Sunday, 6 March 2022

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কি দীর্ঘস্থায়ী হবে?

‘তোরা যুদ্ধ করে করবি কী তা বল’

সোমনাথ গুহ

 

রাশিয়া সাময়িক যুদ্ধবিরতি (?) ঘোষণা করেছে। দুটি শহর মারিউপোল ও ভোলনোভাখায় নাগরিকদের উদ্ধার করার জন্য তারা মানবিক করিডর খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই দুটি শহরই অবরুদ্ধ। রুশ সেনা শহর দুটিকে ঘিরে রেখেছে এবং প্রবল ঠাণ্ডার মধ্যে জল, বিদ্যুৎ, খাদ্য, যানবাহন বন্ধ করে দিয়েছে। যুদ্ধবিরতি শুধুমাত্র এই দুটি শহরের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য এবং সেটা কত সময়ের জন্য তা এখনও পরিষ্কার নয়। ইউক্রেনের অন্যত্র রুশ বাহিনীর তাণ্ডব অব্যাহত। তবুও প্রায় দু' সপ্তাহের এই যুদ্ধে এটা একটা কিঞ্চিৎ আশার আলো (যদিও পরবর্তী খবরে প্রকাশ, নিজেদের যুদ্ধবিরতির ঘোষণাকে লঙ্ঘন করে রুশ বাহিনী আবারও ওই দুটি শহরের ওপর আক্রমণ হেনেছে)। 

জারের আমল থেকে ইউক্রেন রাশিয়ার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিল। ইউক্রেনের প্রতি ছজন মানুষের মধ্যে একজন রুশ, প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন রুশ ভাষায় কথা বলেন। রুশ সাহিত্যে ক্রাইমিয়া, ওডেসা, কিয়েভের আকছার উল্লেখ আছে। আইজাক বাবেলের সাহিত্যে ওডেসা অঞ্চলের গ্যাংস্টারদের দৌরাত্ম্য এখনও শিহরিত করে। এর অর্থ এই নয় যে পুতিনের আদেশে দেশটাকে চলতে হবে, নচেৎ সেটাকে বোমা মেরে গুঁড়িয়ে দেবে। প্রথমেই বলে রাখা দরকার, ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার এই হামলা কোনওমতেই সমর্থনযোগ্য নয়, তাতে ন্যাটোর যত প্ররোচনাই থাকুক না কেন। এরপর বলতে হয় যে, এটা এমন একটা যুদ্ধ যেখানে পরিষ্কার কোনও একটি পক্ষ নেওয়া সম্ভব নয়। এটা ঠাণ্ডা যুদ্ধের অবশেষ, তিন দশক আগে যে যুদ্ধ শেষ হয়েও হয়নি। যদি শেষ হত তাহলে ১৯৯১ সালে যখন 'ওয়ারশ চুক্তি' বিলোপ করে দেওয়া হল তখন একই সাথে ন্যাটোকেও ভেঙে দেওয়া প্রয়োজন ছিল। তা না করে গত তিরিশ বছর ধরে ন্যাটো ইরাক থেকে ইয়েমেন, আফগানিস্তান থেকে লিবিয়া সমস্ত যুদ্ধে মার্কিনিদের সম্পূর্ণ মদত তো দিয়েইছে, একই সাথে প্রায় নিঃশব্দে পূর্ব ইউরোপে বিগত সোভিয়েত ইউনিয়নের মিত্র দেশগুলিকে এক এক করে নিজেদের সদস্য বানিয়ে রাশিয়াকে প্রায় ঘিরে ফেলেছে। এই একবিংশ শতাব্দীতেও ন্যাটোর অস্তিত্বই প্রমাণ করে যে ঠাণ্ডা যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়নি।  

তিরিশ বছর আগে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর বিশ্ব রাজনীতিতে মহাপরাক্রমশালী বৃহৎ শক্তি হিসাবে দেশটির যে মর্যাদা ছিল তা ক্ষুণ্ণ হয়েছে। গর্বাচেভকে রোনাল্ড রেগান নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরিয়েছে, বরিস ইয়েলতসিন'এর আমলে ইঙ্গ-মার্কিন জোট রুশ সরকারের ওপর ছড়ি ঘুরিয়েছে। কিন্তু রাশিয়া এমন একটা দেশ যা যে কোনও সংকটের পর বারবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে; রাশিয়া এমন একটা দেশ যা পশ্চিমের কাছে মাথা নত করেনি; আবার একই সাথে রাশিয়া এমন একটা দেশ যেখানে স্বৈরতন্ত্র, প্রবল দমনপীড়নমূলক একনায়কতন্ত্র বারবার মাথাচাড়া দিয়েছে, সে ইভান দ্য টেরিবল থেকে আজকের ভ্লাদিমির পুতিন পর্যন্ত। 

রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে মর্যাদাহানি হওয়া সত্ত্বেও সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পরেও রাশিয়ার সামরিক শক্তি, পরমাণু অস্ত্রসম্ভার প্রায় অটুট ছিল। এর ফলে এই সম্ভাবনাটা ছিলই যে সময় হলে দেশটা আবার সমীহ জাগানোর মতো একটা শক্তিতে পরিণত হতে পারে। ২০০০ সাল পর্যন্ত দেশটা মোটামুটি একটা অলিগার্কের হস্তগত ছিল কিন্তু পুতিন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে নির্মম ভাবে সমস্ত প্রতিদ্বন্দ্বীদের ছেঁটে ফেলেন এবং পুরোপুরি একনায়কত্ব কায়েম করেন। তাঁর লৌহদৃঢ় শাসনে বিরোধীদের অপহরণ করা হয়, বিষ প্রয়োগ করে বা অন্য পন্থায় গুপ্তহত্যা করা হয়, বিনা বিচারে আটকে রাখা হয়, যেন তেন প্রকারে দমন করা হয়। পুতিনের রাশিয়ায় বিরোধী দল প্রায় নেই, এমনকি রুশ কম্যুনিস্ট পার্টি, ফ্যাসিস্ট এবং নয়া-নাৎসিদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য ইউক্রেনে সামরিক অভিযানকে সমর্থন করেছে। 

যুদ্ধের বিরোধিতা করছে সাধারণ কিছু অকুতোভয় মানুষ আর নাছোড় কিছু মিডিয়া। স্বাধীন মিডিয়া ভয়ঙ্কর চাপে। অতীতে সরকার বিরোধী রিপোর্টিং করার জন্য রুশ দৈনিক 'নোভায়া গেজেটা'র ছজন সাংবাদিক খুন হয়ে গেছেন। ইতিমধ্যেই টিভি রেন চ্যানেল ও একো মোস্কভি রেডিও স্টেশন যুদ্ধবিরোধী প্রচার চালানোর জন্য তাদের সম্প্রচার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। 'নোভায়া গেজেটা'র সম্পাদক নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী দিমিত্রি মুরাতভ এখনও লড়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেছেন, আমরা যুদ্ধকে যুদ্ধই বলব, আমরা ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করি। পুতিন নতুন একটা আইনে সই করেছেন যাতে ভুয়ো খবর ছড়ানোর জন্য পনেরো বছরের জেল হতে পারে। নতুন সব নিষেধাজ্ঞার কারণে মুরাতভ যুদ্ধের ওপর যাবতীয় লেখা তাঁদের ওয়েবসাইট থেকে মুছে দিয়েছেন। আতঙ্কে বহু বিদেশি সাংবাদিক দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। 

ঠিক আট বছর আগে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনে ‘রেভলিউশন অফ ডিগনিটি’ ঘটে। নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাথে বাণিজ্য চুক্তি করতে অস্বীকার করেন যদিও ইউক্রেনের সংসদ তার পক্ষে ছিল। মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েন। দেশ জুড়ে বিক্ষোভ আন্দোলন শুরু হয়ে যায়, অন্তত দুশো জন মারা যান। কিভ বিদ্রোহীদের দখলে চলে যায়। ইয়ানুকোভিচ ক্ষমতাচ্যুত হন এবং দেশ ছেড়ে পলায়ন করেন। তিনি রাশিয়ার সাহায্য চান। রাশিয়া এই অভ্যুত্থানকে বেআইনি বলে এবং পাল্টা আঘাত করে ক্রাইমিয়া দখল করে এবং রুশ অধ্যুষিত দনবাস অঞ্চলে দনেস্ক এবং লুহান্সক নামে দুটি পৃথক স্বতন্ত্র এলাকা তৈরি করতে সাহায্য করে। 

সেই থেকে ন্যাটো ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য হওয়া নিয়ে ইউক্রেনের সাথে রাশিয়ার টানাপোড়েন চলছে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেন্সকি তাঁর নির্বাচনী প্রচারে এই দুটি সংগঠনের সদস্য হওয়ার পক্ষে প্রচার করেছিলেন। ২০২৪'এর মধ্যে ন্যাটোর সদস্য হওয়ার তাঁর পরিকল্পনা আছে। ফেব্রুয়ারিতে তিনি ইইউ'র সদস্যপদের জন্য আবেদন করেছেন। তিনি ইউক্রেনকে রাশিয়ার ‘younger sister’ হিসাবে দেখতে রাজি নন। তিনি চান, তাঁর দেশ এক স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসাবে বিশ্বের দরবারে স্থান পাক। এই কারণে তিনি রাশিয়ার চক্ষুশূল। রাশিয়া চায় ইউক্রেন বেলারুশের মতো তাদের একটা আজ্ঞাবহ দেশ হোক, নিদেনপক্ষে নিরপেক্ষ থাকুক। পুতিন মনে করেন, ২০১৪'র অভ্যুত্থানে আমেরিকার হাত ছিল। এছাড়া জেলেন্সকির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ হল যে, দনবাসের রুশ জনগণের ওপরে ইউক্রেন সেনা লাগাতার অভিযান চালিয়েছে যাতে প্রচুর সাধারণ নাগরিক মারা গেছেন। 

ন্যাটোর ভূমিকা অনেকটা নারদের মতো। রাশিয়ার বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর তাদের চিরকালের লোভ। চিনের সাথে রাশিয়ার ঘনিষ্টতা তাদের চিন্তার কারণ। ইউরোপের বাকি দেশগুলির মতো পুতিন মাক্রঁ বা বরিস জনসনকে পাত্তা দেয় না। পুরো মহাদেশে দাদাগিরিতে পুতিন একটা বাধা। সুযোগ পেলেই তাই তারা পুতিনকে একটু কড়কে দিতে চায়। তারা জেলেন্সকিকে ক্রমাগত ইইউ বা ন্যাটোর সদস্য হওয়ার জন্য উসকে গেছে, যদিও তারা জানে যে এতে রাশিয়ার সাথে সংঘাতে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। জেলেন্সকি আশা করেছিলেন, যুদ্ধ হলে ন্যাটো তাঁর পাশে দাঁড়াবে। কিন্তু সে গুড়ে বালি! রাশিয়ার ওপর কিছু নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে তারা খালাস। নিষেধাজ্ঞাগুলি কঠোর কিন্তু সেগুলি কাজে দিতে সময় লাগবে। আর পুঁচকে কিউবা ৬০ বছর আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও টিকে আছে, রাশিয়া পারবে না! ন্যাটো সৈন্য পাঠানো তো দূরের কথা, অস্ত্রশস্ত্রও সেরকম কিছু দেয়নি। এমনকি ইউক্রেনের আকাশকে নো-ফ্লাই জোন ঘোষণা করতে অস্বীকার করেছে কারণ এতে যুদ্ধ মহাদেশে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা আছে। অর্থাৎ, তুমি লড়ে যাও, আমরা তোমার পিছনে আছি। নৈতিক সমর্থন এবং রাষ্ট্রপুঞ্জে বাগাড়ম্বর ছাড়া ন্যাটো খুব বেশি এগোবে বলে মনে হয় না।   

রাশিয়া ভেবেছিল ঝটিকা আক্রমণ করে ইউক্রেনকে মাত করে দেবে। এতটা প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হবে, তা তারা ভাবেনি। রাশিয়া আত্মরক্ষাকারী দেশ হিসাবে যতটা পটু, আক্রমণকারী দেশ হিসাবে তত দক্ষ নয়। মোঙ্গল বাহিনী, নেপোলিয়ন থেকে নাৎসিরা কেউই রাশিয়ার রক্ষণ ভেদ করতে পারেনি। উল্টো দিকে ১৯৩৯ সালে দুর্বল, অসামরিক ফিনল্যান্ডকে আক্রমণ করে হিমশিম খেয়ে কোনওরকমে তিন মাস বাদে একটা শান্তি চুক্তি করে পার পেয়েছিল। বলা হয়, রুশ বাহিনীর এই ল্যাজেগোবরে অবস্থা দেখেই হিটলার রাশিয়া আক্রমণ করার সাহস পেয়েছিলেন। আফগানিস্তানেও তারা কীভাবে হেনস্থা হয়েছে তা আমরা দেখেছি। 

পুতিন ইউক্রেনে নিজেদের পুতুল সরকার স্থাপন করতে বদ্ধপরিকর, সে ক্ষেত্রে যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে। এতে ইউক্রেন তো ধ্বংস হবেই, রাশিয়াও দুর্বল হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। ইউক্রেন'এর নিরপেক্ষ থাকা উচিত- রাশিয়া ন্যাটো উভয়কেই সেখানে খবরদারি বন্ধ করতে হবে। ক্রাইমিয়া এবং দনবাস অঞ্চলে রাষ্ট্রপুঞ্জের নজরদারিতে গণভোট করা উচিত- তারা কোন পক্ষে যাবে তা সেখানকার মানুষই ঠিক করুক। 


4 comments:

  1. বেশ।ভাল বিশ্লেষণ।দেখা যাক ভবিষ্যত কি বলে।
    কিন্তু এখানে আনর্জাতিক অস্ত্র ব্যাবসায়ি জোটের যথেষ্ট ভূমিকা থাকার ও সম্ভাবনা রয়েছে যারা ঘোলা জলেই মাছ ধরে থাকে।

    ReplyDelete
  2. জেলেন্সকি ক্ষমতা না ছাড়লে ধ্বংস হবে ইউক্রেন।
    ন্যাটোকে কোন ভাবে ইউক্রেনে ঢুকতে দেওয়া মানেই পরমানু যুদ্ধ। লেখাটি ঠিকই আছে।

    ReplyDelete
  3. পৃথিবীতে এমন মানুষ পাওয়া যাবে তারা নিজেদের স্বার্থের জন্য কিছু করেন নি। কিন্তু এমন দেশ ইতিহাস ঢুঁড়ে পাওয়া যাবে না যে নিজের স্বার্থ দেখে না। এখনো পর্যন্ত মানবসমাজ এর বেশি এগোতে পারে নি। প্রশ্নটা হলো ইউক্রেন কি তার স্বার্থ ঠিকভাবে দেখতে পেরেছে? আমেরিকা, রাশিয়া বা ন্যাটো কি করেছে তা নিয়ে অনেক লেখা পড়লাম। কিন্তু ইউক্রেনের চিন্তা ভাবনায় কোথায় খামতি ছিলো, সেই লেখা বাংলায় পড়ার সুযোগ আমার হয়নি। দ্বিতীয় ব্যাপার হচ্ছে, কিভাবে ভারত এই অবস্থায় তার বৈদেশিক নীতি পরিচালনা করবে। সেটা আমাদের কাছে আরও গুরুত্বপূর্ণ।

    ReplyDelete
  4. খুবিই পরিস্কার ও যুক্তিসংগত লেখা। বস্তুত সোমনাথের লেখাগুলো সবসময় এইরকমই হয়। খুবিই কমিটেড মনোভাব থাকলেই এমন ঝরঝরে লেখা বেরিয়ে আসে। এই ছোট্ট পরিসরে প্রয়োজনীয় প্রায় সব মৌলিক প্রেক্ষাপটগুলো এখানে কত সহজ মুন্সিয়ানায় পরিবেশন করা হয়েছে তা বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয়। সোমনাথের এই লেখার সঙ্গে সহমত হয়েই আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলির উল্লেখের প্রয়োজনীয়তা এসে যায়:-- ১) ইউক্রেনের উপর পুতিন নেতৃত্বের এই এই ধ্বংসযজ্ঞ প্রমাণ করে যে পুতিন স্বৈরতন্ত্রের সঙ্গে একটি বিশেষ সাবালক, পরিণত ও স্বাধীন পুঁজিবাদী শক্তির অঙ্গীভবনের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়েছে যারা সেই রুশ অলিগার্কেরই বিবর্তিত এটি সবল সত্বা যাদের প্রারম্ভকাল প্রধাণত গর্বাচেভের আমল থেকেই (১৯৮৫-৮৬)। উল্লখ্য স্বয়ং পুতিনও সেই ধারাবাহিকতার একজন এবং বর্তমানে রুশ বিলিয়নেয়ারদের ( প্রায় ১১৭ জন ) প্রথম দশজনের মধ্যে দ্বিতীয় স্হানে এবং প্রায় ২৮ বিলিয়ন ডলারের মালিক। ২) পুতিন স্বৈরতন্ত্র এবং সামরিক ও‌ প্রযুক্তিগতভাবে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় শক্তিশালী রুশ রাষ্ট্রের রাসায়নিক বন্ধন এবং তৎসহ রুশ উগ্রজাতীয়তাবাদের অবয়বের সঙ্গে পুতিন ঘনিষ্ঠ (বা পুতিন ফেনোমেননের দ্বারা অঙ্গীভূত) অলিগার্ক বৃহৎ পুজিবাদী গোষ্ঠী বোধহয় বিশ্ব বাজারে আধিপত্য বিস্তারের (বাণিজ্য ও ক্ষমতার) চলমান প্রতিযোগীতায় খোলাখুলিভাবে অংশগ্রহণ করতে চাইছে। ৩) বর্তমান বিশ্ব সম্ভবতঃ চতুর্মেরুর বিশ্বে পরিণত হয়েছে ( মার্কিন, ইউরোপ/EU, চীন এবং রাশিয়ার সাম্রাজ্যবাদ বা আধিপত্যবাদ)। ৪) ইতিমধ্যেই বৃটেনসহ বেশকিছু সাম্ম্রাজবাদী দেশের পুঁজিবাদী গোষ্ঠীগুলো আগের তুলনায় দুর্বল হয়ে পড়ার কারণে এবং এই মহুর্তে মার্কিনী শক্তি কিছুটা হলেও রণক্লান্ত হওয়ার কারণে (ইরাক, আফগানিস্তান ও সিরিয়ার কারণে) এবং চৈনিক শক্তির খুবিই পাকাপোক্তভাবে ক্রমশ বলশালী হয়ে পড়ার ফলে *বিশ্বে ক্ষমতাধর শক্তিগুলোর মধ্যে ভারসাম্যের বিবর্তন ঘটেছে।* ৫) এই অবস্থায় বিশ্বে সংকট আরও ঘনীভূত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে :- *ক)* চতুর্মেরুর মধ্যে পারস্পরিক সংঘাত (বাণিজ্যিক, রাজনৈতিক ও সামরিক) বৃদ্ধি পাওয়া এবং *খ)* সংশ্লিষ্ট দেশগুলির জনগণের উপর শাসক গোষ্ঠীগুলোর সংঘাত বৃদ্ধি পাওয়া (নোয়াম চমস্কির কথায় শাসকেরা আরও বেশী ব্রুটাল হবে)। ৬) চলমান রুশ আগ্রাসনের প্রাক মুহুর্তটি পুতিন কেন্দ্রিক রুশ শক্তির কাছে শাঁখের করাতের মতোই ছিল। শেষ বিচারে এই রুশীয় শক্তির কাছে এই অভিযানের ফসল ঘরে তুলতে হলে অনেক কাঠ খড় পোড়াতেই হবে। ৭)আমেরিকা এবং পশ্চিম ইউরোপীয় পুঁজিবাদী শক্তিগুলো পূর্ব ইউরোপীয় নেটো দেশ ও বলকান দেশগুলোর কাঁধেই বন্দুক রেখে নিজেদের 'দায়ীত্ব' ঝেড়ে ফেলতে‌ চাইছে। ইউক্রেনের আকাশকে নো ফ্লাই জোন ঘোষণা করার এবং ইউক্রেনকে যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ আমেরিকা ও নেটো দেশগুলোর কাছে *SOS* পর্যায়ে জেলেনেস্কির কাতর আবেদন বারবার করা সত্যেও 'আঙ্কল' বাইডেন তা প্রত্যাখ্যান করেছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বেধে যাওয়ার কথাকে শিখন্ডী করে। ইউকে, ফ্রান্স, জার্মানি, পোলান্ড এযাবৎ ইউক্রেনকে সামরিক জুতো, হেলমেট, কিছু মামুলী এসল্ট রাইফেল এবং সম্ভবত এন্টি ট্যাংক মিসাইল দিয়েছে/পাঠাবে বলে ঘোষণা করেছে। হতাশ জেলেনেস্কি এমতাবস্থায় যুদ্ধ বিমান চাইলে তাও বিবেচিত হচ্ছে না দেখে চূড়ান্তভাবে হতাশ হয়ে বলেই ফেলেছেন যে *" আপনারা (অর্থাৎ আমেরিকা ও ইউরোপীয় নেটো দেশগুলির শাসকরা) তাহলে ইউক্রেনের মানুষদের তিলে তিলে মৃত্যুর দিকেই ঠেলে দিতে চাইছেন!"* ৮) এই যুদ্ধের ফলে চীন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দুই দিক থেকেই‌ আরও সুবিধাজনক আবস্থান লাভ করবে। বর্তমান রুশ শক্তি এবং ইউরোপের লাভ ক্ষতি প্রায় সমান সমান হবে। আমেরিকার সামরিক ভাবমূর্তির হ্রাস হবে। ইউক্রেনের নাগরিকদের সবথেকে বেশী মূল্য দিতে হচ্ছে এবং হবে। ‌‌‌‌‌‌‌‌‌ ‌‌‌‌ ‌ *এই সামগ্রিক অবস্থায় বিকল্প কি হতে পারে বা করার ব্যবস্থা বাস্তবে নেওয়া উচিত সেই মতামত পরের একটি পোস্টে পাঠাবো।*

    ReplyDelete