Saturday, 14 May 2022

পেডাগজি অফ দ্য অপ্রেসড?

সরকারি বিদ্যালয়ে দিল্লি সরকারের অভাবনীয় সংস্কার

সোমেন চক্রবর্তী


স্বাধীনতার ৫৫ বছর বাদে ২০০২ সালে ৮৬তম সংবিধান সংশোধনে দুটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হয়েছিল। মৌলিক অধিকারে ২১এ ধারা যুক্ত করা হয়, যেখানে বলা হয় যে রাষ্ট্র আইন অনুযায়ী ৬-১৪ বছর পর্যন্ত সমস্ত শিশুর অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষার ব্যবস্থা করবে। সাথে সাথে ওই একই সংশোধনীতে রাষ্ট্রের কর্মপদ্ধতির নির্দেশক নীতিসমূহের ৪৫ ধারাতে বলা হয় যে ছয় বছর পর্যন্ত সমস্ত শিশুর জন্য রাষ্ট্র শৈশবকালীন যত্ন ও শিক্ষার ব্যবস্থা করতে বাধ্য থাকবে। এরই সাথে নাগরিকের মৌলিক কর্তব্যের বিভাগে ৫১এ ধারায় যুক্ত করা হয় যে ৬-১৪ বছরের শিশুর যেন অবশ্যই শিক্ষার সুযোগ প্রাপ্তি ঘটে, বাবা-মা বা অভিভাবক তা নিশ্চিত করবেন।

এর কয়েক বছর বাদে ২০০৯ সালে প্রণীত শিশুদের অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা আইনের (The Right of Children to Free and Compulsory Education Act, 2009 ) ৩ নম্বর ধারায় আরও স্পষ্ট করে বলা হল যে, প্রতিবেশী কোনও বিদ্যালয়ে প্রতিটি শিশুর শিক্ষার ব্যবস্থা যেন অবশ্যই করা হয়। এক ধাপ এগিয়ে ধারা ৪এ আরও বলা হল, যদি কোনওরকম বাধা বিপত্তির জন্য কোনও শিশু সময়মতো স্কুলে ভর্তি হতে না পারে, সে ক্ষেত্রে বয়স অনুপাতে সে নির্দিষ্ট ক্লাসে পরেও ভর্তি হতে পারবে। বয়সের প্রমাণপত্র দাখিল কোনও অবস্থাতেই বাধ্যতামূলক করা যাবে না।

কোন শিক্ষার কথা বলা হচ্ছে এখানে? ২০০৯'এর শিক্ষা আইনে পরিষ্কার বলা আছে যে শুধুমাত্র পুঁথিগত শিক্ষা নয় বরং শিশুর সর্বাঙ্গীন বিকাশই হবে শিক্ষার লক্ষ্য। নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০'তেও এই ভাবধারাটি প্রতিফলিত হয়েছে। সুতরাং, পাঠ্যপুস্তক নির্ভর শিক্ষা যেমন থাকবে তেমনি খেলাধুলো মায় সবরকমের সৃষ্টিশীল কার্যক্রমের সঙ্গে তাকে যুক্ত করতে হবে। এইখানে এটুকুই বলা যায় যে, নীতি রূপায়ণ এবং আইন প্রণয়নের নিরিখে প্রাথমিক শিক্ষা এবং শৈশব বিকাশের জন্য যা প্রয়োজন সে ব্যাপারে আমাদের দেশের পরিকল্পনাকারীরা তেমন খামতি রাখেননি।

প্রশ্ন হচ্ছে, এই নীতি রূপায়নে সরকারি বিদ্যালয়ের অবদান কতখানি। পরিসংখ্যানে গিয়ে লাভ নেই, কারণ, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাস্তবের সঙ্গে তার কোনও মিল থাকে না। তবু তারই মধ্যে কোথাও কোথাও সরকারি বিদ্যালয় অত্যন্ত ভালোভাবে শিক্ষা দেবার প্রচেষ্টা চালায়। তবে তা ব্যতিক্রম মাত্র। যুক্তরাষ্ট্র কাঠামোয় যে সফলতা সরকারি উদ্যোগে আসার কথা ছিল, বাস্তব ক্ষেত্রে তা কিন্তু বিপুলভাবে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রচেষ্টাতেই সম্ভব হতে পেরেছে। বিপরীতে, এটা মেনে নিতে আপত্তি থাকার কথা নয় যে সরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান ক্রমাগত নিম্নমুখি হয়েছে এবং কমবেশি মাত্রায় সব রাজ্যেই এ এক বাস্তব সত্য।

এর ফলে ভারতবর্ষের স্কুল শিক্ষা কতকগুলো কঠিন সত্যের মুখোমুখি হয়েছে। সংক্ষেপে বলতে গেলে,  স্কুলবাড়িগুলি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভগ্ন দশাগ্রস্ত। স্কুলে হয় টয়লেট অনুপস্থিত অথবা তা ব্যবহারযোগ্য নয়। শিক্ষকদের পড়ানোর মান এবং দক্ষতা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। বিদ্যালয়ের পরিবেশ এবং শিক্ষা প্রক্রিয়া না ছাত্র, না শিক্ষক, না প্রশাসন, না অভিভাবক- কাউকেই উদ্বুদ্ধ করে না। সময়মতো ভর্তি হলেও পরবর্তীতে ছাত্রছাত্রীদের এক বড় অংশ স্কুল ছেড়ে দেয়।  দলিত, আদিবাসী, গরিব এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিশুদের প্রতি বৈষম্য ও অবিচার আকছার ঘটছে। প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য কোনও বিশেষ ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। আজকের এই উত্তর-আধুনিক সমাজেও ভীতসন্ত্রস্ত করে রাখা হয় ছাত্রছাত্রীদের। ফলে, স্কুল বা শিক্ষার প্রতি তাদের আকর্ষণ কমে বই বাড়ে না। হাজার হাজার এমন প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্র রয়েছে যেখানে মাত্র একজন শিক্ষক কয়েকশো ছাত্র-ছাত্রীদের একমাত্র আশাভরসা হয়ে টিঁকে আছেন।

স্কুল শিক্ষার মান বৃদ্ধি করতে গেলে কাঠমোগত পরিবৰ্তন অবশ্যম্ভাবী। অর্থাৎ, পড়ুয়ারা স্কুল বা শ্রেণিকক্ষ দেখে যেন আকর্ষিত হয়। সেখানে প্রয়োজনীয় সুবিধাগুলো যেন উপলব্ধ হয়। একটা প্রশস্ত অঙ্গন, পরিচ্ছন্ন বিদ্যালয় ভবন, সাজানোগোছানো শ্রেণিকক্ষ না হলে কোনও শৈশবই সেখানে দিনের পর দিন হাত-পা ছড়িয়ে বা উদ্বাহু হয়ে নেচেকুঁদে সময় কাটাতে চাইবে না। এই পরিবেশটাই শৈশব সবার প্রথমে আশা করে এবং তার সাথে পাঠ্যপুস্তক নিঃসৃত জ্ঞানার্জন। সে কারণে দরকার নিয়মিতভাবে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ। পড়ানোর দক্ষতার দিকেও নজর দেওয়াটা বিশেষ জরুরি। পাঠ্যপুস্তক ছাড়াও বাজারমুখি দক্ষতাগুলির বিকাশ বিশেষ প্রয়োজন। শুধু ক্লাসরুম বা অফিস ঘর নয়, বিজ্ঞানের ল্যাব এবং পাঠাগার অবশ্যই থাকতে হবে। ছাত্রদের যেন এই বিশ্বাস জন্মায় যে তাদের বিকাশের জন্য একটা সঠিক প্রক্রিয়াও উপস্থিত রয়েছে।

এই প্রেক্ষিতে দেখলে দিল্লির আপ সরকারের স্কুল শিক্ষার কার্যক্রম অবশ্যই বিশেষ প্রশংসা ও স্বীকৃতি দাবি করে। এই সরকারের শিক্ষার কার্যক্রমকে সাদামাটাভাবে বিশ্লেষণ করলে যা সামনে আসে তা হল, ৮৬তম সংবিধান সংশোধনে বা বর্তমান শিক্ষা আইনে অথবা জাতীয় শিক্ষানীতিতে যা বলা হয়েছে, দিল্লির আপ সরকার তাকেই সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে প্রয়োগ করবার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। যখন কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন রাজ্য সরকার স্কুল শিক্ষার ক্ষেত্রে গতানুগতিক ভাবে কাজ করছে, তখন দিল্লির সরকার শিক্ষার উন্নতিকে রাজ্যের সামগ্রিক উন্নয়নের এক প্রধান সোপান হিসাবে দেখছে। তাদের শিক্ষা কার্যক্রমের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি হল:

১) শিক্ষা ক্ষেত্রে দিল্লি সরকার প্রতি আর্থিক বছরে প্রায় ২৫ শতাংশ খরচ করে (যদিও ১৫-১৭ শতাংশ পর্যন্ত কিছু কিছু রাজ্য খরচ করে);

২) বিদ্যালয় ভবন ও শ্রেণিকক্ষগুলিকে আমূল পরিবর্তন করে তাদের সুন্দর করে তুলেছে। গত ৭-৮ বছরে প্রায় নতুন ৮০০০ শ্রেণিকক্ষ বানিয়েছে। অর্থাৎ, প্রতি আর্থিক বছরে ১০০০ নতুন শ্রেণিকক্ষ অবশ্যই প্রশংসনীয়। এর ফলে স্বল্প পরিসরে গাদাগাদি করে ছাত্রছাত্রীদের বসতে হয় না;

৩) সাজানোগোছানো শ্রেণিকক্ষ বৃদ্ধি করেছে ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয়ের প্রতি আকর্ষণ। অভিভাবকদের মধ্যেও তা বাড়তি প্রত্যাশা ও বিশ্বাস তৈরিতে সহায়ক হয়েছে; 

৪) এছাড়া বেশিরভাগ বিদ্যালয়ে রয়েছে আকর্ষণীয় ল্যাব ও পাঠাগার। কিছু জায়গায় এ কাজ এখনও বাকী আছে;

৫) প্রশস্ত অঙ্গনে ছেলেমেয়েরা খেলে বেড়াচ্ছে অবসর সময়ে;

৬) সব ক্ষেত্রে নয় যদিও, যেখানে সম্ভব তৈরি হয়েছে অডিটোরিয়াম। সেখানে নিয়মিত ভাবে পাঠক্রম বহির্ভূত বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম চলতেই থাকে; 

৭) সরকারি বিদ্যালয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে রীতিমতো প্রচার করে অভিভাবক-শিক্ষক সভা নিয়মিত ভাবে সংগঠিত হয়। কয়েক বছর আগেও এ ঘটনা বেসরকারি বিদ্যালয়ের একচেটিয়া ছিল;

৮) শিক্ষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ ছাড়াও বিভিন্ন নামজাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (যেমন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, আইআইটি ইত্যাদি) তাদের নিয়ে যাওয়া হয়;

৯) স্কুল ম্যানেজমেন্ট কমিটিতে শিক্ষক, অভিভাবকদের প্রতিনিধি, সরকারি প্রতিনিধি এবং শিক্ষার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা রয়েছেন। বিদ্যালয় কেন্দ্রিক বিষয়গুলো এই কমিটি দেখে। রাজ্য সরকার এই কমিটির সঙ্গে যৌথভাবে নতুন শিক্ষা পাঠক্রমের বিষয়ে পদক্ষেপ নেয় (যেমন সমস্যা সমাধানের দক্ষতা, বিশ্লেষণাত্মক চিন্তাভাবনা, মানসিক বিকাশ, সুখ ও সৌহার্দ্যমুখি পাঠক্রম, দেশভক্তি পাঠক্রম ইত্যাদি);

১০) প্রতিটি বিদ্যালয়ের জন্য ৫ লক্ষ টাকা আলাদাভাবে সংরক্ষিত থাকে যা থেকে বিদ্যালয় প্রশাসন প্রয়োজন মতো খরচ করতে পারে। এর ফলে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থেকে বিদ্যালয়গুলি অনেকটাই মুক্ত হতে পেরেছে;

১১) অঙ্গনওয়াড়ি এবং নার্সারি শিক্ষার জন্যও কিছু বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে;

১২) কিছুদিন আগে দিল্লী শিক্ষা বোর্ড তৈরি হয়েছে। পরীক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াও এই সংস্থাটি উদ্যোগ-অভিমুখি কার্যক্রম এবং শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগকে কীভাবে একসূত্রে বাঁধা যায় সেটা দেখছে;

১৩)  বিদ্যালয় শিক্ষকদের বিভিন্ন সরকারি পরিসংখ্যান সংগ্রহের কাজ ইত্যাদি থেকে অনেকটাই মুক্ত করেছে;

১৪)পাশাপাশি দিল্লিকে ২৯টি ভাগে বিভক্ত করে প্রতিটি ক্ষেত্রে একটি করে বিশেষ বিদ্যালয় তৈরির প্রকল্প নিয়েছে যেখানে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, বিভিন্ন কলা এবং খেলাধুলো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে।

দিল্লি সরকার শিক্ষার ক্ষেত্রে যে উদ্যোগ নিয়েছে তা বকলমে প্রতিটি সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। দিল্লির আপ সরকার প্রমাণ করেছে, সদিচ্ছা থাকলে অত্যন্ত জটিল সাংবিধানিক পরিস্থিতির মধ্যে থেকেও পরিবর্তন নিয়ে আসা সম্ভব। শুধু তাই নয়, পাওলো ফ্রেইরি'র ‘পেডাগজি অফ দ্য অপ্রেসড'কে এই সরকার দিল্লির বিদ্যালয়গুলিতে বাস্তবায়িত করে তুলছে। আজ থেকে ৮ বছর আগে দিল্লির সরকারি বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় শতকরা পাশের হার ছিল ৫০ শতাংশেরও নিচে। বাড়তে বাড়তে এখন তা ৯৭ শতাংশে এসে পৌঁছেছে। ইদানীংকালে, দিল্লির মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের মধ্যেও সরকারি বিদ্যালয়ের প্রতি আগ্রহ লক্ষ করা যাচ্ছে, যা নাকি আগে নিম্নবিত্ত ও বস্তিবাসীদের শিক্ষার প্রতিষ্ঠান হিসাবেই পরিচিত ছিল।

তবুও প্রশ্ন থেকেই যায়। যে কোনও রাজ্য সরকার সেই রাজ্যের সামগ্রিক শিক্ষার বিকাশের স্বার্থে কাজ করবে, এটাই স্বাভাবিক। যেমন ২০১৬ সালে কেরালা সম্পূর্ণ প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের কৃতিত্ব অর্জন করে যার মধ্যে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা মিলেমিশে রয়েছে। সেই তুলনায় আপ সরকারের সমস্ত প্রচারে শুধু সরকারি বিদ্যালয়ের সাফল্যকেই সামনে আনা হয়। ভোটের রাজনীতিতে এর সুদূরপ্রসারী সুফল নিশ্চয়ই রয়েছে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী এক সময় বলেওছিলেন যে ভোটে জিতলেই রাজনৈতিক দলের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। তা একটি কঠিন সত্য বটে। তবে রাজনৈতিক দল এবং রাজ্যের সরকার দুটি আলাদা অস্তিত্ব। দুয়ের আলাদা লক্ষ্য। আশা করছি দিল্লি সরকার কোনও একদিন দিল্লি রাজ্যের সমস্ত শৈশবের শিক্ষার কাণ্ডারী হয়ে উঠবে। কেরলের মতো সেখানেও সরকারি-বেসরকারি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবে। সেই প্রত্যাশায় রইলাম।


7 comments:

  1. দুর্নীতির প্রশ্নটি এখানে গুরুত্বপূর্ণ।
    দুর্নীতি দমন‌ই এই প্রক্রিয়ায় দারুনভাবে সফল।
    শিক্ষায় নুতন কিছু করার কর্মসূচীও অন্যতম কারণ।

    ReplyDelete
  2. খুব ভালো লেখা । আপ সরকার শিক্ষায় একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে - কোনো সন্দেহ নেই।

    ReplyDelete
  3. কিন্তু এত পড়েশুনে শিক্ষিত হয়ে কি করবে যেখানে white collar চাকরিই নেই?

    ReplyDelete
  4. লেখাটি অত্যন্ত অগভীর ।
    পাউলো ফ্রেইরে নিপীড়িতের শিক্ষায় সবচেয়ে
    বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন নিম্নবর্গের শিশুদের মাতৃভাষা ও বাস্তবজীবনে ব্যবহৃত শব্দগুচ্ছের ওপর।
    এদেশে রবীন্দ্রনাথ ও গান্ধির শিক্ষাচিন্তায়
    কোথাওআকর্ষণীয় শ্রেণিকক্ষের কথা নেই।
    আছে প্রকৃতি ও বাস্তব জীবনের
    দৈনন্দিন কর্মভিত্তিক শিক্ষার
    ওপর।
    বেসরকারি বিদ্যালয়ের কোনো স্থান রাখার মানে হচ্ছে শিক্ষাকে পণ্যে পরিণত করার পথ প্রশস্ত করা। শিক্ষা বাণিজ্য রমরম করে বাড়ছে।Edupreneur নামক পুঁজিপতি সম্বন্ধে জানতে হলে এমাসের Outlook Business দেখতে পারেন।
    পাউলো ফ্রেইরে শ্রেণি অবস্থান সম্বন্ধে শিশুদের সচেতন ও আত্মমর্যাদা সম্পন্ন করার জন্য শিক্ষাকে পুরোটা ঢেলে সাজতে চেয়ে ছিলেন। দিল্লির কাণ্ডকারখানাকে
    ফ্রেইরের সঙ্গে দূরতম তুলনাও করার প্রশ্নই আসে না।

    ReplyDelete
  5. এই তো চাই। শিক্ষা স্বাস্থ্য বাসস্থান।

    ReplyDelete
  6. আপ সরকারের বিদ্যালয় শিক্ষা নিয়ে আমার লেখাটির উপর কিছু মন্তব্য এসেছে| প্রত্যেকটি মন্ত্যব্যই তার নিজগুনে সমৃদ্ধ| সে কারনে সকলকেই ধন্যবাদ জানাচ্ছি|
    একটি মতামতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিশ্লেষণ কিন্তু সমালোচনামূলক মন্তব্য এসেছে| যদিও তা গঠনমূলক তবুও সেখানে কিছু অসংগতি বা দৃষ্টিভঙ্গির তফাৎ রয়েছে মনে করে কয়েকটি কথা বলা প্রয়োজন বোধ করছি|
    আপ সরকারের শিক্ষানীতির মধ্যে হয় বিশেষ কিছু বা নতুনত্ব বা ভালো কিছু রয়েছে অথবা নেই| এ ব্যাপারে মতামত স্পষ্ট হওয়া দরকার| আমি অবশ্যই সেখানে ভালো কিছুই দেখছি|
    যতদূর জানি পাওলো ফ্রিয়েরে শিক্ষার বিষয়ে তিনটি বিষয় কে সামনে এনেছেন| ফ্রিয়েরে কিন্তু গরিব এবং মধ্যবিত্ত দুয়েরই শিক্ষার কথা বলেছেনা| এই তিনটি বিষয় হল - পরিবর্তনকে ভয় না পাওয়া; মানবিকীকরণ অনুভূতি বৃদ্ধি করা (sense of humanisation); এবং শোষণ এবং অজ্ঞানতার থেকে মুক্তি (liberation)| তাঁর এই ব্যাখ্যায় শ্রেণীকক্ষের গড়ন নিয়ে নির্দিষ্ট কিছু বলেছেন মনে হয় না| অথবা আমি হয়তো ওই বিষয়টি বুঝে উঠতে পারিনি| তবে উনি লিখছেন ষাটের দশকের অন্তিম ভাগে| তখনকার ব্রাজিল, দক্ষিণ আমেরিকা এবং বিশ্বের শিক্ষার ধারণা অনেকটাই পাল্টে গিয়েছে| উত্তর আধুনিক সময়ের ভাবনা চিন্তা ততদিনে সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে| রবীন্দ্রনাথ এবং গান্ধীর শিক্ষা ভাবনা ফ্রিয়েরের দর্শণের সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রেই মিলে যাবে যদিও, কারণ এই দুই ভারতীয় চিন্তাবিদও মানবতার পূজারী ছিলেন| কিন্তু তাঁদের শিক্ষা কর্মসূচি বা পদ্ধতি কি সত্যিই ফ্রিয়েরের সঙ্গে সম্পূর্ণত এক| বোধহয় না|
    আপ সরকারের বিদ্যালয় শিক্ষা কেন ফ্রিয়েরের পেডাগজির তুলনাত্মক হতে পারবে না বুঝতে পারলাম না|
    বাজার মুখী শিক্ষা এবং বাণিজ্য শিক্ষা (এডুপ্রেনিউর) কি একই বিষয় বা তাদের চরিত্রগত বৈশিষ্ট কি অভিন্ন? খুব সাধারণ ভাবে দেখলেও আধ্যাত্মিক শিক্ষা ছাড়া সমস্ত শিক্ষাই শেষ ব্যাখ্যায় বাজার মুখী| এখানে দুটো পছন্দর সুযোগ আছে - কেউ একজন তার ইচ্ছেমতো পড়াশোনা করবে (যেমন আমাদের দেশে আশির দশকের শেষ পর্যন্ত ছিল science, commerce, Humanities এর বাইরে স্পেশালিটি বলতে ডাক্তারি অথবা ইঞ্জিনিয়ার) তারপর বাজারে গিয়ে চাকরির ভিড়ে হারিয়ে গিয়ে কিছু একটা খুঁজতে থাকবে| অন্য প্রকল্প হচ্ছে, একজন ঠিক করছে কিরকম দক্ষতা সে অর্জন করবে, সেই অনুযায়ী পড়াশোনার মধ্য দিয়ে নিজেকে তৈরী করছে| এবং সেই মতো নির্দিষ্ট বাজারে এক লক্ষ্য-অভিমুখি পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করবার চেষ্টা করবে| শিক্ষাক্ষেত্রে যে ভাবে শাখা-প্রশাখা বিস্তারিত হচ্ছে তাইতে দ্বিতীয় পছন্দ তে বর্তমান প্রজন্মকে যেতেই হচ্ছে| না হলে শ্রমের বিনিময়ে প্রত্যাশিত পেশাগত স্বচ্ছন্দতা এবং মূল্য পাবার সম্ভাবনাই হ্রাস হতে থাকবে| সেটাকে এখন শিক্ষার পাঠক্রমের মধ্যে আনবার প্রচেষ্টা চলছে| এর বিকল্প যদি কিছু হয় সে বিতর্ক তো বিস্তারিত, যুক্তিসিদ্ধ হতে হবে| হালকা মন্তব্যে তো কোন সুরাহা হবে না|বরং ব্যক্তি জীবনে দ্বিচারিতা প্রকট হয়ে উঠবে|
    সবশেষে, আপ সরকারের শিক্ষানীতি বা বিদ্যালয় শিক্ষার পরীক্ষা-নিরীক্ষা তো কখনোই শেষ কথা হতে পারে না| তবে, এই মুহূর্তে এই বিকল্পতাকে সাবাশ না জানবার কারণও যে কিছু খুঁজে পাইনা|

    ReplyDelete
  7. শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড অথচ শিক্ষা নিয়ে বেশিরভাগ মানুষ সচেতন নয়, যার সুযোগ নিচ্ছে কিছু স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক দল। খুব সুন্দর ও তথ্যসমৃদ্ধ লেখা।

    ReplyDelete