Monday, 26 August 2024

মহাঅতীতের চক্রব্যূহভেদ

নির্দ্বিধ গোলাম মুরশিদ

অমৃতা ঘোষাল


(৮ এপ্রিল ১৯৪০ - ২২ অগস্ট ২০২৪)

মহাঅতীতের যন্ত্রণায় ঠিক কতটা বিদ্ধ হন অজর ইতিহাসবেত্তা! ক্ষয়ীভূত সত্য আর প্রপঞ্চময় মিথ্যার আন্দোলনে ইতিহাস-সন্ধানীর চোখে ঝলসে ওঠে ভগ্নস্তূপের আড়ালে থাকা রত্নপুঞ্জ। ইতিহাস-পাথারে দুর্ধর্ষ ডুবুরির মতো এই তথ্য-রত্নরাজি আবিষ্কারের সম্যক ক্ষমতা ছিল ড. গোলাম মুরশিদের। 

১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের ৮ এপ্রিল পূর্ববঙ্গের বরিশালের উজিরপুর এলাকার অন্তর্গত ধামুরা গ্রামে তিনি জীবনের প্রথম আলো দেখেন। বাংলা ভাষা-সাহিত্যের প্রতি তীব্র অনুরাগ অনুভব করেন শৈশব থেকেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করার পর অধ্যাপনাও করেন যথাক্রমে, ময়মনসিংহ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রায় দুই দশক সফল অধ্যাপক হিসাবে কৃতিত্ব অর্জন করে ঐতিহাসিক ডেভিড কফের (১৯৩০-২০২৩) তত্ত্বাবধানে পিএইচডি-র গবেষণা আরম্ভ করেন। বলাই বাহুল্য, সরস্বতীর শ্রেষ্ঠ সন্তান হয়ে উঠতে তাঁর আর বিশেষ বিলম্ব হয়নি। ঊনবিংশ শতাব্দীর হিন্দু সমাজ-সংস্কার আন্দোলন-কেন্দ্রিক দুর্দান্ত একটি বিষয় নিয়ে গবেষণা করে বেশ খ্যাতি অর্জন করতে থাকেন গোলাম মুরশিদ। মেলবোর্নে শিবনারায়ণ রায়ের (২০ জানুয়ারি, ১৯২১ - ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০০৮) অধীনে পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণায় তিনি দুই বছর কাটান। ১৯৮৪ থেকে পাকাপাকিভাবেই তিনি লন্ডন নিবাসী। 

ওই বছরই জানুয়ারি মাস থেকে তিনি  ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (বিবিসি)-এর সংবাদ-পাঠক এবং উপস্থাপক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ২০০৩ অবধি সফলভাবে থেকেছেন ওই জীবিকায়। তথ্য আদানপ্রদানের অবিরাম স্রোতে তাঁর জীবনের অন্বীক্ষা আরও স্পষ্টতর হতে থাকল। কিছু তথ্য স্মৃতির ভারটুকুই বাড়ায়, আর কিছু উপাত্ত তুলে ধরে রাশিতত্ত্বের আধারে সমাজের প্রকৃত চালচিত্র। ভার ছেঁকে খবরের কেন্দ্রীভূত সারবত্তাকে স্পর্শের ক্ষমতা রাখতেন গোলাম মুরশিদ। ১৯৯১ থেকে লন্ডনে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা আর গবেষণার কাজটি সাফল্যের সঙ্গে চালিয়ে যান। খ্যাতি অর্জন করেছিলেন লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের 'স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ'এর গবেষণা সহযোগীরূপেও। 'ভয়েস অফ আমেরিকা'র বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁর কন্ঠ বারবার ধ্বনিত হয়েছে। সপ্রতিভ সেই কণ্ঠস্বরে ঝলসে উঠেছে আত্মবিশ্বাসের আগুন। চিরপ্রণম্য অগ্নি যখন হৃদয়-যুক্তিতে ভর করে, তখন তার গতিরোধ করে কার সাধ্যি!

অমৃতের সম্ভাব্যতা নিয়ে বড়োসড়ো মাপের তত্ত্ব না সাজালেও সভ্যতার সংকট নিয়ে একটা মাথাব্যথা তিনি অবশ্যই অনুভব করেছিলেন। রোজকার সামাজিক ক্ষেত্রে বিকল্প জীবনদর্শনের পাশাপাশি পর্যালোচনা করেছিলেন বিকল্প সামাজিক হেজেমনি প্রতিষ্ঠার অজস্র তাগিদকে। সে জন্যেই কি ইতিহাসপ্রসূত স্বপ্নকে খুব সহজেই শব্দের দলিলে বন্দী করলেন গোলাম মুরশিদ! বাঙালির অন্তর্জগতে 'কালচারালিজ়ম' শব্দটি এসে প্রবেশ করলে যেন আত্মসচেতনতার প্রশ্নটি আবার টাল খেয়ে যায়! সেই কান্টীয় পুরাতন অথচ চির আধুনিক প্রশ্ন— ‘What is Enlightenment?’ যেন সহসা বিনির্মিত হয়ে গর্জে উঠল! ইতিহাসের বিভিন্ন স্তরকে আত্মস্থ করে গোলাম মুরশিদ লিখলেন— ‘হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি’ (২০০৫)। আপেক্ষিক সমাজতত্ত্বের প্রতিভাস থেকে উপকরণগত যুক্তিকে সাজিয়ে নিয়েছিলেন প্রাবন্ধিক গোলাম। বঙ্গের উৎপত্তি, মনস্তত্ত্ব, রুচি-বিশ্বাস, আবেগ-অনুভূতি, স্বপ্ন-প্রত্যাশাকে সংকীর্ণ ফ্রেমের বাইরে ফুটিয়ে তোলার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। নিজস্ব পুনর্গঠিত দর্শনের সাহায্যে ইতিহাসগত ধারাবাহিকতার সূত্রে খুঁজতে চেয়েছেন বাঙালির সার্বিক মুক্তির অজস্র সম্ভাবনা। তবে প্রগতিমুখী মানবতাবাদের কথা এই কালজয়ী গ্রন্থের পর্ব থেকে পর্বান্তরে ধ্বনিত হলেও যুক্তিবাদী বিজ্ঞানমনস্কতা ঠিক কতখানি নিহিত, সে বিষয়ে সমালোচকরা সংযোগী প্রশ্নও তুলেছেন। যেমন, রিচার্ড এম ইটন রচিত ‘The Rise of Islam and the Bengal Frontier, 1204–1760’ (১৯৯৬) গ্রন্থ থেকেই নিজের এই বইয়ের একটা মেটা-ন্যারেটিভ গড়ে তুলেছিলেন বলেও শোনা যায়। কিন্তু, এ কথা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, ‘হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি’ বইটিতে ‘এথিক্যাল সোশ্যালিজ়ম’-এর বিস্তার ঘটেছে বেশ অনেকার্থদ্যোতনায়। অনুষঙ্গের প্রস্তর দিয়ে বঙ্গজ ইতিহাসের আবর্তকে অনবদ্য নথি নির্মাণের খাতে বইয়ে দিলেন গোলাম মুরশিদ। ফলত সুকুমার সেনের উত্তরসাধক তথা বাংলা সাহিত্যের তাবড় তাবড় গবেষকরাও ধন্য ধন্য করে উঠলেন।



মধুসূদন দত্ত ও নজরুল ইসলামের জীবনের প্রতি এক প্রগাঢ় অনুরাগ ছিল তাঁর। বাঙালি কী হারিয়েছে?— এ প্রশ্ন তাঁকে করা হলে তিনি হয়তো নিশ্চিতভাবে এই দুজনেরই উল্লেখ করতেন। রহস্যাবৃত সময়ের উদ্ভাবন আর সংস্কৃতির মিশ্র প্রবাহ – এ দুয়ের মিথষ্ক্রিয়া অনুভব করেছিলেন গোলাম মুরশিদ। তিনি যে শ্রেষ্ঠ মধু-রসিকদেরই একজন ছিলেন তার পরিচয় মেলে ‘আশার ছলনে ভুলি’-র (১৯৯৫) ভূমিকা থেকে। ভার্সাই-এর সরকারি এবং মিউনিসিপ্যাল আর্কাইভস, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, গ্রেজ ইন লাইব্রেরি, ব্যর্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরি পর্যন্ত তন্নতন্ন করে খুঁজে যে নথিপত্র জোগাড় করেছিলেন, সে কথার উল্লেখ করেছেন স্বয়ং গোলাম মুরশিদই ভূমিকা অংশে। সুখী পারাবতের মতো মধুভক্ত মোটেও ছিলেন না তিনি, তাই সেই অক্ষয় ঐতিহ্যবাহী চরিত্র মধুসূদনের নিজেকে অনিবার্য পালটে-ফেলার ইতিবৃত্তকেই চিহ্নিত করতে চেয়েছিলেন। কোনও শুষ্ক স্মৃতিতর্পণ নয়, ‘আশার ছলনে ভুলি’ বাংলা সংস্কৃতির এক অভিনব প্রস্থান। কোনও বিশেষ অনুকল্পের প্রতি এখানে তাঁর বিশ্বস্ততা কিংবা দায়বদ্ধতা প্রতিফলিত হয়নি, বরং সামগ্রিক চেষ্টাই ছিল নির্মোহ দৃষ্টিতে একটা communicative strategy গড়ে তোলা। ভাষাতত্ত্বে যাকে অপ্রত্যক্ষতা ও অস্পষ্টতার কৌশল বলা হয়, তার কিছু কিছু দৃষ্টান্ত অবশ্য মেলে মধুসূদনের জীবন-বীক্ষালব্ধ এই গবেষণাকর্মটিতে। ‘বিদ্রোহী রণক্লান্ত নজরুল-জীবনী’ (২০১৮) বেশ বিতর্কিত একটি সৃষ্টি যেখানে অ-পরিবর্তনীয় বিদ্রোহী নয়, বরং বহুরূপী হিসেবে নজরুলকে আবিষ্কার করেছেন গোলাম। জীবনীসাহিত্য-সংরূপটি রচনার প্রশ্নে অকপটে স্বীকার করেছিলেন যে লিটেরারি বায়োগ্রাফিই লেখেন তিনি। বঙ্গদেশের ‘হিউম্যানিস্ট পণ্ডিত’ হিসেবে বিদ্যাসাগরের কৃতিত্বর কাছে যে নির্দ্বিধায় নতজানু হয়েছেন, তার প্রমাণ তাঁরই সম্পাদিত গ্রন্থ ‘বিদ্যাসাগর— সার্ধশত-বর্ষ স্মারকগ্রন্থ’(১৯৭০)।

‘রাসসুন্দরী থেকে রোকেয়া: নারীপ্রগতির একশো বছর’ (১৯৯৩) গ্রন্থে তিনি রাসসুন্দরী দেবী, কৈলাসবাসিনী দেবী, জ্ঞানদানন্দিনী দেবী, বিবি তাহেরন নেছা, কৃষ্ণভাবিনী দাস, রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন প্রমুখ বিদুষী নারীদের প্রতিবাদী স্বর তুলে ধরেছেন। আসলে গোলাম মুরশিদ পাঠককে কোনও তোতা-ইতিহাসের গল্প বলেননি, শুনিয়েছেন সামাজিক বিস্ময়ের ফ্রেমে গুমরে ওঠা সহৃদয়ের কথকতা। উপনিবেশিত সমাজ থেকে আধুনিকোত্তর বঙ্গভূমে বাঙালির যেটুকু স্বকীয় ভাষ্য নির্মিত হয়— তাকেই সমকালীন চেতনার বৃত্তে রূপদানের প্রয়াস করেছেন। তাঁর ‘Reluctant Debutante: Response of Bengali Women to Modernization , 1849-1905’ বইটির অনুবাদ ‘সংকোচের বিহ্বলতা— আধুনিকতার অভিঘাতে বঙ্গরমণীর প্রতিক্রিয়া ১৮৪৯-১৯০৫’ প্রকাশিত হয় ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্য আকাদেমি থেকে। স্ত্রী এলিজাকে উৎসর্গ করা এই বইতে স্ত্রীশিক্ষা ও নারীস্বাধীনতা প্রসঙ্গে বঙ্গসমাজের প্রথা-ঐতিহ্য আর অনুভূতির বিমিশ্র সমাহার পরিলক্ষিত।

‘যখন পলাতক: মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলি’ (১৯৯৩) বইটিতে তাঁর ছদ্মনাম হাসান মুরশিদ গ্রহণের সত্যি গল্পটি মেলে। শখে নয়, এই নাম গ্রহণের পিছনে আসল কারণ ছিল শুধুই মুক্তিযুদ্ধ পরিস্থিতিতে পারিবারিক নিরাপত্তা রক্ষা। ‘মুক্তিযুদ্ধ ও তারপর: একটি নির্দলীয় ইতিহাস’ (২০১০) একটি স্ববিরোধকে বুঝে নেওয়ার দলিল। রাষ্ট্রের সীমা ও স্বাধীনতা, জাতীয়তাবাদের সন্দর্ভ , সাংস্কৃতিক শাসন আর জীবনের অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্র --- ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ আদতে ঠিক কোথায়, সেই উৎসের সন্ধানে তৎপর হয়েছিলেন এই গ্রন্থে। ইতিহাসের দুর্লভ মুহূর্তকে স্মৃতির আলোকায়নে বিচার করে নিয়েছেন— ঠিক  কতটা প্রামাণিক ছিল মুক্তিযুদ্ধের রোমহর্ষক মুহূর্তগুলো!

কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রদত্ত বিদ্যাসাগর বক্তৃতামালার ওপর ভিত্তি করে তাঁর রচিত গ্রন্থ ‘রবীন্দ্রবিশ্বে পূর্ববঙ্গ, পূর্ববঙ্গে রবীন্দ্রচর্চা’ প্রকাশিত হয় ১৯৮১ সালে। ‘রবীন্দ্রনাথের নারী’ প্রবন্ধের শেষে রবীন্দ্র-কথাসাহিত্যের নায়িকাদের বয়স-সীমার যে তালিকাটি সংযোজিত করেছেন, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। ‘রবীন্দ্রনাথের ধর্মীয় পরিচয়’ অংশে ‘রবীন্দ্রনাথ অমুসলমান ছিলেন’ শব্দবন্ধটি ধর্মনিরপেক্ষ রবীন্দ্র-অনুরাগীকেও ভাবতে বাধ্য করে।

তাঁর পিএইচডি অভিসন্দর্ভের ওপর ভিত্তি করে লেখা ‘সমাজ সংস্কার আন্দোলন ও বাংলা নাটক’ প্রকাশিত হয় ১৯৮৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। বিধবাবিবাহ, কৌলীন্য-প্রথা, স্ত্রীশিক্ষা, নারীমুক্তি ইত্যাদির সঙ্গে বাংলা নাটকের সম্পর্ক নিরূপণ করে এক পরিবর্তনশীল আকাশকে যেন তুলে ধরেছে এই গবেষণাগ্রন্থ। সগর্বে ঘোষিত হয়েছে – বাংলা নাটকের দুনিয়ায় কোথাও কোনও অর্ধেক আকাশ নেই! বিবর্তনের যাবতীয় অনুপুঙ্খকে আত্মস্থ করেই সম্পাদনা করেছিলেন ‘বিবর্তনমূলক বাংলা অভিধান’, যা বাংলা আকাদেমি থেকে প্রকাশিত হয়েছে। ডায়াস্পোরিক মনন নিয়েই করেছেন শব্দানুসন্ধান, যার সূত্র ধরে নির্মাণ করা যায় সমকালীন বাঙালির সাংস্কৃতিক অবস্থান।

প্রবন্ধ সাহিত্যের জন্য ১৯৮২'তে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার'এ ভূষিত গোলাম মুরশিদ, ২০২১ সালে ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদক লাভ করেন। কালের যাত্রায় ভাসতে ভাসতে বাঙালি যখন মনে করে, এই তো দিব্যি আছি, তখনই তাঁর সৃজনবিশ্ব মুখর হয়ে ওঠে। আর বাঙালি প্রত্যক্ষ করে, তাদের কথায় ও কাজে অবিশ্বাস্য ফারাক! তখনই প্রয়োজন পড়ে তাঁর লিখনবিশ্বের মুখোমুখি দাঁড়াবার! সমকালীন বৈপরীত্য থেকে প্রাগৈতিহাসিক যুগের এক একটি স্মৃতি-কণাকে সঞ্চয়ের সাহস রাখতেন তিনি। 

২২ অগস্ট, ২০২৪, বৃহস্পতিবার, লন্ডনের কুইন্স হাসপাতালে মারা যান ৮৪ বছরের গোলাম মুরশিদ। অমনি বাঙালি সমাজ হারিয়ে ফেলল সহজ কিছু প্রশ্ন, যার উত্তর খোঁজার পথটি চক্রব্যূহভেদের ন্যায় দুরূহ।


No comments:

Post a Comment