Saturday, 25 February 2023

বদলে যাওয়ার এই কি সময়?

নিকট ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে...

অমিত ভাদুড়ী



ফ্যাসিবাদের সঙ্গে একনায়কতন্ত্রকে গুলিয়ে ফেলামতো ভ্রান্ত ধারণা প্রায়ই দেখা যায়। দুটো বিষয়কে অনেক ক্ষেত্রেই এক মনে হয়, তবে তারা এক নয়। মার্কসবাদী দর্শনে ‘সর্বহারার একনায়কতন্ত্র’ এক লের প্রভাবে একটা শ্রেণির আধিপত্যের কথা বলে, কিন্তু শেষে অনেক সময়ই তা নিয়ে আসে একজন শক্তিশালী নেতাকে। একনায়করা সাধারণত একজন ব্যক্তি, আর পুরো শাসক দল সেই ব্যক্তিরধীনে থাকে। ফ্যাসিবাদের ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে একজন বড় নেতা থাকেসেই নেতাকে পার্টি গড়ে তোলে না, বরং গড়বার কাজটা তিনি নিজেই করেনঅনেক সামরিক একনায়ক ছিলেন যারা দলীয় নেতা নন, কিন্তু সেনাবাহিনীর এক বিরাট অংশের সমর্থন পেয়েছেন বা কম্যুনিস্টদের বিরুদ্ধে লড়াই করার কাজে সিআইএ’র সম্পূর্ণ সমর্থন পেয়ে ক্ষমতায় এসেছেন 

ফ্যাসিবাদ আর একনায়কতন্ত্র- দু বিষয়েই দেখা যায় একজন ব্যক্তির সর্বাত্মক কর্তৃত্বের মনোভাবফ্যাসিবাদী প্রবৃত্তিকে আরও বেশি শক্তিশালী করে তোলা হয় একজন শত্রু নির্মাণের মাধ্যমেঅন্যদিকে আবার অনেক একনায়ক ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার সপক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বলে যে তার উদ্দেশ্য নাকি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং পরিস্থিতি বুঝে আরও নানান যুক্তি দেখায় তারাকিন্তু ফ্যাসিবাদকে আরও কার্যকর করে তোলার জন্য শত্রুপক্ষের ডেকে আনা বিপদের শঙ্কাকে আরও বেশি করে জাগিয়ে তোলা হয়এটা খুবই জরুরি শর্ত

তবে শত্রুকে ‘আমরা’ নয় ‘ওরা’ বলে চিহ্নিত করে দেওয়াটা ফ্যাসিবাদের কাছে কেবলমাত্র এক সাংস্কৃতিক নির্মাণ হতে পারে নাএর আগ্রাসী মনোভাব শুরু হয় এই শত্রুকে বিপজ্জনক বলে তুলে ধরার মাধ্যমেবিপজ্জনক মানে তা এতটাই বিপজ্জনক যে ‘আমাদের’ অস্তিত্ব বিপন্ন করে তুলতে পারেগোলওয়ালকর ও সাভারকর উভয়েই হিন্দুদের অস্তিত্বের পক্ষে প্রধান বিপদ হিসেবে মুসলমানদেরই বেশি করে চিহ্নিত করেছেন, ঔপনিবেশিক ব্রিটিশদের নয়যখন অস্তিত্বের সঙ্কটের ধারণাটাকে উস্কে দিয়ে চিহ্নিত জনসংখ্যার একটা বড় অংশের মন জয় করে নেওয়া যায়, তখনই ফ্যাসিবাদের শিকড় গজায়মানে ফ্যাসিবাদকে শুধুই সাংস্কৃতিক পরিপ্রেক্ষিতে ‘আমরা’ বনাম ‘ওরা’র মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রাখা যায় নাএটা শুধুই ধর্মীয়, জাতিগত বা অন্যান্য পরিচয়ের ভিত্তিতে বিভেদের ব্যাপার নয়এই পরিচয় অবশ্যই ‘ওদের’ প্রতি আক্রমণাত্মক হওয়ায় গর্ব করার বিষয়ও, কারণ ওরা ‘আমাদের’ অস্তিত্বের পক্ষে বিপদ

এখানেই গান্ধীজীর সঙ্গে আরএসএস-বিজেপি যুগলবন্দীর তফাত রয়েছেগান্ধীজী একজন হিন্দু ছিলেন এবং হিন্দু হিসেবে গর্বিত ছিলেনকিন্তু এই গর্ব যাতে মুসলমানদের প্রতি আক্রমণাত্মক না হয়ে ওঠে সে বিষয়ে সতর্ক ছিলেনযদিও এটা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না যে হিন্দুত্ব নিজেই নিচু জাতের প্রতি বিরূপ হতে পারেএ ক্ষেত্রে গান্ধীজীর বাণীকে না হলেও কর্মকে কিন্তু সম্পূর্ণ দোষমুক্ত বলা যায় না

অপর দিকে গোলওয়ালকার আবার জাতপাতের বিভেদ আর ‘মনুস্মৃতি’তে মহিলাদের মর্যাদাহীন অবস্থানকে সমর্থন করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেছেনরাজনৈতিক ক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থান থেকে সরে আসা হিন্দুত্ব- যা কিনা আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি- তা অবশ্যই হিন্দুত্বের এই ধারণাএই হিন্দুত্ববাদ সবসময় হিন্দু গৌরবের অস্তিত্বের সংকটের কথা বলে। এই অস্তিত্বের সঙ্কটকে নির্মূল করে দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্রের দমনপীড়ণ আর হিংসার খুব দরকার; অন্যদিকে হিন্দু গৌরবকে তুষ্ট করতে অর্থনৈতিক বৃদ্ধিও প্রয়োজনঅর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য এই ধারণার বিষয় নয়হিন্দুত্ববাদের এই সংজ্ঞায় সহজাত জাতপাত এবং লিঙ্গবৈষম্য আছে বলেই এই হিন্দুত্ববাদ সমর্থকদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে          

যদিও, শত্রুর কাছ থেকে পাওয়া এই অস্তিত্বের সংকটের কারণ অভ্যন্তরীণও হতে পারে আবার বাইরেরও হতে পারেএই দুই কারণ এক হলে ফ্যাসিবাদের ভিত শক্ত হয়ে ওঠেশত্রু বিদেশি হলে চাই পেশিবহুল জাতীয়তাবাদশত্রু যদি ভেতরের হয় তাহলে জোরদার আভ্যন্তরীণ নজরদারি  চালানো (যেমন পেগাসাস বা বিনা বিচারে বন্দি করে রাখা) এবং সাংবাদিক, অধ্যাপক, গবেষক অথবা সুশীল সমাজের অন্যান্য মানুষদের ভিন্নমতকে দমন করার প্রয়োজন হয়অতঃপর ফ্যাসিজম চলতে থাকে, পেশিবহুল জাতীয়তাবাদের সঙ্গে যুক্ত ঘৃণাভরা ভাষণ এবং গানের মাধ্যমে, যা ‘ওদের’  আক্রমণ করবার জন্য ‘আমাদের’ প্রস্তুত করে

আতঙ্কবাদের বিরুদ্ধে দেশের সুরক্ষা’ হচ্ছে সেই খেলার নাম যা আভ্যন্তরীণ এবং বাইরের ফ্রন্টে চালানো হয়এটাই একমাত্র কাঙ্খিত খেলা হয়ে ওঠে যা ফ্যাসিবাদী সরকারকে ‘রাষ্ট্র’, ‘নিরাপত্তা’ এবং ‘ আতঙ্কবাদ’এর সংজ্ঞা নির্ধারণ করার অধিকার দেয়এভাবেই সংবিধান এবং সরকারকে ইচ্ছেমতো চালনা করাটাকে এক বহুমুখি দৈত্যাকার বিপদকে ঠেকাতে গিয়ে হয়ে যাওয়া সামান্য আনুষঙ্গিক ক্ষতি হিসেবে দেখানো সমর্থনযোগ্য হয়ে ওঠে     

এটা ভারতবর্ষে কীভাবে কাজ করেছে? গোধরার হিংসার ঘটনার উৎস এখনও রহস্যাবৃতসেই হিংসাকে উপস্থাপিত করা হয়েছে এটা প্রমাণ করার জন্য যে, ধর্মপ্রাণ হিন্দুদের কাছে ত্রাসের কারণ মুসলমানরাবালাকটের ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক’ হচ্ছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আমাদের সচেতন পেশিবহুল জাতীয়তাবাদের প্রকাশবাইরের এবং ভেতরের বিপদকে মুসলমান আতঙ্কবাদের বিভিন্ন দিক হিসেবে সুবিধেমতো মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে, যার থেকে কিনা সরকার ‘আমাদের’, মানে হিন্দুদের রক্ষা করেএই মতের বিস্তার একটা অস্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছে যায়, আর জনতার কাছে এই মতাদর্শের গ্রহণযোগ্যতার সূচক হিসেবে সরকার এটা সানন্দে মেনে নেয়অনেক উৎসাহীরা বিশ্বাস করেন (জনগণনা তথ্য যাই হোক না কেন) যে ভারতে মুসলমানরা ইচ্ছে করে বেশি মাত্রায় নিজেদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি করে সংখ্যাগুরু হিন্দু গণতন্ত্রকে নষ্ট করার উদ্দেশ্যেই দেশের জনসংখ্যা সংক্রান্ত ভারসাম্যকে নষ্ট করে চলেছেএসব বিশ্বাসকে উন্মাদের বিশ্বাসের মতো শোনাতে পারে, তবে এর পরিণাম কিন্তু অনেক সময়েই মর্মান্তিক হয়মুসলমানদের গণহত্যা করা বা স্বেচ্ছায় ধর্মান্তরিত হবার ঘটনার জন্য চার্চের বিরুদ্ধে হিংসা, অথবা ‘লাভ জিহাদ’এর মতো ভিন্ন ধর্মের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কের বিরুদ্ধে হিংসার ঘটনার কারণে

ফ্যাসিবাদের দিকে স্বাভাবিক ভাবে ঝুঁকে থাকা উগ্র জাতীয়বাদ বা রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন, কোনওটাই কিন্তু শক্তিশালী আর্থিক মদত ছাড়া টিকে থাকতে পারে নাবড় বড় বাণিজ্য সংস্থার সঙ্গে পেশিবহুল জাতীয়তাবাদের সংযোগ প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েজনমত প্রচারের যন্ত্রকে খুব মসৃণভাবে চালানোর জন্য দরকার হয় কিছু মিডিয়ার, যারা বানানো খবর এবং সন্তর্পণে বাছাই করে নেওয়া কিছু খবর ছড়ায়, আর এই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভুয়ো খবর ইচ্ছাকৃত ভাবে ছড়ানো হয়ে থাকেহিটলারের তথ্যমন্ত্রী বলেছিলেন যে, লোকেরা বর্গক্ষেত্রকেও বৃত্ত বলে বিশ্বাস করবে, যদি তুমি বারংবার আরও বেশি বেশি করে সেটা বলে যাওসুতরাং, এটা ভাবার কোনও কারণ নেই যে মানুষকে মোদির সেই বড় বড় সাফল্যের কথা বিশ্বাস করানো যাবে না, যার মধ্যে  রয়েছে তার কালো টাকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ (১৫ লাখ দেওয়ার সেই মিথ্যে প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও), হঠাৎ করে নোটবন্দির সিদ্ধান্তের বিচক্ষণতা (অসংগঠিত ক্ষেত্রে অনেকের জীবন-জীবিকা ধ্বংস হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও) আর অতিমারির দিনে হঠাৎ করে লকডাউনের ঘোষণা, সঙ্গে ছিল মোমবাতি জ্বালিয়ে আর বাসনপত্র বাজিয়ে অতিমারিকে দূর করার জন্য প্রাথমিক উপদেশ (তারপর গঙ্গায় অসংখ্য শবদেহের ভেসে ওঠা সত্ত্বেও)

ভারতের উন্নয়নের গল্পটা তেমনই হত, যদি উন্নয়নকে শুধুমাত্র জিডিপি'র সংখ্যায় নয় বরং সাধারণ নাগরিকের অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্যের নিরিখে দেখা হতপ্রাকৃতিক সম্পদগুলিকে প্রচুর ভর্তুকি দিয়ে স্বল্পমূল্যে তুলে দেওয়া হয়েছে মুষ্টিমেয় কিছু আস্থাভাজন সংস্থার হাতে (মূলত দুজন)। ফলে, প্রকৃতির ক্ষতি হয়েছে এবং গরিব মানুষ বাড়িঘর ও জীবন-জীবিকা হারিয়েছেন, বেকারের সংখ্যা বেড়েছেকর্মসংস্থান বা জীবিকার বিকল্প উপায়ের ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রেও কোনও উল্লেখযোগ্য সাফল্য মেলেনি, আর স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাদ্যের মতো সামাজিক পরিষেবার ক্ষেত্রে অবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি, শুধুমাত্র কোনও মহান নেতার ইচ্ছামতো করা দানখয়রাত ছাড়াএকজন নেতাকে মানুষের একমাত্র পরিত্রাতা বানিয়ে ফেলার মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের এই প্রকাশ মানুষকে মনে করিয়ে দেয় হিটলারকে নিয়ে বলা এক গল্প কথাপার্টির এক মিটিং’এ তিনি একটা মুরগি নিলেন এবং একটা একটা করে তার পালক ছিঁড়তে লাগলেনতারপর ওই বেচারা পালকহীন পাখিটিকে মাটিতে রাখলেন আর পকেট থেকে বের করে করে কিছু দানা একটা একটা করে মাটিতে ছড়াতে লাগলেনওই অসহায় মুরগিটা কৃতজ্ঞচিত্তে হিটলারকে অনুসরণ করে হাত থেকে পড়া দানার টুকরোগুলো খেতে থাকলতারপর মুরগিটাকে দেখিয়ে উনি ওঁর ভক্তদের বললেন, ‘এই হল আমাদের জনগণ  

গৌতম আদানি আদপে সত্য কথাই বলেছেন যে হিন্ডেনবার্গের হতাশাজনক রিপোর্ট তাঁকে নয়, বরং ভারতকে আক্রমণ করেছেউনি শুধু এটা উল্লেখ করতে ভুলে গেছেন যে এ হল সেই ভারতবর্ষের ধারণা- যা এমন অল্প কয়েকজন কোটিপতিদের দেশ যারা মোদি শাসিত হিন্দুরাষ্ট্রকে সমর্থন করে    

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সমর্থিত পেশিবহুল হিন্দুরাষ্ট্র প্রকল্প ‘রিসার্জেন্ট গুজরাট’ প্রোজেক্ট দিয়ে শুরু হয়েছিল ২০০২’এর দাঙ্গা এবং হাজার হাজার মুসলমানদের হত্যার পরেএটা ধর্মনিরপেক্ষ ভারত ও অনেক শিল্পপতিকেও (যেমন রাহুল বাজাজ মনে করেছিলেন এটা ভারতের বাণিজ্যের পরিবেশের পক্ষে ভাল নয়) নাড়া দিয়েছিলমুসলমান বিদ্বেষের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা মোদিসুলভ ‘প্রশাসন’কে অনেকে অবাঞ্ছিত বলে অনুভব করেছিলেনকিন্তু, সেই সময়ে স্বল্প পরিচিত গৌতম আদানি দুঃসময়ে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর পাশে দাঁড়ালেন আর মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এমন এক বাণিজ্য মডেল তৈরি করলেন, যাতে রাজ্য সরকারের থেকে অতিরিক্ত সুবিধা পাওয়া বাণিজ্যিক চুক্তিগুলো বিদ্বেষে ভরা সাম্প্রদায়িক রাজনীতির সঙ্গে নির্বিঘ্নে মিশে যায়প্রচার এবং টাকা দিয়ে খুব সযত্নে লালিত এই ‘উন্নয়নের গুজরাত মডেল’ আদানির হাতে পড়ে মোদির পৃষ্ঠপোষকতায় অত্যন্ত বেপরোয়া হয়ে গেল আর বন্দর থেকে শুরু করে বিমানবন্দর কিংবা বিদ্যুতের মতো আরও বহু ক্ষেত্রে প্রসারিত হলআদানি এর সুফলটা পেলেন বিশ্বের তিন নম্বর ধনী ব্যক্তি হিসেবে উঠে এসেএটা কি হিন্দু গৌরবের প্রকাশ না ভারতের জনগণের জীবন থেকে অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে একেবারে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার সাফল্য?

ব্যবসার এই বৃদ্ধির ব্যাপারটা কতটা অসাধু হয়ে উঠেছে, তা দেখাবার জন্য পরঞ্জয় গুহঠাকুরতা ও রবি নায়ারের মতো কয়েকজন অনুসন্ধানী সাংবাদিক অনেক প্রবন্ধ প্রকাশ করেনএর প্রভাব খুবই সীমিত ছিলবিক্রি হয়ে যাওয়া মিডিয়ারা সেগুলো নস্যাৎ করল, মধ্যবিত্ত শ্রেণি কিছুটা ভয় পেল আর স্টক মার্কেটে বিশেষভাবে দেখানো বৃদ্ধির পরিসংখ্যান দেখে চুপ করে গেলমোদির নেতৃত্বে সংখ্যাগুরু গেরুয়া গণতন্ত্র নির্বাচনী সাফল্য পেয়ে ভিন্ন স্বরকে আইনি এবং বেআইনি পদ্ধতিতে রাষ্ট্রশক্তির জোরে দমন করে এগোতে থাকলআর এর দোসর হয়ে এই অসাধু ব্যবসা এই তামাশাকে চালু রাখার জন্য অক্সিজেন জুগিয়ে গেল      

এটাই হয়তো আইএমএফ ও বিশ্ব ব্যাঙ্কের দ্বারাও প্রশংসিত সেই নব্য উদারপন্থার গল্প, যেখানে রাষ্ট্র জোরদারভাবে বেসরকারি ব্যবসাকে তুলে ধরে ভারতীয় গণতন্ত্রের মঞ্চে বিপুল বৃদ্ধি নিয়ে আসা এবং মার্কিন কর্তৃত্বের একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিনের বাড়তে থাকা বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্যগুজরাত গণহত্যায় জন্ম নেওয়া এই বেবি গ্রোথ মডেল খুনে দৈত্য হবার জন্যই জন্মেছেবিজেপি একে বিশ্বগুরু বলে থাকেতবুও দেখা গেল, এটা গরম হাওয়া ভরা একটা উড়ন্ত বেলুনএই বেলুন হঠাৎ ফেটে গেল যখন প্রধানমন্ত্রীর দ্বারা উৎসাহিত আদানির ব্যবসার বাস্তব চিত্রটা জানা গেলসেই বিজনেস মডেলের দিন এখন গত হয়েছে, একে তোল্লাই দেওয়া সেই জাতীয়তাবাদী স্বর অনেক দুর্বল হয়েছে আর ভারতবর্ষের ভবিষ্যতের বুকে নেমে এসেছে এক ভয়ানক নীরবতাসিবিআই, ইডি, আরবিআই, এলআইসি, সেবির মতো ভারতবর্ষের সব সংস্থা, যারা এই মডেলের সেবা করার জন্য একজোট হয়ে এগিয়ে এসেছিল, তাদের কিন্তু হিজ মাস্টার্স ভয়েসের পরবর্তী আদেশের জন্য খুব অস্বস্তি নিয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে

পরপর নির্বাচন আসছেপ্রথমে বিভিন্ন রাজ্যের, তারপর কেন্দ্রের নির্বাচন দেখা যাবে ভারতের গণতন্ত্রের এই মঞ্চেবদল কতটা হবে তা আগামী দিন বলবেযদি আদপেই তা হয় তাহলে কি শুধুমাত্র শাসক দল বদলাবার সাথে সাথে এই দুর্গন্ধময় ঘৃণার পরিবেশ কিছুটা শান্ত হবে, যেটা রাহুল গান্ধী তাঁর যাত্রার সময় বারবার বলেছেন? নাকি এমন কোনও রাজনৈতিক সংগঠন আছে, যাদের লক্ষ্য আরও উন্নত হতে পারে, আর যারা অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটা অন্যরকম মডেল নিয়ে আসতে পারে, যে মডেল প্রাথমিক ভাবে শুধু মুষ্টিমেয় কিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করে থাকে না?  

বাংলা অনুবাদ: মঞ্জিস রায়

       

 

     

 

 

1 comment:

  1. খুব দরকারি তথ্য বর্তমান সময়ের পক্ষে। সুন্দর স্পষ্ট অনুবাদ👌🙏

    ReplyDelete