যেতে পারি কিন্তু কেন যাব
অনিন্দ্য ভট্টাচার্য
গত বছর থেকেই শোনা যাচ্ছিল,
২০১৮ সালের কলকাতা বইমেলা মিলনমেলা প্রাঙ্গণে হবে না। খোলসা করে তেমন ভাবে কেউ
কিছু না বললেও আকারে-ইঙ্গিতে বেশ স্পষ্ট ছিল। অবশেষে তা স্পষ্ট হল। গত বেশ কয়েক বছর ধরে কলকাতা বইমেলায় প্রতিটি
দিন ‘একক মাত্রা’র টেবিলে বসে বসে পর্যবেক্ষণ করতাম মেলার হাল-হদিশ। উঠে বেরিয়ে,
চক্কর মেরেও দেখে নিতাম, চেখে দেখতাম কী চলছে চারপাশে। সে এক কেলোর কীর্তি!
আমরা যারা লিটল ম্যাগাজিন
করি তাদের দুর্ভোগ ছিল পোয়াবারো। দরখাস্ত জমা দেওয়ার দিন থেকে মেলা শুরুর দিন
পর্যন্ত এক গভীর আশঙ্কা, কড়া ধমক, কর্তাদের উন্নাসিকতা ও লাল চোখ দেখতে দেখতে মেলা
প্রাঙ্গণে এসে তবে বোঝা যেত যে আমরা অবশেষে এবারে জায়গা পেয়েছি। বিনি পয়সার ভোজ তো!
তাই গুটিয়ে বসে থাকুন, নট নড়নচড়ন নট কিচ্চু!
লিটল ম্যাগাজিনের টেন্ট হল
এক কোণে তো পিছনে টিভি চ্যানেলের ডিজে বক্স আর তার ত্রাহি মধুসূদন আওয়াজ।
ঠেসাঠেসি, এর ওর ঘাড়ের ওপর দিয়ে, একে মাড়িয়ে তাকে মাড়িয়ে উদ্বাস্তু শিবিরের করুণ
আস্তানা। টেন্টের একপাশে পুলিশ মোতায়েন, কারণ এই লিটল ম্যাগাজিনওয়ালারাই গণ্ডগোল
পাকায় সবচেয়ে বেশি। তা সেই উদ্বাস্তু শিবির থেকে বেরলেই আপনার চোখে পড়বে সরষের
তেল, সোনার গহনা, টিভি চ্যানেল আর হরেকরকম্বা সব স্টল যেখানে আপনার মাসের
বরাদ্দগুলো জুটে যেতে পারে। সে এক ‘এনজয় গুরু মেলা’। আমার প্রস্তাব ছিল একটি ‘বিনোদন
মেলা’ হোক যেখানে সংসারের টুকিটাকি থেকে সিরিয়ালের নায়ক-নায়িকা সব পাওয়া যাবে
(সঙ্গে কিছু বইও)। তো তা হল না, বইমেলা সেই মর্যাদা পেল। সেলেব গন্ধে, পণ্য
আকুলতায়, রসনা তৃপ্তিতে বইমেলা থিকথিক। লেখালিখি ও পাঠের সঙ্গে বইমেলা তার নাড়ির
যোগ হারাল।
লিটল ম্যাগাজিন তো সেই
নাড়ির যোগ। নীরব সাধনা। মেধা, পরিশ্রম ও সময়ের এক আকুল নিবিড় গ্রন্থি। বইমেলায় থাকা
মানে তার অশেষ যন্ত্রণা। কোনও পাঠক টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে লিটল ম্যাগাজিনের পাতা
ওল্টাচ্ছেন, কর্ণকুহরে ক্রমাগত ঢুকছে জগঝম্প তাল আর বিকট চীৎকার। কিছু বলতে চাইছেন
তো শোনার উপায় নেই। বহু লিটল ম্যাগাজিন তাদের সারা বছরের পত্রিকাগুলি নিয়ে অপেক্ষা
করতেন এই বইমেলার জন্যই। কেউ কেউ বইমেলা উপলক্ষেই বের করতেন তাদের পরিশ্রম জাত
সংখ্যাগুলি। তালেগোলে, ঝংকারে, উল্লাসে সব যেন মাটি। ভিআইপি’রা আসবেন, তাই আপনি,
এই গেট নয়, ওই গেট দিয়ে আসুন। ক্রমশ মেলাটাই হয়ে দাঁড়াল এক বিকট উল্লাস! আপনি তো
লিটল ম্যাগাজিন, আপনার টেবিলে বই কেন? তাহলে মশাই, বইমেলায় সরষের তেল কেন? কেউ কেউ
তার মধ্যেই খুঁজে নিলেন তাঁদের প্রিয় বই ও লিটল ম্যাগাজিনগুলি, কিন্তু সে এক
যুদ্ধের মতো।
যারা নিবিড় পাঠক, আজ তাঁদের
বড় অংশটাই লিটল ম্যাগাজিন ও তাদের প্রকাশনার পাঠক। এঁরাই তাঁদের পছন্দের বইগুলি
খোঁজেন ও কেনেন। অনেকে অবশ্য বাধ্যত পাঠ্যবই ও তার রেফারেন্সের খোঁজ করেন। সে বাদে
আজ বাংলা ভাষার নিবিড় পাঠক তো লিটল ম্যাগাজিনেরই পাঠক। তার কী দায় পড়েছে ‘এনজয়
গুরু মেলায়’ এসে সময় ও মননের ক্ষতি করার?
তাই, আমরা লিটল ম্যাগাজিনওয়ালারা, বরং
বিদায় নিই এই প্রাঙ্গণ থেকে। এখন লিটল ম্যাগাজিনের যুগ। চারপাশে, জেলায় জেলায়, অজস্র
লিটল ম্যাগাজিন মেলাই আজকের বাস্তবতা। সেই হোক আমাদের আশ্রয়।
Sahamot.gato boi melai te masla theke suru kore ki chilo na tar listi korte hoi.tar opr Nana channel gulir stall .bikot chitkar ,melar poribresh AR nei .
ReplyDeleteএকদম হক কথা
ReplyDeleteবইমেলার হৈ হৈ
ReplyDeleteরোই রোই রোই রোই ..
পিঠে খেলে পেটে সই -
মাঠে গ্ল্যামার চৈ চৈ ,
তার মাঝে সুখ নেই
পড়েও একটাও বই ||