ক্রীড়া জগৎ'ও পথে
অশোকেন্দু সেনগুপ্ত
মন কি বাত! ১০০ দফা পার।
আমার মায়ের খুব পছন্দ ছিল এই কথাটি: 'একবার না পারিলে, দেখো শতবার'। মনে হচ্ছে, মোদিজীরও বুঝি খুব পছন্দ কথাটা। পছন্দ হবারই কথা, তবে সংশয় একটা থাকছেই- বারবার বলেও মানুষকে বোঝানো যাচ্ছে না যে দেশটা হিন্দুদের। আর, 'হিন্দু দেশ' বানানোর কাজে সংঘকে পাশে রাখার গুরুত্বও যেন লোকে বুঝছে না। এর জন্য ব্রিজভূষণদের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থা সহ একাধিক অভিযোগ থাকলেও তা উপেক্ষা করতে হয়।
দিনের পর দিন কুস্তিগিররা পথে বসে আছেন। বিনেশ ফোগট, সাক্ষী মালিক, বজরং পুনিয়া প্রমুখ কুস্তিগির যারা আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় পদক জিতে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন, গত ২৩ এপ্রিল থেকে টানা সাতদিনেরও বেশি দিল্লির যন্তর-মন্তরে বসে আছেন জাতীয় কুস্তিগির ফেডারেশন'এর সভাপতি ব্রিজভূষণ শরণের অপসারণ ও শাস্তির দাবিতে। বিনেশ ফোগট জানিয়েছেন, মোদিজী নিজের 'মন কি বাত' বলতে যতটা উৎসাহী, ঠিক ততটাই নিরুৎসাহী অন্যের মন কি বাত শুনতে। এমনকি, কুস্তিগিরদের তরফে ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে কোনও লিখিত অভিযোগও দিল্লি পুলিশ গ্রহণ করতে নারাজ। অবশেষে বিনেশ, সাক্ষীদের তরফে সুপ্রিম কোর্টে দ্বারস্থ হয়ে তবে দিল্লি পুলিশকে এই এফআইআর গ্রহণ করতে বাধ্য করা গেছে।
প্রশ্ন হল, কে এই দোর্দণ্ডপ্রতাপ ব্রিজভূষণ, যার বিরুদ্ধে টুঁ শব্দটি করতে স্বয়ং মোদিজীও ভয় পাচ্ছেন? ইনি হলেন জাতীয় কুস্তিগির ফেডারেশন'এর সভাপতি ও উত্তরপ্রদেশ থেকে নির্বাচিত সেই বিজেপি বাহুবলী সাংসদ, যার বিরুদ্ধে গত তিন দশকেরও বেশি সময় জুড়ে অসংখ্য অভিযোগ ও মামলা দেশের বিভিন্ন থানা ও আদালতে ঝুলে রয়েছে। খুন-খারাপি, ডাকাতি, যৌন হেনস্থা, অপহরণ সহ নানান মামলায় সে ইতিমধ্যেই খ্যাতি অর্জন করেছে। এছাড়াও, কুস্তিগির ফেডারেশনের সর্বোচ্চ পদ অধিকার করে কুস্তিগিরদের যৌন হেনস্থা ও নানান অপকর্মে সে ইতিমধ্যেই আরও হাত পাকিয়েছে। উপরন্তু, তার মাথার ওপর রয়েছে আরএসএস'এর কঠিন আশীর্বাদ। এ হেন ব্যক্তিদের নিয়েই তো বিজেপি-আরএসএস'এর ভারত জয়ের যাত্রা। তাই, তার বিরুদ্ধে যে কোনও অভিযোগেরই কোনও সারবত্তা থাকতে নেই।
কুস্তিগিরদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন নীরজ চোপড়া, কপিল দেব, বীরেন্দ্র সাহবাগ, সানিয়া মির্জা'দের মতো ক্রীড়াবিদরাও। আশার কথা যে, ক্রীড়া জগতের কতিপয় বিখ্যাত তারকাদের বাদ দিলে, অন্য বহু ক্রীড়াবিদরা আজ পথে নেমে বা মতামত জ্ঞাপন করে কুস্তিগিরদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। মুশকিল হচ্ছে, ক্রীড়া সংস্থার মাথায় বসানো হচ্ছে এমন সমস্ত রাজনৈতিক বাহুবলীদের, যাদের খেলাধুলোর থেকে অন্য বিষয়ে আগ্রহ বেশি। এদিকে খেলোয়ারেরা সংস্থার দিক থেকে তেমন কোনও সাহায্য ব্যতিরেকেই দিনাতিপাত করছেন উৎকর্ষে পৌঁছনোর জন্য। তাঁরা তাকিয়ে থাকেন সরকারি বদান্যতার দিকে- কবে আসবে সরকারি সাহায্য? কোন খেলায় কে হবেন কর্তা, তা ঠিক হয় সরকারি সাহায্য আনায় কার কার্যকারিতা কতখানি তার ওপর। তবে রাজনীতির লোকেদের শীর্ষ আসনে বসালে সাফল্য পাওয়া যে অসম্ভব, আমরাও নাকি তা বুঝতে শুরু করেছি ইদানীং। কিন্তু এখানেও কেমন খেলা দেখুন! পি টি ঊষা ভারতীয় অলিম্পিক সংস্থার প্রধানা হলেন। রাজ্যসভার মনোনীত সদস্যা হলেন। আরও পাবেন নিশ্চয়। এমন আশা নিয়েই তো তিনি মহিলা কুস্তিগিরদের পাশে না থেকে সমর্থন দিতে এগোলেন ক্ষমতাসীন দলের সাংসদ ব্রিজভূষণের দিকে, পকসো আইন কী বলছে তা উপেক্ষা করেই।
একটা সময় ছিল যখন খেলাধুলো ছিল নেহাত মনোরঞ্জনের এক পন্থা। আজ আর তা নেই। এখন নানা গল্পগাছা ছাপিয়ে তা হয়ে উঠেছে প্রকৃত অর্থেই প্রতিযোগিতামূলক খেলা। সুনামের পাশাপাশি অনেক অর্থও আছে কোনও কোনও খেলায়। কিন্তু অতি প্রাচীন ও অবশ্যই জনপ্রিয় কুস্তিতে তেমন অর্থ নেই। তবু নাম তো আছে, অন্তত এই উপমহাদেশে। সেই নামের লোভেই হয়তো ক্ষমতাসীন দলের সাংসদ ব্রিজভূষণ আঁকড়ে রয়েছে কুস্তিগিরদের প্রধান সাংগঠনিক পদ। তাছাড়াও সংঘ রয়েছে পাশে। তারও গুরুত্ব আছে অনুরাগ ঠাকুর থেকে মোদি বা অন্য সকলের কাছে। তাই তো কথা দিয়েও ব্যবস্থা নিতে কুন্ঠিত তাঁরা। দিল্লীর পুলিশ এফআইআর নিতেও ভয় পায়। সুপ্রিম কোর্টে দাঁড়িয়ে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাকে এফআইআর নিয়ে প্রতিশ্রুতি দিতে হয়।
শীর্ষ আদালতের নির্দেশে দিল্লি পুলিশ অবশেষে এফআইআর দায়ের করলেও এখনও এই লড়াই শেষ হয়নি বলে বিনেশ ফোগট ও অন্যান্য কুস্তিগিররা জানিয়েছেন। তাঁরা যন্তর-মন্তর'এর ধর্না থেকে উঠবেন না যতক্ষণ না পর্যন্ত ব্রিজভূষণ গ্রেফতার হচ্ছে। আজ দেশ জুড়ে রাজনৈতিক বাহুবলীদের বিরুদ্ধে যে লড়াই, সেখানে কুস্তিগির ও অন্যান্য ক্রীড়াবিদরা সর্বতোভাবে সামিল হয়ে এক ভয়ঙ্কর বাহুবলীকে অনেকটা পরাভূত করতে পারবেন বলে যে বিশ্বাসটা গড়ে উঠছে, সেটাও কম কথা নয়।
মোদির শাসন বেইমানদের নিয়ে। জনবিরোধীদের।নিয়ে। ভন্ড প্রধানমন্ত্রী তাই মন কি বাতে ঘেউঘেউ করে।
ReplyDeleteআপাদমস্তক প্রতারক মোদি।ভালো নেতারা জেলে দাঙাবাজরা ক্ষমতার অলিন্দে।
ভালো লখা।
অসিত।
লেখা"
Delete