স্টার্ট-আপ'ই কি ভবিষ্যৎ?
অনিন্দ্য ভট্টাচার্য
এ কথা অনস্বীকার্য যে, চলমান অর্থনীতির এক নতুন গুণগত নির্মাণ অবশ্যম্ভাবী। অর্থনীতির কর্মপ্রক্রিয়া যত বেশি ডিজিটাল ও সর্বব্যাপী হয়ে উঠছে ততই সে সহজে ধারণ করছে এক বিস্তৃত জনরাশিকেও। তার সঙ্গে প্রযুক্তির অবিশ্বাস্য গতি ও উল্লম্ফন ভেঙ্গে ফেলছে এক দেশ-আমলা-নেতার ক্ষমতার সীমানা। অতি সম্প্রতি, আমেরিকার ফেডারেল ট্রেড কমিশন ফেসবুককে ৫ বিলিয়ন ডলার জরিমানা করেছে তাদের ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্যের অপব্যবহারের কারণে। যা আমেরিকার মাটিতে এ তাবৎ সব থেকে বড় জরিমানা। নেটগুরুদের কাছে রাজনৈতিক শাসকদের একচেটিয়া ক্ষমতার অবসানের আশঙ্কায় এই শাস্তি প্রদান কিনা সে কথাও উঠছে। কারণ, নজরদারি ও ব্যক্তির স্বাধীনতা হরণের অভিযোগ তো সব থেকে বেশি ওঠে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেই। তবে এ কথাও স্বীকার্য, নেট দুনিয়ায় দৈত্যকায় কর্পোরেটকুল মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে কম নয়ছয় করেনি। একদিকে রাষ্ট্র অপরদিকে নেট দৈত্য- এই দুইয়ের টানাপোড়েনে এমন কৌশল কি অর্জন করা সম্ভব যেখানে এই বিশাল ভার্চুয়াল দুনিয়ায় কার্যকরী সামাজিক কোনও উদ্যোগ বাস্তবায়িত হতে পারে? সেখানেই সোশ্যাল মানি'র প্রাসঙ্গিকতা। কারণ, মুদ্রা যদি রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণের বাইরে অবাধে ঘোরাঘুরি করে তবে তা অর্থনীতির গতিপ্রকৃতিকে উল্টে দিতে সক্ষম। তেমন তেমন হবে কিনা সেও এখন চর্চার বিষয়। অতএব এই বাড়তি প্রশ্নও উঠছে, সোশ্যাল মিডিয়া, সোশ্যাল মানির জগৎ ছুঁয়ে আমরা কি অচিরেই প্রবেশ করতে চলেছি সোশ্যাল ইনিশিয়েটিভের এক পরিসরে? কী এই 'সোশ্যাল ইনিশিয়েটিভ' বা সামাজিক উদ্যোগ? তা হল এমন এক সামাজিক-অর্থনৈতিক পরিসর যেখানে অর্থনীতির বহুবিধ সম্ভাবনাগুলি সকলের কাছে উন্মুক্ত হচ্ছে ও যে যেভাবে সক্ষম নিজ নিজ গুণে ও চয়নে একেকটা কাজের বিন্দুকে ধরে উপার্জনক্ষম হয়ে উঠছেন। ফলত, একেকটা নতুন কর্মভূমি যেন প্রত্যহ আপন খেয়ালেই সৃষ্ট হয়ে চলেছে। যেন, এক 'augmented reality' আপনার সামনে মূর্ত হয়ে উঠছে কার্যকারণের সম্ভাবনা নিয়ে। এই মুহূর্তে কেউ কি জানেন, ব্লকচেন প্রযুক্তিতে পারদর্শী কতজন মানব সম্পদের অসম্ভব প্রয়োজন? অথচ, প্রথাগত স্বীকৃত শিক্ষায়তনগুলি বিস্তৃত ভাবে ব্লকচেন পড়াচ্ছে এমন একটিও সম্ভবত এ দেশে পাওয়া যাবে না। কিন্তু ব্লকচেন জানা কিছু লোকজন তো পাওয়াও যাচ্ছে! তারা আসছে কোথা থেকে? কিছু কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠান এইসব নিয়ে ক্লাস চালু করেছে বটে কিন্তু তা কতটা কার্যকরী হয়ে উঠতে পেরেছে তা নিয়ে সন্দিহান থাকারও যথেষ্ট কারণ আছে বলে অনুমান। তাই খতিয়ে দেখা এই যে, আজকের প্রয়োজনীয় কুশলী মানবসম্পদ শিক্ষায়তনের বাইরেই স্বশিক্ষায় তৈরি হচ্ছে নানাবিধ উপায়ে। আর নতুন কর্মোদ্যোগগুলি এইসব রসদ নিয়ে কাজ করতে করতেই আরও শিক্ষিত ও দক্ষ হয়ে উঠছে। তার সঙ্গে ক্রমপ্রসারিত সামাজিক উদ্যোগের পরিসর এই সমস্ত বাস্তবতাকে আক্ষরিক অর্থে রূপ দিয়ে চলেছে। অর্থাৎ, স্বপাঠ ও স্বশিক্ষাও আজকের বাস্তব কর্মজগতে অবশ্যম্ভাবী উপাদান হয়ে উঠেছে।
এই প্রেক্ষিতে দুনিয়া জুড়েই 'স্টার্ট আপ' এখন এমন একটি উদ্যোগ ও কর্মবাসনা যা নিকট ভবিষ্যতে অর্থনীতির ভুবনকে ছেয়ে ফেলবে তার প্রগাঢ় অস্তিত্ব ও বাস্তবতায়। যত যা কিছু প্ল্যাটফর্ম বা অ্যাপ, সবই আজ শেষ বিচারে এক 'সামাজিক বাজার'এর অবয়ব পেয়েছে যেখানে বহু বহু সংখ্যক মানুষ পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগের সেতু তৈরি করে নিতে পারছে। দেশ, কাল, ভাষার সীমানা ছাড়িয়ে সমস্ত যোগাযোগ ও লেনদেন এখন আয়াসসাধ্য। তার সঙ্গে 'সোশ্যাল মানি' ও 'সোশ্যাল ইনিশিয়েটিভ'এর যুগলবন্দীতে অর্থনীতির অবয়ব কোথায় গিয়ে কীভাবে দাঁড়াবে তাই এখন চিন্তকদের ধন্দে রেখেছে। তবে, অ্যামাজন, ফেবুক, গুগল'এর মতো অতিকায় ভার্চুয়াল কর্পোরেট দৈত্যরা এই সামাজিক উদ্যোগের পরিসরকে শেষাবধি নিয়ন্ত্রণ করে চলবে কিনা, সেও এক অমূল্য প্রশ্ন।
No comments:
Post a Comment