অন্ধজনে দেহ আলো
অনিন্দ্য ভট্টাচার্য
কলেজ স্কোয়ারে 'লিটল ম্যাগাজিন সমন্বয় মঞ্চ' আয়োজিত লিটল ম্যাগাজিন মেলা
এটাই হয়তো হওয়ার ছিল। নন্দন চত্বরের লিটল
ম্যাগাজিন মেলার সঙ্গে তিন বছর আগে জুড়লো ‘সাহিত্য উৎসব’ ট্যাগ। এ বছরের (২০১৭)
মেলায় এক অংশকে পাঠানো হল রাস্তা পার করে মোহরকুঞ্জে। শুধু টেবিলগুলো বাদে বাংলা
একাদেমির লিটল ম্যাগাজিন মেলার গাত্র থেকে লিটল ম্যাগাজিনকুলই খসে পড়ল। পাত পেড়ে
বসলেন সাহিত্যের বড় অঙ্গনের কুশীলবেরা। তাঁদের বাজার ও খ্যাতি নিভু নিভু, পাঠকও
নাকি কমে যাচ্ছেন, অতএব সওয়ার হও লিটল ম্যাগাজিনের ঘাড়ে। বেশ তো! কিন্তু ঘাড়ে চেপে
বসে ঘাড়টাই মটকাতে চাইলে তো বাপু তোমাদেরও কিছু থাকে না।
সে যাক গে। মোদ্দা কথা,
নন্দন প্রাঙ্গণে লিটল ম্যাগাজিন মেলা আর না। কাউকে না জানিয়ে, গোপনে, প্রায়
ষড়যন্ত্র করে বাংলা একাদেমির কত্তারা এমন একটি সিদ্ধান্ত নিলেন বলে দুর্জনেরা বলছেন।
কারণ, লিটল ম্যাগাজিন বড় বেয়ারা। তারা বাজারি সাহিত্যিকদের পাত্তাই দেয় না।
ক্ষমতার লোকেদেরও নয়। আর বাজারি সাহিত্যর এখন যেহেতু সাড়ে বারোটা অবস্থা তাই তাদের
উপায় দুটি – এক, লিটল ম্যাগাজিনের আশ্রয়ে যদি কিছু করা যায়; দুই, নচেৎ, লিটল
ম্যাগাজিনেরই বারোটা বাজাও যাতে পড়াশোনার পরিসরে শূন্যতা তৈরি হয়, তখন আবার
তেনাদের নতুন বাজার তৈরি হতে পারে। তো, তাঁরা দ্বিতীয় পথটিকেই সাব্যস্ত করেছেন।
ভাগাও লিটল বংশোদ্ভবদের ওকাকুরায়।
সে না হয় হল। স্বাভাবিক,
পাঠকেরা খুব বিপদে পড়বেন। লিটল ম্যাগাজিনের আর কী! তারা তো পুরুলিয়া থেকে কুচবিহার
সর্বত্র চষে বেড়াচ্ছেন। প্রায় সমস্ত জেলায় এখন লিটল ম্যাগাজিন মেলা। বইমেলা উঠে
যাচ্ছে, তার জায়গা নিচ্ছে লিটল ম্যাগাজিন মেলা। কিন্তু কলকাতার প্রাণকেন্দ্রে মূলত
পাঠকের যাতায়াতের সুবিধার জন্য যে লিটল ম্যাগাজিন মেলাটা গত ১৯ বছর ধরে নন্দন
চত্বরে হয়ে আসছে, তাকে আপনারা মানে বাংলা একাদেমি এইরকম নিষ্ঠুরভাবে গলা টিপে
মারবেন তা সত্যি কেউ ভাবতেও পারেনি। আসলে, আপনারা ভাবছেন, পাঠকদের ব্যারিকেড করে
দিতে পারলেই আপনাদের উদ্দেশ্য সফল হবে, লিটল ম্যাগাজিন মুখ থুবড়ে পড়বে।
ও মশাইরা, আপনারা লিটল
ম্যাগাজিন থেকে এখনও কয়েক যোজন পিছনে। আপনাদের হাতে পুলিশ আছে, আইন আছে, পয়সা আছে
কিন্তু পাঠক নেই। আমাদের পাঠক আছে, আমরা সেখানেই জিতে গেছি। আপনারা মারতে পারেন
কিন্তু অমরত্ব কেড়ে নিতে পারেন না। আপনারা ব্যারিকেড তৈরি করুন, আমাদের আটকান।
আমাদের লেখা ও পত্রগুলি সব অদৃশ্য পরমাণু শক্তির মতো আপনাদের অলক্ষে পাঠকের
মস্তিষ্ক ও হৃদয়ে পৌঁছে যাবে অনিবার। কারণ, আপনারা জানেন না যে আপনারা অন্ধ। দুর্ভাগ্যবশত, সেই
আমাদের সৌভাগ্য।
একদম সঠিক অনুভূতি
ReplyDeleteযথার্থ এই প্রতিবেদন। তবে , চোর কী আর ধর্ম কথা শুনবে !
ReplyDeleteঠিক
ReplyDeleteMone porlo purono ek slogan: `Our bodies may be bullet-ridden, but our dreams are bullet-proof.'
ReplyDelete