কলরবের দলরব
পল্লবী বন্দ্যোপাধ্যায়
আশায় বুক এবং বিরক্তিতে কোমর বেঁধে কলকাতা আবার পথে নেমেছে। যাদবপুর
বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে সরব শহুরে মধ্যবিত্ত।
স্লোগানে, মিছিলে, গানে উত্তাল পথঘাট, ক্যাম্পাস, বৈঠকখানা, ফেসবুক, ট্যুইটার। #hokkolorobহ্যাশট্যাগ গত দুদিনে সোশ্যাল মিডিয়া চত্বর
কাঁপিয়ে দিয়েছে। এসবই খুব আশার কথা। চলতি নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে আমজনতা এবং
কচিকাঁচাদের শীতঘুম ভেঙ্গে রাস্তায় নামতে দেখলে রক্ত গরম হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু
এইসব তালগোল হইচই-এর মধ্যে মূল ইস্যুটা আড়ালে চলে যাবার সম্ভাবনাটাও একেবারে উড়িয়ে
দেওয়া যাচ্ছে না। আরও যেটা চিন্তায় ফেলেছে সেটা হল বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলের
উস্কানি এবং আগ্রহ, এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হবার। লাইমলাইটলোভী হাওয়ামোরগ
সুশীলেরা ইতিমধ্যেই ছাত্রদের পায়ে পা এবং সুরে সুর মিলিয়ে পথে ও চ্যানেলে হাজির। সকলেই ছাত্রদের ওপর পুলিশি হামলার ও ভিসি অভিজিৎ
চক্রবর্তীর নিন্দায় সরব। এমনকি যে মিডিয়া এতদিন শ্লীলতাহানির বিষয়টাকে একেবারেই
আমল দেয়নি, তারাও হঠাৎ করে হাতে গরম ছাত্র পেটানোর visuals পেয়ে হই হই করে মাঠে নেমে
পড়েছে। বিরোধীরাও ঘোলাজলে মাছ ধরার সুযোগ পেয়ে খ্যাপলা বাগিয়ে তৈরি।
এই সুযোগে আসুন আমরা একটু গোটা ব্যাপারটা ঝালিয়ে নিই। বেনোজল ঢোকার আগেই।
যে মেয়েটি শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনেছিল, তাঁর এবং যাঁদের বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ, সেইসব ছাত্রের রাজনৈতিক
মতাদর্শ নির্বিশেষে গোটা ঘটনার তদন্ত হোক। তদন্ত কমিটি গঠন করা হোক আইন মেনে।
ভিসি’র খেয়ালখুশি মতো নয়। কমিটি রিপোর্ট জমা দেবার আগে অভিযুক্ত অথবা অভিযোগকারীর
সম্বন্ধে আপত্তিজনক মন্তব্য করার মতো অনৈতিক কাজ থেকে কমিটি সদস্যদের, ছাত্রদের
এবং মিডিয়ার বিরত থাকা উচিত। এবং অবশ্যই, প্রশাসক হিসেবে সম্পূর্ণ ব্যর্থতার
পরিচয়দেবার জন্য ভিসি অভিজিৎ চক্রবর্তীর অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত।
বিশেষ সতর্কবার্তা – মিছিল-প্রিয় ক্যামেরাভোগী রাজনৈতিক নেতা ও সুশীলদের থেকে দূরে থাকুন। এঁরা
সুবিধাবাদ ও দ্বিচারিতার পরাকাষ্ঠা। নিজের স্বার্থের বাইরে কিচ্ছু বোঝেন না। যে কোনওস্বতঃস্ফূর্ত গণ
আন্দোলনের সঙ্গে নিজেদের জড়িয়ে ক্ষীরটুকু খেয়ে বেরিয়ে আসায় বিশেষ ব্যুৎপত্তি লাভ
করেছেন।
ছাত্রদের বলছি, “এঁদের থেকে সাবধান! সাবধান! সাবধান!”
No comments:
Post a Comment