ছোট মুখে বড় কথা
পল্লবী বন্দ্যোপাধ্যায়
লিটল ম্যাগাজিন তো বাংলা সংস্কৃতির দুয়োরাণী। কোনও সরকারই তাকে বিশেষ পাত্তা দেয় না। সে
মিডিয়ার বড়বাবুই হোন, বা
সেক্রেটারিয়েটের। তো এ হেন লিটল ম্যাগাজিন মেলায় যখন কলেজ স্কোয়ার ভরিয়ে
পাঠকের দল বিকিকিনি করতে লাগলেন, সে দৃশ্য দেখে আমাদের উদ্দীপনা বেড়ে গেল আরও কয়েক গুণ।
বই ম্যাগাজিন বেচাকেনার ফাঁকে ফাঁকেই মঞ্চে চলছিল নানাবিধ আলোচনা, সাংস্কৃতিক
অনুষ্ঠান। বিক্রিবাটার ব্যস্ততার মাঝে মাঝে চলছিল লেবু চা আর তামাকের ডোজ। প্রথম
দিনের ছুটির মেজাজ আর মেঘের চোখরাঙানি যদিওবা লোকজনকে তেমনভাবে মেলায় আসতে
উদ্বুদ্ধ করতে পারেনি, দ্বিতীয় আর তৃতীয় দিনে মেলার লোকসংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো। পাওয়া গেল
বেশ কয়েকজন নতুন গ্রাহকও।
কিন্তু যাবতীয় উৎসাহ উদ্দীপনায় আক্ষরিক অর্থেই যে জল ঢালল, সে হল নিম্নচাপ। আবহাওয়া দফতরের দৈববাণী সত্যি
করে তুলতে শনিবার মানে মেলার শেষ দিনে ঠিক বিকেল পাঁচটায় মানে যখন মেলা জমজমাট,
হুড়মুড়িয়ে নামল বৃষ্টি। আঝোর ধারায় বৃষ্টি। যে যেমন পারল ছুট দিল ব্যাগপত্তর গুছিয়ে। কিন্তু স্রেফ
বৃষ্টি দিয়েই কি লিটল ম্যাগের সৈনিকদের দমিয়ে ফেলা যায়? বিশ্বভারতীর পোর্টিকোর
নীচেই বৃষ্টির আড়ালের খোঁজে আসা মানুষের ভিড়ে প্রতুল মুখোপাধ্যায় প্রকাশ করলেন জাহিরুল ইসলামের বই
‘বাংলায়
মুসলমানের ইতিহাস’। প্রতি বছরের
মতোই এ বছরেও মেলা শেষ করার কথা ছিল প্রতুলবাবুর। এবং করলেনও তাই।
হঠাৎ ঐ বারান্দার নীচেই আলো আঁধারির খেলায় দৃপ্ত গলায় ‘ডিঙ্গা ভাসাও
সাগরে সাথীরে’ ধরলেন।
সাথীরাও সুরে বেসুরে গলা মিলিয়ে উঠে পড়লেন ডিঙ্গায়। বাইরে বৃষ্টি, বুকে মেলা
ভেস্তে যাবার হতাশা রাগ বিরক্তি, আর কানে ‘গরজি গুমরি ডাকে শোনো ঐ তরঙ্গ উথালপাথাল’এর কোরাস শুনতে
শুনতেই পরবর্তী মেলার জন্য মনে মনে প্রস্তুত হই। জানি প্রস্তুত হচ্ছেন
আপনারাও। তাহলে আবার দেখা হচ্ছে। নন্দন চত্বরে। ১১ থেকে ১৫ই জানুয়ারি।
No comments:
Post a Comment