'মেঘনাদবধ কাব্য'
আজকের নতুন বাতিঘর
প্রবুদ্ধ বাগচী
(২৫ জানুয়ারি ১৮২৪ - ২৯ জুন ১৮৭৩)
ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম
বলে যাকে অভিহিত করা হয়, সেই 'সিপাহি বিদ্রোহ' ঘটতে তখনও দশ বছর দেরি। আর ঠিক তার
একশো বছর পরেই আমরা মুক্তি পাব উপনিবেশের দমবন্ধ নাগপাশ থেকে। ইতিহাসের সেই এক
অপরিচিত সন্ধিক্ষণে মাত্র তেইশ বছরের এক যুবা পাড়ি দিলেন মাদ্রাজে। পেছনে পড়ে রইল
তাঁর কলকাতার উথালপাথাল দিনগুলি। হিন্দু কলেজ, মন মাতিয়ে দেওয়া ইংরেজি সাহিত্যের মাস্টারমশাইরা, প্রবল বন্ধুদলের হই-হুল্লোড়, খামখেয়ালিপনা,
মদিরায় মজে থাকা বিভোর সব সকাল-বিকেল-সন্ধ্যে; আর সাহিত্যের
আসঙ্গলিপ্সা। ওই যুবাকালেই তাঁর ধনী পিতা তাঁকে ত্যাজ্যপুত্র করেছেন হিন্দু থেকে
খৃস্টধর্মে দীক্ষা নেওয়ার জন্য। হিঁদু-বাড়ির কালেজে-পড়া-ছোঁড়া কেরেস্তান হওয়ায়
কলকাতায় সে এক বিচিত্র শোরগোল। অমন আমুদে আর অমিতব্যয়ী দিলখোলা তরুণের চোখের ওপর কিন্তু তখন অভাব আর
অভাব। মাদ্রাজ তাঁকে আশ্রয় দিল। প্রথমে একটি অনাথ আশ্রমের সামান্য চাকরি, তারপর মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত একটি স্কুলে শিক্ষকের
পদ। ইতিমধ্যে আটটি ভাষা তাঁর শেখা হয়ে গেছে, তার মধ্যে আছে
মাদ্রাজ প্রদেশের প্রধান ভাষা তামিল।
আর এই ভাষা জানার সূত্রেই তিনি খুঁজে পেলেন তাঁর আবাল্য শোনা ‘রামায়ণ' কাহিনির এক ভিন্ন ভাষ্য। একই সঙ্গে প্রেমে পড়লেন এক নীল-নয়না তন্বীর। তিনিই প্রথম বাঙালি যিনি সচেতনভাবে বেছে নিয়েছেন কোনও ইউরোপিয় নারীকে, ধর্ম-বর্ণ-জাত-ভাষা সব তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে। আর এখান থেকেই তিনি বুঝতে পারলেন ‘রামায়ণ’ আসলে একটা চলমান আখ্যান, তার কোনও অচল আয়তন সত্য সত্যিই নেই। কারণ, উত্তর ভারতে প্রচলিত তুলসীদাস বিরচিত ‘রামচরিত মানস’-এ রামের যে স্বরূপ, বিন্ধ্য পর্বতের এপারে এসেই তা পাল্টে যায় অনায়াসে। কারণ, তামিল রামায়ণে নায়ক হলেন রাবণ আর রাম-লক্ষ্মণ নিতান্তই খলনায়ক, তামিল আখ্যানকাররা কোথাও তাঁদের দেবায়িত করেননি। করবেনই বা কেন? ঐতিহাসিকভাবে রামায়ণের গপ্পো আসলে দক্ষিণ ভারতের অনার্য আদিবাসীদের ওপর উত্তর ভারতীয় আর্যরাজাদের আধিপত্যের কাহিনি। এই অনার্যদের এককালে উত্তর ভারতে তাঁদের আদি বাসভূমি থেকে উৎখাত করেছিল সেই আর্যরাই, তারই যেন ধারাবাহিকতা রামায়ণের চেনা ভাষ্যে। আমাদের পরিচিত এই তরুণটি সবদিক দিয়েই ‘রেবেল’।তিনি বাংলা ভাষার বদলে ইংরেজিতে মিল্টনের মতো মহাকাব্য লিখতে চান। আবার তাতে ব্যর্থ হয়ে আক্ষেপ করেন— আশার ছলনায় তিনি পথ ভুল করেছেন। কিন্তু অন্যরকম একটা কিছু তাঁকে করতেই হবে, যা আগে কেউ করে দেখাননি। ওতেই তাঁর ছটফটে আর দুরন্ত সৃজনশীল মনের প্রশ্রয়।
আকাশচুম্বী সৃজনপ্রতিভা, নিকষ আবেগ আর ভিন্ন কিছু করে দেখানোর মরিয়া তাগিদ- এই তিনের চকমকি পাথরের স্ফুলিঙ্গ থেকেই লেখা হল ‘মেঘনাদবধ কাব্য’। তখন সেই যুবকের বয়স মাত্রই চল্লিশ থেকে তিন বছর আগে থমকে আছে। আর সেই বছরেই জোড়াসাঁকোর গলিতে পৃথিবীর আলো দেখবেন আরেক অন্যগোত্রের বাঙালি। মেঘনাদ নিধনের উপাখ্যান নিয়ে এই যে নতুন জাতের সাহিত্য, তার ছিল স্পষ্ট তিনটে দিক। বাংলা ভাষার গদ্য যখন অল্পে অল্পে বিকশিত হচ্ছে বিদ্যাসাগর প্রমুখের কলমে, তখন এই লেখায় ঝলসে উঠল বাংলা ভাষার ব্ল্যাঙ্ক ভার্স; একই সঙ্গে স্পর্ধা দেখানো হল এইভাবে যে, মহাকাব্য কোনও অনড় প্রস্তরখণ্ড নয় যে তাকে সবসময় তার আদিরূপেই বন্দনা করতে হবে। আর, উনিশ শতকের রক্ষণশীল হিন্দুসমাজ যখন ‘ডিরোজিয়ান’দের উৎপাতে উদব্যস্ত, রামমোহন-ঈশ্বরচন্দ্রের কুসংস্কার-বিরোধী কর্মসূচিতে জেরবার, তার পাশেই অকুতোভয় এই যুবক লিখে ফেললেন ‘সনাতন’ রামকাহিনির প্রতিস্পর্ধী এক আগুনে-কাব্য যেখানে ইন্দ্রজিত-জায়া সোচ্চারে বলেন, তিনি রাম নামক ভিখারিকে আদৌ ভয় পান না! অহো কী দুঃসহ স্পর্ধা! কাব্যকার জানতেন, গড়পড়তা বাঙালির ঘরে এতে ছুঁচোবাজি ঢুকে যাবে। গেলও।
তবে তাতে তাঁর কিছু যায় আসে না। তিনি তখন প্রাণের আনন্দে লিখতে শুরু করেছেন বাংলা সনেট। কে বলেছে ‘সনেট’ নামক ইউরোপিয় কবিতার বিশেষ ছাঁচ কেবল ইউরোপের ভাষাতেই লেখা যায়? ওসব প্রাক-সংস্কার হেলায় তুচ্ছ করে দেওয়ার জন্যই তো তিনি সগর্বে পায়চারি করছেন বাংলা সাহিত্যের বারান্দায়। নিত্যনতুন তৈরি হচ্ছে আনকোরা সব লেখা। ইতিমধ্যে আদ্যোপান্ত প্রেমিক যুবার সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটবে তাঁর প্রথম প্রণয়িনীর। তবু জীবনের সান্দ্র ছায়াপথে চলতে চলতে তাঁর কেবলই মনে হবে, এ পৃথিবীতে বিলীয়মান আত্মিক শান্তির একমাত্র শুশ্রূষা হতে পারে নারীরাই। এবং তিনি প্রেমে পড়বেন পুনর্বার। প্রেমের সঙ্গে এবার সন্তান। তার সঙ্গে ছেয়ে থাকা আর্থিক অনটন এবং সুরালিপ্সা। স্থায়ী চাকরি নেই, উপার্জন নামমাত্র— তবু বিলাসের দিকে তাঁর ঝোঁক ফিরিয়ে নেওয়া প্রায় অসম্ভব। তবু শেষ অবধি তিনি বিলেত গেলেন এবং ‘বার অ্যাট ল’ হিসেবে নথিভুক্তিও পেলেন। সেটা ১৮৬২।
কিন্তু তাঁর জীবন যে অন্যরকমভাবে বেঁচে থাকবার জন্যই নির্দিষ্ট। দেশে থাকতে তার আগেই তিনি বাজি ফেলে লিখতে শুরু করেছিলেন বাংলা নাটক। তখন বাংলা নাট্যমঞ্চ ইউরোপিয় আদর্শের ছায়ায় নবীন সাজে সজ্জিত হতে চলেছে। নাট্যগৃহগুলি দাবি করছে নতুন বাংলা নাটক। সেই দাবি মেটানো হবে কী করে ? তৈরি হল ‘শর্মিষ্ঠা’ নাটক এবং অচিরেই তা মঞ্চস্থ হল বেলগাছিয়ার নতুন নাট্য প্রেক্ষাগৃহে। কিছু আড়ষ্টতা তো ছিলই, কারণ, এই নাটকটিও লেখা হয়েছিল বাংলা ভাষার ব্ল্যাঙ্ক ভার্সে। কেমন হবে তার অভিনয়ের ধরন? তবু তিনি উতরে গেলেন। কিন্তু থেমে থাকার জন্য তিনি কলম তুলে নেননি। তাই এরপরেও অবিরল স্রোতের মতো নাটকের স্ফূর্ত প্রবাহ সিঞ্চিত করে চলল বাংলার নাট্যসাহিত্য-- 'পদ্মাবতী', 'একেই কি বলে সভ্যতা', 'বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ'। শুধু কি তাই? বাংলায় লেখা ‘নীলদর্পণ’ যখন শাসকের রোষানলে পড়ে বন্ধ হয়ে গেল, প্রায় দানবীয় ক্ষমতায় এক রাতের মধ্যে তিনি তা ইংরেজিতে অনুবাদ করে দিলেন। তাঁর নিজের লেখা নাটকগুলিরও কোনও কোনওটা প্রহসন-সাহিত্যকে নিয়ে গেল তুঙ্গ এক শিল্পিত মহল্লায়। সামাজিক সংস্কারের শেকল তাঁকে কোনওদিনই বেঁধে রাখতে পারেনি, তার মূল্য তিনি চুকিয়েছেন জীবন দিয়ে। কিন্তু কলম হাতেও যে সমকালীন সমাজের তমসার সঙ্গে এমনভাবে অসিযুদ্ধ করা যায়, তার আলো জ্বালালেন তিনিই। পেশাগতভাবে তিনি তখন লালবাজার পুলিশ আদালতের অনুবাদক। ইউরোপিয় বিচারকের কাছে আইনি সওয়াল পৌঁছে দেন তাদেরই ভাষায়। এই অনুবাদকের ভূমিকা পরে তাঁকে প্রাণিত করবে ‘ইলিয়াড’ মহাকাব্যের তর্জমায় আর জীবদ্দশায় অসম্পূর্ণ সেই পাণ্ডুলিপি হারিয়ে যাবে কোন গলিপথে।
কিন্তু বিস্ময় এটাই, যে বছর ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ বাংলা সাহিত্যকে তোলপাড় করে তুলবে, ওই একই বছর পরপর প্রকাশ পাবে ‘তিলোত্তমা-সম্ভব’, ‘ব্রজাঙ্গনা’ ও ‘ বীরাঙ্গনা’ কাব্য— প্রতিভা যাকে স্পর্শ করে তাকেই সোনা করে তোলে-- বাংলা সাহিত্যের একেকটি ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ। উচ্চাকাঙ্ক্ষী এই যুবক বিলেতে পৌঁছে মোহমুক্ত হয়েছিলেন তার আবাল্য-চর্চিত ইউরোপিয় সংস্কৃতি বিষয়ে। দেনার দায়ে জর্জরিত তিনি চলে আসেন ভার্সাই নগরে। তার পরে শুধুই অনটন, যন্ত্রণা, কষ্ট— চোখের সামনে পরিবারের অনাহার, রোগ, দারিদ্র। কোনও কোনও প্রতিভার জন্মই হয় এরকম ধূমকেতুর মতো দ্রুত ফুরিয়ে যাওয়ার জন্য। দেশে ফেরার অর্থ ছিল না তাঁর। সহৃদয় বিদ্যাসাগর তাঁকে ফিরিয়ে আনেন কলকাতায়। জীবনের পঞ্চাশটা বসন্তও দেখে যেতে পারেননি। মেডিক্যাল কলেজের এক বিবর্ণ শয্যায় নিভে আসে তারকার আলো। শোনা যায়, শেষ শয্যায় শুয়েও তিনি নাকি অবিরল শেক্সপিয়ার আওড়াতেন।
তারকার আলো কি অত সহজে ফুরিয়ে আসে? প্রতিটি কবিরই নতুন জন্ম হয় তাঁর শারীরিক অবসানের পর। তাঁরও। আর সময়ের একেক কালখণ্ডে ঝলসে ওঠে তাঁর লেখনির আলো। আজ যখন ‘রাম’ নামের প্রকান্ড এক অন্ধকার আমাদের টেনে নিতে চাইছে প্রবল নিঃসংবেদন এক যক্ষপুরীর ভিতর, তখন তাঁর ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ নতুন বাতিঘর হয়ে স্থির করে দিতে পারে আমাদের বাঁচার অভিমুখ। সামাজিক অসাম্য আর তামসিকতার ক্ষয়চিহ্নগুলিকে যখন চেনানো হচ্ছে ঐতিহ্যের ইঙ্গিত হিসেবে তখন মনে পড়ে তাঁর প্রহসনের সুতীব্র কষাঘাত, চাবুকের শপাং শপাং শব্দ। সাহিত্যের কাজ শুধু অনুসরণ নয়, কখনও কখনও প্রশ্ন করা। নতুন চোখ দিয়ে পুরনোর দিকে তাকানোটাও জেগে থাকার মতো একটা ধর্ম। মাত্র উনপঞ্চাশ বছরের পরিসীমায় এতদূর অবধি আলো জ্বালতে জ্বালতে পথ হেঁটেছেন তিনি।
সবে তাঁর দুশো বছর হল। নক্ষত্রদের আয়ু ঢের ঢের বেশি। জীবনের উপান্তে এসে জোড়াসাঁকোর সেই আশ্চর্য বৃদ্ধ চিন দেশে এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, বাঙালিকে তার জীবনের সুখে দুঃখে আনন্দে বেদনায় আবেগে যন্ত্রণায় তাঁর গান গাইতেই হবে। এতটাই জোর সে গানে। ওই অভিভাষণের একদম শেষ বাক্য ছিল: this too is the work of a revolutionist (এইটাও একটা বিপ্লবীর কাজ)। দুশো বছর পেরনো অন্যরকম বাঙালিটিও তার জীবনে ও কালির আঁচড়ে লিখে গেছেন বিপ্লবের অনন্ত ম্যানিফেস্টো। এই শহর কলকাতায় যে সব বাসায় তাঁর বিবর্ণ দিন কেটেছে তার সবটাই কালের জরায়ুতে হারিয়ে গেছে, তার পৈতৃক বসতভিটেটুকুও আজ বেহাত। তবু তাতে কিছু আসে যায় না। লোয়ার সারকুলার রোডের কবরখানায় সাড়ে তিনহাত ভূমিতে তিনি শায়িত থাকলেও তাঁর প্রোজ্জ্বল পদচারণা আজও বাংলা ভাষার অলিন্দে, ঝরোখায়। তিনি মাইকেল মধুসূদন দত্ত।
দারুন ঝরঝরে লেখা। ভালো লাগলো।
ReplyDeleteবাঃ , বেশ লেখা।...
ReplyDeleteএকনিঃশ্বাসে পড়লাম। খুবই সুন্দর আর সাবলীল লেখা। লেখককে ধন্যবাদ।
ReplyDeleteখুব সুন্দর
ReplyDeleteলেখাটি তথ্যের ভুলে ভরা।
ReplyDelete(১)শর্মিষ্ঠা নাটকটি ব্ল্যাঙ্ক ভার্সে লেখা নয়। গদ্যে লেখা।
(২)মেঘনাদ বধের পরে তিলোত্তমা সম্ভব লেখা নয়,আগে ১৮৬০-তে।
(৩)মধ
(৩)মধুসূদনের প্রথম স্ত্রী ছিলেন রেবেকা।তাঁদের চারটি সন্তান ছিল।এই সম্পর্কে থাকা কালেই
ReplyDeleteহেনরিয়েটার সঙ্গে মধুকবির গোপন প্রণয় । কবি বিচ্ছেদ চাইলে
রেবেকা রাজি হন না।কবি চারটি
ReplyDeleteসন্তান ও স্ত্রীকে রেখে মাদ্রাজ ত্যাগ করেন। এজন্য তিনি সারা জীবন অপরাধবোধে ভোগেন।
(দেখুন গোলাম মুরশেদের মহাগ্ৰন্থ
"আশার ছলনে ভুলি"
তামিল রামায়ণের প্রেরণায় মধু কবি রামশ্রেষ্ঠত্বের বদলে রাবণ শ্রেষ্ঠত্বের বিকল্প ধারণায় উদ্বুদ্ধ
ReplyDeleteহন , এমন সিদ্ধান্ত কালাতিক্রমণ
দোষে দুষ্ট।কারণ তামিল রামায়ণ
বা
কম্ব রামায়ণ(৯ম শতাব্দী আনু)
ReplyDeleteসেখানে রাবণ প্রাধান্য নেই।
ReplyDeleteআছে রামভক্তিবাদ।
আধুনিক যুগে দ্রাবিড় আন্দোলনে
আর্য -অনার্য ন্যারেটিভ দেখা দেয়।
ত
তাকে অবলম্বন করে নানা শাখায়
ReplyDeleteসাহিত্য রচিত হয়।মধুসূদন তখন কোথায় না-ফেরার দেশে।
আমার লেখাটি বিষয়ে কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন, তাঁদের শুভেচ্ছা জানাই। শর্মিষ্ঠা নাটক ব্ল্যাঙ্ক ভার্সে লেখা নয়, এটা আমার তথ্যগত ভুল অবশ্যই। প্রকাশকাল হিসেবে মেঘনাদ বধ ও তিলোত্তমা সম্ভব যে ত্রুটি জানানো হচ্ছে তাও সঠিক। কিন্তু এটা ইচ্ছাকৃত নয়। এই বিষয়ে যে বাক্যটি লেখায় ব্যবহৃত হয়েছে, সেখানে 'ওই একই বছর' এর বদলে 'আগের বছর' লেখা উচিত ছিল। দ্রুত লেখা তৈরি ও সম্পাদনার জন্য এই প্রমাদ ঘটেছে। ক্ষমাপ্রার্থী। দাম্পত্য সম্পর্ক বিষয়ে কালসূচি তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। দ্বিতীয় প্রেমিকার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ যে প্রথম স্ত্রীর উপস্থিতিতেই হয়েছিল, তা লেখা আছে। তামিল রামায়নের সঙ্গে 'মেঘনাদ বধ' কাব্যের থিমের মিল মূলত একটা আকাডেমিক বিষয়। অনেকেই এমন মনে করেন। নবনীতা দেবসেনের লেখাতেও এর ইঙ্গিত আছে। যেহেতু এটি একটা সাহিত্যিক ইন্টারপ্রিটেশন, সেখানে ভিন্ন মত থাকতেই পারে। ওইসব মতামতের খুঁটিনাটি বিচার করা ১২০০ শব্দের একটি নাতিদীর্ঘ প্রতিবেদনে সম্ভব ছিল না, দরকারও খুব একটা ছিল বলে মনে হয় না। মেঘনাদ বধের ওপর তামিল রামায়ণের প্রভাব একটি গৃহীত মতবাদ, এটিকে কেউ না মানতেই পারেন। তবে তাতে সেটা লেখার তথ্যগত ভুল নয়। অনেকে লেখাটি পড়েছেন বলে কৃতজ্ঞ থাকলাম।
ReplyDelete