লিটল ম্যাগাজিন পাই কোথা?
অনিন্দ্য ভট্টাচার্য
অনিন্দ্য ভট্টাচার্য
১১ জানুয়ারি থেকে কলকাতার
নন্দন চত্বরে শুরু হয়েছে বাংলা অকাদেমি আয়োজিত লিটল ম্যাগাজিন মেলা। ১৯৯৮ সাল থেকে
এ মেলার সূত্রপাত। অবশ্যই এ ছিল বাংলা অকাদেমির এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। আজও এ
মেলা চলেছে এবং এরজন্য তাদের সাধুবাদ প্রাপ্য। এমত প্রাঙ্গণ থেকেই তো পাওয়া যায়
গবেষণা ঋদ্ধ চিন্তা, সৃজনশীল সাহিত্য ও অজানা আকর। এ পর্যন্ত ঠিকই আছে। একক ভাবেই
লিটল ম্যাগাজিনের স্বকীয় আলোয় এ মেলা উজ্জ্বল ও ভাস্বর হয়ে ওঠে, প্রতি বছর।
কিন্তু আশ্চর্যের হলেও গোদা
সত্যটা হল, এমন এক ঐতিহ্যপূর্ণ ও মনন সম্পদে ভরপুর লিটল ম্যাগাজিনের প্রতি এই একটি
মাত্র বছরভর নিয়মতান্ত্রিক দায় পালন করা ছাড়া বাংলা অকাদেমির যেন আর কিছুই করার
নেই। অথচ কর্ণকুহরে প্রবেশিল উদ্বোধনী ভাষণে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর এই আক্ষেপ
মাখানো উচ্চারণখানি যে তিনি যদিও লিটল ম্যাগাজিনের একজন নিবিষ্ট পাঠক তবুও তা তাঁর
পক্ষে সবসময় পড়ে ওঠা সম্ভব হয় না কারণ সে সব সংগ্রহের উপায় বড়ই কষ্টকর। তখন পাশে
উপবিষ্ট বাংলা অকাদেমির সম্মাননীয় পদকর্তারা। তাঁদের মনে পড়ল না, কতবার যে লিটল
ম্যাগাজিনের তরফে অকাদেমিকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে ওই প্রাঙ্গণে একটি লিটল
ম্যাগাজিন বিক্রয় কেন্দ্র খোলার। শুধু আক্ষেপ না করে মন্ত্রী মহাশয়ও কী এমন একটি
প্রস্তাব রাখতে পারতেন না? তবেই তো বোঝা যেত সত্যিই তিনি একজন লিটল ম্যাগাজিন গুণগ্রাহী।
সে যাক গে। আসলে গয়ং গচ্ছ
একটি মেলা করা আর দু-একটি পুরস্কার বিতরণী ছাড়া বাংলা অকাদেমির লিটল ম্যাগাজিনের
প্রতি যে কিছুই করার নেই, তা দীর্ঘদিন ধরেই অতীব স্পষ্ট। কারণ, যারা সর্বময় কর্তা
তাঁরা জানেনই না লিটল ম্যাগাজিন বস্তুটি ঠিক কী ও কেমন। তাই সত্তর দশকের লিটল
ম্যাগাজিনের প্রদর্শনীতে গিয়ে ‘কৃত্তিবাস’ দেখতে হয়। আর হবে নাই বা কেন, লিটল
ম্যাগাজিন লাইব্রেরি ও গবেষণাগারের প্রাণপুরুষ সন্দীপ দত্ত মহাশয়ের তো দেখি জায়গাই
নেই সেখানে। অতএব, সারা বছর লিটল ম্যাগাজিন নিয়ে অকাদেমির সত্যিই কিছু করার নেই। শুধু
মেলার এই পাঁচদিন বাদ দিলে আজ পর্যন্ত কখনও কোনোদিন বাংলা অকাদেমিকে লিটল
ম্যাগাজিন নিয়ে কিছু করতে দেখিনি বা শুনিনি। অথচ, তাঁরা ভান করবেন – অহো আহা লিটল
ম্যাগাজিন। সে তাঁরা কিছু না করুন, লিটল
ম্যাগাজিন তার নিজ শক্তিতেই বেগময়। তার প্রমাণ তারা রেখেছিল নন্দীগ্রামে পুলিশের
গুলি চালানোর প্রতিবাদে ২০০৮ সালে নিজেদের উদ্যোগে ও শক্তিতে বিকল্প মেলা সংগঠিত
করে, বাংলা অকাদেমির মেলাকে বয়কট করে। সে সমান্তরাল মেলা আজও চলেছে কলেজ স্কোয়ার
প্রাঙ্গণে। চিন্তা, ভাবনা ও আবেগের যে স্ফুরণ সে সময় মানুষ দেখেছিলেন তা অনেক বিষ
ধারণাকে সমূলে উৎপাটিত করেছিল। কর্পোরেট মিডিয়ার ফিরি করা লোভ-লালসা-হিংসার ফর্দ ধোপে
টেঁকেনি।
তাই লিটল ম্যাগাজিন বাংলা
অকাদেমি থেকে যত দূরে থাকবে বা বাংলা অকাদেমি লিটল ম্যাগাজিনকে যত দূরে ঠেলে রাখবে
তাতে আখেরে লাভ লিটল ম্যাগাজিনেরই।
বন্ধু অনিন্দ্যর এ সত্যকথন বাংলা অকাদেমির মালিকরা হয়ত পড়বে না, আর পড়লেও এসব ব্যাপারে মাথা ঘামাবে না। এতে তো সস্তা জনপ্রিয়তার ধান্দাবাজি নেই, তাই না ?
ReplyDelete