রাতের চেয়েও অন্ধকার!
সুপ্রিয় সাহা
গত ২৫ শে জানুয়ারি ২০১৫ কে আমরা বাংলা লিটল ম্যাগাজিনের পক্ষে এক “কালো দিন” হিসেবে চিহ্নিত করতেই পারি। নদিয়ার দেবগ্রামে ২২-২৮ জানুয়ারি চলছে দেবগ্রাম সাংস্কৃতিক মেলা এবং এই মেলাতেই আত্মপ্রকাশ করল একটি ছোট পত্রিকা “সাদামাটা”। সবে কলেজে ভর্তি হয়েছে কি হয়নি সব ১৮/১৯ বছরের ছেলেমেয়েদের একটি গ্রুপ- যেমন হয় আর কি! “অলিন্দ” ও “তালপাতার সেপাই” শুরু হওয়ার অনেকদিন পর দেবগ্রাম থেকে প্রকাশিত হল আরো একটি ছোট পত্রিকা। ২২ ও ২৩ তারিখ তারা মেলার স্টল থেকে বেশ ভালোই বিক্রিবাটা শুরু করে কিন্তু গোল বাঁধে ২৪ তারিখ সন্ধেয়। হঠাৎ বেশ কিছু মানুষ পত্রিকার স্টলে প্রায় আক্রমণের ভঙ্গিতে এসে জানায় যে পত্রিকার সম্পাদকীয় তে তাদের ধর্ম ও ধর্মীয় লোকাচার কে ইচ্ছাকৃত ভাবে হেয় ও অপমান করা হয়েছে। এক্ষুনি তারা সমস্ত ম্যাগাজিন জ্বালিয়ে দেবে, ভেঙ্গে দেবে স্টল, দরকার হলে ছেলেমেয়েগুলোকেও ছাড়বে না। পত্রিকার সদস্যরা এমনকি আমরাও বেশ ঘাবড়ীয়ে যাই কারন তাদের কথা অনুয়ায়ী সেরকম কিছুই আমরা খুঁজে পাছছিলাম না। আমি সম্পাদকীয়র সেই অংশ এখানে তুলে দিচ্ছি যেখানে তাদের কথা অনুয়ায়ী তাদের ধর্মকে অপমান করা হয়েছে।
“...আমরা বিশ্বাস করি যে, বছরের দুটো দিন সাদা পাঞ্জাবী পাজামা পড়লেই সংস্কৃতিবান হওয়া যায় না। তার জন্য লাগে সাংস্কৃতিক মনোভাব। আমরা এও মনে করি যে, কিছু লিখতে গেলে তার জন্য পাঞ্জাবী পড়ে একটা সাইড ব্যাগ ঘাড়ে ঝোলাতে হয় না বা বড় বড় দাড়ি গোঁফ-ও রাখতে হয় না। তাই এই সময় দাঁড়িয়ে জিন্স ও টিশার্ট পড়ে কিছু লেখায় হল আমাদের “সাদামাটা”...”
এর মধ্যে ক্রমেই উত্তেজনা বেড়ছে। কোন কথাই শুনতে ওরা রাজী নয়। শেষমেশ মেলা কমিটি ওদের স্টল উঠিয়ে দেয় এবং ছেলেমেয়েগুলো রাতের অন্ধকারে মেলা ছেড়ে প্রাণ নিয়ে পালাতে বাধ্য হয়।
ঘটনাটি এখানেই মেটে না। ক্রমাগত বাড়তে থাকে। পরের দিন ঐ ধর্মেরই কিছু শিক্ষিত জন তাদের বোঝাতে গিয়েও বিফল হয়ে ফেরে। এর পর অনেকেই এখানে অন্য অনেক কিছুর গন্ধ পেলেও, সেটা আমাদের আলোচনার বিষয় নয়।
এবার সংক্ষেপে বলি। মূলত তাদের দাবী হয় সম্পাদককে স্টেজে উঠে ক্ষমা চাইতে হবে। আমরা হতবাক! ধীরে ধীরে ঘটনা গড়ায় পুলিশের কাছে। এবং অনেক ঝামেলার পর সম্পাদককে পুলিশ ফাঁড়িতে উন্মত্ত কিছু লোকের সামনে ক্ষমা চাইতে হয়। এরপরও যে ব্যাপারটি পুরোপুরি মিটে গেছে তা বলা না গেলেও আমি সে আলোচনায় আর যেতে চাই না।
আমরা গোটা ঘটনার বেশিরভাগ সময়ই উপস্থিত ছিলাম “সাদামাটা”র পাশে। এবং সম্পাদককে যখন ক্ষমা চাইতে হচ্ছে কোন ভুল না করা সত্তেও, তখন সেখানে দাঁড়িয়ে একটি লিটল ম্যাগের একজন সম্পাদক হিসেবে আমার মাটিতে মিশে যাওয়া ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। সে রাতে আমি ভাল করে ঘুমোতে পারিনি আর এখনো অবধি ভিতরে এক অস্বস্তি কাজ করছে, ভুলতে পারছি না আমি, যার জন্য অনেকে বারণ করা সত্ত্বেও এই লেখাটি লিখেছি। জানিনা, ঠিক করছি না ভুল তবে কিছু তো একটা করছি এটাই আমার স্বান্তনা। একটা নতুন ম্যাগাজিন, কয়েকটা উজ্জ্বল ছেলে-মেয়ের প্রথম লেখালেখি শুরু করার পথটাকে যেভাবে আক্রমণ করে ভেঙ্গে দেওয়ার চেষ্টা করা হল, সেখানে আমরা তাদের জন্য কিছুই করতে পারলাম না। আর এখানেই বারবার অনুভব করছিলাম লিটল ম্যাগাজিনগুলোর শহরকেন্দ্রিকতা ও অ-সংগঠিত হয়ে থাকার প্রভাব।
সুপ্রিয় সাহা
গত ২৫ শে জানুয়ারি ২০১৫ কে আমরা বাংলা লিটল ম্যাগাজিনের পক্ষে এক “কালো দিন” হিসেবে চিহ্নিত করতেই পারি। নদিয়ার দেবগ্রামে ২২-২৮ জানুয়ারি চলছে দেবগ্রাম সাংস্কৃতিক মেলা এবং এই মেলাতেই আত্মপ্রকাশ করল একটি ছোট পত্রিকা “সাদামাটা”। সবে কলেজে ভর্তি হয়েছে কি হয়নি সব ১৮/১৯ বছরের ছেলেমেয়েদের একটি গ্রুপ- যেমন হয় আর কি! “অলিন্দ” ও “তালপাতার সেপাই” শুরু হওয়ার অনেকদিন পর দেবগ্রাম থেকে প্রকাশিত হল আরো একটি ছোট পত্রিকা। ২২ ও ২৩ তারিখ তারা মেলার স্টল থেকে বেশ ভালোই বিক্রিবাটা শুরু করে কিন্তু গোল বাঁধে ২৪ তারিখ সন্ধেয়। হঠাৎ বেশ কিছু মানুষ পত্রিকার স্টলে প্রায় আক্রমণের ভঙ্গিতে এসে জানায় যে পত্রিকার সম্পাদকীয় তে তাদের ধর্ম ও ধর্মীয় লোকাচার কে ইচ্ছাকৃত ভাবে হেয় ও অপমান করা হয়েছে। এক্ষুনি তারা সমস্ত ম্যাগাজিন জ্বালিয়ে দেবে, ভেঙ্গে দেবে স্টল, দরকার হলে ছেলেমেয়েগুলোকেও ছাড়বে না। পত্রিকার সদস্যরা এমনকি আমরাও বেশ ঘাবড়ীয়ে যাই কারন তাদের কথা অনুয়ায়ী সেরকম কিছুই আমরা খুঁজে পাছছিলাম না। আমি সম্পাদকীয়র সেই অংশ এখানে তুলে দিচ্ছি যেখানে তাদের কথা অনুয়ায়ী তাদের ধর্মকে অপমান করা হয়েছে।
“...আমরা বিশ্বাস করি যে, বছরের দুটো দিন সাদা পাঞ্জাবী পাজামা পড়লেই সংস্কৃতিবান হওয়া যায় না। তার জন্য লাগে সাংস্কৃতিক মনোভাব। আমরা এও মনে করি যে, কিছু লিখতে গেলে তার জন্য পাঞ্জাবী পড়ে একটা সাইড ব্যাগ ঘাড়ে ঝোলাতে হয় না বা বড় বড় দাড়ি গোঁফ-ও রাখতে হয় না। তাই এই সময় দাঁড়িয়ে জিন্স ও টিশার্ট পড়ে কিছু লেখায় হল আমাদের “সাদামাটা”...”
এর মধ্যে ক্রমেই উত্তেজনা বেড়ছে। কোন কথাই শুনতে ওরা রাজী নয়। শেষমেশ মেলা কমিটি ওদের স্টল উঠিয়ে দেয় এবং ছেলেমেয়েগুলো রাতের অন্ধকারে মেলা ছেড়ে প্রাণ নিয়ে পালাতে বাধ্য হয়।
ঘটনাটি এখানেই মেটে না। ক্রমাগত বাড়তে থাকে। পরের দিন ঐ ধর্মেরই কিছু শিক্ষিত জন তাদের বোঝাতে গিয়েও বিফল হয়ে ফেরে। এর পর অনেকেই এখানে অন্য অনেক কিছুর গন্ধ পেলেও, সেটা আমাদের আলোচনার বিষয় নয়।
এবার সংক্ষেপে বলি। মূলত তাদের দাবী হয় সম্পাদককে স্টেজে উঠে ক্ষমা চাইতে হবে। আমরা হতবাক! ধীরে ধীরে ঘটনা গড়ায় পুলিশের কাছে। এবং অনেক ঝামেলার পর সম্পাদককে পুলিশ ফাঁড়িতে উন্মত্ত কিছু লোকের সামনে ক্ষমা চাইতে হয়। এরপরও যে ব্যাপারটি পুরোপুরি মিটে গেছে তা বলা না গেলেও আমি সে আলোচনায় আর যেতে চাই না।
আমরা গোটা ঘটনার বেশিরভাগ সময়ই উপস্থিত ছিলাম “সাদামাটা”র পাশে। এবং সম্পাদককে যখন ক্ষমা চাইতে হচ্ছে কোন ভুল না করা সত্তেও, তখন সেখানে দাঁড়িয়ে একটি লিটল ম্যাগের একজন সম্পাদক হিসেবে আমার মাটিতে মিশে যাওয়া ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। সে রাতে আমি ভাল করে ঘুমোতে পারিনি আর এখনো অবধি ভিতরে এক অস্বস্তি কাজ করছে, ভুলতে পারছি না আমি, যার জন্য অনেকে বারণ করা সত্ত্বেও এই লেখাটি লিখেছি। জানিনা, ঠিক করছি না ভুল তবে কিছু তো একটা করছি এটাই আমার স্বান্তনা। একটা নতুন ম্যাগাজিন, কয়েকটা উজ্জ্বল ছেলে-মেয়ের প্রথম লেখালেখি শুরু করার পথটাকে যেভাবে আক্রমণ করে ভেঙ্গে দেওয়ার চেষ্টা করা হল, সেখানে আমরা তাদের জন্য কিছুই করতে পারলাম না। আর এখানেই বারবার অনুভব করছিলাম লিটল ম্যাগাজিনগুলোর শহরকেন্দ্রিকতা ও অ-সংগঠিত হয়ে থাকার প্রভাব।
No comments:
Post a Comment