এবারে চূড়ান্ত লড়াই ও তারপর...
শাহেদ শুভো
দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সাড়া দিয়ে ছাত্র-নাগরিক ৩ অগস্ট শহীদ মিনারে সমবেত হন। বিচ্ছিন্নভাবে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তরুণরা শহীদ মিনার জড়ো হতে থাকেন। এ সময় তাদের সঙ্গে বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নিতে দেখা যায় বয়স্ক নাগরিকদেরও। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শহীদ মিনারে সমবেত ছাত্র-জনতার উদ্দেশে বক্তব্যে এক দফা দাবি ঘোষণা করেন কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠনের সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম--
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রিসভাকে পদত্যাগ করতে হবে।
অসহযোগ আন্দোলনের রূপরেখা ঘোষণা করেন আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ--
১) কেউ কোনও ধরনের ট্যাক্স বা খাজনা দেবেন না;
২) বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, পানির বিল সহ কোনও ধরনের বিল পরিশোধ করবেন না;
৩) সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত ও কল-কারখানা বন্ধ থাকবে। আপনারা কেউ অফিসে যাবেন না, মাস শেষে বেতন তুলবেন;
৪) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম বন্ধ থাকবে;
৫) প্রবাসীরা ব্যাঙ্কিং চ্যানেলে কোনও ধরনের রেমিট্যান্স দেশে পাঠাবেন না;
৬) সব সরকারি সভা, সেমিনার, আয়োজন বর্জন করবেন;
৭) বন্দরের কর্মীরা কাজে যোগ দেবেন না। কোনও ধরনের পণ্য খালাস করবেন না;
৮) দেশের কোনও কল-কারখানা চলবে না, গার্মেন্টস কর্মী ভাইবোনেরা কাজে যাবেন না;
৯) গণ পরিবহন বন্ধ থাকবে, শ্রমিকরা কেউ কাজে যাবেন না;
১০) জরুরি ব্যক্তিগত লেনদেনের জন্য প্রতি সপ্তাহের রোববার ব্যাংক খোলা থাকবে;
১১) পুলিশ সদস্যরা রুটিন ডিউটি ব্যতীত কোনও ধরনের প্রোটোকল ডিউটি, রায়ট ডিউটি ও প্রটেস্ট ডিউটিতে যাবেন না। শুধু থানা পুলিশ নিয়মিত থানার রুটিন ওয়ার্ক করবে;
১২) দেশ থেকে যেন একটি টাকাও পাচার না হয়, সব অফশোর ট্রানজেকশন বন্ধ থাকবে;
১৩) বিজিবি ও নৌবাহিনী ব্যতীত অন্যান্য বাহিনী ক্যান্টনমেন্টের বাইরে ডিউটি পালন করবে না। বিজিবি ও নৌবাহিনী ব্যারাক ও কোস্টাল এলাকায় থাকবে;
১৪) আমলারা সচিবালয়ে যাবেন না, ডিসি বা উপজেলা কর্মকর্তারা নিজ নিজ কার্যালয়ে যাবেন না;
১৫) বিলাস দ্রব্যের দোকান, শো-রুম, বিপনি-বিতান, হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকবে। তবে হাসপাতাল, ফার্মেসি, জরুরি পরিবহন সেবা, যেমন, ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পরিবহন, অ্যাম্বুলেন্স সেবা, ফায়ার সার্ভিস, গণমাধ্যম, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য পরিবহন, জরুরি ইন্টারনেট সেবা, জরুরি ত্রাণ সহায়তা এবং এই খাতে কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিবহন সেবা চালু থাকবে।
এছাড়া নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকানপাট বেলা ১১ থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
যদিও ১ দফা দাবি অগস্ট মাসে ঘোষিত হয়, কিন্তু ছাত্ররা ঘোষণা করে জুলাই এখনও বহমান, শেখ হাসিনার পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত জুলাই বহমান, তাই এই লেখায় ৪ আগস্টের বদলে লেখা হল ৩৪ জুলাই।
অসহযোগ আন্দোলন ঘিরে এদিন অনেক জেলায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, সংঘর্ষ এবং গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে ৯৮ জন সাধারণ মানুষ ও পুলিশ নিহত হয়। লক্ষ্মীপুরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয় এক কলেজ ছাত্র। আহত হয় অর্ধশতাধিক মানুষ। বেলা ১১টার দিকে জেলা শহরের উত্তর তেমুহনী থেকে ঝুমুর পর্যন্ত এলাকায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দুপুর ১২টার দিক থেকে সরকারের নির্দেশে মোবাইল অপারেটররা দেশ জুড়ে ফোর-জি নেটওয়ার্ক সেবা বন্ধ রাখে। ৫ অগস্ট ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বেলা ২টা পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়।
সারা দেশের মধ্যে সংঘর্ষে সিরাজগঞ্জে পুলিশের ১৩ সদস্য সহ ২২ জন, রাজধানীতে ১১, ফেনীতে ৮, লক্ষ্মীপুরে ৮, নরসিংদীতে ৬, সিলেটে ৫, কিশোরগঞ্জে ৫, বগুড়ায় ৫, মাগুরায় ৪, রংপুরে ৪, পাবনায় ৩, মুন্সিগঞ্জে ৩, কুমিল্লায় পুলিশের সদস্য সহ ৩, শেরপুরে ৩, জয়পুরহাটে ২, ভোলায় ১, হবিগঞ্জে ১, ঢাকার কেরানিগঞ্জে ১, সাভারে ১, বরিশালে ১, কক্সবাজারে ১, গাজীপুরের শ্রীপুরে ১ জন নিহত হন। পুলিশের সদর দফতর থেকে এক বার্তায় জানানো হয়, ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সর্বাত্মক আন্দোলন ঘিরে ৪ অগস্ট দেশের বিভিন্ন জায়গায় ২৭টি থানা-ফাঁড়ি, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, রেঞ্জ অফিসে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় তিন শতাধিক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
ত্রিমুখি সংঘর্ষে প্রথম দিনেই রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে নীলফামারী। ভাঙচুর করা হয়েছে নীলফামারী-২ আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূরের বাড়ি। এতে আহত হয় অন্তত ১২ জন। অসহযোগ আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতা এড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তিন দিনের (৫, ৬ ও ৭ অগস্ট) সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। বলা হয়, সাধারণ ছুটিকালীন সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত, আধা- স্বায়ত্বশাসিত এবং বেসরকারি অফিসগুলো বন্ধ থাকবে। তবে জরুরি পরিষেবা যেমন বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, অন্যান্য জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস ও বন্দরগুলোর কার্যক্রম, পরিচ্ছন্নতা, টেলিফোন, ইন্টারনেট, ডাকসেবা এবং এই সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত যানবাহন ও কর্মীরা এই ছুটির আওতার বাইরে থাকবেন। এছাড়া ঢাকা সহ সব বিভাগীয় সদর, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, শিল্পাঞ্চল, জেলা ও উপজেলা সদরের জন্য সন্ধ্যা ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের পৃথক তিনটি বিজ্ঞপ্তিতে এদিন জানানো হয় সান্ধ্য আইন (কারফিউ) চলাকালে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম ও সব দফতর ও শাখা বন্ধ থাকবে। তবে প্রধান বিচারপতি জরুরি বিষয়ে প্রয়োজন সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। একই সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতিতে ৫ অগস্ট থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত হাইকোর্ট বিভাগ ও দেশের সব অধস্তন আদালত বা ট্রাইব্যুনালের বিচারিক ও দাফতরিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে অবিলম্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব- ‘রূপান্তরের রূপরেখা’- দেয় 'বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক'। প্রস্তাব অনুসারে, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগ করবে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ 'মার্চ টু ঢাকা' কর্মসূচির তারিখ ৬ অগস্টের পরিবর্তে ৫ অগস্ট সোমবার পালনের ঘোষণা দেয়। এতে সারা দেশ থেকে আন্দোলনকারীদের ঢাকায় আসার আহ্বান জানানো হয়।
৩৫ জুলাইয়ের আগের রাত থেকেই সারা দেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, কিন্তু ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে বাংলাদেশের ইতিহাস বদলে যেতে শুরু করে। লক্ষ থেকে কোটি ছাত্র–জনতা রাস্তায় নেমে এসে শহীদ মিনারের দিকে অগ্রসর হতে থাকে; অন্যদিকে ঢাকার প্রায় ১১টা পয়েণ্টে অবস্থান নেয় ছাত্র–জনতা। পুলিশ, বিজিবি তার আগের রাত থেকেই নিষ্ক্রিয় হতে শুরু করেছে। তারা ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছিল, আর পারছিল না জনতার সাথে প্রতিরোধে। আওয়ামী লীগ সারা দেশে প্রতিহতের ঘোষণা দেয় কিন্তু শুধুমাত্র ঢাকায় মিরপুর ১০'এ আওয়ামী লীগের কর্মীরা অবস্থান নেয়। সেনাবাহিনী জনগণের পক্ষে দাঁড়িয়ে যায়, তারা জনগণের বিরুদ্ধে গুলি চালাতে অস্বীকার করে। সবখানেই আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করা শুরু হয়। সেনাপ্রধান জাতির উদ্দেশ্য ভাষণের ঘোষণা দেন, ছাত্র–জনতার কাছে সময় চান। এরপর জানা যায়, শেখ হাসিনা এবং তার বোন শেখ রেহানা পালিয়ে গেছেন। হাসিনা পদত্যাগ করেছেন।
সেনাকুঞ্জে সেনাপ্রধান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে এই আশু পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে দেশে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। অন্যদিকে ছাত্ররা চায়, যেহেতু এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে তারা, তাদের পছন্দের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হতে হবে। তারা ডঃ মহঃ ইউনুসের নাম প্রস্তাব করে। বঙ্গভবনে ছাত্র প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করেন রাষ্ট্রপতি। এর আগে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে বৈঠক করেন। সর্বসম্মতিতে ডঃ ইউনুসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করা হয়। এই লেখা যখন লিখছি তখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত প্রথিতযশা বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সহিত আন্দোলনে যুক্ত দুইজন গুরুত্বপূর্ণ সমন্বয়ক সহ ১৭ জনকে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা মনোনয়ন করা হয়েছে। ভবিষ্যতের বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার এবং ফ্যাসিবাদের মূল উৎপাটনের জন্য যে রাষ্ট্র মেরামতের কর্মসূচি জারি করা হয়েছিল, এইভাবেই তার সূচনা হল।
বাংলাদেশের এই জুলাই বিপ্লবের ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ বিজয়ের নেতৃত্বে ছিল Gen-Z। বিখ্যাত এক গণমাধ্যম বাংলাদেশের এই আন্দোলনকে 'Gen-Z মুভমেন্ট' হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এই বিপ্লব একটা সামাজিক সমস্যা থেকে রাজনৈতিক আন্দোলনের রূপ নেয়। আওয়ামী লীগের মতো একটা জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকার তীব্র বাসনায় কীভাবে একটা হাইব্রিড ফ্যাসিস্ট রেজিমে পরিণত হয়ে জনবিছিন্ন হয়ে যায়, তা আমরা দেখলাম। এই ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের রাজনীতির অনেক পুরনো বয়ান ভেঙে দিয়েছে, এই আন্দোলন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আস্তিক-নাস্তিক সহ সকল রাজনৈতিক মতাদর্শকে চ্যালেঞ্জ করেছে। যদিও এই আন্দোলন কখনই কোন বিশেষ রাজনৈতিক দল নিয়ন্ত্রণ করেনি, আবার দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের মতো বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক ট্রাডিশনাল দলগুলো এই তরুণদের মন বুঝতে ব্যর্থ, তাই মাঠের রাজনীতিতে বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক চিন্তার জন্ম নেওয়ার সমূহ সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যা বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের সাংস্কৃতিক গঠনগুলোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এই আন্দোলনকে ছাত্র-জনতার বিপ্লব বলা হলেও অন্যান্য দেশের বিপ্লবী সরকারের মতো তা গঠিত হয়নি। এখনও বর্তমান সংবিধান এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আলোকেই তা নির্বাচিত। যেহেতু রাজনৈতিক দলের অনুপস্থিতি এবং ছাত্রদের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলি নিয়ে বিরূপতা আছে, তাই তার প্রভাবে ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আবার এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দীর্ঘমেয়াদী হলে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার কতটুকু শক্তিশালী হবে, না একটা বি-রাজনীতিকরণের আড়ালে সমাজের সুবিধাবাদী শ্রেণি আরও শক্তিশালী হবে, সে প্রশ্ন থেকে গেছে!
কিন্তু ছাত্ররা সজাগ ও সক্রিয় রয়েছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে গণ অভ্যুত্থানে বাসাবো, খিলগাঁও, মান্ডা, মুগদা, কদমতলা, মাদারটেক, রাজারবাগ, সবুজবাগ, নন্দীপাড়া, মায়াকানন, আহমদবাদ এলাকার যে সব সাধারণ শিক্ষার্থী ও জনগণ অংশ নিয়েছিলেন, তাদের নিয়ে ৯ অগস্ট বিকালে বাসাবো বালুর মাঠে একটি ‘গণ অভ্যুত্থানকারী সাধারণ ছাত্র-জনতার অধিবেশন’ আয়োজন করা হয়। অধিবেশনে বিভিন্ন এলাকার শিক্ষার্থীরা কেমন ধরনের নতুন বাংলাদেশ চায় সেটি তুলে ধরে। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বক্তব্য রাখেন আন্দোলনে শহীদ আশিকুল ইসলামের (১৬) বাবা রিকশাচালক ফরিদুল ইসলাম। এই অধিবেশন থেকে এলাকার সর্বজনের স্বার্থে গণ অভ্যুত্থানকারী সাধারণ শিক্ষার্থী জনতার পক্ষ থেকে ১০টি করণীয় দেওয়া হয়। করণীয়গুলো হল:
১) এলাকায় পুলিশ সহ কোনও গোষ্ঠীর চাঁদাবাজি চলবে না। করলে সেটি সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ করা হবে;
২) এলাকায় ভিন্ন ধর্ম বা জাতির উপর কোনও হামলা চলবে না;
৩) নারীদের উপর কোনও যৌন নির্যাতন, হয়রানি করা হবে না;
৪) এলাকায় কোনও সন্ত্রাস, লুটপাট কিংবা অস্ত্রের মহড়া চলবে না;
৫) কথা বলার জন্য কারও ওপর হামলা বা কাউকে হয়রানি, গ্রেফতার করা যাবে না। প্রত্যেকের কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে;
৬) জোর করে বা ভয় দেখিয়ে কাউকে কোনও মিছিল সমাবেশে নেওয়া যাবে না;
৭) ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেফতার, হয়রানি, পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন চলবে না;
৮) এলাকার রাস্তাঘাট ও বাড়িঘরের চারপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে;
৯) কারও আত্মমর্যাদায় আঘাত করা চলবে না;
১০) কোনও স্থাপনা বা ভাস্কর্য ভাঙা চলবে না।
তারপরও বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্য এই মুহূর্তে রাষ্ট্র সংস্কার প্রয়োজন এই কারণে যে, আর কোনওদিন কোনও সরকার যাতে সংবিধান পরিবর্তন করে ফ্যাসিস্ট না হয়ে যায়। এই দেশের প্রতিটা মানুষ যাতে কোনও পরিচয় বা অর্থনৈতিক কারণে বৈষম্যের শিকার না হয়, যেন এক ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস শুধু হতাহত মানুষের ইতিহাস হিসেবে নয়, মানুষের মুক্তির সংগ্রামের ইতিহাস হিসেবে লিপিবদ্ধ থাকুক।
প্রথম পর্বের লিঙ্ক:
https://ekakmatra2013.blogspot.com/2024/08/blog-post_9.html
No comments:
Post a Comment