মুখে সাম্যের বুলি অবচেতনে বৈষম্য
শ্রীপর্ণা চক্রবর্তী
৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এক তুষার ঢাকা শীতের সকাল। সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমের অদূরেই ওরেব্রো শহর, আর সেখানেই অবস্থিত ক্যাম্পাস রিসবার্গস্কা; সরকারি ভাষ্যে 'প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র'। আচমকা সেদিন ভাষার শব্দ, লেখার খসখসানি, নিশ্চিত জীবনের স্বপ্ন ছাপিয়ে গর্জে উঠল গুলির শব্দ, আর তারপরই নিস্তব্ধতায় রয়ে গেল রক্তমাখা মেঝে, কিছু স্তব্ধ দৃষ্টি। ১১টি প্রাণ নিভল নিমেষে। আরও ছয়জন আহত। আধুনিক সুইডেনের ইতিহাসে উন্মোচিত হ'ল অন্যতম ভয়াবহ গণহত্যা মঞ্চ। নিহতদের পরিচয়-- অভিবাসী-বৈধ অভিবাসী এবং স্থানীয় ভাষা পাঠ্যের ছাত্রছাত্রী। নিহতদের মধ্যে ছিলেন কুর্দ, সিরিয়ান, ফিলিস্তিনি ও অন্যান্য দক্ষিণ গোলার্ধের দেশ থেকে আসা মানুষ, যাঁরা আশ্রয় খুঁজতে এসে বিদ্বেষের নিশানা হয়ে শেষে এ দুনিয়া থেকেই আশ্রয়চ্যুত হলেন। বরফের পাতলা চাদর ছিঁড়ে নিচে লুকিয়ে থাকা আপাত নিস্তব্ধ জল হঠাৎই যেমন উন্মুক্ত হয়ে পড়ে গলনাঙ্ক ছুঁলে, তেমনই স্বপ্নের দেশটির নির্মিত মুখোশেও আচমকা ফাটল ধরাল কোনও এক অজানা প্রবর্ধক।
যে মানুষটি সেদিন ট্রিগারে হাত রেখেছিল— সেই রিকার্ড অ্যান্ডারসন, ৩৫ বছরের এক খাঁটি সুইডিশ যুবক। কোনও ঘৃণাপত্র নয়, কোনও প্রকাশ্য ইশতেহার নয়, তবুও তার বুলেট যে উদ্দেশ্যে ছুটে গিয়েছিল তা হয়তো কোনও শূন্যতা থেকেও ধাবিত নয়। প্রতিটি সহিংস গর্জনের মতোই এ ঘটনার শেকড়টিও নিসংশয়ে গভীর। সবচেয়ে অদ্ভুত বিষয় হল, এই হত্যাকাণ্ডের পর রাষ্ট্রীয় বিবৃতি কিংবা সংবাদমাধ্যমে একবারও উল্লেখ করা হল না ঘটনার প্রাক-মুহূর্তে আততায়ীর সেই চিৎকার— 'নি স্কা বোর্ত ফ্রান ইউরোপা' (Ni ska bort från Europa -- 'তোমরা ইউরোপ থেকে বেরিয়ে যাও')। উল্লিখিত হল না, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির যে বিশেষ চত্বরে আততায়ী গুলি চালায়, তা নির্দিষ্ট ভাবেই শুধুমাত্র অভিবাসী এবং উদ্বাস্তুদের সুইডিশ শেখার জন্য নির্ধারিত কেন্দ্র (Swedish for Immigrants (SFI))। বরং হামলার পর দিন পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে জানাল, ঘটনার পেছনে 'আদর্শগত উদ্দেশ্য' থাকার কোনওই ইঙ্গিত নেই। এই শিউরে ওঠা, ইউরোপের বুকে গভীরভাবে প্রোথিত বর্ণ ও জাতি বিদ্বেষের নির্মম প্রতিফলনের বার্তাটি বহু মূলধারার সংবাদমাধ্যমই সুনিপুণভাবে উপেক্ষা করে গেল।
'Sweden searches for answers after country’s deadliest shooting' -- পরদিন এই শিরোনামে বিবিসি একটি সংবাদ করল। শিরোনামের নিচে বাদামি চামড়া, কালো চাপ দাড়ির এক কিশোরের মুখচ্ছবি। কে এই কিশোর? ১৬ বছর বয়সী কুর্দি বালক ইসমাইল মোরাদি, লাল ফুলের তোড়া হাতে নিহতদের শ্রদ্ধা জানাতে ঘটনাস্থলে গিয়েছিল সে। ফুল হাতে তার সেই ছবি বেশ কিছু অনাম্নী সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিতও হয়। সাংবাদিকদের সে জানিয়েছিল, এই স্কুলটি যেহেতু অভিবাসীদের জন্য, তাই এই হামলাও পরিকল্পিতভাবেই তাদের লক্ষ্যে ঘটানো হয়েছে। অথচ বিশ্বের সর্ববৃহৎ ও প্রাচীনতম সম্প্রচার সংস্থাটি তার সেই একই ছবি সুচারু উপায়ে কাটছাঁট করে হাতের ফুলগুলি কাঠামোর বাইরে রেখে প্রকাশ করল। মুখ্য চরিত্রের ছবি পরিবর্তন করে কিংবা মুখ্য চরিত্রকেই রূপান্তরিত করে মূল উপাখ্যানটিকে পুনর্গঠন করা বা সম্পূর্ণ নতুন উপাখ্যান নির্মাণে গণমাধ্যমের এই ভূমিকা ভীষণ কার্যকরী। স্পষ্টতই এভাবে এক ছবি গড়ে দিতে চাইল আরেকটি প্রতিচ্ছবি: এক শ্যামবর্ণ মুসলিম কিশোর ‘অন্য’— শোকাতুর নয়, বরং সন্দেহভাজন।
ঘটনার পর রবিবার জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী উলফ ক্রিস্টারসন। তিনি স্বীকার করেন যে বিদেশি বংশোদ্ভূতদের মধ্যে বিশেষভাবে নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি কাজ করছে। অন্যান্য সহিংস ঘটনার পর দেওয়া পূর্বপরিকল্পিত বক্তব্যের মতো তিনিও বিবৃতি দেন, 'আমরা এমন এক সময়ে রয়েছি, যখন সমাজে সহিংসতা ক্রমশ বাড়ছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি।' ১২ ফেব্রুয়ারি সুইডেনে এক মিনিটের নীরবতা পালন করা হয়। রাজা কার্ল ষোড়শ গুস্তাফ স্মৃতিফলকে ফুল অর্পণ করেন। হামলার পরদিনই সুইডেনের রাজনৈতিক নেতারা ও রাজপরিবারের সদস্যরা ওরেব্রো সফর করেন। বিরোধী দলীয় নেতা মাগদালেনা অ্যান্ডারসন, যার সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট পার্টিও অভিবাসন হ্রাসের পক্ষে, শহরে গেলে এক নারী তাঁর উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলেন, 'আমাদের কথা বলুন, অভিবাসীদের নিয়ে ইতিবাচক কিছু বলুন!'
সুইডেনে বহু বছর ধরে বর্ণবাদ বিরোধী কর্মকাণ্ডে যুক্ত সমাজকর্মী অ্যানি বোরোইয়ান জানান, হামলার পর থেকে অভিবাসীদের মধ্যে উদ্বেগ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। তাঁর মতে, 'সুইডেনের ডানপন্থী সরকার, যা চরম ডানপন্থী সুইডেন ডেমোক্র্যাটস পার্টির সমর্থনে চলছে, প্রায়ই অপরাধ বৃদ্ধির জন্য অভিবাসীদের দায়ী করে থাকে।' মানবাধিকার ও শরণার্থী নীতির জন্য উত্তর ইউরোপের এই দেশটি দীর্ঘদিন যাবৎই বিশ্বমঞ্চে বন্দিত; কিন্তু ঠিক এই নীতিগুলিই বর্তমানকালে এক অংশের জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার ঘটাচ্ছে। উপরন্তু, কিছু বিশেষ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এই ক্ষোভকে প্রায়শই আরও উস্কে অভিবাসীদের সামাজিক সমস্যার মূল কারণ হিসেবে তুলে ধরে। এই ধারণা ক্রমশ এমনভাবে সামাজিক চেতনায় গেঁথে যাচ্ছে, যেখানে অভিবাসীরাও কোনও কোনও ক্ষেত্রে ইউরোপের সংকটের জন্য নিজেদের দোষী ভাবতে শুরু করেছেন। ফলস্বরূপ, সমাজে 'আমরা' বনাম 'ওরা'র বিভক্তি রেখাটি ক্রমে স্পষ্টতর হয়ে উঠছে ।
সমাজের গহীনে লুকিয়ে রাখা এই বর্ণ বৈষম্যের প্রবাহ ক্রমশ সহিংসতায় রূপান্তরিত হচ্ছে। এই গণহত্যা যেন সমাজের এক অনুচ্চারিত অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বকে আপামরের সামনে এনে দিয়েছে— একদিকে প্রগতিশীল আদর্শ, অপরদিকে বর্ণবাদ, ঘৃণা ও ক্ষমতায়নের শক্তিশালী গাঁথুনি। তাই প্রশ্নটা স্রেফ অভিবাসীর অধিকার নয়, তাঁদের প্রতি শ্বেতাঙ্গ সমাজের সমদৃষ্টিরও। এছাড়াও অধিকারের লড়াই সফল মাত্রেই যে কাঙ্ক্ষিত ন্যায়ের নিশ্চয়তা জোটে না, আমেরিকায় ষাটের দশকের নাগরিক অধিকার আন্দোলনের ইতিহাসও তা দেখিয়েছে। ফলত রাষ্ট্রীয় আইনে, খাতায় কলমে নাগরিকদের সমানাধিকার থাকলেও, সামাজিক ন্যায় বহুলাংশে অধরাই থেকে যায়। যেভাবে ভারতীয় সংবিধান সকল নাগরিকের সমানাধিকারের কথা বললেও বাস্তবে তা আজও অধরাই।
তবে এই ঔপনিবেশিক প্রভুত্বের মানসিকতা শুধু যে শ্বেতাঙ্গদের মধ্যেই প্রোথিত এমনটা বললে কিছুটা কম বলা হবে। উপজাতি, অভিবাসী, উদ্বাস্তু, শরণার্থী, দলিত, মুসলমান এক হিসেবে সমাজের সমগ্র অশ্বেতাঙ্গর মননেও তাঁরা যে খোদ স্ব কিংবা পরভূমে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক, একপ্রকার অজ্ঞাতসারেই প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই চেতনায় লালিত হচ্ছেন। এখানেও সহিংসতার চিত্রায়নে প্রচার মাধ্যমের এক দৃষ্টিকটু দ্বৈতনীতি চূড়ান্তভাবে তার উদ্দেশ্যে সফল। একই অপরাধে অপরাধী এই দ্বিতীয় শ্রেণিভুক্ত হলে তা তৎক্ষণাৎ 'সন্ত্রাসবাদ' বা 'দেশদ্রোহিতা'; আর অপরাধী 'শ্বেতাঙ্গ' হলে সে ক্ষেত্রে তা একাকিত্বের পরিণতি থেকে সৃষ্ট মানসিক অসুস্থতার বহিঃপ্রকাশ, অথবা নেহাৎই কোনও ব্যক্তিগত বা কাকতালীয় অঘটন। অতএব, সামাজিক মূল্যায়নও ভিন্ন। অথচ প্রতিটি সহিংসতা অপরাধীর ধর্ম-গাত্রবর্ণ-নৃতাত্ত্বিক পরিচয় নির্বিশেষে মানসিক ও সামাজিক বিকারের প্রতিফলন।
মর্মান্তিক এই ঘটনা সমাজের বর্ণবাদ ও রাজনৈতিক সংকটের গণ্ডি পেরিয়ে এক বৃহত্তর প্রশ্ন উত্থাপিত করেছে— আগামী প্রজন্মকে কীভাবে গঠন করা যাবে? ১৯৭৯'তে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে শিশুদের শারীরিক শাস্তি নিষিদ্ধ হয় সুইডেনে। উদার সমাজ চিত্রায়নে এ এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। স্কুল স্তরে পাঠ্যপুস্তকের পরিবর্তে প্রযুক্তি-নির্ভর শিক্ষা চালু করার ক্ষেত্রেও এই দেশটি ছিল পথপ্রদর্শক, যা আধুনিক দুনিয়ার অন্যতম ‘স্মার্ট’ সিদ্ধান্ত হিসেবেই বিবেচিত! কিন্তু দীর্ঘ ১৫ বছর পর তাঁরা অনুধাবন করেন, এই ব্যবস্থা শিক্ষা ক্ষেত্রে সম্পূর্ণরূপে অকৃতকার্য এবং পুনরায় পুরনো পঠন পদ্ধতিতে ফিরতে প্রায় €১০৪ মিলিয়ন ব্যয় করে সুইডেন সরকার। গবেষণায় যে সকল গুরুতর প্রবণতাকে ব্যক্ত করা হয় তা হল বোধশক্তির অবক্ষয়, মনোযোগ বিভ্রান্তি, মৌলিক দক্ষতার অবনতি এবং সামাজিক মেলামেশার ঘাটতি। গত কয়েক বছরে ক্রমবর্ধমান সহিংসতার ঘটনায় রাষ্ট্রের এ হেন অত্যাধুনিক সিদ্ধান্তও আলোচ্য হয়ে উঠছে। শিশুকাল থেকেই মাত্রাতিরিক্ত যন্ত্র-নির্ভরতা যেমন তাদের সহজাত বৌদ্ধিক বিকাশের অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে, তেমনই মানুষের স্বাভাবিক সহযোগিতামূলক মনোভাবটিও বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। আন্তর্জাল তথা সামাজিক মাধ্যমের অ্যালগরিদমে ছড়িয়ে পড়া ঘৃণা, একপাক্ষিক ভ্রান্ত তথ্য বা ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক প্রচার সহজেই শিশুমনকে প্রভাবিত করে ভুল মতাদর্শের দিকে ধাবিত করে। উদারনীতি আউড়ে সোশ্যাল সার্ভিস নামের এক অতি কঠোর নিয়মতন্ত্রের ভীতি প্রদর্শন দ্বারা শিশুর প্রত্যক্ষ আপন-অভিভাবক বা শিক্ষকের অপরিহার্যতাকে দীর্ঘকাল ধরে উপেক্ষা করা হয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার্থে শিশুদের প্রতি রাষ্ট্রীয় উদারতার এই পন্থায় কোথাও গিয়ে বিকাশের ধাপে আবশ্যিক ন্যূনতম শৃঙ্খলতা, সহনশীলতার পাঠের প্রয়োজনটুকু ভুলতে বসেছে। এই নিখুঁত পরিকাঠামোগত সেবা যেন ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা, স্বতঃস্ফূর্ত সহমর্মিতাকে মুছে দিচ্ছে, যা শুধু সমাজের নয় বরং রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও শিক্ষাগত ব্যর্থতার প্রতিফলনও বটে।
'ইতিহাস বিজয়ীরাই লেখে'— বাক্যটির সত্যতা প্রমাণে যেন নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যায় শ্বেতাঙ্গ বিশ্ব। ঔপনিবেশিক লুণ্ঠন এবং বিজয়ের ইতিহাস রচনার পাশাপাশি তারাই আবার 'যুদ্ধ খারাপ' এই বার্তা ছড়িয়ে দিয়ে নব্য ইতিহাস তৈরিতে মগ্ন। তাই গড়ে ওঠে বার্লিনের হলোকাস্ট স্মারক, ফ্রান্সের Mémorial ACTe, বেলজিয়ামের আফ্রিকা মিউজিয়াম, হিরোশিমার ধ্বংসাবশেষে শান্তির স্মারক, লিভারপুলের আন্তর্জাতিক স্লেভারি জাদুঘর কিংবা নেদারল্যান্ডসের ট্রোপেন মিউজিয়াম— পশ্চিমা জগতের একেকটি আত্মপ্রবঞ্চনার স্মারক। অন্যদিকে, আমেরিকাতেও চলে একইরকম প্রহসন। শতাব্দী ধরে এক সমগ্র জাতিগোষ্ঠীর গণহত্যা ও তাদের সংস্কৃতির বিলুপ্তি ঘটানোর পর কিছু রাজ্যে 'কলম্বাস দিবস' বাতিল করে 'ইন্ডিজেনাস পিপলস ডে' চালু করা হয়। জার্মানিতে নাৎসি শাসনের শিকার যারা তাদের উত্তরাধিকারীদের নাগরিকত্ব, স্পেন ও পর্তুগালের সেফার্ডিক ইহুদিদের বিশেষ অধিকার, সাবেক ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রগুলোর বিশেষ ভিসা সুবিধা— সব কিছুই যেন কাগজে-কলমে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সহানুভূতির প্রতীক। এমনকি যুদ্ধবিধ্বস্ত শরণার্থীদের স্বাগত জানিয়েও তারা এক প্রকার আত্মপ্রসাদ লাভ করে। কিন্তু তারপর? মানবাধিকার ও আদর্শিক চেতনার পাঠ বাকি বিশ্বকে দিতে সর্বদা আগ্রহী ফ্রান্সও ২০২১ সাল পর্যন্ত স্বীকার করেনি যে তারা আলজেরিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামী আলি বুমেনদজেলকে হত্যা করেছিল। ব্রিটেনের শিক্ষাব্যবস্থায় উপনিবেশবাদের প্রসঙ্গ 'এক মিশ্র ঐতিহ্য' হিসেবে হাজির হয়, যেখানে সভ্যতা তাদের হাত ধরেই এসেছে বলে আত্মপক্ষ সমর্থন করা হয়। জার্মানি যখন হলোকাস্টের দায় স্বীকার করেছে, তখনও নামিবিয়ার হেরেরো ও নামা জনগোষ্ঠীর গণহত্যার প্রসঙ্গে নীরব থেকেছে।
ভারতেও এই প্রবণতা ভিন্ন নয়। শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও ইসলামি যুগের বিকৃত ধারণা ছাত্রদের মস্তিষ্কে প্রবেশ করানো হয়, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় নির্মিত চলচ্চিত্রে দেশের সর্ববৃহৎ সংখ্যালঘু গোষ্ঠীকে নির্দিষ্ট ছাঁচে প্রদর্শন করা হয়। ফলে, সাম্প্রদায়িকতার বিষ সমাজে গভীরভাবে প্রোথিত হয়। পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যেও শিক্ষিত বাঙালির চেতনায় সংখ্যালঘু, আদিবাসী কিংবা তথাকথিত নিম্নবর্গের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি অস্পষ্ট ও সামন্ততান্ত্রিক।
এই বহুমাত্রিক বাস্তবতা ও গণমাধ্যমের ন্যাক্কারজনক ভূমিকা অনস্বীকার্যভাবে স্পষ্ট করে তুলেছে বিভেদের মুদ্রার দুই পিঠের সমান্তরাল প্রতিকৃতি–
১) ভিন্ন তথা বঞ্চিত আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট থেকে উঠে আসা এক শ্রেণি, যারা হামেশাই ইউরোপে অবৈধ কর্মকাণ্ডে ও বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত ধর্মীয় সন্ত্রাসে জড়িয়ে পড়ে এবং
২) তথাকথিত প্রগতিশীল শ্বেতাঙ্গ সমাজ, যারা সাম্যের বুলি আওড়েও অবচেতনে বৈষম্যকে ধারণ করে।
এরই পাশাপাশি রয়েছে সেইসব মহীরূহসম রাষ্ট্র, যারা অলক্ষ্যে সন্ত্রাসকে মদত দিয়ে চলেছে আপন স্বার্থে। সব মিলিয়ে ভবিষ্যৎ এক অনিশ্চিত টালমাটাল পরিস্থিতির দিকে ধাবমান। ওলোফ পালমের সুইডেন যে সাম্য-সমাজের স্বপ্ন দেখেছিল কিংবা সুইডিশ সংস্কৃতির প্রতীক ‘লাগোম’, যার দর্শন 'না কম, না বেশি, ঠিক যতটুকু প্রয়োজন' ভারসাম্যের প্রতিশ্রুতি দেয়, তা বাস্তবে কতটা ফলপ্রসূ সেই প্রশ্ন এখন আরও জরুরি হয়ে উঠছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে যে বিভেদের প্রাচীর গড়ে উঠেছে, তাকে এক লহমায় ভেঙে ফেলা সহজ নয়। তবে এই বিশ্বায়নের যুগে দোষারোপের চক্রে আবদ্ধ হয়ে আমরা যেন ভুলে না যাই: পরিবর্তনের দায় কোনও একক পক্ষের নয়, বরং সমগ্র সমাজের।
অত্যন্ত যুগোপযোগী লেখা। দুনিয়া জুড়ে অতিডান ভাবনার ক্রমাগত প্রসার সত্যিই উদ্বেগের কারণ। কীভাবে এই চোরাবালি থেকে মানুষ উদ্ধার পাবে তাই ভেবে বের করতে হবে সবাই মিলে।
ReplyDeleteওরেব্রো স্টকহোম থেকে ২০০ কিমি দূরে অবস্থিত। ২০ বছরের বেশি বয়সের ২০০০ প্রথাগত শিক্ষায় বঞ্চিত অভিবাসী ছাত্রছাত্রী পড়ে রিজবার্স্কায়। ছাত্রছাত্রীদের ভোকেশনাল ট্রেনিং মারফৎ জীবনজীবিকার ব্যবস্থাও করে থাকে সুইডিশ সরকার।
ReplyDelete১১জন মৃতের মধ্যে হত্যাকারী নিজেকেও গুলি করে শেষ করে দেয়।
সুইডেনের সরকারি টেলিভিশন 'এসভিটি' যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে গোটা দেশে ঘটনাটিকে প্রচার করে।
দৈনিক ট্যাবলয়েড 'অ্যাফটনব্লাডেট' বা 'আনাদোলু'তে পরেরদিনই মর্মান্তিক ঘটনাটি ছাপা হয়। গোটা সুইডেনে নিন্দার ঝড় ওঠে।
বাড়ির লোকেদের সঙ্গে আততায়ীর কোনও সম্পর্ক ছিল না। তারকাটা বলেই আততায়ী পরিবারে পরিচিত। আততায়ীর কাছে ৪টে লাইসেন্সপ্রাপ্ত শিকারের বন্দুক মজুত ছিল।
মর্মাহত সুইডেনের রাজা কিং গুস্তাফ মঙ্গলবারেই বারেই গভীর শোকজ্ঞাপন করেন।
বুধবার সুইডেনের সব সরকারি দফতরে জাতীয় পতাকা মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্যে অর্ধনমিত রাখা হয়। স্তম্ভিত সুইডিশ প্রধানমন্ত্রী এবং ইওরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা লিয়েনও তীব্র ভাষায় ঘটনাটির নিন্দা করেন। সমস্ত মানুষকে অনুরোধ করেন শোকতপ্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়িয়ে সুইডিশ সরকারকে এইধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনার বিরুদ্ধ প্রতিবাদে শামিল হতে।
২০২২এ বন্দুকবাজিতে মৃত্যু হয় ৬২ জনের,২০২৪এ সুইডেনে ২৯৬টা গুলি চালনার ঘটনায় ৪৪ মারা যান, ২২এর মার্চে মালমো-তে এক ১৮র ছাত্রের ছুরিকাঘাতে মৃত্যু হয় দু'ই শিক্ষকের। উগ্র দক্ষিনপন্থী শ্বেতাঙ্গদের কড়া হাতে দমন করে সুইডেন সরকার।
ভারত/মার্কিন সরকারের মত অন্ধ উগ্র জাতীয়তাবাদের ধ্বজা সুইডেন ওড়ায় না।
গনমাধ্যমকে দোষ দিয়ে, ঘটনার পারম্পর্য না জেনে হঠকারী মন্তব্য বোধহয় সমীচিন নয়।
মৃন্ময় চন্দ।
সুইডেন এর অবস্থা এখনো মার্কিন মুলুক এর মতো নয়, এ কথা নিশ্চয় স্বীকার্য। তবে বিশ্ব জুড়ে যে সন্ত্রাসবাদ, ইসলামোফোবিয়া ও বর্ণবিদ্বেষ বাড়ছে, তার থেকে স্ক্যান্ডিনেভিয়াও আজ মুক্ত নয়, এটিই এই লেখাটির উদ্দেশ্য।
DeleteThis isn’t reporting—it’s about confronting a deeper bias. An extraordinary country, a global role model, yet stuck in a cycle of projection and division. If you narrate an incident without naming the culprit, people instinctively assume it’s a Muslim migrant. That’s the problem. This narrative is ingrained, shaping perceptions, fueling Islamophobia. It’s not about where it’s “less” of an issue—it’s about dismantling it everywhere. We must unlearn, resist, and fight it, no matter where we live. After all, “যে যেখানে লড়ে যায় আমাদেরই লড়া..”
ReplyDeleteRhetoric can be a powerful tool for justification; however, it is important to approach fundamentalism with a critical perspective that calls for universal condemnation. Internal migration in India presents a complex challenge, often influenced by individuals who may perceive external factors as the cause of their misery and difficulties. While efforts have been made to foster integration through democratic means, achieving successful assimilation can be challenging. In the midst of this, it is also essential for me to reflect on and address my own personal struggles.
ReplyDeleteAttributing blame to Islamophobia and related matters often presents a skewed perspective. It is important to approach these discussions with a sense of understanding and to seek constructive dialogue, rather than assigning blame.
Mrinmoy Chanda.
Though the points raised are true, but I have no clue at all what anyone could find illogical with this article. All this write-up claims is that despite being first for many revolutionary ideas being included in the running of the state democratically, even Sweden is finding it difficult to keep racism and fascism at bay. Isn't it too obvious that fascism is on the rise everywhere in the world including our subcontinent also? Is condemning such acts not necessary in your opinion?
DeleteThis comment has been removed by the author.
DeleteMrinmoy Chnada.
DeleteI have not been able to discern a clear connection between Islamophobia/fascism and the mass killings under discussion. In areas such as Syria, Lebanon, Pakistan, and Bangladesh, acts of violence against individuals of differing religious beliefs often do not receive strong criticism or condemnation.
The people and governments in Nordic countries demonstrate a commendable level of innovation and prosperity, which contributes to a general sense of security against fascism. Their primary focus seems to be on fostering development/welfare rather than engaging in extremism. In the context of India and similar regions, it appears that authoritarian figures/Fascists are often linked to traditional familial roles, such as those of fathers, brothers, or husbands.