Friday 20 September 2024

ফ্যাসিবাদ পরবর্তী বাংলাদেশ

এক গণতান্ত্রিক ও স্থিতিশীল সমাজ গঠনের চ্যালেঞ্জ

শাহেদ শুভো



বাংলাদেশের ৫ অগস্ট'এর গণ অভ্যুত্থান কি বেহাত বিপ্লব? এই আলাপ ৫ অগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের একটা অংশ প্রশ্ন করছে। এই প্রশ্নের উত্তর আমি নিজে কয়েকবার খোঁজার চেষ্টা করেছি। শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসন, তার তৈরি বাহিনীর গুম খুন, লুঠপাট দুর্নীতি রুখতে গিয়ে ছাত্র জনতা কি আরেকটা অপশাসনের পথ সুগম করল? এরকম প্রশ্ন বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজে ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রশ্ন করা, কাঠগড়ায় দাঁড় করানো অনেক সহজ, কিন্তু এই আন্দোলনের স্পিরিটকে ধারণ করে হাসিনা পরবর্তী শাসনকে বুঝতে পারা তখনই কঠিন, যখন কিনা এই আন্দোলনের আবেগ আমার চিন্তাকে অন্ধ করে দিতে পারে।

বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ পতনের পর একটি 'ট্যাগিং' প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যেখানে সাংস্কৃতিক কর্মী এবং বুদ্ধিজীবীদের ওপর লক্ষ রাখা হচ্ছে যারা ফ্যাসিস্ট শাসনে সংযুক্ত ছিল। এই ব্যক্তিবর্গ এবং সংগঠনগুলোকে অভিযুক্ত করা হয়েছে বিদেশি সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর সাথে মিলিত হয়ে এমন এক আদর্শ প্রচারের জন্য, যা ওই শাসনের বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক ভিত্তি গড়ে তুলেছিল। এই সমালোচনা বিশেষভাবে তীব্র হয়েছিল ৫ অগস্টের রাজনৈতিক সংকটের পরে। তারা যে রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক আদর্শ সমর্থন করেছিল, তা অবশ্যই অবমাননাকর প্রমাণিত হয়েছে; তবে এমন লেবেলিং-এর দীর্ঘমেয়াদী পরিণতি নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।

যদিও এই ব্যক্তি ও গোষ্ঠীগুলোকে একঘরে করে ফেলা হয়েছে, তবু বিতর্ক রয়েছে যে তাদের কেবল অভিযুক্ত করেই কি একটি স্থিতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়ার সক্ষমতা অর্জন সম্ভব! এখানে চ্যালেঞ্জটি হল, তাদের অতীতের ফ্যাসিবাদে জড়িত থাকার বিষয়ে সঠিকভাবে বিচার করার সঙ্গে সঙ্গে একটি সম্ভাব্য নব্য ফ্যাসিস্ট মতাদর্শের বিকাশকে ঠেকানো। এমনতর গতিবিধি, যা পৃথিবীর বিভিন্ন ফ্যাসিবাদোত্তর সমাজে দেখা যায়, উদ্বেগ সৃষ্টি করে যে এক ধরনের কর্তৃত্ববাদকে প্রতিহত করতে গিয়ে অন্য কোনও ধরনের কর্তৃত্ববাদ আবার মাথা না তোলে। মূল প্রশ্ন, ঘৃণা এবং একঘরে করার কুচক্রে না জড়িয়ে একটি সমাজ কি সত্যিই এগোতে পারে? ঐক্য এবং স্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে?

ফ্যাসিবাদ পতনের পর পৃথিবীর অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায় যে, সমাজগুলো প্রায়শই অত্যাচারী শাসনের সমর্থনকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া চালায়। তবে এই প্রক্রিয়া অবশ্যই সাবধানে পরিচালিত হওয়া উচিত, যেন কোনও নতুন রূপে কর্তৃত্ববাদের পুনরুত্থান না ঘটে। এসব সমাজ থেকে প্রাপ্ত শিক্ষাগুলো দেখায় যে, জবাবদিহিতা এবং পুনর্মিলন প্রক্রিয়ার মধ্যে একটি ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে যাতে ভবিষ্যতে নব্য ফ্যাসিবাদ বা অন্যান্য চরমপন্থার বৃদ্ধি প্রতিরোধ করা যায়। আমরা জানি, পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ফ্যাসিবাদের পতন শুধুমাত্র রাজনৈতিক নেতাদের জন্য নয়, বরং যারা ফ্যাসিবাদী মতাদর্শের সাথে যুক্ত ছিল, সেইসব লেখক, কবি, বুদ্ধিজীবী ও চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্যও সুদূরপ্রসারী পরিণতি নিয়ে এসেছিল। ফ্যাসিবাদী শাসনগুলো ভেঙে পড়ার সাথে সাথে যারা একসময় এই সামরিক ব্যবস্থাগুলোকে সমর্থন করেছিল, তারা পেশাগত ভাবে একঘরে হওয়া থেকে শুরু করে ফৌজদারি বিচার পর্যন্ত বিভিন্ন মাত্রার প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হয়েছিল। তাদের উত্তরাধিকার ফ্যাসিবাদের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকার কারণে কলঙ্কিত হয়েছিল, যা তাদের কর্মজীবন, খ্যাতি এবং সামাজিক অবস্থানকে প্রভাবিত করেছে। ইউরোপে তাদের মধ্যে অনেককে ফ্যাসিবাদী শক্তির সাথে সহযোগিতার অভিযোগে বিচারের সম্মুখীন করা হয়েছিল, বিশেষ করে ফ্রান্স এবং ইতালির মতো দেশে, যেখানে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের শত্রুকে সহায়তা করা বা এমন মতাদর্শ প্রচার করার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছিল যা হলোকাস্ট ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো অত্যাচারের জন্য দায়ী ছিল।

ইতালি: ১৯৪৩ সালে মুসোলিনির শাসনের পতনের পর তার অনেক সমর্থককে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া বা কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। যারা প্রকাশ্যে ফ্যাসিবাদ সমর্থন করেছিলেন, যেমন কবি গ্যাব্রিয়েল ডি'আন্নুনজিও এবং এজরা পাউন্ড, তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ বিভিন্ন পরিণতির সম্মুখীন হয়েছিলেন। পাউন্ড একজন আমেরিকান কবি, যিনি মুসোলিনিকে সমর্থন করেছিলেন, তাঁকে মার্কিন সরকার গ্রেফতার করে।  

জার্মানি: যারা প্রথমে নাৎসিদের সমর্থন করেছিলেন, যেমন গটফ্রিড বেন, তাঁদের কাজ এবং খ্যাতি স্থায়ীভাবে কলঙ্কিত হয়ে যায়। নোবেল বিজয়ী ক্নুত হ্যামসুন, যিনি হিটলারের একজন শক্তিশালী সমর্থক ছিলেন, যুদ্ধের পরে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছিলেন এবং তাঁকে মানসিকভাবে অক্ষম বলে ঘোষণা করা হয়েছিল।

স্পেন: ফ্রাঙ্কোর শাসন ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত টিকে থাকায় অনেক বুদ্ধিজীবী যারা ফ্যাসিবাদী সরকারকে সমর্থন করেছিলেন তাঁরা ক্ষমতায় রয়ে গিয়েছিলেন। তবে ফ্রাঙ্কোর মৃত্যুর পর তাঁরা স্পেনের গণতান্ত্রিক উত্তরণের সময় ব্যাপক নিন্দা এবং প্রভাব হারানোর সম্মুখীন হন। 

ব্যক্তিগত ভাবে আমি নির্মোহ ভাবে বুঝতে চেষ্টা করছি, আসলে আমাদের দেশে এই যে কিছু অশান্তি ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশে, এর কারণ কী? আমি যখন এই লেখাটি লিখছি, সারা রাত আমার নির্ঘুম কেটেছে। গতকাল বাংলাদেশের অন্যতম বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তোফাজ্জল নামে একজন মানসিক প্রতিবন্ধী মানুষকে পেট পুরে ভাত খাইয়ে নির্মম ভাবে হত্যা করেছে! এই পাশবিকতা যখন সামাজিক মাধ্যমে দেখছি, স্রেফ নিজেকে একজন 'মেটামরফসিস' মনে হচ্ছে! কী হচ্ছে, কেন হচ্ছে, চারপাশে এমন এক অস্থিরতা, সবাই বলতে চায়, কিন্তু শুনতে কেউ চায় না! রাজধানীর হলগুলোতে প্রচুর জ্ঞানালাপ চলছে - সংবিধান সংস্কার না পুনর্লিখন? কীভাবে রাষ্ট্র সংস্কার করা যায়? সাংস্কৃতিক সংগঠন, চলচ্চিত্রকর্মী, নাট্যকর্মী, শিল্পকলায় বাছাই চলছে, আপনি ফ্যাসিবাদের পক্ষে না বিপক্ষে ছিলেন! ভিতরে ভিতরে এক একটা ক্ষুদ্র গোষ্ঠীতন্ত্র জাগ্রত হচ্ছে! তারাই মূলত বুদ্ধিবৃত্তিক সেমিনার করছে, আন্দোলনের বুদ্ধিবৃত্তিক মালিকানার দাবি করছে। ওদিকে আমার পাহাড়ে বাঙালি-আদিবাসী সংঘাত শুরু হয়েছে, পাহাড়ীদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, সামাজিক মাধ্যমে সেনাবাহিনীর নিগ্রহের চিত্র কিছু ছড়িয়ে পড়েছে, সেনাবাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য বিচারবিভাগীয় ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়ে একদলের সমর্থন আছে আবার অনেকেই ভুল পদক্ষেপ বলছে! কিন্তু এটা সত্য যে ৫ অগস্ট'এর পর অনেক পুলিশ সদস্য কাজে যোগদান করেনি। আবার এও অস্বীকার করার উপায় নেই যে, আন্দোলনের সময় পুলিশ বাহিনী ছাত্র জনতার উপর নির্মম আক্রমণ, শিশু-কিশোর, তরুণদের নির্মমভাবে হত্যা, স্নাইপার দিয়ে টার্গেট কিলিং, এমন কি ৫ তারিখ আশুলিয়াই'এ আন্দোলনকারী ছাত্রজনতার লাশ পুড়িয়ে ফেলার মতো নির্মম ঘটনাও ঘটিয়েছে। ৫ থেকে ৮ অগস্ট দেশে কার্যকর সরকার না থাকার সুযোগে একদল সুযোগ-সন্ধানী জনগণের সম্পত্তি লুঠপাট ও দখল করেছে। কতিপয় অংশ এটাকে রাজনৈতিক রং লাগালেও প্রশ্ন উঠেছে, রাজনীতি আর লুঠ কি এক জিনিস? আওয়ামী লীগ'এর নেতা-কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের প্রচারনা ছিল, তারা ক্ষমতা হারালে নাকি প্রায় ৭ লক্ষ মানুষ মারা যাবে, হিন্দু বাড়িঘর মন্দির সব পুড়িয়ে ফেলবে। কিন্তু হাসিনার পতনের পর কি এমন কিছু ঘটেছে? যে দুদিন কার্যত কোনও সরকার ছিল না, সেই দুদিন যে সব ভাঙচুর, হামলা হয়েছে, তার মধ্যে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ দৈনিক 'প্রথম আলো' লিখেছে, রাজনৈতিক সহিংসতায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ২ জন নিহত, ৫-২০ অগস্টের মধ্যে তাদের হাজারের কাছাকাছি সম্পদ আক্রান্ত; যদিও কিছু কিছু সংবাদকে এএফপি'র ফ্যাক্ট চেকার ভুল সংবাদ হিসেবে চিহ্নিত  করেছে।

এসব কিছুর পরেও আমরা ধরে নিই যে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা হয়েছে বেশ কিছু জায়গায়; যদিও অনেক ঘটনার থেকে ভিতরের ঘটনা ভিন্ন এই অর্থে যে, যতখানি না ধর্মীয় পরিচয়, তার থেকে বেশি রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে আক্রান্ত হতে হয়েছে। যদিও আমি মনে করি, যে ঘটনাগুলো ঘটেছে সেগুলো অবশ্যই অনভিপ্রেত, কিন্তু সেই সময় থেকে এই আন্দোলনকারী ছাত্রদের মধ্যে একটা অস্বীকারতন্ত্র চালু হল। ফলে, একটা সামাজিক বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন কীভাবে একটা রাজনৈতিক ও স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে পরিণতি পেল এবং এই পরিণতি যে সুদীর্ঘ এক সংগ্রামের ফসল, শুধুমাত্র এক মাসের লড়াইয়ের ফল না, সেটা এই আন্দোলনে জয়ী বুদ্ধিবৃত্তিক ছাত্ররা মনে হয় ভুলতে শুরু করেছে; মনে হচ্ছে, ছাত্ররা যেন জনতার সাথে আর রাজনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারছে না। জনতা ইনভিজিবল হয়ে যাচ্ছে। একইভাবে যে মাদ্রাসার ছাত্ররা মন্দির পাহারা দিচ্ছিল তারা সেখানে আবার নামাজ পর্যন্ত পড়েছে! ইসলামী রাজনৈতিক দল সংখ্যালঘুদের বলছে, যত খুশি মূর্তি বানান, আবার তাদেরই অন্য কোনও চিন্তাধারার সংঘবদ্ধ শক্তি মাজারগুলোতে হামলা চালাচ্ছে; গরিব, পাগল, সাধারণের আস্থার জায়গা মাজার আক্রান্ত হচ্ছে, অনেক মাজারের স্থাপনা গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ এই অবস্থায় রাষ্ট্র তার অবস্থান পরিষ্কার করছে না। কী অদ্ভুত দ্বৈত চরিত্র।

ড. ইউনুস এবং তাঁর উপদেষ্টা পরিষদের প্রতি মানুষের আস্থা আছে। তাঁর উপদেষ্টা চয়নের প্রতিও মানুষের সম্মতি আছে। এও বাস্তব, মাত্র দেড় মাসে গত ১৬ বছরের ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ও অর্থনীতির উন্নতি সাধন সম্ভব নয়। তবে মনে রাখতে হবে, এই সরকার কোনও রাজনৈতিক মতাদর্শিক সরকার নয়, এরা বাংলাদেশের সবচেয়ে বুর্জোয়া এলিট প্রতিনিধিত্বকারীদের সাথে ছাত্র প্রতিনিধিদের মিলিত সরকার। তাই, ছাত্রসমাজ এই আন্দোলনে দৃশ্যমান বি-রাজনৈতিক পরিচয়ে যুক্ত হলেও তারা বেশ কয়েকটা ক্ষুদ্র বুদ্ধিবৃত্তিক সংঘের প্রতিনিধিত্বকারী; সাথে দৃশ্যমান না হলেও আমলাতন্ত্র এবং সেনাবাহিনীরও একটা যোগ আছে, যেটা আসলে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। প্রশ্ন হচ্ছে, এই ছাত্র প্রতিনিধিদের রাজনীতি কী? 

ইতিমধ্যে একজন ছাত্র প্রতিনিধি-উপদেষ্টাকে মিডিয়া প্রশ্নবিদ্ধ করেছে 'মাস্টারমাইন্ড' শব্দে, যদিও এই শব্দ আপত্তিকর, কিন্তু বাংলাদেশের বড় অংশ মানুষ জানে না এদের রাজনীতি কী! এদের বি-রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে কি আরেকটা রাজনীতিকে প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া আছে? জনমনে প্রশ্ন, ১/১১'এর 'মাইনাস টু ফর্মুলা' যেটা ব্যর্থ হয়েছিল, সেই প্রক্রিয়া এখনও সক্রিয় কিনা! বলাই বাহুল্য, শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা তার দলের এবং বাঙালি জাতিবাদী চিন্তাশক্তির পরাজয় ঘটিয়েছে। বাঙালি জাতিবাদ আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দোহাই দিয়ে গুম খুন, লুঠপাটের সম্মতি স্থাপন মানুষ ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করেছে, আবার হাসিনার পতনের পর বিএনপি'র রাজনীতিকে খুব সুচতুর ভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। অথচ এই দলটি গণমুখি হয়ে উঠেছে গত ১৫ বছরে। একটা মতাদর্শ-বিরোধী রাজনৈতিক দল কীভাবে আস্তে আস্তে সংগ্রামের মাধ্যমে একটা গণমুখি দলের প্রক্রিয়ায় যুক্ত হচ্ছে, এটা অবশ্যই আলোচনার দাবি রাখে। দেখা যাচ্ছে, তাদের দলের ৩১ দফা যেটাকে  তারা 'রেইনবো নেশন' বলছে, তাদের সাথে যুক্ত হচ্ছে বেশ কিছু বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, আবার তারা ইসলামি দলগুলোর সাথে দূরত্বও রাখছে! কিন্তু কেমন যেন অনেকেই বলছে, অবাধ নির্বাচন হলে বিএনপি জিতে যাবে, এই ভয়ে হাসিনা কোনওদিন সুষ্ঠু ভোট হতে দেয়নি, আর বিএনপি'র সাথে জামাতের নাম জুড়ে বিএনপিকে ক্রুসিফাই করেছে। কিন্তু কেউ কেউ বলছে, এই ছাত্র সমন্বয়কেরাও বিএনপি'র রাজনীতিকে চ্যালেঞ্জ মনে করছে! 

এদিকে বামপন্থী প্রগতিবাদী সংস্কৃতিও প্রশ্নবিদ্ধ। বাঙালি সংস্কৃতির আড়ালে একটা পেটি বুর্জোয়া রাজনীতির পরিণতি হয়তো বাংলাদেশের বামপন্থার ইতিহাসে লেখা থাকবে। একজন ব্যক্তি মানুষের বক্তব্য ও জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে তাদের যে উদ্বেগ এবং আচরণ, তার আড়ালে রয়েছে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের অপচেষ্টা। আবার উর্দু ভাষীদের এক আয়োজনে জিন্নাহ'কে নিয়ে যে সাম্প্রতিক ঘোষণাটি শোনা গেল, সেটাকে সরকারের সিদ্ধান্ত বলে চালাবার চেষ্টা চলেছে। 

সব মিলিয়ে প্রশ্ন উঠছে, রাষ্ট্র কি এক অভিজাততন্ত্র থেকে আরেক অভিজাততন্ত্রের হাতে চলে যাচ্ছে? তবে নানা ধরনের কথাবার্তা, তর্কবিতর্ক ও মানুষের লড়াইও চলমান। ইতালির ফ্যাসিস্ট মুসোলিনি'র অনুসারী কবি এজরা পাউন্ড লিখেছিলেন, 'We are chained by our own stupidity.'।


No comments:

Post a Comment