Saturday, 23 October 2021

'ভয় করলেই ভয়'

হচ্ছেটা কী!

অশোকেন্দু সেনগুপ্ত


সদ্য যৌবনে পা রাখা একজন দেখেছিল একটি নাটক: হচ্ছেটা কী? তারপর কেটে গেছে কত বছর। তাকে দেখতে হয়নি দেশভাগ বা গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং; দেখতে হয়নি  তেমন কোনও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। ইন্দিরা গান্ধী হত্যার পর তাকে অবশ্যই শুনতে হয়েছে বীভৎস শিখ-নিধন বা গোধরা কাণ্ড। কিন্তু হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা? এই রাজ্যে? যখনই তেমন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, তখনই এই রাজ্যে শাসক ও বিরোধী পক্ষ মিলে তা রুখে দিয়েছে। দাঙ্গা সে দেখেনি। সম্প্রীতি নষ্ট  করার অপচেষ্টা হয়নি এমন নয়, তবে তা তুচ্ছ। যদিও বাম বা ডান- কোনও পক্ষই নির্বাচন এলে মুসলমান প্রধান অঞ্চলে মুসলমান বা হিন্দু প্রধান অঞ্চলে হিন্দু প্রার্থী দিতে ভোলেনি (ব্যতিক্রম বাদে)। সে সব কেন্দ্রে প্রচারে এসেছেন সংশ্লিষ্ট ধর্মের বিশিষ্ট মানুষরা। কিছু মানুষ প্রতিবাদ করেছেন, বলেছেন কেন এমন ভাগ- দেশ ভাগ করেও কেন তোমাদের তৃষ্ণা মেটেনি।

সে প্রতিবাদে কান দিল কে? সেই যুবকের মতো আমি ও আমার মতো কেউ কেউ প্রতিবাদে জেগে উঠলাম, কিন্তু নির্ভেজাল ধর্মচিন্তা মুক্ত রাজনীতির উত্থান দেখলাম না। পড়লাম আর শুনলাম কবিতা, নানা অনুষ্ঠানে। এক বন্ধু বার্ধক্যে পৌঁছে পড়ল বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা: 

এই অন্ধকারে নিঃশ্বাস নিতেও মানা

কেন না মানুষ এই অন্ধকারে নিজের মুখ-কে

লুকিয়ে রাখার জন্য

চারিদিকে কশাইখানার মধ্যে

ছ'ফুট মাটির নিচে চুপচাপ স্থির ব'সে আছে।

কোথাও জানলা নেই

দরজার কথা ভাবা অসম্ভব,

কেননা বাতাস ঢুকলে কেউ হিন্দু কেউ মুসলমান

হতে হবে। কেন না ঘরের মধ্যে, ঘরের বাইরে

অন্তহীন দ্বেষের আগুন।

[কাব্যগ্রন্থ: ভিসা অফিসের সামনে (১৯৬৭)]


সে বন্ধু আরও জানাল- ভীষণ কান্না পায়।

কান্না পায় কেন তা জিগ্যেস করিনি, করতে হয়নি। সবার মতো আমিও তাকে জানি, জানি যে কান্না পায় বাংলাদেশে সাম্প্রতিক হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িক সংঘাত দেখে। কান্নার পাশাপাশি জেগে ওঠে কিছু প্রশ্নও। যে মুসলমানরা হিন্দুদের উৎসবপ্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সাম্প্রদায়িকতার বীজ ছড়ায় তারা কি নিজ ধর্মের ইতিহাস  জানে? নিজ দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে তাদের যোগ আছে কী? আজও কি নির্মূল হয়নি ঘাতক-দালাল? তারা কী শুনেছে বঙ্গবন্ধুর কথা, তার দেওয়া প্রতিশ্রুতির কথা?

যে অঞ্চলে এই দাঙ্গা বেঁধেছে, বছর কয়েক আগে সেখানে গিয়েছিলাম। তারাই শেখালো, এক হয়ে থাকার কী সুখ। তবে তাদের অনেকে এখনও সহনশীলতা শেখেনি। এবার দাঙ্গা রুখতে বাংলাদেশের সরকার এগিয়ে এসেছে। দেরি হয়ে গেল না? গোধরা কাণ্ডের পর এই দেশের সরকারের গয়ংগচ্ছ ভাবে শক্তি পেয়েছে বিভেদকামী সাম্প্রদায়িক শক্তি। তেমনটা হবে না তো?

এই দেশের সব মানুষই যে অসাম্প্রদায়িক এমন তো নয়। তা যদি হত...

যাক গে, কী হলে কী হত সে আলোচনা বৃথা। তবে দুঃখ এই যে, তারা মাঝে মাঝে সুযোগ পেয়ে বড্ড তড়পায়। তারা সংস্কৃতির শিক্ষা অবহেলা করে, ইতিহাস উপেক্ষা করে। আমাদের শুভ ইচ্ছাগুলিকে ব্যঙ্গ করে, উপহাসে বিদ্ধ করতে চায়। তারা আমাদের অসাম্প্রদায়িকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। আমরাও তাদের নির্মূল করতে পারিনি। মানছি, এদের চুপ করানো সহজ নয়। বলতেই হয়:

'তুমি যদি ভাসাও মোরে/ চাই নে পরিত্রাণ।' (রবীন্দ্রনাথ)।

আমরা ভয় পাইনি, পাব না- যারা মৌলবাদের সমর্থক তারা মনে রাখুক; আর আমরা মনে রাখি নীরেন্দ্রনাথের কবিতা, কবেই তো শুনেছি তার কন্ঠে:

ভয় করলেই ভয়

......

ওদের মারমুখো ওই ভঙ্গিটা তো আর কিছু নয়,

লোক-দেখানো লোক ঠকানো

ছলা। চলো বেরিয়ে পড়ি


ভয় করলেই ভয়, নইলে দেখো,

কিচ্ছু না, কাঁচকলা।


2 comments:

  1. Is it communal violence? Communal violence happens in India. Even to Malaysia or Indonesia.But since 1951 census Religious minorities not dropped even one percent.
    But In Afghanistan Pakistan and Bangladesh Minorities percentage dropped drastically.
    In Bangladesh in my opinion ethnic cleansing going on
    These kind of writing is backdated without data.
    Sorry

    ReplyDelete
  2. পড়লাম । কিন্তু লেখাটা ভালো লাগে নি । তবে উদ্দেশ্য ভালো । ☹️👍🏼

    ReplyDelete