Tuesday, 9 February 2021

অপ্রিয় হলেও সত্য

এক আশ্রম ও তার কথা

অশোকেন্দু সেনগুপ্ত

 

বিশিষ্ট সমাজকর্মী ও পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত মহাশয় জানতে চান বিশ্বভারতীর জমির পরিমাণ ঠিক কত? ৩০০০ হেক্টর থেকে ৪০০ একর নানারকম তথ্য র‍য়েছে সামনে। তার প্রশ্ন: তথ্য হিসেবে কোনটি সত্য? কোনও সন্দেহ নেই যে প্রশ্নটি সহজ ও সরল। সন্দেহ নেই যে, বিরল জিজ্ঞাসু মনের অধিকারী ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তবু, মানতেই হয় যে তিনিও এমন প্রশ্নের উত্তর খোঁজেননি। তাঁর জিজ্ঞাসু মন 'গেলেও বিচিত্র পথে হয় নাই তা সর্বত্রগামী।'  

তবে, তিনি খোঁজেননি বলেই এমন প্রশ্ন তোলা কী অরাবিন্দ্রিক বা অযৌক্তিক? কী বলে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ? তা হয়তো নয়। যদি বলতে পারতাম, 'নিশ্চয় নয়' তবে অনেক অনেক বেশি খুশি  হতে পারতাম। তবে তা প্রাণখুলে বলতে পারছি কই? 

উপাচার্য মহোদয়ের কৃপায় বা ভয়ে ঐ তল্লাটে আর বুঝি কেউ প্রাণখুলে কথা বলতে পারেন না। তিনি আলাপিনী তুলে দিতে ব্যস্ত, ব্যস্ত প্রয়াত শান্তিদেব ঘোষের বাড়ি দখল করতে, ব্যস্ত কাদা ছুঁড়তে। আশ্রমিকদের সব্বাইকে কালিমালিপ্ত করতে চান তিনি। তা, তিনি তাঁর শিক্ষা-দীক্ষা মতো চলবেন বৈকি। বোকা বনেছি আমরা, আমরা যারা ভেবেছিলাম বিশ্বভারতীর উপাচার্য তো - তিনি একটা  সীমা মেনে চলবেন। তিনি কেবল পাঁচিল তুলবেন না, পাঁচিল পেরিয়ে হলেও আসবেন কাছে। এলেন না তো! 

এমন নয় যে তিনিই প্রথম বিশ্বভারতীর জমি চিহ্নিত করতে পাঁচিল দিতে চান। আগেও বহুজন সে কাজে হাত দিয়েছেন, আগেও কিছুজনকে পেয়েছি যারা বিশ্বভারতীর আদর্শে পুরোপুরি প্রাণিত হয়ে উঠতে পারেননি।  কিন্তু এমনটি কেউ ছিলেন বলে তো জানি না। তবে আমি আর কতটুকু জানি, যদিও জানতে চাই অনেক। তেমন জানার আগ্রহ নিয়েই একদিন হাজির হয়েছিলাম আম্রকুঞ্জে, যেখানে নবনিযুক্ত উপাচার্য মহাশয় হাজির হয়েছিলেন কয়েকজন আশ্রমিককে (যথা রামবহাল তেওয়ারি বা সুপ্রবুদ্ধ সেন) সম্বর্ধনা জানাতে। তিনি তখন সবে এসেছেন। সেদিন তাঁর মনে হয়নি সব আশ্রমিক ধান্দাবাজ, যেমন সেদিন সব আশ্রমিকের মনে হয়নি যে উপাচার্য মহোদয় মানুষ ভালো না। তাঁদের অনেকের মনে হয়েছিল যে, দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলি মিথ্যে না হলেও হতে পারে নিছক মানবিক ভুল। এমন ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানে চরিত্রহীন কাউকে সরকার দায়িত্ব পালনে পাঠাতে পারেই না। তখনই কেউ কেউ বলতে শুরু করেছেন, খারাপ দিন আসছে। বিশ্বাস করিনি। নিজের বোকামিতে লজ্জা পাচ্ছি আজ। 

শিক্ষা কমিশনের বৈঠকে শ্রী ব্রহ্মচারী একবার বললেন, তিনি আদর্শ গার্হস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয় (residential University) গড়ার সুপারিশ করতে চান। তার উদাহরণ রূপে তিনি যে সব  বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা ভেবেছেন ও বলেছেন তার অবস্থান বাংলায় নয়। আমি বলেছিলাম - কেন, বাংলাতেই তো এমন উদাহরণ আছে, বিশ্বভারতী। এমন পরামর্শ দেবার জন্য আজ লজ্জিত। লজ্জিত এই জন্য নয় যে ভুল পরামর্শ দিয়েছি, লজ্জিত এই জন্য যে গার্হস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয় (residential University) কর্তা যদি অযোগ্য হ'ন তবে বিপদ বাড়ে। যেমন বেড়েছে বিশ্বভারতীতে। 

যারা বর্তমান উপাচার্যকে ঐ আসনে ডেকে বসিয়েছেন তারা কি সে জন্য লজ্জিত? 

তবে সুভাষ দত্ত মহাশয়ের প্রস্তাব সমর্থনে কোনও লজ্জা নেই। বিশ্বভারতী বলুক না তার জমির পরিমাণ ঠিক কত। কোথা থেকে তারা পেলেন সে জমি? যদি প্রমাণ করতে পারেন যে, শান্তিদেব ঘোষ (তাঁর উত্তরাধিকারীরা) বা অমর্ত্য সেনরা বিশ্বভারতীর জমি নিয়ম বহির্ভূত উপায়ে দখল করে রেখেছেন তবে তাঁরা ফেরত দিন। এমন তো কেউ কেউ অবশ্যই থাকতে পারেন। কেউ কেউ যদি নিয়ম ভেঙ্গে জমি-বাড়ি হস্তান্তর করেছেন, তবে তাঁদের চিহ্নিত করুন উপাচার্য মহাশয় বা বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কেউ যদি অকারণে বা নিছক কলঙ্ক লেপনের খেলায় মাততে চান তবে তো তার প্রতিবাদ হবেই। উপাচার্য মহাশয় কেন মনে রাখছেন না যে তিনি কোনও দল বা গোষ্ঠীর প্রতিনিধি ন'ন, ভয় দেখানো বা ধমক বা চমক দেওয়া তাঁর কাজ নয়। তিনি উপাচার্য। বিশ্বভারতীর উপাচার্য।

 

No comments:

Post a Comment