Saturday 12 September 2020

থোড়বড়ি খাড়া

 চুপ থাকুন!

 সিদ্ধার্থ  বসু

এটা বেশ ভালো ব্যবস্থা: এক এক সরকার আসবে তাদের স্বরূপ জনগণ আগে বুঝতে পারবে না।  কারণ, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সর্বশক্তিমান জনগণের ইচ্ছের নাকি প্রকাশ ঘটে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। নির্বাচনের আগে তাদের নানা ভাবে প্রলুব্ধ করে বিভিন্ন রাজনৈতিক  দল। তাদের সেইসব ভালো ভালো কথায় ভুলে এবং এরা এলে সত্যিই নতুন কিছু হবে ভেবে মানুষ ভোট দেয়। এর মধ্যেও প্রশ্ন থেকে যায়, যদি অবশ্য প্রকৃত অর্থে ভোট হয়! নির্বাচনের মাধ্যমে সত্যি সত্যিই কি জনমত প্রকৃত অর্থে প্রতিফলিত হয়? 

প্রশ্নটা সম্ভবত সেখানে নয়। প্রশ্নটা, যে নির্বাচনই হোক না কেন, তা পঞ্চায়েত কি পৌরসভা কি বিধানসভা বা লোকসভা- প্রতিটি ক্ষেত্রেই শাসক ও বিরোধী পক্ষ সকলেই জনগণের সেবা করার প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় জনগণ তাদের কথা বিশ্বাস করে এবং ভোট দেয় তাদের মনোমত দলের প্রার্থীকে। তারপর যদি সেই দল নির্বাচনে জেতে এবং ঘোড়া কেনাবেচার খেলা পেরিয়ে ক্ষমতাসীন হয়, তখন সে দলের একের পর এক জনবিরোধী কাজের ফলে অচিরই জনগণের মোহভঙ্গ হয়। ক্রমশ তারা বুঝতে পারে, যে দলকে ভালোবেসে ভোট দিয়ে ক্ষমতাসীন করেছে সে দল তাদের ঠকিয়েছে। 

কীভাবে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত দল সরকারে এলে প্রতারণা করে?  ধরা যাক, দলের নির্বাচনী ইস্তাহারে ছিল, বছরে এত কোটি বেকার যুবক ও যুবতীদের কর্মসংস্থান করা হবে। এই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস রেখে যুবসমাজ নেমে পড়ে ভোটের ময়দানে তাদের স্বপ্ন দেখানো দলটিকে জেতাতে। এইভাবে বিপুল সংখ্যক বেকারদের ব্যবহার করে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়; শুধু তাই নয়, ক্ষমতাও কায়েম রাখে। বিরোধী ও প্রতিবাদী স্বর যেন মাথা চাড়া না দেয় সেদিকেও নজর রাখে এরা। তার বিনিময়ে সেই যুবদের যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ না দিয়ে সামান্য কিছু সুবিধে পাইয়ে দেওয়া ও নেশার জোগান থেকে খুল্লমখুল্লা এলাকা কাঁপানোর অলিখিত ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এটা ততক্ষণই দেওয়া হয় যতক্ষণ সে দলে অনুগত থাকে। যদি কখনও তার কন্ঠস্বরে বিরোধী সুর শোনা যায় অথবা নিজ যোগ্যতা অনুযায়ী কাজের দাবি জানায় তখন কিন্তু ঐ দলই তার বিরুদ্ধে দাঁড়ায়। 

কীভাবে এই শিক্ষিত বেকারদের দল কাজে লাগায় তার একটি উদাহরণ হিসেবে স্মরণ করা যায় এ রাজ্যের গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় সারা রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে ভোট নিয়ে যে হিংসার প্রকাশ রাজ্যবাসী দেখেছিল। এক কথায়, তুলনাহীন। নদিয়া জেলার মাজদিয়া অঞ্চলে গণনার দিনও ছাপ্পা চলে। মিডিয়ার কল্যাণে মানুষ তা প্রত্যক্ষ করে। এখানে সেই যুবকদেরই ব্যবহার করা হয়। আর শান্তিপুর অঞ্চলে বুথ দখল করতে গিয়ে গ্রামবাসীদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে যিনি প্রাণ হারান তিনি ছিলেন এমএ পাশ করা এক শিক্ষিত যুবক। গ্রামবাসীরা ওই বুথ দখলকারীদের বাইকও জ্বালিয়ে দেয়। বাঁশবাগানে পড়ে থাকা সেই পোড়া বাইকও মিডিয়ার দৌলতে সবাই প্রত্যক্ষ করে। কেন ওই শিক্ষিত যুবক বুথ দখলের মতো ঘৃণ্য কাজে লিপ্ত হলেন? কারণ হিসেবে জানা যায়, চাকরি পাবেন এই আশায় নাকি দলের হয়ে এই কাজ করতে গিয়েছিলেন। যদিও স্বাভাবিকভাবেই দলীয় নেতারা এই কথা মানতে রাজী হননি। কিন্তু এটা সত্যি যে শিক্ষিত কর্মহীন ওই যুবক প্রাণ হারিয়েছিলেন বুথ দখলের মতো ঘৃণ্য কাজ করতে গিয়ে।

অন্যায়ের প্রতিবাদ করাটাও শাসকের চোখে অন্যায়। তাই আনুগত্য, আনুগত্যই শাসকের পছন্দ। যদি বিরোধী দল সত্যিটা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখায় এবং তার প্রতিকার দাবি করে তাতে সেই দল শাসকের চক্ষুশূল হয়ে ওঠে। কিন্তু গণতন্ত্রে এরকমটা হওয়ার কথা কী? আসলে বিরোধী আসনে থাকলে গণতন্ত্রের প্রকৃত মানে এবং তার স্বরূপ একরকম আর ক্ষমতায় গিয়ে সরকার গড়লে গণতন্ত্রের মানেটা অন্যরকম হয়ে যায়। তখন যে যে দাবি নিয়ে গলার শির ফুলিয়ে গলা ফাটিয়ে তারা রাস্তা অবরোধ করেছিল, কথায় কথায় বনধ ডেকে জনজীবন অতীষ্ট করে তুলেছিল, সেই একই সমস্যা ও দাবি নিয়ে কেউ কোনও কথা বললেই ক্ষমতাসীন দল বা শাসক তাকে বা তার দলকে চিহ্নিত করে। এবং তখন প্রচার করা হয়, ওই ব্যক্তি বা দলটি রাজ্যের অথবা দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নষ্ট করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চালা্চ্ছে; অতএব এদের বিরুদ্ধে প্রথমে লাগাতার প্রচার করা হয় ধামাধরা প্রচারযন্ত্র দ্বারা ও তাতে কাজ না দিলে আইনের নানান কঠিন কঠিন ধারা প্রয়োগ করা হয়। এত সব করার কারণ হিসেবে বলা হয়, এসবই দেশের গণতন্ত্র রক্ষা করার জন্যে করতে হচ্ছে। 

প্রতি ভোটের আগেই জনগণ শোনে এবারের নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই সরল বিশ্বাসে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। কিন্তু তারপরই শুরু হয় নরক যন্ত্রণার। সঞ্চয়ের উপর কোপ, গ্যাসের দাম, পেট্রল, ডিজেলের দাম থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস, আনাজপাতি সবজি বাজার আগুন। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচনে অংশ নিয়ে সরকার নির্বাচিত করে এটাই কি প্রাপ্তি জনগণের। এটাই যেন রেওয়াজ হয়ে গেছে। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার উপায় নেই। কারণ, সরকার বাহাদুর রাগ করবেন তাই একটু সহ্য করুন এবং শুনুন সেই অমৃতবাণী যে এসবই হচ্ছে আগের সরকারের কৃতকর্মের ফল তাই সইতে থাকুন এবং আমাদের সমর্থন করুন, নচেৎ আপনি প্রতিবাদী হলে রাজরোষের শিকার হবেন।

 

1 comment:

  1. তাই কি একদা স্লোগান লেখা হয়েছিল: শুওরের বাচ্চা জনগণ/ রইলো তোদের নির্বাচন .... ইত্যাদি

    ReplyDelete