Wednesday, 31 August 2022

শেয়ার বাজারের অর্থনীতি

আসতে পারে নতুন বুল রান

পার্থ  হালদার


গত বছরের অক্টোবর মাসে নতুন উচ্চতায় পৌঁছনোর পর এই বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত শেয়ার বাজার ক্রমেই নিম্নমুখি হয়েছে। এর কারণ হিসাবে বলা যায়, চড়া মুদ্রাস্ফীতি, সুদের হার বৃদ্ধির সম্ভাবনা ও তার আগের বছরগুলিতে শুধু বেলাগাম অর্থ জোগানের কারণে বাজারের অস্বাভাবিক উত্থান। তাই, বাজারের পতন অস্বাভাবিক ছিল না। তার উপর রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি ও ভোজ্য তেলের হঠাৎ দাম বৃদ্ধি সারা পৃথিবীর অর্থনীতির কাছে বড়  চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। গত এক বছরে আমেরিকার ফেড ও অন্যান্য সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কগুলি সুদের হার বৃদ্ধি করতে থাকে ও বাজারে অতিরিক্ত অর্থ জোগান কমতে থাকায় শেয়ার বাজারে বড়রকম পতন দেখা দেয়। এই পতন জুলাই মাস পর্যন্ত চলার পর মুদ্রাস্ফীতি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে এবং ওপেক ও অন্যান্য তেল উৎপাদনকারী সংস্থাগুলি তেল উৎপাদন বৃদ্ধি করায় জ্বালানি তেলের দাম নিম্নমুখি হয়। উপরন্তু, ইন্দোনেশিয়া পাম তেল রফতানি আবার শুরু করায় খাদ্যদ্রব্যের মুদ্রাস্ফীতি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। এছাড়াও, শ্রীলংকার আর্থিক সংকটের জন্য ভারতের রফতানি সে দেশে বাধাপ্রাপ্ত হলে ভারতীয় অর্থনীতিতে তার প্রভাবও পড়েছে।

এত কিছুর মধ্যেই জুলাই মাসের শেষ দিক থেকে ধীরে ধীরে পৃথিবীর সমস্ত শেয়ার বাজারই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। তার প্রভাব ভারতীয় শেয়ার বাজারেও পড়ে। জুলাইয়ের মধ্য ভাগ থেকে মাথা তুলতে শুরু করে ভারতীয় শেয়ার সূচক। এবারের উত্থানে যেটা লক্ষণীয়, প্রথমেই ভালো প্রদর্শন করেছে অটো শেয়ারগুলি। মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রা, টাটা মোটর্স, হুন্ডাই প্রভৃতি কোম্পানিগুলি একের পর এক ইলেকট্রিক কার বাজারে আনতে শুরু করেছে। ফলে, আগামী দিনে ভারতকে অনেক কম পরিমাণ জ্বালানি তেল আমদানি করতে হবে। জ্বালানি তেল আমদানিকারী রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের কাছে এটি একটি বড় সুখবর। এতে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষণমুক্ত হবে, তেমনই বাঁচবে বৈদেশিক মুদ্রা। অটো সেক্টর'এর সঙ্গে সঙ্গে ভালো প্রদর্শন করেছে ক্যাপিটাল গুডস সেগমেন্ট। 

ভারতীয় অর্থনীতির কাছে আর একটি সুখবর হল, আগামী অক্টোবর মাস থেকে ৫জি  পরিষেবার সূত্রপাত। এই পরিষেবা দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিজ্ঞান ও বাণিজ্যিক জগৎকে আরও গতিশীল করে তুলবে, যার প্রভাব পড়তে চলেছে শেয়ার বাজারে। টাকার দামের পতন আপাতত বন্ধ হওয়ার কারণে ভারতীয় মুদ্রাবাজার এখন স্থিতিশীল। এই অবস্থা আগামী দিনে বজায় থাকলে অবশ্যই তার সুপ্রভাব শেয়ার বাজারে  আসতে চলেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে মন্দার আশঙ্কা এই মুহূর্তে বেশ কম। তাই সারা পৃথিবীব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি কমা শুরু হলে ও উপরিউক্ত সমস্ত প্রভাবগুলি আসতে শুরু করলে তার উপর ভর করে শুরু হতে পারে নতুন বুল রান। গত দু' মাসে আমাদের দেশেও ভোজ্য তেল ও শাকসবজির দাম কিছুটা কমায় আশার আলো দেখতে শুরু করেছে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। ফলে, খুব তাড়াতড়ি চড়া ভাবে সুদের হার বাড়ার সম্ভাবনাও কম। সারা বিশ্বের সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের চোখ এখন আগামী দিনে দ্রব্যমূল্যের স্থিতিশীলতার উপর।

এসবের মধ্যে অবশ্যই কিছু আশঙ্কাও থেকে গেছে। আদানি গ্রুপের ব্যাঙ্ক লোন নিয়ে সতর্ক করেছে স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওর। কোনও কারণে এই ব্যাঙ্ক ঋণ মন্দা অবস্থার মধ্যে পড়লে তার পরিণতি হতে পারে মারাত্মক এবং ঋণ নিয়ে কোনও কোম্পানি অধিগ্রহণ কখনই ভালো বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত নয়। অন্যদিকে চীন এবং তাইওয়ানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক টানাপোড়েন শেয়ার বাজারের উত্থানে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। অগস্ট মাসের ফেড'এর মিটিং'এ ফেড চেয়ারম্যান জেরম পাভেল জানিয়েছেন যে, আমেরিকাতে সুদের হার দীর্ঘদিন বেশি থাকতে পারে। তাই বহু আর্থিক বিশেষজ্ঞ এখনই বাজার বাড়ার সম্ভাবনা না দেখলেও অনেকের মতে, উঁচু সুদের হার আগামী দিনে সেরকম কোনও প্রভাব ফেলবে না। হয়তো আগামী জানুয়ারিতেই নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে শেয়ার সূচক। তবে বিনিয়োগের কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞের মতামত নেওয়া জরুরি।

 

1 comment:

  1. Wonderful Analise... Very strong assumption...

    ReplyDelete