কার বদলে কী
প্রবুদ্ধ বাগচী
গত বছর মে মাসে যখন লোকসভা নির্বাচন চলছিল তখন সংবাদমাধ্যমে ও সোশ্যাল মিডিয়ায় একদল সাংবাদিক নির্বাচনী ফলাফলের সম্ভাব্যতা নিয়ে নানারকম আলোচনা করছিলেন। নির্বাচনের কিছু আগে থেকেই নানা নির্বাচনী সমীক্ষা প্রকাশও চলছিল পুরোদমে। মনে আছে, নির্বাচন চলাকালীন অন্তত দুজন নামী সংবাদপত্রের সাংবাদিক ফেসবুকে লিখেছিলেন, তাঁরা কিছুতেই বিজেপি জোটকে দুশো থেকে দুশো তিরিশের বেশি আসন দিতে পারছেন না। সর্বভারতীয় অনেক সমীক্ষায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে এইরকম একটা সম্ভাবনার কথাই বলা হয়েছিল। কিন্তু ফল বেরতে দেখা গেল সবটাই উলটপুরাণ। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিজেপি ফিরে এল ক্ষমতায়।
সেফোলজি বিষয়টা বৈজ্ঞানিক নয় এটা বলব না। রাশিবিজ্ঞানের সাহায্য নিয়ে অনেক ক্ষেত্রে সম্ভাব্যতার কিছু কিছু ধারণা পাওয়া সম্ভব। কিন্তু ভোটের ফলাফল বিচার করার সঙ্গে আর পাঁচটা আকাডেমিক বিষয়ের কিছু তফাত আছে, যা অস্বীকার করলে ভুল হবে। ভোটের সম্ভাব্য ফলাফল ভোটারদের কাছে প্রকাশিত হয় এবং তাঁদের প্রভাবিত করে। তাই কোনও একপক্ষের দিকে ঝুঁকে থেকে যখন সেফোলজির দোহাই দেওয়া হয় তখন তাকে আর বিজ্ঞান বলা যায় না। সম্ভবত আমরা কেউই দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারব না যে এ দেশে সেফোলজি নামে যা চলে তার সবটাই খুব বিশুদ্ধ গাণিতিক হিসেবনিকেশ।
কথাটা উঠল এই কারণে যে সম্প্রতি আমাদের রাজ্যের আগামী রাজনীতি নিয়ে খুব শোরগোল উঠেছে যা মাঝে মাঝে খুব অশ্লীলতার পর্যায়ে উপনীত। আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনে ফলাফল কী হবে তার বিশ্লেষণ করতে গিয়ে এমন সব ঘটনা ঘটছে, এমন সব কথা বলা হচ্ছে যা বেশ অস্বস্তির উদ্রেক করে। যার একটা হল, এই ফলাফলের প্রাক-সম্ভাব্যতা বিচার। গণতান্ত্রিক দেশে যে কেউ যা খুশি করতে পারেন, তাতে বাদ সাধার কিছু না থাকলেও আপত্তি জানানোর জায়গা নিশ্চয়ই লোপাট হয়ে যায়নি। বিশেষ করে, এই মুহূর্তে যে রাজ্য করোনা-অতিমারি ও আম্ফান-ঝড়ের প্রকোপে বিপর্যস্ত, রাজ্যের অর্থনীতি বাকি দেশের মতোই দুর্বল, সেখানে রাজনীতির কারবারীরা একটু দায়িত্বশীল হবেন এটা খুব বড় মাপের আশা বলে মনে হয় না ।
এই আশার গোড়ায় শুরুতেই জল ঢেলেছে রাজ্য বিজেপির রাজনীতির অভিমুখ। পরীক্ষার ফল আগাম ঘোষণা করে দিলে যা হয় আর কি! গত লোকসভায় আঠারো আসন লাভ করে তাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ঢাক পিটিয়ে ঘোষণা করে দিয়েছিলেন, পরের বিধানসভায় তাঁরাই জিতে আসছেন। লোকসভা আর বিধানসভা ভোটের মধ্যে যে যোজন ফারাক, তাতে যে পরিপ্রেক্ষিত বদলে যায়, এইসব তাঁরা প্রকাশ্যত ধর্তব্যের মধ্যে আনেননি, নিজেদের সমর্থকদের তাতিয়ে তোলার জন্য নানা হুংকার দিয়েছেন। যদিও লোকসভা ভোটের পরেই বিধানসভার উপনির্বাচনে নিজেদের জেতা আসন তাঁরা ধরে রাখতে পারেননি। এর পরে এনআরসি/ সিএএ নিয়ে দেশজোড়া বিক্ষোভ এই রাজ্যেও তাদের মাটি কেড়ে নিয়েছিল। করোনা পরিস্থিতি সেদিক থেকে তাদের পক্ষে শাপে বর বলা যায়। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে প্রকাশ্য রাজনৈতিক কাজকর্ম করা সম্ভব নয়, অথচ সেটা না করতে পারলে ক্ষমতার কাছে আসার বৃত্ত সম্পূর্ণ হওয়া মুশকিল। এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সব থেকে আগ্রাসী ভূমিকা আমরা দেখতে পেলাম তাদেরই পক্ষ থেকে।
রাজ্যের মানুষের কষ্ট ও কঠিন পরিস্থিতির দিকে নজর না দিয়ে তাঁরা একতরফা ভাবে নিশানা করতে লাগলেন শাসক দলকে। বছর কুড়ি আগে ফিরে গেলে আমরা দেখতে পাব, ২০০১ বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে তৃণমূল নেত্রীও ‘এবার নয় নেভার’ ডাক তুলে দলকে একটা তীক্ষ্ণ প্রত্যাশার মুখে তুলে এনেছিলেন। ২০০০ সালের সেপ্টেম্বরে রাজ্য জুড়ে বন্যার পরে তিনি বলেছিলেন এটা ‘ম্যানমেড’ বন্যা এবং এই সূত্রে রাজ্য যাতে কোনওরকম কেন্দ্রীয় সাহায্য না পায় তাতে তাঁর পুরো সমর্থন ছিল। এবারের পরিস্থিতির সঙ্গে কেউ কেউ তার মিল খুঁজে পেতে পারেন। কিন্তু তফাত হল, তৃণমূল কংগ্রেস একটি রাজ্য স্তরের দল আর বিজেপির অবস্থান সর্বভারতীয়- তাদের পুঁজিপাটা ও সব দিকের জোর অনেক বেশি, বিশেষত, কেন্দ্রের শাসনক্ষমতা তাদের হাতে থাকায় আরও বাড়তি সুবিধে তাদের ঝুলিতে। এই সুবিধার ফায়দা তুলতে তারা মরিয়া।
করোনা পরিস্থিতিতে রাজ্যের সমস্যা ছিল প্রধানত দুটো। লকডাউনে কাজ হারানো বা বিপন্ন মানুষের কাছে প্রতিদিনের খাবার ও আর্থিক ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া। রাজ্যের সরকার একেবারে গোড়াতেই সেই উদ্যোগ নিতে পেরেছিল। পরের সমস্যা হল পরিযায়ী শ্রমিকদের পুনর্বাসন। এই বিষয়ে সকলেই অবহিত আছেন, কেন্দ্রের অপরিকল্পিত লকডাউন নীতি কী গভীর বিপর্যয় ডেকে এনেছে সারা দেশে। সমস্যাটা কেবল এই রাজ্যের নয়। তবু রোগ-সংক্রমণ সামলাবার জন্য রাজ্য সরকার যে সব প্রস্তাব দিয়েছিল কেন্দ্র তাতে ভ্রূক্ষেপ করেনি, কিন্তু এই রাজ্যের বিজেপি নেতারা সম্পূর্ণ নীতিহীনভাবে সেই ভুলের দায় রাজ্যের ওপর চাপিয়ে দিয়ে রাজ্যের বিরোধিতা করলেন একটানা। অথচ করোনা-কাণ্ডের জেরে রাজ্যের অর্থনীতিকে সচল করতে যে কেন্দ্রীয় প্যাকেজ দরকার তা নিয়ে তাঁদের মুখে কিছু শোনা গেল না। শোনা গেল না তাঁদের রাজভবনের প্রতিনিধির মুখেও। বরং তথ্য গোপন, লাশ পাচার- এইসব দায়িত্বজ্ঞানহীন গল্প ফেঁদে তাঁরা নিত্যদিন টিভিতে মুখ দেখাতে লাগলেন। রাজ্যের অন্য বিরোধী নেতারা প্রথমে এত আগ্রাসী ছিলেন না, তারা জানেন আগামী বিধানসভা ভোটে তাঁদের সম্ভাবনা খুব দুর্বল, কিন্তু বিজেপির সুরে সুর মিলিয়ে তাঁদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ পাল্টে যেতে দেখলাম আমরা। কোভিড মোকাবিলায় প্রতিটি সরকারি পদক্ষেপ শতকরা একশো ভাগ সঠিক ছিল এই কথা কেউ বলে না, এমন এক অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির জন্য কেউ প্রস্তুত ছিলেন না এটাও সত্যি। কিন্তু তিলকে তাল করার এই খেলায় বিজেপি যে খলনায়ক সেই বিষয়ে সন্দেহ নেই।
আম্পান পরবর্তী অবস্থায় এই খেলা আরও নিচু স্তরে নেমে গেছে। আড়াইশো বছরে একবার যে মাপের ঝড় হয় তার জন্য কোনও প্রস্তুতিই যথেষ্ট বলে কেউ মনে করতে পারে না। কিছুটা আগাম প্রস্তুতি নিয়ে মৃত্যু এড়ানো গেছে অনেকটাই কিন্তু ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো যায়নি। বিপুল বিপুল ক্ষতি, চারটে জেলা আক্রান্ত, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ-পরগণার বিস্তৃত অঞ্চল কার্যত ধূলিস্যাৎ। সরকারি হিসেবে এক লক্ষ কোটি টাকা দরকার, প্রধানমন্ত্রীর হেলিকপ্টারে চড়ার পর এসেছে মাত্র হাজার কোটি। কেন্দ্রীয় দল ঘুরে যাওয়ার পরেও বাকি সাহায্য কবে আসবে কেউ জানে না। সাম্প্রতিক খবর অনুযায়ী, বাকি আর্থিক সাহায্য বিশ বাঁও জলে। বিজেপির আঠারো জন সাংসদ একবারের তরেও রা কাড়েননি, অর্থ সাহায্যের দাবি তোলেননি। উল্টে এই রাজ্যের বিজেপি নেতারা বেশি বেশি প্রচার করছেন ত্রাণে দলবাজি বা দুর্নীতি নিয়ে। দলবাজি বা দুর্নীতি হচ্ছে না এটা সত্যি নয়। হচ্ছে নিশ্চয়ই একটা শতাংশ- ত্রাণে দলবাজি বা দুর্নীতি কোনও নতুন ব্যাপার নয়- কিন্তু দলবাজি বা দুর্নীতি হচ্ছে বলে আর্থিক ত্রাণ বন্ধ করে দিতে হবে এটা অভিনব, যে প্যারাডাইমটা বিজেপি আমদানি করতে চাইছে দিনেরাতে। দেশের প্রতিরক্ষা খাতে যুদ্ধাস্ত্র কেনার জন্য প্রচুর টাকা কিকব্যাক দিতে হয়, তাই বলে কি প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বন্ধ করে দিতে হবে?
এইরকম একটা আবহে এমন একটা উচ্চারণ ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে যে বর্তমান রাজ্য সরকারের মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে, আসন্ন বিধানসভায় তাদের পরাজয় প্রায় সময়ের অপেক্ষা। কোনও কোনও চ্যানেল আবার ইতিমধ্যেই পরবর্তী সরকারের মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন তা নিয়েও জল্পনা শুরু করে ফেলেছেন। লাগাতার একটা সরকার বিরোধী প্রচার চলছে যার ভিত্তিটা যে খুব মজবুত নয় তাই মাত্র নয়, এর মধ্যে একটা বিপজ্জনক ইশারা আছে। তৃণমূল নেত্রীর এ যাবৎ বড় সৌভাগ্য যে তাঁর দলের উত্থানের সঙ্গে রাজ্যের সাংবাদিককুল ও চ্যানেল কর্তৃপক্ষের একটা সহজ সম্পর্ক আছে। গোড়ার থেকেই তিনি কিছু করলেই সেটা বিরাট কভারেজ পেয়ে এসেছে, সরকারে আসার পরেও তাকে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ছেড়ে চলে যায়নি। তিনি সাংবাদিকদের বেছে বেছে রাজ্যসভায় পাঠিয়েছেন, তাঁর ছবি ছাড়া কোনও কোনও সংবাদপত্রের দৈনিক সংস্করণ ছাপাই হয়নি, কিছু চ্যানেল তাকে সামনে রেখেই বেড়ে উঠেছে এবং এখনও চালিয়ে যাচ্ছে। যে দুয়েকটা সংবাদমাধ্যম কিছুটা নিরপেক্ষ অবস্থান নিতে চেয়েছে তাদের তিনি ভাল চোখে দেখেননি, তাঁর দলের নেতারা সেইসব চ্যানেল নিয়ে বিষোদ্গার করেছেন, কারও কারও জন্য সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ হয়ে গেছে। এগুলো যে ঘটেছে তা নিয়ে দ্বিমত নেই।
কিন্তু তৃণমূলের সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বিজেপিকে আদর করে ক্ষমতায় আহ্বান করে আনার মধ্যে একটা বিপজ্জনক ইঙ্গিত আছে। তা দু' দলের সাংস্কৃতিক তফাত। বাম দলগুলি গত লোকসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল-বিজেপির গোপন সমঝোতার কথা বারে বারে বলত, মানুষ সে কথা বিশ্বাস করেনি। উল্টে তৃণমূল'এর ওপর ক্ষোভ জানাতে গিয়ে বাম ভোট বিজেপির বাক্সে পড়েছে এটা এখন সকলেই জানেন। আদপে তৃণমূল দলটি কংগ্রেস দলের ঐতিহ্যে লালিত, এই দলের যারা গুরুত্বপূর্ণ নেতা তারা আদিতে কংগ্রেস করতেন এবং তাঁদের ভাবধারাতেই তাঁদের বড় হয়ে ওঠা। দুর্নীতি বা স্বৈরী ক্ষমতার প্রতিপালনে কংগ্রেস দলের খুব সুনাম নেই কিন্তু সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে তাদের একটা গড়পড়তা অবস্থান আছে যার মধ্যে একটা উদারতা আছে। আর কংগ্রেসের যেহেতু কোনও সুনির্দিষ্ট আদর্শগত অবস্থান নেই ফলে নানা রকমের মানুষ তাদের দলের মধ্যে অ্যাকোমোডেটেড হয়ে যেতে পারেন। চরিত্রগত ভাবে তৃণমূল তার থেকে আলাদা নয়।
কিন্তু বিজেপি সব দিক দিয়ে একটা চরম সাম্প্রদায়িক দক্ষিণপন্থী দল এবং ইদানিং হালে পানি পাওয়ায় তারা প্রকাশ্যে তা ঘোষণা ও চর্চা করে। খুব সাম্প্রতিক সময়ে ফেব্রুয়ারিতে দিল্লি দাঙ্গার সময় আমরা সেই হিংস্র মুখ দেখেছি। দেখেছি, গুজরাত দাঙ্গার সময় তাদের নজিরবিহীন ভায়োলেন্সে। এর উপর দলটি সম্পূর্ণ ভাবে বড়লোকদের স্বার্থে পরিচালিত এবং ধর্মের নামে যাবতীয় তামসিকতার ঘোর সমর্থক যাদের পরিসরে মুক্তচিন্তার আধছটাক জায়গাও নেই। সেই রীতি মেনেই একদিকে যেমন তারা একচেটিয়া পুঁজির স্বার্থে যাবতীয় সরকারি সিদ্ধান্ত নেয় অন্যদিকে জেএনইউ বা যাদবপুরের ছাত্রছাত্রীদের দেশদ্রোহী বলে বা করোনা নিরাময়ে গোমূত্র সেবনের পরামর্শ দেয়। হালের কেন্দ্রীয় সরকারের গত ছয় বছরের কাজেকর্মে এর থেকে বেশি আমরা কী দেখেছি? যাদের ঐতিহ্যে কোনও দেশনেতা নেই, কোনও মুক্তচিন্তক নেই, যাদের মানসিকতায় সর্বদা সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, যাদের চেতনায় গণতান্ত্রিকতার লেশমাত্র নেই, নেই পরমতসহিষ্ণুতা- বিপরীতে তারা মুক্তচিন্তকদের বেছে বেছে খুন করে, মানবাধিকার কর্মীদের মিথ্যে মামলায় জড়িয়ে প্রতিশোধ নেয়, দেশের সাধারণ মানুষের স্বার্থের সঙ্গে তাদের বিন্দুমাত্র যোগ নেই। করোনা নিয়ে লকডাউনের সময় যে পরিযায়ী শ্রমিকদের কথা একবারের জন্যও ভাবা হয়নি এটা তার হাতে-গরম প্রমাণ, প্রমাণ লক ডাউনের সুযোগে তারা সিএএ বিরোধী আন্দোলনের নেতাদের মিথ্যে মামলায় গ্রেফতার করে চলেছে।
আমাদের রাজ্যে আমরা খুব সুখে আছি এটা কেউ বলে না। কিন্তু রাজ্যের গরিব মানুষরা নানা সরকারি সুবিধা পেয়েছেন, গ্রামীণ এলাকায় পঞ্চায়েত খুব ভাল কাজ না করলেও উন্নয়নমূলক কাজ একেবারে হয়নি তা নয়। তার থেকেও বড় কথা, সরকারের অভিমুখের মধ্যে একটা মানবিক মুখ আছে সেটা মুখ্যমন্ত্রীর দীর্ঘ গণ আন্দোলনের ফল, তিনি মানুষের পালস খুব ভাল বোঝেন, এটা পোড় খাওয়া বিরোধী নেতারাও স্বীকার না করে পারেন না। তাছাড়া সাংস্কৃতিক ভাবে আমরা কি খুব খারাপ আছি? একটা দুটো অনীক দত্ত নিশ্চয়ই আছে, সেটা অন্যায়- কিন্তু এর থেকে উন্নত ন্যায় কি আমরা কল্পিত বিজেপি জমানায় আশা করব? আশা করব বাংলার যে একটা দীর্ঘলালিত সংস্কৃতি আছে তা রামবাবুদের জমানায় আরও বিকশিত হবে?
পাশের রাজ্য ত্রিপুরায় বিধানসভা জয়ের পরের দিনই লেনিন মূর্তি ভেঙে দেওয়া
হয়েছিল, সেই রাজ্যের সরকারি কর্মীদের পেনশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, পঞ্চায়েতে আটানব্বই
শতাংশ আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে ফেলা হয়েছে। এখানে সরকারে না এসেই বলা হচ্ছে
সব সরকারি স্কুল বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হবে, শিক্ষকদের বেতন কমিয়ে দেওয়া হবে। ক্ষমতায় না থেকেই বিদ্যাসাগর মূর্তি ভেঙে ফেলা হল,
যাদবপুরের ছাত্র ইউনিয়নের অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হল- তাহলে হাতে ক্ষমতা পেলে কী হবে? এই রাজ্যে যেখানে সাম্প্রদায়িক অশান্তির সামান্য ধোঁয়া সেখানেই আরও আগুন জ্বালাতে পৌঁছে যাচ্ছে বিজেপি বাহিনী, গুজরাতের হাসপাতালে
হিন্দু মুসলমান আলাদা ওয়ার্ড- বাংলাতেও তাই হতে দিতে চাই আমরা?
ব্যক্তিগতভাবে আমার মতকে মানতে হবে এমন বলছি না। কিন্তু যারা খুল্লম খুল্লা বিজেপির ক্ষমতা লাভের আশায় প্রচারে নেমেছেন তারা নিজেদের ল্যাজে আগুন দিয়ে ফেলছেন না তো? তবে একটা আশার কথা আছে। প্রবীণ সাংবাদিক সুমন চট্টোপাধ্যায় এক জায়গায় লিখেছিলেন, খবরের কাগজে লিখে যদি সত্যি সরকার ফেলে দেওয়া যেত তাহলে বামফ্রন্ট সরকারের চৌত্রিশ বছর থাকবার কথা নয়, কারণ একেবারে প্রথম দিন থেকেই রাজ্যের সব সংবাদপত্র তাদের বিরুদ্ধে লাগাতার লিখে এসেছে! সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম লালগড় পরবর্তী বাম সরকারের অবস্থা (২০০৬-১১) একেবারে সামনে থেকে দেখার অভিজ্ঞতা আছে বলেই বলছি, সেটা সত্যিই একটা ‘পুতুল’ সরকার হয়ে গিয়েছিল শেষের দিকে। মন বলছে, ভোটের এক বছর আগে এখনও বর্তমান রাজ্য সরকার সেই অবস্থায় যায়নি- ভুল হলে এক বছর পর মানুষ তা সংশোধন করে দেবেন।
নামি সাংবাদিকরাই সবচেয়ে ভুলভাল বলে আমার এক্সপেরিয়েন্স তাই।অনামী যারা তারা খেতে কাজ করে বলে ভুল কম হয়।সুমন বাবু যা বলছেন তাতে বলতে হয় বিরুদ্ধতার মরোকে লেখা হলেই তাতে সরকার পরে না। বরং সারি কাণ্ডের বিশালভি আসার পর মানুষ bhujte পেরেছিল ইন্ডিয়া shining কি বস্তু।ঠিক যেমন নন্দীগ্রাম এ যে ভিশুয়াল এসেছিল তাতে সততা ছিল কাজ করেছিল ব্যাপক।
ReplyDelete