নির্বাচনী সংস্কার কি জরুরি?
অশোকেন্দু সেনগুপ্ত
রাজ্য বা কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন যে বর্তমানে আদৌ নিরপেক্ষ নয়, তা সকলেই জানেন ও বোঝেন। তা কোনও কালে ছিল কী? মানুষ বোঝে, যখন যে ক্ষমতায় থাকে/ থাকবে সে চাইবে তেমন একটি কমিশন, যে উঠতে বসতে তার কথা মেনে চলবে। মোদী আমলে সরকারের এই কুঅভ্যাসটা চোখে পড়ার মতো বেড়েছে এই যা, এবং তারা যেন গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
তার মানে এই নয় যে অন্য প্রধানমন্ত্রীদের/ মুখ্যমন্ত্রীদের (রাজ্যে রাজ্যে) আমলে সরকারি প্রভাবমুক্ত ছিল নির্বাচন কমিশন। (এই মন্তব্য থেকে বাদ দিচ্ছি দুই ইলেকশন কমিশনার ও তাদের সময়ের কমিশনকে- একজন সুকুমার সেন ( প্রথম চিফ ইলেকশন কমিশনার) অন্যজন টি এন শেষণ। প্রতিটি সচেতন নাগরিক অন্তত এই নাম দুটি 'জীবনে ভুলবেন না'।)
আজ পরিস্থিতি এমন হয়েছে, আমরা মানতে বাধ্য যে নির্বাচন (যে কোনও স্তর বা পর্যায়ে) কার্যত হয়ে উঠেছে এক প্রহসন। মানুষ যতই গণতন্ত্রকে কাছে টানতে চায়, দল ও তার পরিচালকরা তাকে ততই দূরে ঠেলে দেয়। যত দিন যাচ্ছে ততই সংক্রামক রোগের মতো সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়ছে এই ব্যাধি। দলগুলি ও তার নেতারা আস্থা হারাচ্ছে গণতন্ত্রেই। অথচ, আমরা সাধারণ মানুষ চাই গণতন্ত্র। উপায় খুঁজতে বেরিয়েছেন যাঁরা, তাঁরা সকলে চাইছেন নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার।
কেমন সংস্কার? অনেক প্রস্তাব আমাদের সামনে। কেউ চাইছেন ইভিএম সরুক, ফিরুক পূর্ব ব্যবস্থা, তাঁরা আস্থা হারিয়েছেন যন্ত্রে। এ কথা সত্য যে চাইলে যন্ত্রে কারচুপি সম্ভব। তবে সেই পুরনো ব্যবস্থাও পারে না মূল সমস্যাগুলির সমাধান দিতে। অতএব, তাকাতেই হবে মূল সমস্যার দিকে। এ দেশে (বা বলা ভালো, যে কোনও গণতান্ত্রিক দেশেরই) মূল সমস্যা (সংক্ষেপে):
১। ভোটে টাকার খেলা
২। ধর্ম ও সম্প্রদায়ভিত্তিক ভোট।
টাকার খেলা
ভুলতে পারি না যে এই দেশটা গরিব। তবে বড়লোকের দেশেও টাকার খেলা যে নেই তা হলফ করে বলতে পারি না। টাকার খেলা না যদি থাকে তো তার জায়গা নেয় অন্য খেলা। অর্থাৎ, বলতে চাই, যদি লোভ থাকে মানুষের স্বভাবে তো কেমন করে একটা নির্বাচনের সময় তা থেকে মুক্ত হবে মানুষ। অর্থলোভ জয় যদি কেউ করেও তো তাকে লোভ দেখায় অন্য কিছু; যথা, চাকরি, নিজের ও সন্তানের ভবিষ্যৎ, ভালো-মন্দ ইত্যাদি।
ধর্ম ও সম্প্রদায়ভিত্তিক ভোট
এও এমন এক অসুখ যা সব দেশেই আছে কম-বেশি। আমাদের দেশেও চিরদিন তার প্রভাব দেখা গেছে বেশ কিছুটা। সম্প্রতি তার প্রভাব যেন বেশ বেড়েছে।
এই সমস্যাগুলি থেকে বেরব কোন পথে! পথ তো অনেক। যেমন,
কেউ কেউ চাইছেন সরকারি অর্থে নির্বাচন। সরকার ইচ্ছে করলে কত কী উপায়ে অর্থ জোটাতে পারে তা দেখিয়েছেন মোদিজী। আবারও বলি, এরকম খেলা তিনি প্রথম খেলছেন এমন নয়। তবে, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের বদলে তিনি হিসেব দিতে হয় না এমন এক ফান্ড চালু করেছেন যা অবশ্যই অভিনব (PM Care Fund)। বলতে ইচ্ছে করে, দুর্বৃত্তের ছলের অভাব হয় না। দুর্বৃত্ত কে সে কথা নিশ্চয় সকলে বোঝেন। এই মানুষটিকে কেউ মহামানবও বলতে পারেন। তবে, এমন কূটবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের হাতে কোনওভাবে কোনও খরচের সুযোগ থাকলেই বিপদ! সরকারি অর্থে নির্বাচন আরও অনেক জটিলতার জন্ম দিতে পারে, যেমন কেউ বলতেই পারেন আমার ট্যাক্সের টাকা...। টাকার ভাগ নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। যতদিন দেশে শিল্পপতিরা থাকবেন ততদিন খরচের অভিন্নতা কার্যত অসম্ভব। আরও পথ আছে।
যেমন, দলহীন গণতন্ত্র। সেই কবে এক মহামানব যেন আমাদের এমন পরামর্শ দিয়েছিলেন, আমরা শুনিনি, মানিনি। চেষ্টা অবশ্য করেছি যাতে অন্তত পঞ্চায়েত দলহীন হয়। আমরা তাও পারিনি। ফল কী সাংঘাতিক হতে পারে তার নমুনা দেখছি রোজ এই পশ্চিমবঙ্গে। তা বলে, দলহীন গণতন্ত্র মানা সহজ সে কথাও ভাবা যায় না।
তাহলে পথ কি নেই? নিশ্চয় আছে। আমরা কেবল সম্ভাব্য পথ নিয়ে কথা বলতে পারি, অন্য কিছু নয়। সম্ভাব্যতা নিয়ে প্রধান সমস্যা এই যে, সেখানে উঁকি দেয় সংখ্যাতত্ত্বও। আর কে না জানে, সংখ্যাতত্ত্বে অনেক কেরামতি দেখানো সম্ভব।
কর্নাটক নির্বাচনের পর বহু দল ও তাদের সমর্থকদের মধ্যে সাহস ও আশা বেড়েছে। মানুষ বুঝেছে মোদি অপরাজেয় নয়। অনেকের মনে হচ্ছে যেন, কেন্দ্রে তাদের দল বুঝি ক্ষমতায় এল বলে। এমনটাই মানুষ ভাবত ১৯৬৭-র আগে, ভাবত বুঝি কংগ্রেস গেল বলে। তা তেমন না ভাবলে বা তেমন না ভাবাতে পারলে আর পৃথক দল করা কেন? তেমন ভাবতেই হয়। এবং ভাবাতেই হয়। তাতে দোষ নেই। কিন্তু তার মানে এই নয় যে মানুষ তার সাধ্যের সীমা কী তা ভাববে না।
সাধ্যের সীমা ভাবছে যারা তারাও এবার কর্নাটক নির্বাচনের ফল দেখে উৎসাহিত। এমন নয় যে কর্নাটক নির্বাচনের ফল অস্বাভাবিক বা অপ্রত্যাশিত। তবে সাধারণ নির্বাচনের ঠিক আগে তো এমন ফল নিয়ে আশা জাগে। তাই হয়েছে। উৎসাহ বেড়েছে বা জেগেছে কেবল কংগ্রেস সমর্থকদের মধ্যে, তা নয়। সব বিরোধী দলের কর্মী ও সমর্থকই প্রবল উৎসাহিত। তবু চিন্তা বা ভয় যায় না। অনেক নিশ্চিত দেখায় বিজেপিকে। কেন? কারণ, তারা এও জানে যে বিরোধী শক্তি একজোট হতে পারবে না। তাই ৩০ শতাংশ সমর্থন এলেও তারা ক্ষমতায় থাকবে, যেমন আগে ছিল। হিসেবটা ভুল বলা যায় না। এই সত্য বদলের জন্য বিরোধী দলগুলির ঐক্য জরুরি। তবে যতই জরুরি হোক তা হবার নয়। বলে না, সাত মণ তেলও পুড়লেও রাধাও নাচবে না। তবে উপায়?
আমরা যারা গণতন্ত্র চাই যে কোনও মূল্যে, তারা বলব, নজর দিন নির্বাচনী সংস্কারে। কেমন সংস্কার হলে মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন হতে পারে? ওপরে কিছু বলেছি এবং তার সমস্যাও বলেছি। তাই সেগুলি বাদ দিতেই হয়। আর রইল একমাত্র সমাধান। তা হল, সংখ্যা অনুপাতে ক্ষমতার ভাগ। এমন অঙ্ক চালু আছে কিছু দেশে। আমাদের দেশেও চালু হোক না, ক্ষতি কী? সমস্যা এতেও আছে, তবে তার সমাধান পাওয়া অসম্ভব নয়।
B. Pin Babu r Karan sudha is the solution in w b as we have seen previous years amit. . Have a good luck
ReplyDelete