যুক্তরাষ্ট্র বনাম একনায়কতন্ত্র
অনিন্দ্য ভট্টাচার্য
গত ৮ ফেব্রুয়ারি ‘ইন্ডিয়া টুডে’ ‘মুড
অফ দ্য নেশন’ নামে একটি নির্বাচনী সমীক্ষা প্রকাশ করেছে যেখানে দেখা যাচ্ছে, এই
মুহূর্তে যদি লোকসভা নির্বাচন হয় তাহলে এনডিএ জোট ৩৩৫টি (প্রদত্ত ভোটের ৪৫ শতাংশ)
ও ইন্ডিয়া জোট ১৬৬টি (প্রদত্ত ভোটের ৩৮ শতাংশ) আসন পেতে পারে। এনডিএ’এর শরিক
হিসেবে বিজেপি পাবে ৩০৪টি, গতবারের চেয়ে যা ১টি মাত্র বেশি। আমরা যদি ক্ষণিকের
জন্য তর্কের খাতিরে এই সমীক্ষাটিকে ‘মোটের ওপর ঠিক’ বলে গণ্য করি, তাহলে দুটি
তাৎক্ষণিক ধারণার উদয় হবে: এক) ‘অব কি বার ৪০০
পার’ এই ঢক্কানিনাদটি মাঠে মারা গেল শুধু নয়, এর ধারেকাছেও পৌঁছনো গেল না এবং দুই)
‘ইন্ডিয়া’ জোট যদি কায়মনোবাক্যে মনে করে, তাহলে এখনও সময় আছে এই ফলকে নিজেদের
অনুকূলে ঘুরিয়ে দেওয়ার।
প্রথমেই প্রশ্ন উঠবে, গতবারের এনডিএ
জোটের প্রাপ্ত ৩৫৩টি আসন এবার ১৯টি কমে ৩৩৫’এ নেমে আসছে কেন? যুক্তিবাদী মোসায়েবরা
বলবেন, এই সামান্য কম-বেশি তো হতেই পারে, এ আর এমন কী! একদম ঠিক! ১৯ কি ২০টি আসন
কম-বেশি হলে কিচ্ছুটি যায় আসে না যদি দুবার টানা ক্ষমতায় থেকে তৃতীয়বারেও ক্ষমতা
দখল করা যায়। দশ বছরের প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার সামান্য মাশুল তো গুনতেই হবে। কিন্তু
প্রশ্নটা সেখানে নয়।
প্রশ্নটা হল, এই সমীক্ষা মোতাবেক ঠিক
কোথায় কোথায় এনডিএ খানিক ধাক্কা খেল (আসন হারালো) ও আশাহত হল (যা ভেবেছিল তা হল না,
মোটামুটি স্থিতাবস্থাই রইল)? ‘ইন্ডিয়া’ কোথা থেকে আসন সামান্য বাড়াতে পারল ও
আশান্বিত হল (সমীক্ষায় স্থিতাবস্থা দেখালেও লড়ে নেওয়ার সুযোগ রইল)?
সমীক্ষা অনুযায়ী, এনডিএ যেখানে
যেখানে ধাক্কা খেল সেখানে সেখানে স্বভাবতই ‘ইন্ডিয়া’ কিছুটা লাভবান হল। যেমন,
পঞ্জাব, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, বিহার, তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ু, অসম ও কর্নাটকে
গতবারের থেকে এনডিএ সামান্য হলেও পিছিয়ে পড়েছে এবং ‘ইন্ডিয়া’ এগিয়েছে। মহারাষ্ট্রে
এই ধাক্কা প্রবল। এখানে এনডিএ’র আসন প্রায় ২০’র কাছাকাছি কমে যাবে বলে আশঙ্কা।
একমাত্র অন্ধ্রপ্রদেশে, না এনডিএ না ‘ইন্ডিয়া’- কারওরই লাভক্ষতি নেই, এখানে মূল
লড়াই ওয়াইএসআর বনাম টিডিপি। কিন্তু সে ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হল, এই দুটি
দলই বিশেষত টিডিপি এনডিএ’র শরিক হতে বিজেপি’র সঙ্গে দরকষাকষি করছে বলে খবর। যদি
টিডিপি এনডিএ’তে সামিল হয় তবে তা অবশ্যই ‘ইন্ডিয়া’র মাথাব্যথার পক্ষে যথেষ্ট।
কারণ, সমীক্ষানুযায়ী টিডিপি ১৭টি আসন পেতে পারে। উল্টোদিকে, অল্প কিছু রাজ্যে দেখা
যাচ্ছে, এনডিএ সামান্য হলেও আগেরবারের চেয়ে বেশি আসন পাচ্ছে। যেমন, উত্তরপ্রদেশ।
এখানে এনডিএ ৭০টি পেতে পারে বলে অনুমান, যা গতবারের থেকে ৮টি বেশি।
অন্যদিকে, কোথায় কোথায় স্থিতাবস্থা
বজায় থাকছে কিন্তু লড়াইয়ের সুযোগ রয়েছে? প্রথমেই আসবে পশ্চিমবঙ্গের নাম। এখানে
এনডিএ ১৯, টিএমসি ২২ ও কংগ্রেস ১ বলে দেখানো হয়েছে। পাশাপাশি, বিহারে যদিও এনডিএ’র
আসন গতবারের চেয়ে ৫টি কমবে বলা হয়েছে, কিন্তু এখানেও লড়াইয়ের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।
ঝাড়খণ্ডেও স্থিতাবস্থা থাকছে, কিন্তু যেহেতু সমীক্ষাটি হেমন্ত সোরেনের গ্রেফতারি ও
তাঁর দলের বিধানসভায় বাউন্স ব্যাক করে আসার আগেই সেরে ফেলা হয়েছে, তাই নতুন
পরিস্থিতিতে এখানেও অবশ্যই লড়াইয়ের সুযোগ তৈরি হবে।
অর্থাৎ, ‘মুড অফ দ্য নেশন’ সমীক্ষাকে
গণ্য করলে, মোট চারটি রাজ্যে এবারে জোর লড়াইয়ের সম্ভাবনা আর সেখান থেকেই নির্ধারিত
হতে পারে আগামী লোকসভার অন্তিম ফলাফল। মহারাষ্ট্রের কথা আগেই বলেছি। সম্ভবত, ভয়
দেখিয়ে শিবসেনা ও এনসিপি দল ভেঙ্গে জোরজবরদস্তি সরকার তৈরি, বিশেষত, অজিত পাওয়ারের
মতো দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের নিজেদের জোটে টেনে আশ্রয় দেওয়ায় বিজেপি’র প্রতি
বিশ্বাসযোগ্যতা বহুল পরিমাণে নষ্ট হয়েছে বলে অনেকের ধারণা। সমীক্ষা-লব্ধ আরও একটি
তথ্য থেকেও এর ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, যেখানে দুর্নীতি বিষয়ে বিরোধীদের বিরুদ্ধে
এজেন্সি যতই সক্রিয় হোক, বিজেপিকে দুর্নীতিমুক্ত বলে ৪৭ শতাংশ মানুষ মনে করছেন না।
পরিসংখ্যানটি যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
দ্বিতীয় রাজ্যটি হল বিহার। এখানে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের জবরদস্ত লড়াই দেবার সম্ভাবনা প্রবল।
প্রথমত, দীর্ঘদিন ধরে মূলত তিনটি দলের ‘মহাগঠবন্ধন’ এখানে বেশ মজবুত (বরং হঠাৎ করে
জেডি(ইউ) ঢুকে পড়ায় ভারসাম্যের কিঞ্চিৎ অসুবিধা হচ্ছিল বলে খবর)। দ্বিতীয়ত,
তেজস্বী যাদব উপ-মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন কর্মসংস্থানের বিষয়ে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেওয়ায়
যুবসমাজের মধ্যে তুমুল জনপ্রিয় হয়েছেন। তৃতীয়ত, মনোজ ঝা, দীপঙ্কর ভট্টাচার্য ও
তেজস্বী যাদবের পরিণত ও বাস্তববোধসম্পন্ন রাজনৈতিক নেতৃত্ব এই মহাগঠবন্ধনের পক্ষে
ভাল জনমত সংগঠিত করতে পেরেছে এবং সিপিআই(এমএল) লিবারেশন যদি কিছু বেশি আসনে
লড়ার সুযোগ পায় তাহলে গত বিধানসভা নির্বাচনে তাদের যে অত্যন্ত ভাল স্ট্রাইকিং রেট
ছিল, তা বেশ চমকপ্রদ সাফল্য পাবে বলে অনুমান। ফলে, বিহারেও এনডিএ অন্তত ২০-২৫টি
আসন হারাতে পারে। তার জন্য অবশ্য এখন থেকেই ‘মহাগঠবন্ধন’কে আদাজল খেয়ে নামতে হবে।
তৃতীয় রাজ্যটি নিঃসন্দেহে ঝাড়খণ্ড।
এখানেও ‘ইন্ডিয়া’ জোট সম্প্রতি এক কঠিন পরীক্ষায় নিজেদের মজবুতিকে দৃঢ় করতে
পেরেছে। বিধানসভার ফ্লোর টেস্টে হেমন্ত সোরেনের উদ্দীপক ভাষণ, মূলবাসী অস্মিতার
ওপর কেন্দ্রীয় সরকারের আঘাত ও দল ভাঙানোতে বিজেপি’র ব্যর্থ কসরতে জনমতে এক ব্যাপক
পরিবর্তন এসেছে বলে বহুজনে বলছেন। যদি ‘ইন্ডিয়া’ জোট এখন থেকেই সর্বাত্মক ভাবে আসন
বোঝাপড়া করে ঝাঁপিয়ে পড়ে, তাহলে ১৪’টার মধ্যে ১২টা জিতে যাওয়া ঘোরতর সমস্যা হবে বলে
মনে হয় না।
চতুর্থ গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যটি আমাদের
পশ্চিমবঙ্গ। এখানে মূল প্রতিপক্ষ তৃণমূল ও বিজেপি। সমীক্ষাতেও তাই প্রতিভাত হয়েছে
এবং কংগ্রেস-বাম জোটকে ১টি মাত্র আসন দেওয়া হয়েছে। অতএব, তৃণমূল এখানে একাই
বিজেপিকে মোকাবিলা করতে অনেকটাই সক্ষম; যদি কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হয় তাহলে এই
মোকাবিলা অন্তত তিনটি জেলায় আরও শক্তিশালী হবে। এ রাজ্যে বিজেপি যেখানে এখনও
ছন্নছাড়া, গোষ্ঠী কোন্দলে দীর্ণ, একা কুম্ভ শুভেন্দু অধিকারীর চোখ পাকিয়ে তীব্র
পাগলামি, সেখানে তৃণমূল ইতিমধ্যেই মাঠে নেমে পড়েছে; যদিও নানা বিষয়ে, বিশেষত
দুর্নীতি নিয়ে শাসক দলের বিরুদ্ধে জনমানসে এক গভীর অসন্তোষ দানা বেঁধে আছে।
সন্দেশখালিতে বিরাট সংখ্যক মানুষের লাগাতার প্রতিবাদ তার জোরালো ইঙ্গিত দিচ্ছে। এখানেই
লড়াইয়ের তাৎপর্য- মাটি কামড়ে পড়ে (২০২১ সালের মতো) তৃণমূল যদি নিজের অন্যায়গুলিকে
মেরামতি করে লড়াই দিতে পারে, তালেগোলে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটও হয়ে যায়, তাহলে
বিজেপিকে ৫’এর নিচে বেঁধে ফেলা তেমন কোনও সমস্যা হবে বলে মনে হয় না। সে ক্ষেত্রে
বিজেপি এ রাজ্যে ১৩ থেকে ১৫টি মতো আসন হারাতে পারে।
তাহলে, মহারাষ্ট্রে আরও ৫, বিহারে
২০, ঝাড়খণ্ডে ১০ ও পশ্চিমবঙ্গে ১৫টি আসন যদি এনডিএ সমীক্ষা-লব্ধ প্রাপ্তি থেকে হারায় তাহলে তার মোট আসন সংখ্যা
নেমে আসবে ২৮৫’তে। আর বিজেপি নেমে যাবে ২৫৪’এ- একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার অনেক নিচে। এটা
কি সম্ভব? এখানেই লড়াইয়ের মাহাত্ম্য। কেউ সহজে জায়গা ছেড়ে দেয় না কিন্তু জায়গা
তৈরি করে নিতে হয়।
এ ব্যতীত আরও তিনটি বিশেষ উপাদান
থেকে যাচ্ছে:
১) ‘ইন্ডিয়া’ জোট ছেড়ে যদি আরও কেউ
বেরিয়ে যায় অথবা এই জোটের বাইরের অন্য কোনও শক্তি এনডিএ’তে সামিল হয় তাহলে ‘কোথাকার
জল কোথায় গড়াবে’ তা কিন্তু নিতান্তই হাতের বাইরে;
২) সমীক্ষায় যদিও বলা হয়েছে
কংগ্রেসের আসন ৭১’এ এসে দাঁড়াবে, অর্থাৎ, গতবারের ৫২ থেকে ১৯টি বাড়বে, দেখা
যাচ্ছে, এই আসনগুলি মোটেই সেইসব রাজ্য থেকে আসছে না যেখানে তারাই মূল শক্তি এবং তাদের মূল
প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি। আসনগুলি আসছে সেইসব রাজ্য থেকে যেখানে কংগ্রেস আঞ্চলিক
দলগুলির সঙ্গে হয় জোটে আছে নয় বিপক্ষে। তাই, কংগ্রেস যদি তার নিজ গড়ে বিজেপিকে
সামান্যতম ভাবেও পরাজিত না করতে পারে তাহলে মূলত আঞ্চলিক দলগুলির ওপরেই ‘ইন্ডিয়া’ জোটকে
জেতানোর দায়িত্বভার এসে পড়ছে। এর চেয়ে করুণ অথচ সম্ভাবনাপূর্ণ অবস্থা আর কী হতে
পারে!
৩) মনে রাখতে হবে, রামমন্দিরে কিন্তু
চিঁড়ে ভিজছে না- হিন্দি বলয়ে কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে মাত্র। বরং, মোদি সাহেব ‘বিক্ষিত
ভারত’ নিয়ে প্রচারে নেমেছেন, তার চারটি স্তম্ভের কথা বলছেন- মহিলা, যুবা, কৃষক ও
গরিব। বিষয়টি বেশ মজার। গরিব ছাড়াও তিনি মহিলা, যুবা ও কৃষকদের আলাদা করে
গুরুত্ব দিচ্ছেন। ‘গ্যারান্টি’র কথা বলছেন। এগুলো সবই একদা তাঁরই তিরস্কৃত ‘রেউড়ি’গুচ্ছ,
যাকে তিনি গত এক বছরে মৌলিক কার্যসূচিতে অঙ্গীভূত করে নিয়েছেন। অর্থাৎ, ‘রেউড়ি’ বা
‘ডোল’ কিংবা ‘ভিক্ষার দান’, যাই বলে গাল পাড়া হোক না কেন, জনকল্যাণের রাজনীতিই যে
এখন প্রধান স্রোত তা দায়ে পড়ে অতি-দক্ষিণপন্থীদেরও হজম করতে হচ্ছে! এবারের লোকসভার
লড়াইও এই বিন্দুতেই।
শেষের কথা এই, দেখা যাচ্ছে, আজকের আঞ্চলিক রাজনীতির বিবিধ বৈশিষ্ট্যের মধ্যেই ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত স্বর নিহিত, যা আত্মপ্রকাশে ব্যাকুল। জাতীয় একনায়কতন্ত্রের যে ধ্বজা উড়িয়ে মোদি-শাহ’এর নেতৃত্বে হিংস্র নখ-দাঁত বের করা হয়েছে, তার বিনাশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত উন্মোচনের মধ্য দিয়েই হবে। হয়তো, আগামী লোকসভা নির্বাচন তার একটা ফয়সালা করতে পারে। হয়তো দেখা যাবে, আঞ্চলিক দলগুলির যুক্তরাষ্ট্রীয় সম্মিলনেই এক নতুন ভারতের অবয়ব স্বাধীনতার ৭৫ বছর পর ২০২৪’এই উদ্ভাসিত হচ্ছে।
খুব সুন্দর বিশ্লেষণ।
ReplyDeleteখুব ভাল বিশ্লেষণ , তবে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হওয়াটা দূর অস্ত বলেই মনে হয়। অধীর চৌধুরীর বাচন ও তৃণমূলের প্রতি দৃষ্টিভগীর বিশেষ কোন পরিবর্তন হয় নি। কংগ্রেস হাইকমান্ড এখনো কোন পদক্ষেপ করেনি। তবে ঠিকই বলেছেন যে বাংলায় অন্তর্দ্বন্দ্বে বিদীর্ন বিজেপি কতটা এগোতে পারে এটাই দেখার।
ReplyDeleteপশ্চিমবঙ্গে 'ইন্ডিয়া' জোট কাজ করার বিন্দুমাত্র লক্ষণ নেই - কং ও সিপিএমের জোট ছাড়া। বরং অঘোষিত জোট এখানে দুটি পার্টির - তৃণমূল ও বিজেপি। সংঘের ঘোষিত নীতি - বাম যেন কোনভাবেই আসতে না পারে, তার চেয়ে তৃণ ঢের ভালো। রাজ্যে তুমি (তৃণ), কেন্দ্রে আমি(বিজে) - এই নীতিতেই ছাপ্পাভোটের ভাগাভাগি হবে। আর যদি সঠিকভাবে ভোট ও গণনা হয়, তবে মনে হয়, বাম- কংগ্রেস অন্তত ২০ টি আসন, বিজেপি ১০টি, তৃণ ১২টি পেতে পারে। কিন্তু সেতো হবার নয়। দিদি-মোদি এক হবেই।
ReplyDelete