আন্দোলনের পথে বলাগড়ের মানুষ
অয়ন মুখোপাধ্যায়
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলের মতো আমাদের বলাগড় ব্লকের বিভিন্ন প্রান্ত ভয়াবহ ডিজের শব্দ দূষণে আক্রান্ত। যে কোনও অনুষ্ঠানে ডিজের বিকট শব্দে আজ সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ। কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই।যে যত পারছে বেশি করে ডিজে বাজাচ্ছে। ক্ষমতার আস্ফালন। সকাল থেকে সারারাত বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে বিকট শব্দ করে ডিজে বেজে চলে একটানা ডুমডুম ডিপডিপ গুড়গুড় ইত্যাদি শব্দে।
সামনেই দুর্গাপুজো, লক্ষ্মীপুজো, কালীপুজো, রাস উৎসব, শীতকালীন পিকনিকের ঘনঘটা। চলবে ডিজে'র বেলাগাম ব্যবহার। তারপর তো রয়েছেই মাইকের চিৎকার। ফলে, সর্বত্র শব্দ দূষণ ঘটে।মানুষের কষ্ট বাড়ে। বাড়ে শারীরিক ক্ষতি। বিশেষ করে আক্রান্ত হয় শিশু ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা। ডিজের দাপটে হার্ট ও উচ্চ রক্তচাপ জনিত রোগীরা বিপদে পড়ে বেশি। মানসিক অস্থিরতাও বেড়ে যায়। দুর্ঘটনা ঘটে রাস্তায়।
অন্যদিকে, ডিজে চালিয়ে উচ্ছৃঙ্খল হওয়ার প্রবণতা বাড়ে, মদ খেয়ে মারামারির মতো ঘটনা আমরা প্রায়শই দেখতে পাই। আর এইসব দেখে আমরা যদি প্রতিবাদ না করি, প্রতিরোধ না গড়ে তুলি, তাহলে কীসের সংস্কৃতি চর্চা! পৃথিবীর গভীরতর অসুখ বলে আমরা পালিয়ে যেতে পারি না। অদ্ভুত আঁধার এসেছে বলে আমরা কি তাহলে ঘরের মধ্যে বসে থাকব? আমাদের মননে আছে সাংস্কৃতিক বোধ, আছে সামাজিক দায়বদ্ধতা আর সেই তাগিদ থেকেই আমাদের এই আন্দোলন, এই লড়াই।
আমরা মনে করি, সংস্কৃতি মানে শুধু নাচ গান আবৃত্তি চর্চা নয়। সংস্কৃতি বলতে বুঝি সমাজের সদস্য হিসেবে অর্জিত নানা আচরণ, যোগ্যতা, জ্ঞান, বিশ্বাস, শিল্পকলা, নীতি, আদর্শ ও আইন সহ বিভিন্ন উপায়ের যৌগিক সমন্বয়। আমাদের মতে, সংস্কৃতি বলতে সেই সব পন্থাকে বোঝায় যার মধ্যে দিয়ে মানবজাতি তার প্রকৃত বর্বরতাকে কাটিয়ে উঠে পূর্ণরূপে মানুষে পরিণত হয়। আমাদের প্রশ্ন, ডিজে'র ব্যবহার কি বর্বরতা কাটিয়ে ওঠা? নাকি মানুষকে বর্বরতর সংস্কৃতির দিকে ঠেলে দেওয়া?
সমস্ত পুজো কমিটির কাছে আবেদন, সুস্থ সংস্কৃতির স্বার্থে আপনারা নিজে থেকে ডিজে বন্ধ রাখতে এগিয়ে আসুন। সামাজিক মানুষ হিসেবে আমাদের কিছু দায়িত্ব আছে। আসুন, দীর্ঘদিন ভুল করার অভ্যাস ত্যাগ করি। প্রশাসন ও সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে অনুরোধ, ভবিষ্যতের কথা ভেবে আপনি-আপনারা শব্দ দূষণের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলনের সাথী হোন।
আমাদের দাবি:
১) শব্দ দূষণ সংক্রান্ত আইন মেনে চলতে হবে;
২) বিনা অনুমতিতে উচ্চ শব্দ করার যন্ত্রগুলি বাজানো যাবে না;
৩) ডিজে'কে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হোক;
৪) প্রশাসনের প্রতি আবেদন, জনগণ এবং পুজো কমিটিগুলোকে নিয়ে বিকট শব্দের খারাপ দিকগুলি সম্পর্কে সচেতনতা শিবির করতে হবে।
৫) প্রশাসনকে সংবিধানের ২১ নম্বর ধারার মর্যাদা দিয়ে নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ জীবন যাপনের অধিকার সুরক্ষিত রাখতে হবে ।
পরিশেষে আবারও বলি, আসুন আনন্দের দিনগুলোতে আমরা যেন নিরানন্দ না হয়ে যাই। শব্দ দূষণকে রুখে দিয়ে আসুন আমরা আগামী প্রজন্মের কাছে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করি। সবচেয়ে আনন্দের কথা, ডিজে বন্ধের ব্যাপারে সই সংগ্রহ শুরু হয়েছে। খুব শিগগিরই আমরা প্রশাসনকে এই দাবিপত্র পাঠাব। পরিতোষ হাই স্কুল, রাধারাণী উচ্চ বিদ্যালয়, বলাগড় উচ্চ বিদ্যালয়, সোমরা দুর্গাচরণ উচ্চ বিদ্যালয়, খামারগাছি কামালপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্রছাত্রীরা সমর্থন জানিয়েছেন।এছাড়া বলাগড় ব্লকের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মী, সাধারণ মানুষ আমাদের সমর্থন করেছেন।
গত কয়েক দিন ধরে আমার সঙ্গে আমাদের সংগঠনের সভাপতি সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, অন্যতম সহ-সভাপতি সৈকত বাগচী, সন্ধ্যা ঘোষ ও আশীষ চক্রবর্তী, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যা মৌসুমী মজুমদার এবং সংস্কৃতি কর্মী সানন্দা গুণ বিশ্বাস এই ব্যাপারে সই সংগ্রহে সহযোগিতা করে আসছেন।
সংযোজন:
এ ব্যাপারে স্থানীয় বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী তাঁর মতামত জানিয়েছেন:
'একজন মানুষ যার নাম অয়ন মুখার্জী। যিনি সিপিএম পার্টির নেতা। যার সঙ্গে আমার প্রথম দেখা চুঁচড়া ভোট গণনা কেন্দ্রে। যিনি সেদিন মুখ বিকৃত করে আমাকে বলেছিলেন, 'আপনি চল্লিশ হাজার ভোটে হেরে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি যাবেন!'
'আপনারা জানেন আমি হারিনি। ভবিষ্যৎবাণী সফল হয়নি অয়নবাবুর। দিদি মমতা ব্যানার্জীর আশীর্বাদ ও কঠোর পরিশ্রম আর আপনাদের ভোট আর ভালোবাসায় জনসংঘ নেতা শ্যামাপ্রসাদের জন্মভূমিতে গত লোকসভার ভোটে ছত্রিশ হাজার ভোটে এগিয়ে থাকা বিজেপিকে প্রায় নয় হাজার ভোটে পরাজিত করতে পেরেছি। তবে পরে আমার সঙ্গে অয়নবাবুর আবার দেখা হয় এবং ধীরে ধীরে বুঝতে পারি, সিপিএম হলেও মানুষটির মনে সমাজ সেবার অকৃত্রিম ভাবনা আছে। তাই খানিকটা বন্ধু মতো হয়ে গেছেন।
'সেই অয়ন মুখার্জী একটি আন্দোলন গড়ে তুলতে সচেষ্ট হয়েছেন। কী আন্দোলন, কেন আন্দোলন উনি নিজেই সেটা লিখেছেন। আমি সিপিএম বিরোধী হলেও তাঁর কথার সঙ্গে সহমত প্রকাশ করছি। উনি সিপিএম করেন বলেই তার সঠিক বা সত্য কথনের সঙ্গে বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করব মাত্র- আমি এমন মনোভাব পোষণ করি না।
'তাই আমি অয়নবাবুর ডিজে বন্ধের আন্দোলনকে সমর্থন করছি। চাইছি, দলমত নির্বিশেষে সবাই এটাকে সমর্থন করুন। বন্ধ হোক পরিবেশ দূষণ। একটা সুন্দর সুস্থ উৎসব হোক। আমার আনন্দ যেন অন্যের কষ্টের কারণ না হয়ে ওঠে।'
বাঙালি এখন একটি উৎশৃঙ্খল জাতিতে অধঃপতিত।
ReplyDeleteএই সমস্যা শুধু পশ্চিম বাংলার সমস্যা নয়।
আসামের বাঙালি অধ্যূসিত শহরে যারা জিম চালায় তারাও এমন উৎপাত শুরু করেছে যা অন্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নাভিশ্বাস। পুজো পার্বনে সবেতে ঐ যন্ত্র দানব
আবাসিকদের সমস্যা বহু গুণ।
জেলা প্রশাসন, মিউনিশিপালিটি, দুষণ বোর্ড কারোর দায় নেই।
উল্টে হুমকী তো আছেই।
স্থানীয় ভাবে সচেতনতা ও প্রতিরোধ গড়ে তোলা ও পুলিশ প্রশাসনের উপর চাপ দেওয়া জরুরী।