইন্ডিয়া ফোরাম ফর রাইট টু এডুকেশন' প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রথম শ্রেণিতে যত শিক্ষার্থী অ্যাডমিশন নেয়  তার মধ্যে আদিবাসীদের ৬ শতাংশ, তপশিলি জাতিদের ৮ শতাংশ, ওবিসিদের ১০ শতাংশ ও সংখ্যালঘুদের ৯ শতাংশ দ্বাদশ শ্রেণিতে আসে। বাকিরা মাঝপথে পড়া ছেড়ে দেয়। এই বিশাল সংখ্যক ড্রপআউট'দের লুকোবার জন্য 'Entry', 'Exit', 'Flexibility' প্রভৃতি শব্দের আড়ালে ড্রপ-আউটকে ন্যায্যতা দেওয়া হবে।

ষষ্ঠত, আমাদের আশঙ্কাকে সত্যি করে এই শিক্ষানীতিতে অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থাকে আগামী দিনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। কোভিড পর্বে আমরা দেখেছি, অনলাইন শিক্ষা কীভাবে বৈষম্যের নয়া হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। স্মার্ট ফোন, কম্পিউটার ও ডেটা কেনার পয়সা না থাকার কারণে কীভাবে হাজার হাজার শিক্ষার্থী  শিক্ষার আঙিনার বাইরে চলে যাচ্ছে। ২০১৭-১৮ সালের নমুনা সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, ভারতীয় ছাত্রদের মাত্র ৮ শতাংশের বাড়িতে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে। ফলে, এই শিক্ষানীতি গরিব শিক্ষার্থীদের শিক্ষার অধিকারকে লঙ্ঘিত করবে।

সপ্তমত, নয়া শিক্ষানীতির আরেকটি চালাকির দিক হল তার ভাষা নীতি। কুশলী বাক্য প্রয়োগে প্রথমেই বলা হয়েছে বহুভাষিকতাই ভারতবর্ষের শক্তি। প্রস্তাবে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, ভারতীয় এলিটরা ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করেন। তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে চাকরি ও ক্ষমতার ক্ষেত্রে প্রান্তিক করে রেখেছেন। তাই ভাষাগতভাবে এই শিক্ষানীতির উদ্দেশ্য ভারতের ভূমিজ ভাষাগুলিকে তাদের প্রাপ্য পরিসর ফিরিয়ে দেওয়া। এতে বলা হয়েছে, পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মাতৃভাষাই হবে শিক্ষাদানের মাধ্যম। কিন্তু এ কথা বলা নেই যে সিবিএসই/ আইসিএসই স্কুলগুলোতে বাচ্চারা যে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করে তার কী হবে! ষষ্ঠ থেকে আসবে ত্রি-ভাষা সূত্র। ফলে, প্রকৃত অর্থে হিন্দি ও ইংরেজি শেখাটা প্রতিটি ভারতীয়র জন্য বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়াল। অন্যদিকে, ধ্রুপদী ভাষা শিক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। যেখানে সর্বপ্রথমে আছে সংস্কৃত যার স্কুল স্তরে ও সামাজিক জীবনে প্রয়োজনীয়তা প্রায় শূন্য। ফলে, কার্যক্ষেত্রে ইংরেজির তুলনামূলক আধিপত্য থাকবে, আবার হিন্দিকে গোটা দেশের উপর চাপিয়েও দেওয়া যাবে। স্কুল স্তরে প্রাকৃত, পালি প্রভৃতি ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষা হিসাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যারা বর্তমানে প্রায় অচল, অথচ কোথাও তালিকায় বাংলা ভাষার নাম নেই। এই হিন্দি আধিপত্যবাদ আজ অবশ্যই 'হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তান' অনুসারী।

অষ্টমত, এই শিক্ষানীতিতে আগেরবারের মতো যথারীতি শিক্ষা ক্ষেত্রে জাতীয় আয়ের ৬ শতাংশ ব্যয় বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কীভাবে টাকার জোগাড় হবে সে ব্যাপারে সরকার যথারীতি নীরব। বেঙ্গালুরুর 'সেন্টার ফর বাজেট অ্যান্ড পলিসি স্টাডিজ'এর পক্ষ থেকে জোৎস্না ঝা ও মধুসূদন রাও কৃত সমীক্ষা থেকে দেখা যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় বাজেটে (২০১৪-১৫) শিক্ষা ক্ষেত্রে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল জিডিপি'র ০.৫৩ শতাংশ, ২০১৭-১৮'এ ০.৪৮ শতাংশ, ২০১৯-২০'তে ০.৪৫ শতাংশ এবং ২০২০-২১'এ ০.৪৪ শতাংশ। এর সঙ্গে রাজ্যের ব্যয় বরাদ্দ যুক্ত করা হলেও তা জিডিপি'র ৪ শতাংশের বেশি হবে না। ফলে, আরও বেশি বিদেশি পুঁজির প্রবেশের পথ প্রশস্ত হবে। বেসরকারিকরণের প্রক্রিয়া আরও দ্রুত হবে।

১৯৬৬ সালে কোঠারি কমিশন তার ঐতিহাসিক সুপারিশে সারা দেশ জুড়ে একই মানের 'কমন স্কুল সিস্টেম'এর কথা বলে। এই ভাবনার অর্থ, পরিকাঠামো, পঠনপাঠনের মান সারা দেশে একইরকম হবে। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি বরং উপর্যুপরি সরকারগুলোর পরিকল্পিত ঔদাসিন্য, শিক্ষা ক্ষেত্রে ধারাবাহিক ভাবে ব্যয়বরাদ্দ হ্রাস এবং নব্বইয়ের দশকে অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো শিক্ষাতে ব্যাপক বেসরকারিকরণ আদতে শিক্ষাকে পণ্যে রূপান্তরিত করেছে। ফলে, আজ ধনী ও দরিদ্রদের জন্য দু' ধরনের শিক্ষা পদ্ধতির কুৎসিত সহাবস্থান। নরেন্দ্র মোদি'দের নয়া শিক্ষানীতি স্কুল শিক্ষায় সেই বিভাজনকে আরও তীব্র করবে, তা বলাই বাহুল্য।

 

2 comments:

  1. ১০+২+৩ চালু হয়১৯৭৬ এ।কাজেই ৩৪ নয় ৪৪ বছর পর ।শিক্ষা নীতি ভালো না খারাপ এটা নির্ভর করে তার প্রয়োগের উপর ও পরিকাঠামোর উপর।পরিকাঠামো একই থাকলে কোনো সিস্টেমই কাজ করবেনা।বৃত্তিমূলক শিক্ষার গালভরা উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে সঠিক পরিকাঠামোর অভাবে।শিক্ষার গুণগত মান যদি বজায় রাখতে হয় তবে ঢালা ও ভাবে উচ্চ শিক্ষার জন্য ইউনিভার্সিটি খোলা অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।তাতে গেল গেল করার কিছু নেই।ঢালাও নম্বর দিয়ে আর সবার জন্য উচ্চ শিক্ষার দরজা খুলে দিলে তথাকথিত শিক্ষিত বেকার বাড়বে।মানব সম্পদের গুণগত মান বাড়বেনা

    ReplyDelete
    Replies
    1. মনে হয়, লেখক ১৯৮৬ সালের শিক্ষানীতিকে বোঝাতে চেয়েছেন, তাই ৩৪ বছর বলেছেন।

      Delete