অউর আহিস্তা... সাক্ষী উধাস
অমৃতা ঘোষাল
(১৭ মে ১৯৫১ - ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪)
"और आहिस्ता कीजिये बातें
धड़कनें कोई सुन रहा होगा
लब्ज़ गिरने ना पाये होंठों से
वक़्त के हाथ इनको चुन लेंगे"
তখন আমার সদ্য দুই বিনুনি ছেড়ে শ্যাম্পু করা খোলা চুলে কোচিং-এ যাওয়ার বয়স। ব্যাস, প্রেমে পড়লাম টুপ্ করে। একদিন সাইকেলকে সাক্ষী রেখে বাল্যপ্রেমিক গেয়ে উঠল-- "অউর আহিস্তা, কিজিয়ে বাতে"...; উৎসাহ ভরা বুকে, লজ্জামাখা চোখে ঘরে ফিরে টিভিতে ওই গানটাই শুনেছিলাম। অমনি 'পুলক মুকুল অবলম্ব' ব্যাপার। পঙ্কজ উধাসের কণ্ঠের সঙ্গে ওটাই আমার প্রথম পরিচয়।
গজ়লের দুনিয়ায় এক উজ্জ্বল নক্ষত্র তিনি। নির্দোষ প্রশংসা, ইন্দ্রিয়াতীত প্রেম- সবটাই ধরা থাকত তাঁর গানে। আমরা কয়েকজন যারা নিতান্তই বোকাসোকা বলে প্লেটনিক প্রেমে বিশ্বাস রাখি, তাদের কাছে পঙ্কজ উধাসের গানের একটা আলাদা আবেদন ছিল। স্মৃতি-সত্তা-ভবিষ্যৎ মিলে যেন একটা মায়াবী আবরণ তৈরি করে দিত সেই সংগীত। একক রাগ-রাগিনীর লীলা নয়, অথচ বিভিন্ন ঠাট ছুঁয়ে চলেছে। গোঁড়া সংগীতবেত্তারা একে লঘু সংগীত বলতেই পারেন। কিন্তু যা হৃদয়কে খোঁড়ে, তাকে কি আর লঘু বলা চলে? গজ়ল আনন্দে কাঁদায়, কাঁদলে এক অনন্য তৃপ্তি বুকের কানায় টলটল করতে থাকে। গলা ছেড়ে বলতে ইচ্ছে করে, 'আমাকে অনুভব করো।'
গুজরাটের রাজকোটের কাছেই চরখাদি গ্রামের এক ঐতিহ্যবাহী জ়মিনদার পরিবারে তাঁর জন্ম। কেশুভাই উধাস ও জিতুবেন উধাসের তিন পুত্রের মধ্যে পঙ্কজ কনিষ্ঠতম। পিতা কেশুভাই নাকি প্ৰখ্যাত বীণাবাদক আব্দুল করিম খানের কাছে দিলরুবা বাদ্যটি বাজানোর প্রশিক্ষণ নিতেন। পুত্রদের সংগীতের প্রতি আগ্রহ দেখে তাদের রাজকোট সংগীত একাডেমিতে ভর্তি করেন পিতা। প্রথমে তবলার প্রশিক্ষণ নিতে আরম্ভ করেন পঙ্কজ, ক্রমশ ধ্রুপদী সংগীতের প্রতি তাঁর গভীর অনুরাগ জন্মায়। তাঁকে ক্লাসিক সংগীতরীতির তালিম দিতেন স্বয়ং গোলাম কাদের খান। এরপর গোয়ালিওর ঘরানায় সংগীতকে আত্মস্থ করেন মাস্টার নভরঙ্গ নাগপূরকরের কাছে। স্মর্তব্য যে, ওস্তাদ আমন আলী খানের শিষ্য নভরঙ্গ ছিলেন ভেন্ডিবাজার ঘরানার কিংবদন্তী শিল্পী। সুতরাং, তাঁর শিষ্য পঙ্কজের গায়কী শৈলী যে কালজয়ী হবে, তা বলাই বাহুল্য।
কয়েক বছর পর তবলা ও কণ্ঠসংগীতের মেলবন্ধনকে গভীরভাবে উপলব্ধি করার জন্যে রাজকোটেই সংগীত-নাট্য একাডেমিতে যোগ দেন পঙ্কজ। সমান্তরালে উইলসন কলেজ ও মুম্বাইয়ের সেন্ট জেভিয়র্স কলেজে স্নাতক পাঠক্রমও চালিয়ে যান। এরপর 'কামনা' (১৯৭২) ছবিতে নক্শ-এর লেখা আর ঊষা খান্নার সুরারোপিত গান গেয়ে রীতিমতো সকলের নজর কাড়েন। এবার গজ়লকে যথাযথ ভাবে উপলব্ধির জন্যে উর্দু শিখতে আরম্ভ করেন। কেরিয়ার হিসেবে গজ়লের ক্ষেত্রকেই বেছে নেন পঙ্কজ। এরপর বিদেশে বেশ কিছু মাস থেকে ভারতে ফিরে আসেন। আর তাঁকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। হিন্দি ছবির প্লেব্যাক গায়ক হিসেবে তিনি যেমন সার্থকতা পান, তেমনই তাঁর গানের অ্যালবামগুলোও দুর্দান্ত জনপ্রিয় হয়।
গজ়লকে যদি কেউ ওড (ode) ভাবেন, তাহলে তার সার্থক উদাহরণ পঙ্কজের 'চান্দি জ্যায়সা রঙ হ্যায় তেরা /সোনে জ্যায়সে বাল'...
"चाँदी जैसा रंग है तेरा सोने जैसे बाल
एक तूही धनवान है गोरी बाकी सब कंगाल"
উঁহু, এখানে নানা -ism-পন্থীরা আপত্তিকর কিংবা বৈষম্যমূলক কিছু খুঁজবেন না। আসলে ভালোবাসার মানুষ যে সর্বদাই অন্তর-দৃষ্টিতে সর্বোত্তম। দেহ আর মন সেখানে ওতপ্রোত জড়িত। আবার গোঁড়া বিশেষজ্ঞরা বিরক্ত হবেন। গজ়লের উৎসে যদি সুফিয়ানার ভূমিকা থাকে তবে দেহবাদী ইতিকথা কেন? আসলে রূপের আধারে রূপাতীতকে পরিবেশন করাই তো শিল্পীর লক্ষ্য।
"मयख़ाने से, शराब से, साक़ी से, जाम से
अपनी तो ज़िंदगी शुरू होती है शाम से"
অ্যালকোহলিজ়মকে প্রমোট করছেন-- এরকম অভিযোগও তাঁর দিকে ধেয়ে এসেছে। আসলে গজ়লে সুরা-সাকী কিংবা পানপাত্র- এ সমস্তই একটা রূপক মাত্র। আসল অন্বিষ্ট হল প্রেম কিংবা আত্মা! তাই নারীদেহ কিংবা মদ্যের অনুষঙ্গ এখানে ইরোটিক প্রেমকে আভাসিত করেনি, বরং ফুটিয়ে তুলেছে হৃদয়ের স্নেহ-সবুজ অনুভূতিটুকু।
এবার ১৯৮৬। মুক্তি পেল সঞ্জয় দত্ত অভিনীত 'নাম' ছবিটি। দেশ-দেশান্তরে ছড়িয়ে পড়ল সেই অতুলনীয় কন্ঠ --
"चिट्ठी आई है आई है चिट्ठी आयी है
चिट्ठी है वतन से चिट्ठी आयी है
बड़े दिनों के बाद
हम बेवतनो को याद
वतन की मिटटी आई है"
অবাক লাগে শুনতে যে, এই চিরন্তন গানটিই প্রাথমিকভাবে গাইতে রাজি হননি পঙ্কজ। ছবির প্রযোজক রাজেন্দ্র কুমার, পরিচালক মহেশ ভট্ট আর কাহিনিকার সেলিম খান সাহেবের পরিকল্পনা অনুযায়ী এই গানের জন্যে একেবারে নিখুঁত ছিলেন পঙ্কজ। তাঁরা শুধু চেয়েছিলেন গায়কের একটা লাইভ পারফরমেন্স থাক। ভুল বুঝেছিলেন পঙ্কজ। ভেবেছিলেন, গানের পথ থেকে সরিয়ে তাঁকে এবার হয়তো বা অভিনয় জগতে নামানোর কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। তাই ছবি-নির্মাতাদের প্রস্তাবে প্রথমে কোনও উত্তরই দিতে চাননি তিনি। এই আচরণে ছবির প্রযোজক-পরিচালক খুবই রুষ্ট হন। পরে পঙ্কজকে স্পষ্ট করে জানানো হয় যে, তাঁকে তাঁর নিজস্ব পরিচয়েই ছবিতে দেখানো হবে, শুধু গানটুকুর স্বার্থে। পঙ্কজ তখন বোঝেন, তাঁকে অভিনয় করতে হবে না, শুধু ক্যামেরার সামনে নিজস্ব পরিচয়ে গান গাইতে হবে। প্রবাসীর হৃদয় জুড়ে বাজতে থাকে এক অজানা চিঠির অনুরণন। কাউকে চিঠি পাঠানোর কিংবা কারও চিঠি পাওয়ার আর্তি। হৃদয় থেকে এক একটা শব্দ খসে যেখানে প্রিয়জনের কাছে পৌঁছে যায়। পঙ্কজ উধাসের কন্ঠ আর দর্শকদের কান্না এক স্রোতে মিশে গেল! হিন্দি ছবির গানের জগতে এ স্রোত এক নতুন অভিঘাত নিয়ে এল। এই অভিঘাত কিছুমাত্র কর্কশ নয়, তা মসৃণ আর মর্মস্পর্শী।
এই উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব ২০০৬-এ তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালামের হাত থেকে গ্রহণ করেছিলেন পদ্মশ্রী। দীর্ঘদিন ধরে অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত পঙ্কজ কর্কট ও থ্যালাসেমিয়া রোগাক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসার জন্যে যথাসাধ্য সাহায্য করেছেন। এছাড়াও দেশে-বিদেশে বহু সম্মান-পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। সে তালিকা বড় দীর্ঘ। তবে তাঁর জীবনের প্রথম পুরস্কারটি কিন্তু গজ়লের জন্যে নয়। ভারত-চীন যুদ্ধের সময়ে 'অ্যায় মেরে ওয়াতন কে লোগো' গেয়ে এক শ্রোতার থেকে ৫১ টাকা উপহার পেয়েছিলেন তিনি।
মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। স্ত্রী ফারিদা উধাস, কন্যা নায়াব ও রেভা আর দুই দাদা নির্মল আর মানহর উধাসের কান্নার চেয়েও অসীম সত্য কিছু আছে। বিপুল সংখ্যক গজ়ল-অনুরাগী মানুষ আছেন, যাঁদের হৃৎকমলে চিরকাল মহব্বতকে জাগিয়ে রাখবেন পঙ্কজ। তাই 'চিটঠি আয়ি হ্যায়'-এর বিরহ-মহব্বতে সিক্ত লাইনগুলো স্মরণ করে তাঁকে প্রণিধান জানানো যাক -
"तेरे बिन जब आई दीवाली
दीप नहीं दिल जले हैं खाली
तेरे बिन जब आई होली
पिचकारी से छूटी गोली"
My 1st response. Write up touched the feelings. Bohemian teen age & 'ek taraf uska ghar, ek taraf maykada' ...
ReplyDeleteবাঃ সুন্দর লেখা
ReplyDeleteসুন্দর তথ্যবহুল লেখা।
ReplyDelete