ভার্চুয়াল অর্থনীতির তিন লাফ
অনিন্দ্য ভট্টাচার্য
বিশ্ব জুড়ে কোভিড১৯-এর
প্রকোপে, বিশেষত ইউরোপ ও আমেরিকায়, মানুষের মৃত্যু মিছিল যে ত্রাসের সঞ্চার করেছে
তা অভাবনীয়। সেই সঙ্গে এই দুর্যোগের অবসান কবে, তা নিয়েও সকলের শঙ্কা ও উদ্বেগের
সীমা-পরিসীমা নেই। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভবিষ্যৎ যাপনের অনিশ্চয়তার কালো মেঘ। বিশেষ
করে, অর্থনীতির ভবিষ্যৎ কী হতে চলেছে আর তাতে সাধারণ মানুষের অবস্থান ও তার
জীবন-জীবিকার কী দশা হবে তা নিয়ে উৎকণ্ঠা ও ভীতির পারদ যথেষ্ট উর্ধ্বমুখি।
ইতিমধ্যেই এ দেশে ও বিদেশে বহু মানুষ কাজ হারিয়েছেন, কারখানার চিমনিগুলো অনেকদিন
হল খাঁ খাঁ করছে, পরিষেবা শিল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার হিসেবে,
সারা বিশ্বে প্রায় ২০ কোটি মানুষ কাজ হারাবেন- সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে
বাসস্থান ও খাদ্য পরিষেবা ক্ষেত্র, ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্প, ক্ষুদ্র ও বাণিজ্য
ক্ষেত্র এবং প্রশাসনিক কাজকর্ম। সবচেয়ে বড় কথা, অর্থনীতির রথ যেমন চলছিল তেমন কবে
আবার চলতে শুরু করবে তা নিয়ে কেউ কিছু বলতে অক্ষম। কারও কারও মতে, ইংল্যান্ড ও
আমেরিকায় বেকারত্ব মহামন্দার সময়ের থেকেও বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে।
কিন্তু
ইতিমধ্যে গঙ্গা বা টেমস নদী দিয়ে বহু জল গড়িয়েছে। তাই এইসব ঘনঘোর দুঃসহতার মাঝে
আরও একটি ভিন্ন চিত্রও উদীয়মান। দেখা যাচ্ছে, এতদসত্ত্বেও বেশ কিছু কোম্পানি তাদের
কর্মী নিয়োজনের ধারাকে অব্যাহত রেখেছে। যেমন এ দেশে টিসিএস ও উইপ্রো এই বার্ষিক
বছরে যথাক্রমে ৩০,০০০ ও ১২,০০০ কর্মী নিয়োজনের পরিকল্পনা নিয়েছে। কগনিজেন্ট’ও
জানিয়েছে, তারা এই বছরে ২০,০০০ কর্মী নিয়োগ করবে। লকডাউন তাদের ক্ষেত্রে তেমন কোনও
বাধা নয়। এই জায়গাটি চিত্তাকর্ষক। অনুরূপ আরও কিছু তথ্য হাজির করলে বিষয়টা আরও
স্পষ্ট হবে। যেমন, এই লকডাউন সময়ে অর্থনীতির কোন ক্ষেত্রটি প্রসারিত ও
বাণিজ্য-সমৃদ্ধ হয়েছে? আসলে কাদের ব্যবসা বাড়ল? বোঝাই যাচ্ছে, উত্তরটি হল,
ভার্চুয়াল দুনিয়ার কারবারীদের। এখন আপনারা সকলেই ‘জুম’ ভিডিও-কলিং অ্যাপ্লিকেশনটি
সম্পর্কে অবহিত হয়ে গেছেন। কারণ, লকডাউনের কারণে স্কুল-কলেজে অনলাইনে ক্লাস নিতে
এর ব্যবহার এখন তুঙ্গে। তথ্য বলছে, ফেব্রুয়ারি মাসে বিশ্বে যেখানে ‘জুম’এর মাসিক
ডাউনলোড ছিল ৫ লক্ষের মতো, মার্চে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯০ লক্ষের কাছাকাছি
(প্রায় ১৭ গুণ বৃদ্ধি)। এমত ভার্চুয়াল দুনিয়ার প্রায় সমস্ত অ্যাপ ও উপযোগিতা
টুলস’এর এখন রমরমা বাণিজ্য। যেমন, টিকটক, ইউটিউব, অ্যামাজন, গুগল পে, টিন্ডার
ইত্যাদিদের বৃদ্ধির হার ও ব্যবহার অকল্পনীয় স্তরে পৌঁছেছে। অ্যামাজন ইন্ডিয়ার
কীওয়ার্ড সার্চ অনুসন্ধান করে দেখা যাচ্ছে, গত ৪ থেকে ১১ এপ্রিলের সপ্তাহে
ক্রেতারা ম্যাগির থেকে মোবাইলের খোঁজ বেশি করেছেন। কারণ, স্মার্ট ফোনই এখন
যোগাযোগ, বাণিজ্য, কাজ, বিনোদন ও রোজগারের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। শুধু কি তাই! খেয়াল
করুন, এই লকডাউনের সুযোগে আমাদের দেশে ক্রিপটোকারেন্সি’র দৈনিক বাণিজ্যের পরিমাণ
প্রায় ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ প্রসঙ্গে বস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের ম্যানেজিং
ডিরেক্টর নিমিশা জৈনের বক্তব্য হল, লকডাউন ব্যবসা-বাণিজ্যের রীতিনীতিকেই বদলে
দিচ্ছে ও আগামী ৩ থেকে ৫ বছরের মধ্যে এক সুদূরপ্রসারী পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আমরা
যাব।
তা তো বটেই!
ইতিমধ্যে দেখাই যাচ্ছে, ওয়ার্ক ফ্রম হোম যা এতদিন সীমিত পরিসরে অনুশীলিত হত, তা
কোভিড১৯’এর কারণে এখন সর্বজনীন হয়ে উঠছে। থ্রি-ডি প্রিন্টিং যা আধুনিক
উৎপাদনশীলতায় এক নতুন আঙ্গিকের সূচনা করেছিল তাও হয়ে উঠছে দস্তুর। অনলাইন শপিং,
ভার্চুয়াল ক্লাস, টেলি-ঔষধি, নেট-বিনোদন, মায় আলপিন থেকে এলিফ্যান্ট যা কিছু, সবই
এখন ভার্চুয়ালি চাগিয়ে উঠেছে ঘরবন্দী মানুষের তাড়নায়। যে রূপান্তর হয়তো হত আরও
ধীরে, আরও কয়েক বছর পর, তা এখন কোভিড১৯-ব্যতিব্যস্ততায় কোনও উপায়ন্তর না পেয়ে তড়িৎ
গতিতে আয়ত্তাধীন-প্রায়। ভার্চুয়াল ও ডিজিটাল দুনিয়া দখল নিয়ে নিচ্ছে অর্থনীতির
সিংহভাগ ও জীবনযাপনের প্রায় সমস্ত দায়।
পরিবর্তনের
এই বাস্তব অভিঘাতকে বোঝার চেষ্টা না করলে বর্তমানের এই মহাসংকটময় পরিস্থিতিকে
আন্দাজ করা যাবে না। আজ নিঃসন্দেহে অনুধাবন করা উচিত, গত পাঁচ থেকে দশ বছরে বিশ্ব
জুড়ে অর্থনীতির আঙ্গিকটাই দ্রুত বদলে গেছে। এবং তা কতকটা নিঃশব্দে। কৃত্রিম
বুদ্ধিমত্তা ও রোবটিক্স’এর অভিঘাতে মনুষ্য শ্রমকে প্রতিস্থাপিত করে আমরা এমন এক স্বকীয়
যন্ত্র-চালিত উৎপাদন ব্যবস্থার দিকে শনৈ শনৈ এগোচ্ছিলাম যে অচিরেই স্পষ্ট হয়ে
উঠছিল, অধিক সংখ্যক লোকের হাতে আর সংগঠিত চাকরি থাকবে না; প্রযুক্তির বিকাশের
অনুষঙ্গে অস্থায়ী নানাবিধ কাজের পরিসর তৈরি হবে ও আবার তা মিলিয়ে যাবে নতুনতর
প্রযুক্তি-আঙ্গিকের অভিষেকে। এই অস্থায়ী কাজের প্রাঙ্গণে যথাযথ কিছু মানুষের কাজ
মিলবে বটে কিন্তু তা স্বল্প সময়ের জন্য বা চুক্তির ভিত্তিতে। অর্থনীতিতে কাজের এই
নতুন আঙ্গিককে অনেকেই ‘গিগ অর্থনীতি’ বলে অভিহিত করেন যার মোদ্দা কথাটি হল- কাজের
চরিত্র হবে অস্থায়ী ও উত্তরণ সাপেক্ষ। অর্থাৎ, প্রযুক্তির নবতর দ্রুত উল্লম্ফন
পুরনো কাজ ও কর্মীকে অসার করে দিয়ে নতুনের সন্ধান করবে যা আবার কিছু সময় পর
পরিত্যক্ত-যোগ্য হবে। এইভাবে কাজের এমন এক ধারা প্রবহমান হবে যেখানে মনুষ্য শ্রমের
পরিমাণগত প্রয়োজনীয়তা ক্রমেই কমে আসতে থাকবে। কোভিড১৯-এর আচম্বিত সর্বগ্রাসী
আক্রমণ প্রযুক্তি চালিত এই চলমান প্রক্রিয়াটিকেই ত্বরান্বিত করল বলে মালুম হচ্ছে। এটা
এই অর্থে যে, বিশ্ব অর্থনীতিতে যদি ২০ কোটি মানুষের কাজ চলে যাওয়া সাব্যস্ত হয়
তাহলে তা হওয়ারই ছিল, হয়তো আরও কিছু সময় পরে, কোভিড১৯ তার পরোয়ানা আগেই ধরিয়ে দিল।
অন্যদিকে, কোভিড১৯-এর
তাণ্ডবে যারা ধনতন্ত্রের অন্ত সুনিশ্চিত দেখছেন অথবা কিছুটা আপস করে ধনতন্ত্রের
প্রকট বৈষম্য নীতির অবসানের প্রত্যাশা করছেন তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত
সমসময়ের অর্থনীতির অন্তর্হিত ক্রমবিকাশমান বার্তাটিকে পড়তেই পারেননি। গত তিন-চারশো বছর ধরে
ধনতন্ত্রের যে বিকাশ, তার মূল চালিকাশক্তিই ছিল উৎপাদনের পরিসরে মুনাফার হারকে
ক্রমাগত বাড়িয়ে চলা এবং কোনও কর্মক্ষেত্রে তা স্থিতাবস্থায় পৌঁছলে নতুন উর্বর
ক্ষেত্রে পুঁজিকে স্থানান্তরিত করা। এই কারণেই পুরনো শিল্প বাতিল হয়ে বন্ধ হয় ও
নতুন শিল্পের উদয় ঘটে। আর এই কাণ্ডটিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে প্রযুক্তি, যার উদ্দেশ্যই
হল আরও বেশি আধুনিক ও উৎপাদনশীল হয়ে উঠে মুনাফার হারকে বাড়িয়ে চলা। স্বতঃসিদ্ধ এই
যে, শ্রমিকের তুলনায় যন্ত্রের ব্যবহার যত আনুপাতিক হারে বাড়বে ততই উৎপাদনশীলতা তথা
মুনাফার হারের বৃদ্ধি হবে ও তজ্জনিত কারণে মনুষ্য শ্রমের প্রয়োজনীয়তা কমে আসবে।
এইভাবেই ধনতন্ত্র তার যাত্রাপথকে অব্যাহত রেখেছে ও আজ এসে বাধ্যত প্রযুক্তির এমন
এক গুণগত পরিবর্তনের স্মারক হয়েছে যেখানে প্রযুক্তি নিজেই অর্জন করেছে প্রায়
মনুষ্যতুল্য স্বাধীন এক কর্মসত্তা: কৃত্রিম
বুদ্ধিমত্তা। সাধারণ ভাবে মনুষ্য শ্রমের প্রয়োজনীয়তা তাই আপেক্ষিক অর্থে আরও হ্রাস
পেয়েছে ও পাবে।
শ্রমের
নিরিখে এর ফলে যে পরিস্থিতির উদয় হবে তা কতকটা এইরকম: (১) কৃষি, পরিষেবা (শিক্ষা, স্বাস্থ্যকে ধরে) ধরনের কিছু
মৌলিক ক্ষেত্র ছাড়া মনুষ্য শ্রমের প্রয়োজনীয়তা চূড়ান্ত ভাবে হ্রাস পাবে; (২) যারা
কাজ করবেন তাদের মধ্যে মূলত তিন ধরনের আয়ের ভিত্তিতে শ্রম বিভাজন হবে- নিম্ন, মধ্য
ও উচ্চ আয়। বলাই বাহুল্য, নিম্ন আয়ের শ্রমই হবে মোট ব্যয়িত শ্রমের ৮০ থেকে ৯০
শতাংশ; (৩) তদুপরি, সমাজের কর্মক্ষম মানুষের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশের হাতে কোনও কাজ
থাকবে না (তা স্বল্প বা দীর্ঘ সময় উভয়তই)। আর এই শেষোক্ত কারণটির জন্যই ইউনিভার্সাল
বেসিক ইনকাম (বা ইউবিআই) প্রদানের চর্চা রাজনৈতিক ও অর্থনীতির মহলে ক্রমেই জোরদার
হয়েছে। এখন কোভিড১৯’এর আক্রমণ সরকারগুলিকে বাধ্য করছে সমস্ত কাজহারা মানুষের কাছে
অর্থ ও খাদ্য পৌঁছে দিতে। নির্দ্বিধায় এই বাধ্যতাকে বলা যেতে পারে ইউবিআই’এর মহড়া,
কোভিড১৯-এর কারণেই যার সূত্রপাত।
মড়ক,
মহামারি বিশ্বে নতুন কিছু নয়। দু-দুটি বিশ্বযুদ্ধ ও বহু আঞ্চলিক যুদ্ধের নিত্য
সাক্ষী এ ধরিত্রী জননী। ফলত লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু আগেও প্রত্যক্ষ করা গেছে। আর
স্বভাবতই এইসব দুর্যোগের সময় মানুষের হৃদয় উদ্বেলিত হয়, তার কুসুম মন চারপাশে তাকানোর
চেষ্টা করে, তাকে মৃত্যুভয় গ্রাস করে। তখন মানুষ স্বপ্ন দেখে, আশা করে এক নির্মল
মনের স্বত্বাধারী হয়ে উঠতে, যাতে ভবিষ্যতে এমন দুঃসময় আর না আসে। কিন্তু সব ঝড় থেমে
গেলে আবারও চারপাশ পঙ্কিল হয়ে ওঠে। এ ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। যদি আধুনিক সময় ধনতন্ত্রকেই সাব্যস্ত করে থাকে, তবে তার
কন্দরেই রয়েছে লোভ, জিঘাংসা ও বৈষম্যের প্রগাঢ় বিষ। তাকে নিকেশ না করে তার
বৈষম্যের ক্ষুধাকে নির্বিষ করা যায় না। আর ধনতন্ত্র অবসানের স্বপ্ন যারা দেখেন
তারা যদি বোঝেন যে ধনতন্ত্র আসলে লালিত হয় প্রতিটি ব্যক্তি মানুষের চৈতন্যে
ধনে-মানে-ক্ষমতায় অন্য সকলকে ছাপিয়ে যাওয়ার চরম উচ্চাশা থেকেই, তাহলে তার
অবসানকল্পে যে কাজের ভার ও প্রজ্ঞাকে উপলব্ধ করতে হয় তা বড় গভীর ও ব্যাপ্ত।
কোভিড১৯
আমাদের নাড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের ধ্বস্ত করেছে। লক্ষাধিক মানুষের শবকে পিছনে ফেলে
যারা বেঁচেবর্তে এগিয়ে যাবেন তাঁরা আবারও শুরু করবেন তাঁদের দৈনন্দিন কর্মধারা। স্বভাবতই
মানুষের প্রাপ্য তালিকায় জীবনের নবতর জয়গান তেমন কিছুই থাকবে না, বরং চলমান
পরিবর্তিত অর্থনীতিকে কোভিড১৯ যে দ্রুত এক ধাক্কায় অনেকটা ডিজিটাল-বন্দী করে ফেলল,
থাকবে সে জানানটুকুই। আর থাকবে এ বার্তাও যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত অর্থনীতির যে আপন গতিপথ নির্মিত হয়েছে, সেখানে আজকের রাষ্ট্রপ্রধানদের আর তেমন কোনও কীর্তি প্রকৃত প্রস্তাবে অসার। তারা বড়জোর নিজেদের প্রাসঙ্গিক ও ক্ষমতাবান রাখতে ধর্ম-বর্ণ-জাতি-জাতপাতের নামে অসার বজ্জাতিটুকুই করতে পারবে। সবটা মিলিয়ে এই নতুনতর হঠাৎ-পাওয়া পরিস্থিতিকে মানুষ কীভাবে মোকাবিলা
করেন সেটাই এখন দেখার।
Excellent theory after a long time just read such a beautiful article with real truth and ethics it's makes an eagerness to read more and more thank you
ReplyDelete“ভার্চুয়াল অর্থনীতির তিন লাফ” লেখাটি গতকাল পড়েছি। আজ কৌশিক বসুর লেখাটি পড়লাম।মাঝে অমর্ত্য সেন ও অভিজিৎ ব্যানার্জীর লেখাও পড়েছি - করোনা অতিমারী উদ্ভূত অর্থনীতি ও সামাজিক অবস্থা বিষয়ক রচনা।সব লেখাতেই করোনা উত্তর পরিস্থিতি সম্পর্কে এটাই বলা হয়েছে যে বিশ্বজুড়ে কর্মহীনতা প্রকট হয়ে উঠবে।বৈদ্যুতিন মাধ্যমসহ কয়েকটি ক্ষেত্রে বিশ্ব বাণিজ্য অতি দ্রুত বিকশিত হবে আর এ বাবদ ভারতের কপালে কিছু কর্মযোগ হবার সুযোগ আছে; তবে ভারতের আর্থিকভাবে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কল্যানে কিছু আশু ব্যবস্থা গ্রহণ অবশ্য করনীয় এই মুহূর্তে। ‘ইউনিভার্সাল বেসিক ইনকাম’ এর প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বাজারে চাহিদা ফেরাতে সরকারকে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে আরো বেশী করে।
ReplyDeleteপুঁজী ভিত্তিক বিশ্ব বাণিজ্যে সাময়িক মন্দা ঘটলেও কিন্তু নতুন ক্ষেত্রগুলিতে অতি দ্রুত বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হবে। প্রকৃতপক্ষে এই সব ক্ষেত্রগুলির দিকেই নিবেশকারীদের লক্ষ্য বিগত কয়েক বছর ধরে অতি স্পষ্ট, যা অচিরে ‘গিগ অর্থনীতি’-র পথ প্রশস্ত করে তুলবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবটিক্স এর পূর্ণ ব্যবহার ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির বারবাড়ন্ত নিশ্চিত। এই বিজয়রথের গতির পথে এখনো তেমন বাধা কিছু তৈরী হয়নি। অবশ্য ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থার সঙ্গে এর অন্তর্নিহিত সংকট এক চিরসত্য হিসাবে সর্বদা প্রমাণিতহয়েছে।
“ভার্চুয়াল অর্থনীতির তিন লাফ” লেখাটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এবং যথার্থ বিশ্লেষণাত্মক। কূত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও একুশদশকের অর্থনীতি বিষয়ক আপনার ‘আশায় বাঁচে চাষা’ বইটিরই একটি পরিচ্ছেদের মত মনে হয় এই লেখাটি। এই লেখার সবচেয়ে মৌলিক বিষয় হলো এই যে, বিশ্ব অর্থনীতির এই গতি প্রকৃতি সুনির্দিষ্টই ছিল আর বর্তমানে ‘কোভিড-১৯’-এর বিপর্যয় উদ্ভূত অর্থনীতি ও সামাজিক অবস্থা প্রকৃতপক্ষে ঐ ভার্চুয়াল অর্থনীতির বিকাশকে ত্বরান্বিতই করে তুলবে। সর্বপরি মূল্যতত্ত্বের বৈজ্ঞানিক সত্য ও ঐতিহাসিকতা, যার উপর ভিত্তি করে আপনার বইটি লেখা তা এই লেখাটিতেও সঠিক ভাবে বিধৃত হয়েছে।