Saturday 28 November 2020

বলিহারি!

এত চাষা এল কোত্থেকে?

সত্য বল


ভারতের ইসলাম আগ্রাসন যতটা সত্য, উচ্ছে চাল সোনামুগের ডাল ঢেঁড়স গাজরের দামও ততটাই সত্য। বিগত সত্তর বছরে ভারতবর্ষের গর্দভ জনতা এই আগ্রাসন অনুভব না করে হাই ইন্টারেস্ট রেট, লো জিডিপি, কাজ চলার মতো চাকরি নিয়ে হইহই করে চলছিল। তারা দেশদ্রোহী ছিল, সে কথা বলাই বাহুল্য। আজ দেশে জাতীয়তাবাদী সরকার আসার পর থেকে হিন্দু খতরে মে পড়ে গেছে এবং মূল্যবৃদ্ধি, জিডিপি, চাকরি, নারী সুরক্ষা সব ক্ষেত্রেই আমরা আন্তর্জাতিক স্তরে খোরাকের পাত্র। অভিনন্দন জাতীয়তাবাদী সরকার।

এই মুহূর্তে দেশের রাজধানীতে কৃষকদের ওপর দিল্লীর শীতে জলকামান চালানো হচ্ছে। তারা নকশাল‌ও নন, কৃষক। মাননীয় কেন্দ্রীয় সরকার যাঁদের জন্য চিন্তায় রাতে ঘুমাতে পারছে না, দিনে আঠাশ ঘন্টা কাজ করছে, তাদের ভালোর জন্য কৃষক বিল এনেছে। অথচ এই গোমুখ্যু (দুঃখিত গরু আমাদের মা এবং মোষ পিতা) চাষাগুলো সেগুলো বুঝতেই চাইছে না! হাজার হাজার মাইল হেঁটে আসছে। আর আস্পর্ধা কত, বলে, সঙ্গে দু' মাসের রেশন এনেছে! যতদিন না তাদের সোনায় মুড়ে রাখতে মহৎ উদ্দেশ্যে যে বিলগুলি পাশ করানো হয়েছিল ফাঁকা পার্লামেন্টে চোরের মতো, সেগুলো না প্রত্যাহার করা হচ্ছে, তারা উঠবে না! ভাবুন একবার দেশদ্রোহী কাকে বলে! এদের পেছনে প্রতিবেশী দেশের মদত জলের মতো স্পষ্ট। আর না বুঝলে জেল ফেরত গোস্বামীবাবু টেবিল থাবড়ে ঠিক প্রমাণ করে দেবেন। তবে এখন‌ও অবধি এই কৃষক অসন্তোষ নিয়ে ওনার মৌনতা হিমালয়ের মতোই মহৎ এবং গম্ভীর। কটা লাশ পড়লে হয়তো পায়েল রোহ্‌আটগি কি কঙ্গনা রানআউটের সঙ্গে ঘন্টাখানেক বসা যাবে।

আসলে সকালে হোয়াট্‌স‌অ্যাপে দেশভক্তির মেসেজে আমরা কৃষক বিলের উপযোগিতা ময়ূরের চোখের জলের মতো বুঝে ফেলি। কিন্তু এইসব চাষাভুষোদের হোয়াট্‌স‌অ্যাপওয়ালা ফোন এখন‌ও নেই। তাই এই 'যুগান্তকারী' বিল কর্পোরেটদের অশুভ আঁতাত কীভাবে তছনছ করে কৃষকদের কোটিপতি বানিয়ে ফেলবে সেটা তারা বুঝতেই চাইছে না। আমরা কিন্তু ঠিক বুঝে গিয়েছি। বিশ্বের সবচেয়ে বড় মূর্তি কীভাবে টুরিজম করে লাভ করবে, কী করে নোটবন্দী ঘচাঘচ দেশের কালো টাকা বের করে আনবে, পনের লাখের গল্প, বছরে দু' কোটি চাকরি, জলের দরে পেট্রল সব, সঅব বুঝে গেছি আমরা।

দেশদ্রোহী কৃষকরা বুঝতে চাইছে না। খুব সম্ভবত পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথমবার দেশের স্বঘোষিত দেশভক্ত, ধর্মের রক্ষাকর্তা, জনদরদী এবং পুঁজিপতি বিরোধী সরকার যাদের ভালোর জন্য বিল পাশ করল, তারাই এর বিরোধিতা করে রাস্তায় নামে। তওবা তওবা! নরাধম এরা, অকৃতজ্ঞ, মানে এই কৃষকদের কথা বলছি আরকি!

সেই জন্যই বলি আজ জলকামান চলেছে, টিয়ার গ্যাস চলেছে, আগামীকাল গুলি চলুক গদ্দারদের ওপর। দেশপ্রেমী নেতাই তো বলেছিলেন এ কথা। কেন্দ্রীয় সরকার দিল্লি সরকারকে বলেছে নয়টি, হ্যাঁ মাত্র নয়টি স্টেডিয়ামকে জেলে পরিণত করতে। দেশদ্রোহী গদ্দার চাষীদের জন্য। দেশদ্রোহী কেজরিওয়াল না করে দিয়েছে। ওটাও গদ্দার।

দালাল মিডিয়া এসব খবর দেখাবে কেন! কী সুনিপুণ শিল্পের মাধ্যমে দেশদ্রোহীরা উদ্ধত পদক্ষেপে রাজধানী নোংরা করছে! দাবি করছে পেটে লাথি মারা বিল মানবে না! মানবে না বললেই হল? হাতরাসের মেয়েটা মানেনি বলেই তো ধর্ষিত হল, যার এখনও বিচার হল না রামরাজ্যে। সবাই চুপ। এরাও চুপ হবে। একেবারে চুপ হবে। জাস্টিস লোয়া থেকে গৌরী লংকেশ, সব সেট হয়ে গিয়েছে। এরা তো গোমুখ‍্যু চাষাভুসো!

তবে আবার বলি, দালাল মিডিয়া দেখাবে না এসব। তাই দেশপ্রেমী হিসেবে আমাদেরই দায়িত্ব নিতে হবে। সব কটা বিদ্রোহী চাষাদের কুকুরের মতো গুলি করে মারতে হবে। কারণ পেঁয়াজ আজ আশি কিনছি, কাল দেড়শ কিনব। দেশের জন্য এটুকু করব না? বলুন? আমরা না গরু, থুড়ি ভারত মায়ের, থুড়ি ভারত মাতা কি সন্তান! সে তো ফ্রি'তে জিও-ও করেছি, এখন যেন কত করে দিতে হয়? লকডাউনে কাদের যেন সম্পত্তি লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ল?

সুতরাং, দেশকে ভালোবাসলে এই লেখা শেয়ার করুন। এভাবে দিকে দিকে ছড়িয়ে দিন কীভাবে গদ্দার চাষীরা ক্ষেপে গেছে। অ্যাতো শেয়ার করুন যাতে দিল্লী পর্যন্ত খবর পৌঁছে যায় আর দেশপ্রেমিক সরকার বাধ্য হয় এদের কুকুরের মতো গুলি করে মেরে ফেলতে। তবেই তো প্রতিষ্ঠা হবে ভারত আদাম্বানি কোম্পানি লিমিটেড। শায়েস্তা হবে আচাভুয়া চাষাগুলো। আর ফসলের দাম হবে লজেন্সের মতো। যেমন জলের দরে পেট্রল।

বলুন ভারত মাতা কি....

No comments:

Post a Comment