Sunday, 27 March 2022

বই ফই

কে বলে বইই সব?

অর্ধেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়


সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস নেই। কোনওকালেই ছিল না। তাই বইপড়া-লোকজনকে সমাজ বেশ সমীহের চোখে দেখে। 

প্রায় সকলেই এ-ব্যাপারে একমত হবেন, যে-সব মানুষ নিয়মিত বই পড়েন তাঁরা অবশ্যই পণ্ডিত, চিন্তাক্ষম এবং বুদ্ধিমান শ্রেণির অন্তর্গত। সমাজে তাঁদের মতামতের একটা প্রভাব আছে। অর্থাৎ, বই সমাজের মধ্যে একটি কাঁটাতার বিছিয়ে তাকে দুটি ‘অসমান’ ভাগে ভাগ করতে পেরেছে। তবে এইখানে একটা গণ্ডগোলও আছে। সেই সব মানুষ যাঁরা কেবলই রহস্য রোমাঞ্চ ভূত কিংবা আদিরসাত্মক গল্পের বইপত্তর পড়েন, তাঁরা ঠিক সেই অর্থে কুলীন পদবাচ্য হন না। কিন্তু যাঁরা কঠিন-কঠিন প্রবন্ধ-টাইপ অথবা যে-কোনও বিষয়ে দার্শনিক কথাবার্তা লেখা বইয়ের প্রতি ঝোঁক দেখান তাঁদের স্তর হয় অবশ্যই উঁচুতে। বাকিরা যেন উহ্যভাবেই থেকে যান নিচুতে। সুতরাং, বই পড়ে যাঁরা শ্রেণিহীন সমাজ গঠনের স্বপ্ন দেখেছেন, তাঁরাই আসলে প্রথমেই নির্মাণ করেছেন বইয়ের দুনিয়ার অন্তরে আরেকটি অমোঘ শ্রেণি বিভক্ত (শ্রেণি মর্যাদার ভিত্তিতে) সমাজ। 

অথচ বই পড়া বা না-পড়ার সঙ্গে চিন্তার কোনও সম্পর্ক নেই। যদি থাকত তাহলে তো গুটেনবার্গের আগে কেউ চিন্তাই করতে পারেনি আর তারপরে সকলেই চিন্তাবিদ হয়ে গিয়েছেন বলে স্বীকার করে নিতে হয়। শ্রুতি ও স্মৃতিকে তো তাহলে প্রথমেই অস্বীকার করতে হয়। কোডেক্স হোক বা ট্যাবলেট অথবা পুঁথি– সেখানে যে-চিন্তাজগতের সাক্ষ্য পাওয়া যায় তার বাইরেও তো অস্তিত্ব ছিল/আছে জগতের চিন্তার এক বিরাট-বিশাল প্রবাহের। সেই অসীম-প্রবাহ থেকে গৃহীত কয়েকটি সসীম-তরঙ্গকণার লিখিত রূপই হল গ্রন্থ। অর্থাৎ, চিন্তাই হল মূল– আর তাকে চিরস্থায়ী করার একটি উপায় হল লিপি। একইসঙ্গে এও বলা যায় যে, শুধু লিপি কেন, কৃষিকাজ-পশুপালন-ছবি-সঙ্গীত-নৃত্য ইত্যাদি সবই চিন্তার সেই বিপুল লহরি থেকে উঠে আসা জনমনের মন্থনে জারিত সংস্কৃতিরই প্রকাশ। সংস্কৃতি শুধু বইয়ের পাতাতেই আটকে থাকে না, অর্থাৎ, বই পড়েই কেবল সংস্কৃতিমনস্ক হয় না কেউ। তা হল জীবনযাপনের অঙ্গ। 

‘সংস্কৃতি’- যার অর্থ হল নতুন চিন্তার দ্বারা পুরনোর উৎকর্ষ সাধন বা সংস্কার করা অথবা একেবারে আনকোরা চিন্তাকেই জনসমক্ষে উদঘাটন করে মানবসমাজকে প্রগতির পথে ঠেলা দেওয়া। দুনিয়ার প্রত্যেকটি মানুষ একই বিষয়কে ভিন্নভাবে অথবা এক বা একাধিন নতুন বিষয়কেই সমাজের সামনে উন্মুক্ত করতে সক্ষম। এর ফলেই চিন্তাজগতে জগতের চিন্তার ভ্যারিয়েসনে গড়ে ওঠে জনসংস্কৃতি (এ-প্রসঙ্গে কলিম খানের ‘জ্ঞানের জগৎ ও জগতের জ্ঞান’ বিশেষ নজরটান)। তাহলে কেন বইপড়া ও শিল্প-করা লোকজনই কেবল সমাজের ‘বিশিষ্ট’ গোত্রভুক্ত হন, বাকিরা হন না?

আসলে চিন্তার ভ্যারিয়েসন শাসকের রাষ্ট্র শাসনের ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায়। জনসমাজ যদি দু-একটি চিন্তার দ্বারা মোহিত হয়ে অভিন্নতার সূত্রে গ্রথিত হয় তবেই তাকে সুনিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আর তাই দুনিয়াতে ধর্মগ্রন্থের প্রণয়ন হয়েছিল। যারা সেখানে অন্য-অন্য ধর্মের কথা বলেছিল সেখানে শুরু হয়েছিল বিবাদ। আজও তা নিরবচ্ছিন্নভাবে চলছে। তবে তাতে চিন্তাস্রোত থেমে থাকেনি। ধর্ম ও তার বাইরেও নানা ভাবে নানা দেশে চিন্তার আত্মপ্রকাশ হয়েছিল। এইভাবেই মোটামুটি চলেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কাল অবধি। কিন্তু তারপরে দেখা গিয়েছিল এক অন্য সুর। চিন্তাকে বাঁধার অভিনব সব পন্থা। কেন না, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ মানুষকে বুঝিয়ে দিয়েছিল, গণতন্ত্রের যুগে প্রযুক্তিই হল এমন এক বিষয় যার দ্বারা চিন্তাকেও নির্দিষ্ট অভিমুখে নিয়ন্ত্রণ করে বিশ্বে একাধিপত্য কায়েম রাখা যায়। তাই শাসক প্রথমেই সমগ্র বিশ্বের মানুষকে কয়েকটি চিন্তার মধ্যেই আবদ্ধ রাখার ছক কষেছিল। বইয়ের ক্ষেত্রে যেমন গতানুগতিকতাকে প্রাধান্য দিয়েছিল, তেমনই নাচ-গান-সিনেমা-ছবি সর্বত্র একীকরণ (sameness) করার চেষ্টা শুরু করেছিল। 

কথায় বলে, 'স্বদেশে পূজ্যতে রাজা, বিদ্বান সর্বত্র পূজ্যতে'। কিন্তু বিনয় ঘোষ স্পষ্টতই এর মধ্যকার মূল ত্রুটিটি দেখিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, 'ইতিহাসে দেখা যায়, স্বদেশে পূজিত হন রাজা এবং বিদ্বান প্রথমে রাজার পূজা করে পরে দেশপূজ্য হন।' সত্যিই তো সাধারণের কি সে-ক্ষমতা আছে যে সে নিজে থেকে কাউকে পূজাযোগ্য মনে করতে পারে? একেবারেই না। আবার রাজাও কি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, কাকে সম্মানিত করা হবে আর কাকে হবে না? পারেন না। আর তাইই রাজা নিজের স্বার্থরক্ষাকারী ও স্বার্থহানিকর নয় এমন পণ্ডিত সমাজকে পুষে থাকেন। সেই পণ্ডিত সমাজই বলে দেয় কোন চিন্তা সমাজের গ্রহণ করা উচিত আর কোনটা নয়। সেটাকেই রাজা ঢেঁড়া পিটিয়ে বিজ্ঞাপনের দ্বারা শ্রেষ্ঠ চিন্তা, শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ বলে বারেবারে প্রচার করেন। পুরস্কৃত করেন। আর বাকিগুলিকে চেপে দেওয়া হয়। এইভাবেই সমাজে প্রথমে বই পড়া লোকজনকে ‘এলিট’ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করে উঁচুতে স্থান দিয়ে বাকি অংশকে নিয়ন্ত্রণের অঙ্ক কষা হয়। বলা হতে থাকে, এঁরাই সবচেয়ে বেশি বোঝেন, এঁদের কথাকে শিরোধার্য করাই সকলের কর্তব্য।

লক্ষ করবেন, ‘চেপে দেওয়া হয়’ বলেছি, এ-কথা বলিনি যে প্রকাশই করতে দেওয়া হয় না। ‘চেপে দেওয়া’ অর্থাৎ বিকল্প চিন্তার বিপ্রতীপে শাসকের পক্ষে যা মঙ্গলময় কেবল তারই ডঙ্কা সজোরে বাজানো ও বাজাতেই থাকা। একই প্রকারের সংস্কৃতির দ্বারা জনমনকে আচ্ছন্ন রাখা– সত্যজিৎ রায় যাকে ‘মগজধোলাই’ বলে দেখিয়েছিলেন। এ-প্রসঙ্গে দুজনের নাম মনে পড়ছে– একজন থিওডোর আডোর্নো ও অন্যজন ম্যাক্স হোরখেইমার। তাঁদের বিখ্যাত বই ‘ডায়ালেকটিক অফ এনলাইটেনমেন্ট’-এর তিন নম্বর অধ্যায় যার শিরোনাম– ‘দ্য কালচার ইন্ডাস্ট্রি: এনলাইটেনমেন্ট অ্যাজ মাস ডিসেপশন’। সেখানে তাঁরা বিস্তারিত ভাবেই ‘ফোক কালচার’কে খাটো ও গুরুত্বহীন করে রেখে ‘মাস কালচার’এর উৎপাদন ও ‘পপুলার কালচার’এর ব্যাপ্তির সমীকরণগুলিকে ব্যাখ্যা করে দেখিয়েছেন, কীভাবে ধনতান্ত্রিক সমাজ নিজেদের প্রভুত্ব বজায় রাখতে মিডিয়াকে (টিভি, রেডিও ও নিউজপেপার-ম্যাগাজিন) ব্যবহার করে ‘এনটারটেইনমেন্ট’-এর নাম করে জনমস্তিষ্কে অভিন্ন রুচির ধারণাটিকে প্রোথিত করেছে। যারা এর বাইরে থেকেছে, হয় তাদের পাত্তা দেয়নি অথবা বলেছে প্রতিক্রিয়াশীল কিংবা সন্ত্রাসবাদী। মনে রাখা দরকার যে, বই (কিংবা ছবি-নাচ-নাটক-সিনেমা) যদি কেবলই জ্ঞানচক্ষু উন্মীলনের নিমিত্তে নির্মিত হত তাহলে সময়ে-সময়ে সেখানে শাসকদের তরফে ‘ব্যান’ লাগু হত না। সামান্য বই থেকে শাসকের কীসের ভয়? আসলে বই শুধুমাত্র সাদা পাতায় লেখা কালো অক্ষরমালা নয়– তা চিন্তার অস্ত্রও বটে। শাসক সেই অস্ত্রকেই নিজের পক্ষে ব্যবহার করতে চায়– পাঠক্রম তৈরি করেই হোক অথবা নিজের বিপদের আশঙ্কাহীন সৃষ্টি-কৃষ্টির পৃষ্ঠপোষকতা করেই হোক যাতে ‘ব্যান’ করে জনগণের চক্ষুশূল হওয়াও আটকানো যায়। 

বাংলার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছিল। ভারতের স্বাধীনতা ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যেহেতু প্রায় একই দশকের ঘটনা তাই এর প্রভাব এখানেও এসে লেগেছিল। এখানেও বাহুবলের পাশাপাশি রাষ্ট্রের অন্যতম আয়ুধ হয়েছিল বই। পশ্চিমি ধাঁচে এ-দেশেও সৃষ্টি করা হয়েছিল আকাডেমিক স্কলাস্টিসিজমকে। এই আকাডেমিক স্কলাস্টিসিজমকেই ধীরে-ধীরে ইন্টেলেকচুয়ালিটি বলে প্রচার করে বাংলার চিন্তাশক্তিকে অভিন্ন ধারায় ধাবিত করার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। অথচ বিনয় ঘোষ স্পষ্টাস্পষ্টি দেখিয়েছেন যে, জ্ঞানতপস্বীরা (স্কলার) বিদ্বৎজন (ইন্টেলেকচুয়াল) হতেও পারেন আবার নাও হতে পারেন। তিনি ‘বাংলার বিদ্বৎসমাজ’ বইতে লিখেছেন, 'অধীত ও অর্জিত বিদ্যা নিয়ে ‘স্কলার’ হওয়া যায়, ‘ইন্টেলেকচ্যুয়াল’ হওয়া যায় না। পুরোহিতের গুণ থাকা চাই, পুরোহিতের কর্তব্য করা চাই, তবে বিদ্বৎজন হওয়া সম্ভব।' এই পুরোহিতের কাজ কী? তা হল, সাধারণ মানুষের মন ও মননকে নিয়ে কাজ করে সমাজের চিন্তাকে প্রগতির পথে প্রভাবিত করা। উল্লিখিত এই 'চিন্তার উদ্রেক হয় প্রত্যক্ষ জীবনসংগ্রাম থেকে।' জীবনসংগ্রাম কেবল জীবিকা-সংগ্রাম নয়, এ কথা মনে রাখা দরকার। জীবন ও সমাজের ঘাত-প্রতিঘাতে চিন্তাতরঙ্গের সৃষ্টি হয়। ম্যানহাইম বলেছেন, ‘স্কলাস্টিক’ চিন্তা এরকম কোনও জীবন সমস্যার প্রত্যক্ষ ঘাত-প্রতিঘাত থেকে সৃষ্টি হয় না। সমাজ-জীবন থেকে সে-চিন্তা ক্রমে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, এমনকি প্রাকৃতিক জীবন থেকেও।'

এতদিন পরে যেন বিনয়বাবুর কথার প্রভাব একুশ শতকের বাংলায় দেখা যাচ্ছে। এই নতুন যুগে আগের পন্থায় মানুষের ওপরে আর নিয়ন্ত্রণ রাখা যাচ্ছে না। দড়ি আলগা হচ্ছে। স্কলার বা বিশিষ্টদের সঙ্গে সাধারণজনের ক্রমশ বিচ্ছিন্নতা বাড়ছে। এতদিন ধরে কিছু আকাডেমিক স্কলারকে শাসকশ্রেণি মাথায় তুলে নেচেছিল ও প্রাকৃতজনকে সেই ছাঁচে ফেলে দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করেছিল। চিন্তাশীলতার মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছিল। যার প্রমাণ বইমেলার সর্বত্র একই ধারার পুরনো চিন্তার (সেই উনিশ শতক, দেশভাগ, দাঙ্গা, নকশালবাড়ি, গ্রামশি, আলথুসার ইত্যাদি) বিপুল বই প্রকাশের মধ্যে দেখা যায়। কিন্তু ইন্টারনেটের যুগে এইখানে একটি বিপত্তি দেখা দিয়েছে। তথাকথিত বইপড়া ‘এলিট’-দের আর কোনও প্রভাবই সমাজে দেখা যাচ্ছে না। আকাডেমিক কচকচি ভরা বই বিক্রি কমছে। ফলে তাঁদের বাজার দরেও পড়তি। 

রাজনেতৃবর্গও ভোটের প্রচারে এঁদের না ডেকে ভুবন বাদ্যকরদের ডাকছেন। ফলে, এতদিনের ক্ষমতাভোগ করা এইসব ‘এলিট’রা এখন সেই পুরনো মাঠটিকে যেন আরও জোরে মুষ্ঠিগত করতে চাইছেন যাতে সমাজের উঁচুতে থেকে যাওয়া যায়। কিন্তু সমাজ বালির মতোই পিছলে যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে যে, অনেক সঙ্গীতশিল্পী সঙ্গীতজীবনের প্রথমভাগেই নতুন গান রচনার চেয়ে বই লেখাতে মন দিয়েছেন। কবিতা পড়ছেন, ফেসবুকে মাছরান্নার ছবি দিচ্ছেন। চলচ্চিত্রকারেরা বইমেলায় জনসংযোগের উদ্দেশ্যে এলোমেলো ঘুরছেন। বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই উন্নাসিকতা ও অবোধ্য পুরাতনী ভাষা ছেড়ে আমজনতার ভাষায় ফিরছেন। হাফ-দরজা খোলা পণ্ডিত ও নাট্য গবেষকরা পপুলার রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনাসভাতেও যেতে আর বিশেষ আপত্তি দেখাচ্ছেন না। আসলে সকলেই আবার যেনতেন প্রকারেণ নিজেদের কল্কে ফিরে পেতে চাইছেন। আজ ইন্টারনেটের সৌজন্যে যে-সব সাধারণজনেরা নিজেদের ভাষ্যে উঠে আসছেন, এরা আর সেগুলিকে ‘লো কালচার’ বলে দাগিয়ে দিয়ে নিজেদের কূল রক্ষা করতে পারছেন না। বং-গাই আকাশ ব্যানার্জী, ধ্রুব রাঠি অথবা কুণাল কাম্রা'রা গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে ও আনকোরা ‘কন্টেন্ট’কে সম্বল করে উঠে আসছেন। এখানে তথাকথিত বইপত্তর পড়ে ‘এলিট’ হওয়ার ধারণা প্রায় মূল্যহীন হয়ে পড়েছে। সমাজে আবারও চিন্তাই মূল নিয়ন্ত্রক হয়ে দেখা দিয়েছে। কিছু ক্যাঅস হচ্ছে ঠিকই কিন্তু ভ্যারিয়েসন বাড়লে তো সেটাই হবার কথা, তাই না! প্রাদেশিক ভাষা ও গাঁ-গঞ্জের সংস্কৃতিও আমাজনের মতো নানা প্ল্যাটফর্মে জায়গা করে নিচ্ছে।

এখন আধুনিক, যুগোপযোগী ও নতুন চিন্তার দাপট ক্রমশ বাড়ছে। ‘ট্রেন্ড’ রোজ বদলে যাচ্ছে। এখানে বই যে মানুষকে পড়তেই হবে এমনটা আর নয়। বই না পড়েই তো মানুষ কৃষিকাজ শিখেছিল, চাকা আবিষ্কার করেছিল, গান গেয়েছিল, ছবি এঁকেছিল। বই- বাংলায় যা মাত্র উনিশ শতকের একটি ফেনোমেনন মাত্র- তার আগেও যেমন চিন্তা ছিল, এখনও আছে। মুক্তচিন্তা ও বাস্তবের মাটিকে ভিত্তি করে যা আগামীর দুনিয়াদারিতে মানুষকে লড়াই করার শক্তি ও পুষ্টি দেবে সেটাই হবে গণসংস্কৃতি। বই পড়ে আগেও বিপ্লব হয়নি, হবেও না। মানুষের কাছে যে-কোনও মাধ্যমেই যদি নতুন চিন্তার স্রোতকে পৌঁছে দেওয়া যায় ও মানুষ তার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আগামীকে নির্মাণ করতে সক্ষমতা অর্জন করে তবে সেটাই হবে বিপ্লবের পরাকাষ্ঠা। 

পুরাতনী চিন্তার বইপড়া লোকজন এই নতুন দুনিয়ায় ব্রাত্য। নতুন চিন্তাই শাসন করবে আগামীকে, ফ্যাতাড়ুর বুদ্ধিমত্তাই হবে শাসনের মানদণ্ড। মনে হচ্ছে, বইয়ের বাইরে এসেই আগামী দিন যেন প্রকৃত শ্রেণিহীন সমাজ গঠনের তাল ঠুকছে। বইয়ের কাঁটাতার ভেঙে পড়ছে।


5 comments:

  1. খূব ভালো লেখা।
    নানান দিক উন্মোচিত।
    শ্রেণি ধারণাটি অনবদ্য।
    ধন্যবাদ ।

    ReplyDelete
  2. আমার সুযোগ হয়েছিল দীপান্জন রায় চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ হওয়ার। তিনি ম্যাথামেটিক্স ফর মিলিয়ন এন্ড সাইন্স ফর সিটিজেন বই দুটি আমাকে পাঠ করতে অনুরোধ করেছিলেন। বই দুটির লেখক হেলডেন সাহেব। বিজ্ঞান আদতে তথাকথিত অশিক্ষিত মানুষের প্রত্যেকদিনের অভিজ্ঞতার ফসল। তাই একথা সত্যি শিক্ষা শ্রেণি ভেদ করে।

    ReplyDelete
  3. বেশ ভালো লেখা, অন্য ধরণের নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা । ♥️👌🏼

    ReplyDelete
  4. খুব ভালো লেখা। আন্তর্জালে বাংলা লেখার প্রচারে বহুদিন বই-র এই সব সীমার কথা বলছিলাম।

    ReplyDelete
  5. সম্ভবত বইবিহীন মুক্ত চিন্তার দুনিয়া এখনও কিছু দূরে। নানুষে মানুষে অবাধ সাম্য সম্ভবত প্রতিষ্ঠা সম্ভব না। সাম্যের কচকচিটি কি আসলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্ষমতাহীনের ক্ষমতালাভের জন্য একটি ভাট প্রকল্প নয়? দৈহিক এবং মানসিক শক্তি মানুষে মানুষে আলাদা থেকে যাবে বলেই মনে হয়।

    ReplyDelete