মারের বদলা চুমু!
পল্লবী বন্দ্যোপাধ্যায়
চুমু খাওয়া কি একটা ব্যক্তিগত কাজ? যা ঘরের জানলা
দরজা বন্ধ করে, আলো নিভিয়েই করা উচিত? মূত্রত্যাগ
করাও কি একটি ব্যক্তিগত কাজ? যা নিজের বা জনগণের ব্যবহারের জন্য তৈরি বাথরুমে করা
উচিত? অদ্ভুত ব্যপার হল, ভারতের সামাজিক প্রেক্ষাপটে
প্রথম প্রশ্নের উত্তর ‘হ্যাঁ’ এবং দ্বিতীয়টার উত্তর নীরবতা। আর তাই কোচিতে
ছেলেবুড়ো নির্বিশেষে একজোট হয়ে রাস্তায় চুমু সমাবেশের আয়োজন করলে জোটে পুলিশের
ঘাড়ধাক্কা। কলকাতার ‘কিস অফ লাভ’ ইভেন্টের ফেসবুক পেজ মরাল পুলিশদের ক্রমাগত
‘রিপোর্ট’এর ফলে উধাও হয় আন্তর্জাল থেকে। এবারে আসুন প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজা যাক।
একদল মানুষ এই প্রতীকী চুম্বন প্রতিবাদের সূত্র
ধরে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে, যদি রাস্তায় চুমু খাওয়া যায় তাহলে অন্যান্য কাজে
মানুষ সারমেয়সুলভ আচরণ করবে কিনা; উলঙ্গ হয়ে ঘুরবে কিনা, ইত্যাদি। এ সব কিছুর শুরু কোঝিকোড-এর একটি কফি শপে বিজেপি পতাকাধারী মানুষদের তান্ডব,
ভাঙচুর। কেন? কারণ, ঐ কফি শপটি নাকি প্রায়
বৃন্দাবনের আকার ধারণ করে স্থানীয় যুবক যুবতীদের প্রেমের আখড়া হয়ে উঠেছিল। অতএব,
সমাজের শুচিতা রক্ষার পবিত্র কর্তব্য যাঁরা নিজেদের বলিষ্ঠ কাঁধে তুলে নিয়েছেন, তাঁরা পতাকা হাতে মাঠে নেমে নখ দাঁত বের করে ফেললেন। অর্থাৎ কিনা
আপনার আমার জীবনযাপনের যে যে অংশ তাঁদের পছন্দ হবে না, সেগুলোকে তাঁরা অবলীলায়
অপসংস্কৃতির মোহর লাগাবেন এবং নিজেদের সংস্কৃতির, শালীনতার সংজ্ঞা আমাদের ওপর
চাপিয়ে দেবেন। সাধারণ মানুষের সমস্ত স্বাভাবিক প্রবৃত্তিকে চাপা দিয়ে একটা দমবন্ধ
পরিবেশ তৈরি করা হবে এবং সেই পরিবেশের গায়ে ঐতিহ্যের তকমা লাগানো হবে। যে কোনওদিন হয়তো দেখা যাবে চর্যাপদ, বৈষ্ণব পদাবলী অথবা কামসূত্র অশ্লীলতার দায়ে
ভারতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে
একটা দম বন্ধ করা অবদমনের পরিবেশ তৈরি হবে যা ক্রমাগত জন্ম দেবে একের পর এক ঘৃণ্য
যৌন অপরাধের।
অনেকে এমনটাও বলছেন, যে এসবই হল পশ্চিমি সভ্যতার প্রভাব। যাঁরা এটা বলছেন, খোঁজ নিয়ে দেখা যাবে তাঁদের
অনেকেই শনিবার পশ্চিমি পোশাক পরে ম্যাকডোনাল্ডস-এর
বার্গার খেতে যান সপরিবারে। বিদেশি ছবিও নিয়মিত
দেখেন। অর্থাৎ, জলে না নেমে মাছ ধরে নিজেদের
সংস্কৃতি বজায় রাখতে হবে। ছেলেমেয়েদের পড়তে পাঠাতে হবে বিদেশে, নিজেদের ভাষা
সুবিধে মতো ভুলে যাওয়া যাবে, মার্কিন ব্র্যান্ডের জিনস ছাড়া পরা যাবে না, কিন্তু
পাবলিক প্লেসে প্রতীকী চুমু প্রতিবাদ ঘটতে দেখলেই রে রে করে তেড়ে গিয়ে সংস্কৃতি
কপচাতে হবে।
মরাল পুলিশেরদের বলিঃ
'সন্তানের মুখ ধরে
একটি চুমো খাবো
যাবো ..কিন্তু, এখনি যাবো না
তোমাদেরও সঙ্গে নিয়ে যাবো
একাকী যাবো না অসময়ে।'
যাবো ..কিন্তু, এখনি যাবো না
তোমাদেরও সঙ্গে নিয়ে যাবো
একাকী যাবো না অসময়ে।'
No comments:
Post a Comment