Tuesday, 8 April 2025

জাল ওষুধের কারবার (১)

কীভাবে তৈরি হয় জাল ওষুধ

প্রদীপ রায়



প্রথম কিস্তি

কথায় আছে, ব্যয় করে আরাম/ তারই নাম ব্যারাম। বেসরকারি চিকিৎসা পরিষেবা কিনতে গিয়ে ভিটেমাটি বিক্রি হচ্ছে। ২০২১-২২ সালে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রকের দেওয়া হিসেবে, জনপ্রতি চিকিৎসা খরচের ৩৯.৪ শতাংশ খরচ হয় রোগীর পকেট থেকে এবং পশ্চিমবঙ্গবাসীর ক্ষেত্রে এই খরচ ৫৮.৩ শতাংশ। এই খরচের সিংহভাগই ওষুধ ক্রয়ের জন্য। একটি সার্ভে রিপোর্টে বলা হয়েছে, ওষুধ ক্রয়ের দরুণ হাসপাতালে ভর্তি থাকলে ২৯.১ শতাংশ ও বহির্বিভাগে চিকিৎসার ক্ষেত্রে ৬০.২ শতাংশ খরচ হয়। কারণ, উচ্চহারে ওষুধের দাম। 

স্বাধীনতার সময় দেশের ওষুধের ব্যবসা ছিল ১০ কোটি টাকা। বর্তমানে সেই ব্যবসার পরিমাণ ৫ লক্ষ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ বাজারের ব্যবসার পরিমাণ আড়াই লক্ষ কোটি টাকা। এই বিপুল ব্যবসা গড়ে উঠেছে প্রায় ১০,৫০০টি উৎপাদক ও প্রায় ৩০০০ ওষুধ ব্যবসায়ীর হাত ধরে। বিগত শতকের শেষ দিকে সরকারি নীতিকে আশ্রয় করে হিমাচল প্রদেশে ৫৫৫টি ও উত্তরাখণ্ডে ২২০টি ওষুধ উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে ওঠার কারণ, ওই এলাকায় দেওয়া শুল্ক, বিদ্যুৎ, জল ও জমির ওপর বিশাল ছাড়। স্বাধীনতাত্তোরকালে কেমিক্যাল শিল্পের হাত ধরে ঐতিহ্যগত ভাবে ওষুধ উৎপাদন কেন্দ্রগুলি গড়ে উঠেছিল গুজরাত (৩৩৩২), মহারাষ্ট্র (৭২৯) ইত্যাদি রাজ্যে, পরিণামে এই শিল্পের পরিকাঠামো উন্নত হয়েছে সময়ের তালে তাল মিলিয়ে। শুল্কগত ভাবে ও অন্যান্য সুবিধাপ্রাপ্তির দিক থেকে এই পরিকাঠামোর সঙ্গে বিস্তর ফারাক রয়েছে পিছিয়ে পড়া অঞ্চলগুলিতে। দেশের প্রথম সারির কোম্পানিগুলোর অনেক ওষুধ আজ তৈরি হয় তৃতীয় পক্ষের উৎপাদন কেন্দ্র থেকে। এই উৎপাদন কেন্দ্রগুলো রয়েছে বাড্ডি, সোলান (হিমাচল প্রদেশ), হরিদ্বার, দেরাদুন, উত্তরাখণ্ড ইত্যাদি জায়গায়। নয়া উদার অর্থনীতি চালু হওয়ার আগে কোম্পানিগুলোর নিজস্ব উৎপাদন কেন্দ্র থেকে যে ওষুধ তৈরি হত তার নজরদারি ছিল কোম্পানির হাতে। বর্তমানে সেই নজরদারি তৃতীয় পক্ষের হাতে চলে যাওয়ায় দুটি সমস্যা তৈরি হয়েছে-- 

১) অনেক ওষুধের গুণমানে আপস করা হচ্ছে; 

২) বৃহৎ কোম্পানির দেওয়া নিজস্ব ওষুধ তৈরির কৌশল ও প্রযুক্তি বাইরে পাচার হচ্ছে, যার বেশিরভাগ করায়ত্ত করছে জাল ওষুধ কারবারীর দল। 

বিশ্বের ২০ শতাংশ জেনেরিক ওষুধের বাজার ভারতের দখলে এবং এর সিংহভাগ রফতানি হয় আমেরিকা সহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলিতে। শুধুমাত্র আমেরিকার ৬০ শতাংশ জেনেরিক ওষুধের প্রস্তুতকারক ভারতীয় সংস্থা। এই ওষুধ উৎপাদিত হয় দেশের প্রথম সারির কোম্পানিগুলোর নিজস্ব উৎপাদন কেন্দ্রে। উৎপাদনে নজরদারির জন্য আমেরিকার ওষুধ নিয়ামক সংস্থা এফডিএ রাজধানী দিল্লিতে স্থায়ী অফিস তৈরি করেছে, যেখানে অনধিক ৭০ জন পরিদর্শক কর্মরত। লাইসেন্স প্রাপ্ত উৎপাদন কেন্দ্রে প্রতিটি ওষুধ এফডিএ প্রদত্ত পদ্ধতি মেনে উৎপাদন করতে হয়। সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতিতে সেই ব্যাচের সমস্ত ওষুধ বাতিল বলে গণ্য হয়। খবরের কাগজে প্রায়শই নামজাদা কোম্পানির তৈরি জেনেরিক ওষুধ আমেরিকার বাজার থেকে ফেরত আসার খবর পরিবেশিত হয়। মজার কথা এই, নামজাদা ভারতীয় ওষুধ কোম্পনিগুলো দেশের অভ্যন্তরে যে ওষুধ বিপণন করে তার ক্ষেত্রে নজরদারি অনেকটাই শিথিল। অর্থাৎ, উন্নত দেশের মানুষের জন্য তৈরি ওষুধের গুণমান যতটা উচ্চস্তরের, নিজের দেশের রোগীর জন্য সেই গুণমান ততটাই নিম্নস্তরের। 

এখন দেশীয় ওষুধ বাজারে জাল ওষুধ ধরা পড়ায় পত্র-পত্রিকায় বিস্তর লেখালেখি হচ্ছে। সংসদে সমস্যাটি উত্থাপিত হয়েছে। সাধারণ মানুষ শঙ্কিত। অথচ, সমস্যাটি একাধারে বৈশ্বিক ও প্রাচীন। সমস্যার ব্যাপ্তি অনুধাবন করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৩ সালে তৈরি করে গ্লোবাল সারভাইলেন্স অ্যান্ড মনিটারিং সিস্টেম। ওষুধের বাজার সম্প্রসারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জাল বা নকল ওষুধের ব্যবসা বেড়েছে দুনিয়া জুড়ে। তবে উন্নত দেশগুলোতে যেখানে নজরদারি অত্যন্ত কঠোর, সেখানে নকল বা জাল ওষুধের উপস্থিতি কম। আমাদের দেশে এই জাল ওষুধের বাজারের যথাযথ পরিমাণ কত, সে বিষয়ে কোনও নির্দিষ্ট তথ্য নেই। ড্রাগ কন্ট্রোলের আধিকারিকদের মতে, এই বাজার ২০-২২ শতাংশ। আবার ফার্মা এক্সপার্ট কাউন্সিলের উপদেষ্টার মতে, এই জাল ওষুধের পরিমাণ ১০-১২ শতাংশ। ২০১১-১২ সালে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে নিয়ামক সংস্থা ৪৮,০৮২টি ওষুধের স্যাম্পল পরীক্ষার হিসেব সংসদে পেশ করে জানিয়েছিল যে এর মধ্যে ২১৮৬টি ওষুধ অর্থাৎ ৪.৫ শতাংশ জাল বলে চিহ্নিত করা গেছে। তথ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক জানায়, ২০০৯-১০ সালে ৪.৯ শতাংশ, ২০১০-১১ সালে ৪.৭ শতাংশ ওষুধ নির্ধারিত মানে পৌঁছতে পারেনি এবং ৬ শতাংশ আক্ষরিক অর্থে জাল ওষুধ। 

Spurious ড্রাগের রকমফের আছে। যেমন, জাল-নকল বা নিম্নমানের ওষুধ। নিম্নমানের ওষুধে সক্রিয় উপাদানের পরিমাণ যা দাবি করা হয় তার চাইতেও কম থাকতে পারে অথবা ওষুধের অন্যান্য গুণমান যথা দেহের অভ্যন্তরে প্রবশের পর সক্রিয় উপাদানে নির্দিষ্ট সময়ে কার্যকরী না হওয়া অথবা সহযোগী উপাদানের গুণমান ঠিক না থাকা। এছাড়া সিরাপ বা শরীরে দেওয়া ফ্লুইডের মধ্যে অপ্রত্যাশিত অবাঞ্ছিত পদার্থ থাকা। সম্প্রতি দেশে তৈরি রফতানি যোগ্য কাশির সিরাপে বেশি মাত্রায় সহযোগী উপাদান ডাই ইথিলিন গ্লাইকল বা ইথিলিনের মাত্রা বেশি থাকায় ওই ওষুধ ব্যবহারে গাম্বিয়া, উজবেকিস্তানে ব্যাপক শিশু মৃত্যু ঘটেছে।

 নকল ওষুধ সাধারণত নামজাদা কোম্পানির সব চাইতে চালু ব্র্যান্ডের নামে তৈরি করা হয়, যাতে ওষুধের সক্রিয় উপাদান থাকে না অথবা থাকলেও কম থাকে। এর দরুণ ওষুধ কার্যকরী হয় না। অ্যাসিড কমানোর ওষুধ প্যান্টেপ্রাজল'এর আমাদের দেশের বাজারে বিক্রির পরিমাণ ৬৯২৩ কোটি টাকা। রক্তচাপ কমানোর ওষুধ টেলমেসার্টন'এর বিক্রির পরিমাণ ৩৫০০ কোটি টাকা। ফলে, এই ধরনের বিশাল বিক্রির ওষুধের অবিকল নকল ওষুধ তৈরি হতে পারে অথবা বানানোর সামান্য তারতম্য করে (যা রোগীর পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়) ওষুধের মোড়কের চেহারার প্রভেদ ঘটিয়ে বাজারে ছাড়া হয়। এই ওষুধের উৎপাদনের উৎস, তৈরি করার লাইসেন্স বা কোম্পানির অস্তিত্ব সর্বদা ভুয়ো প্রমাণিত হয়। এই নকলের ক্ষেত্রে QR কোড পর্যন্ত নকল হচ্ছে। যদিও বারকোডের ক্ষেত্রে এখনও তা করা সম্ভব হয়নি। নকল ওষুধের বৃহৎ বাজার গ্রামগঞ্জে, যেখানে নজরদারি কম। 

জাল ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে নানা পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়: 

১) ওষুধের মধ্যে সক্রিয় উপাদানের বদলে নিষ্ক্রিয় পদার্থ যথা স্টার্চ, ক্যালসিয়াম ল্যাক্টেট বা কার্বনেট থাকতে পারে; 

২) মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধের তারিখ পালটে তাকে পুনরায় বাজারজাত করা হয়। এই ধরনের ওষুধ সংগ্রহের ক্ষেত্রটি বেশ জটিল ও অভিনব। খুচরো দোকান বা পাইকারি ওষুধ ব্যবসায়ীর কাছে অবিক্রিত মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়া ওষুধ ফেরত নেওয়ার জন্য সেই কোম্পানির নির্দিষ্ট সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের কাছে জমা দেওয়ার কথা। এই পথচক্রের মধ্যেই তা হাতবদল হয়ে পৌঁছে যায় জাল ওষুধ কারবারীদের হাতে; 

৩) উৎপন্ন ওষুধের মধ্যে ক্ষতিকারক, অর্থাৎ, ভেজাল পদার্থ (Adulterated) মেশানো হয়, যা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উৎপাদনের বিভিন্ন স্তরে যে যে পদক্ষেপ নেওয়া আবশ্যিক সেখানেই ঘাটতি থাকে। বিভিন্ন ধরনের ফ্লুইড যা রক্তে সরাসরি দেওয়া হয়, তাতে ছত্রাক বা অপ্রয়োজনীয় ক্ষতিকর পদার্থের উপস্থিতি প্রায়ই খবর হয়। হার্বাল ওষুধের ক্ষেত্রে এই সমস্যা আরও উদ্বেগজনক। 

জাল ওষুধের কারবার দীর্ঘদিন ধরে চলছে। ওষুধের ব্যবসা যতটা প্রসারিত হচ্ছে, ততটাই বাড়ছে জাল ওষুধের রমরমা। ওষুধের ভেজাল রুখতে, গুণমান বজায় রাখতে, উৎপাদনের শর্ত মানা ও সমস্ত দেশে নজরদারির জন্য স্বতন্ত্র বিভাগ রয়েছে। এদের কাজ উৎপাদিত ওষুধের গুণমান ও শুদ্ধতা বিচার করা এবং নকল বা জাল অথবা নিম্নমানের ওষুধ ধরা পড়লে আইন মোতাবেক শাস্তি দেওয়া। 'ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস'এর নামে ওষুধ উৎপাদনের বিভিন্ন স্তরগুলোর অল্পস্বল্প বিচ্যুতি ঘটলে তার দরুণ শাস্তি কেবলমাত্র জরিমানা। ফলে, ওষুধ কোম্পানিগুলো এই  সুযোগ নিয়ে উৎপাদন খরচ কমায় গুণমানের সঙ্গে আপস করে।

ক্রমশ...


Friday, 4 April 2025

আগুন দিলি পরের ঘরে

'বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে...'

মালবিকা মিত্র



প্রাথমিক স্তরে অঙ্কের প্রশ্ন করেছি, একটি ঝুড়িতে ৫০০টি আম ছিল, তার মধ্যে ২০টি আম পচা। তাহলে ঝুড়িতে ভালো আম কটা রইল? সহজ গণিতের বুদ্ধিতে এর উত্তর মিলবে না। যদি ফলওয়ালার হিসেবে ধরেন, সে হিসেবও মিলবে না। বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেছেন, ঝুড়িতে চার-পাঁচটি পচা আম থাকলে ঝুড়ি সমেত আম ফেলে দিতে হয়। অঙ্ক বা ব্যবসার বুদ্ধিতে এর থই পাওয়া যায় না। অবশ্য, কিছু পচা আমের সঙ্গে থাকা বাকী সকল ভালো আম ফেলে দেওয়া আর কিছু পচা মানুষের সঙ্গে একই গণ্ডির ভিতরে থাকা বাকী সব ভালো মানুষদের ভাতে মারা তুল্যমূল্য কিনা সে প্রশ্ন তিনি তোলেননি। কারণ, জনগণ তো বিকাশবাবুদের গোটা ঝুড়িটাকেই ফেলে দিয়েছে। 

ঝুড়িতে যে পচা আম ছিল সেটা বোঝা গেছে। নিয়োগ দুর্নীতি হয়েছে এটা প্রমাণিত। তার জন্য এসএসসি ও রাজ্য সরকার দায় এড়াতে পারে না। সেও মান্য। ফলে, তাদের মন্ত্রী ও কর্তাব্যক্তিরা গ্রেফতারও হয়েছেন। অনেককে সিবিআই হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল। আবার অনেককেই জামিনে মুক্ত রাখা হয়েছে। মামলা এখনও বিচারাধীন। কিন্তু দুর্নীতি প্রক্রিয়ার সর্বনিম্ন স্তরে এক ধাক্কায় ২৫,৭৫২ জনের নিয়োগ বাতিল করে দেওয়া হল যাদের অধিকাংশের সঙ্গেই দুর্নীতির কোনও নামগন্ধই ছিল না। বিচার হবে, কারা দোষী তা চিহ্নিত হবে, তাদের শাস্তি হবে-- এগুলোই তো আশা করেছিলাম। না সে সব কিছুই হয়নি। ঝুড়ির কিছু পচা আমের সঙ্গে বাকী সব ভালো আমকে বিসর্জন দেওয়ার মতোই ২০১৬ সালের সমগ্র শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগকেই বাতিল করা হল। অথচ কোর্ট বলল, যোগ্য প্রার্থীদের মাইনে ফেরত দিতে হবে না এবং তিন মাসের মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তাঁরা আবেদন করতে পারবেন। অর্থাৎ, যোগ্য কারা কোর্ট জানে; এবং জানে বলেই তাঁদের আরেক দফা সুযোগও দিল চাকরি ফেরত পেতে। এ তো হাত ঘুরিয়ে নাক দেখানো! এই অযাচিত কসরত কেন? 

অতএব, আমজনতার মধ্যে কিছু প্রশ্ন উঠল:

১) ২০২৪'এর নীট পরীক্ষায় হরিয়ানা, গুজরাত, বিহার ইত্যাদি রাজ্যের বহু কেন্দ্রে শোনা গেল প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। এ সম্পর্কিত রিপোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষা দফতরের জানা ছিল। এমনকি পরীক্ষা পরিচালকমণ্ডলী (এনটিএ) সে কথা কবুল করেছে। তথাপি, সুপ্রিম কোর্ট পরীক্ষা বাতিল করেনি বা কাউন্সেলিং বন্ধ রাখেনি। যুক্তি ছিল, কিছু অনিয়মের জন্য এত বিপুল সংখ্যক ছাত্রের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করা যায় না। সাধু সাধু! কী অসাধারণ পর্যবেক্ষণ। কিন্তু, ২৫,৭৫২ জনের চাকরি বাতিল করবার রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, গোটা প্রক্রিয়া বাতিলের মাপকাঠি হল sanctity of the process যদি প্রশ্নের মুখে পড়ে এবং কোর্ট মনে করেছে এ ক্ষেত্রে সেটা হয়েছে। নীট ২০২৪'এর ক্ষেত্রেও সুপ্রিম কোর্ট মনে করেছিল যে sanctity of the process লঙ্ঘিত হয়েছে। দুটি মামলার ক্ষেত্রে কোর্টের মনে হওয়াটা একই। কিন্তু রায় পৃথক হল কেন? 

২) মহারাষ্ট্রে গত বিধানসভা নির্বাচনে ভোট শেষ হবার পর, এমনকি প্রদত্ত ভোটের শতকরা হার ঘোষণা হবার পরও দেখা গেল, কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন প্রদত্ত হিসেবে ভোটের হার ৩ থেকে ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই ঘটনা ঘটেছিল দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনের পরেও। লোকসভা নির্বাচনের পরেও একই ঘটনা ঘটেছিল। এ নিয়ে বিরোধীরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্য ছিল, এই সুবিপুল নির্বাচন প্রক্রিয়ায় এটুকু সামান্য হিসেবের হেরফের বা ভ্রান্তি হতেই পারে। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বিব্রত করা উচিত হবে না; 

৩) আমাদের দেশের বিচার ব্যবস্থার নির্যাস হিসেবে এমনটা বলা হয়ে থাকে যে, দশজন দোষী ব্যক্তি যদি ছাড়াও পেয়ে যায়, একজনও নিরপরাধ ব্যক্তি যেন কখনই সাজা না পায়। অথচ, ঝুড়িতে কিছু পচা আম পাওয়া গেছে এই অজুহাতে সেই মৌলিক নীতিকে অস্বীকার করেই ২৫,৭৫২ জন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল করা হয়েছে। কেন? 

৪) ২০১৭ সালে 'অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্ম' (এডিআর)'এর পক্ষ থেকে ইলেক্টোরাল বন্ড নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করা হয়। সুপ্রিম কোর্ট সেই মামলার শুনানি তখন স্থগিত রাখে। বলা হয়, আপাতত এটা চলতে থাকুক, পরে ভাবা যাবে। অতঃপর ২০১৯ সালে লোকসভার নির্বাচন সম্পন্ন হয়। ২০২৪ সালে সুপ্রিম কোর্ট শুনানি শুরু করে, তারপর ঘোষণা করে ইলেক্টোরাল বন্ড অসাংবিধানিক। অথচ, এই অসাংবিধানিক বন্ড নিয়েই ২০১৯'এ বিজেপি ৩০৩টি আসন জিতে ক্ষমতাসীন হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট সেই অসাংবিধানিক সরকারটিকে কোনওভাবে শাস্তি দিতে পেরেছিল কী?

৫) একটি প্যানেল তৈরিতে বেশ বড়সড় আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে সেটা বোঝাই যাচ্ছে। এসএসসি'র কাছে পুরনো ওএমআর শিট না পাওয়া গেলেও নয়ডায় জনৈক বনশলের বাড়ি থেকে সিবিআই যে হার্ড ডিস্ক উদ্ধার করেছিল সেখানে ওএমআর শিটের মিরর কপি পাওয়া যায় এবং ফরেনসিক পরীক্ষায় তা যথাযথ বলে কোর্টে জমাও করে। সেখানে দেখা যায়, ফাঁকা বা অসম্পূর্ণ ওএমআর শিট জমা পড়েছে, প্রার্থীর নামও আছে, ফলে কারা অভিযুক্ত তাও বোঝা যাচ্ছে। অতএব, অভিযুক্ত ৮ কি ৬ হাজারকে বাদ দিয়ে এই প্যানেলকে ত্রুটিমুক্ত করে বাকীদের নিয়োগের যাথার্থ্য দেখানোই যেত। এটাই তো তদন্তকারী সংস্থার কাজ ও বিচার-প্রত্যাশা। তার ওপর সেই প্যানেলের নিয়োগ কবেই হয়ে গেছে, তাঁরা ছ' বছরের বেশি চাকরিও করেছেন, এই সময়টায় এসে আম সুদ্ধু ঝুড়ি ফেলে দিয়ে কার বা কাদের সুবিধা করা হল? এই চাকুরিরতা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা পাঠদান, মূল্যায়ন, গৃহঋণ, চিকিৎসা ঋণ, বিবাহ, সন্তান, অনেক কিছুর মধ্য দিয়ে ইতিমধ্যে বেশ কিছুটা জীবন পার করে ফেলেছেন। এ কেমন ন্যায় যা নির্দোষের বাঁচার অধিকারকে হরণ করে? 

৬) অতীতে সংঘটিত কোনও অন্যায় নিয়ে তদন্ত হতেই পারে। সেই তদন্তে যুক্ত অপরাধীর শাস্তিও হতে পারে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এমন বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটে যায় যেগুলোকে আর ফিরিয়ে আনা যায় না। অবশ্য যে বিচারে দ্বাদশ শতকের 'মন্দির' ফিরিয়ে আনা যায়, সেখানে সবই সম্ভব। যে ২৫,৭৫২ জন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হল, তাঁদের সাহচর্যে যে কয়েক লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী এই ছয় সাড়ে ছয় বছরে পাঠ লাভ করল, সহযোগিতা পেল, সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কেউ কেউ প্রতিষ্ঠিত হল, তার কী হবে? যদি গোড়ায় গলদ হয়, নিয়োগটিই অবৈধ হয়, তাহলে এদের দ্বারা যে মূল্যায়ন ও পাঠদান সম্পন্ন হয়েছে তা কী করে বৈধ হয়? সেগুলোকে কি পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব? বিগত ছয় বছরের প্রদত্ত শ্রমের সবটাই বেগার? বেগার শ্রম তো আইনত অপরাধ। এই শিক্ষকরা অনেকেই চলতি বছরে সদ্য সমাপ্ত মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পরীক্ষক। তাহলে এ বছর পরীক্ষার মূল্যায়ন সম্পন্ন হবে কীভাবে? যে সমস্ত স্কুলে পাঁচজন, ছয়জন, ন'জন করে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের চাকরি বাতিল হল, সেই স্কুলগুলির পঠন-পাঠনের কী হবে? আসলে, আড়ালে থেকে কেউ কি একটা সামগ্রিক নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চাইল? 

৭) আচ্ছা, এই যে দুর্নীতি ধরার সংস্থা সিবিআই/ ইডি/ আয়কর ইত্যাদি, এরা ছাড়াও এক নতুন সংস্থার কথা জানলাম; বিচারপতিদের বাড়িতে আগুন লাগলে দমকল বাহিনী আগুন নেভাতে গিয়ে উদ্ধার করে আনে আগুনে আধ পোড়া কোটি কোটি টাকা। এখন ওই বিচারপতির কী হবে? কোনও শাস্তি হবে? যদি শাস্তি হয় তাহলে প্রশ্ন উঠবে, নিশ্চয়ই কোনও বিচারের রায়দান কেনাবেচার ফলেই এই উপার্জন, তাই না? সেই সমস্ত রায়গুলোকে কি পুনরায় বিচার করা হবে? যদি কোনও মৃত্যুদণ্ডাদেশ হয়ে থাকে তাহলে কী হবে? ন্যায়বিচার কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে?

৮) যে বিচারপতি কালো গাউন গায়ে চাপিয়ে নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় রায় দিলেন, ক্যালেন্ডার'এর পাতা ওলটানোর আগেই গেরুয়া আলখাল্লা গায়ে চাপিয়ে রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হয়ে সাংসদ হয়ে গেলেন। এক্কেবারে ব্রেখটের নাটকের দৃশ্য। জমিদার পুলিশের ডায়ালগ বলছে, আর পুলিশ জমিদারের ডায়লগ বলছে। এই বিচারপতির দেওয়া সমস্ত রায়কে নিরপেক্ষ বলা যায় কী? তাহলে কি সেগুলোর পুনরায় বিচার হবে? 

৯) বামফ্রন্ট সরকারের অ্যাডভোকেট জেনারেল বলাই রায় Judicial excess বা Judicial overreach সংক্রান্ত আলোচনায় হুগলি মহসিন কলেজে এক সেমিনারে বলেছিলেন, মাঝেমধ্যেই বিচারকরা কাণ্ডজ্ঞানহীনের মতো রায় দান করে থাকেন। হাওড়ার রেল স্টেশন গঙ্গা দূষণের একটি প্রধান উৎস। হাওড়ার জনস্বাস্থ্যের ওপর হাওড়া স্টেশনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া। এসবই সত্য হতে পারে। প্রত্যহ কোটি কোটি মানুষের মলমূত্র বর্জ্য খাবার-দাবারের প্যাকেট পাতা ঠোঙা ইত্যাদি সেখানে জমা হয়। কিন্তু তাই বলে বিচার বিভাগ বলতে পারে না হাওড়া স্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হোক। অবশ্য, ইদানীং বিচারপতিদের এই ঝোঁক দেখা যাচ্ছে। হয়তো কোনদিন তারা গঙ্গা দূষণ ও জনস্বাস্থ্যের কারণে হাওড়া স্টেশন বন্ধ করতে বলবেন। বিচারপতি সহজেই বলে দিতে পারেন, রামনবমীর মিছিলের অনুমতি দেওয়া হল। তবে, এক হাজারের বেশি মানুষ থাকবে না, অস্ত্রশস্ত্র বহন করা যাবে না, এ কথাও বলে দেন। কারণ, জমায়েতের নিয়ন্ত্রণ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, সংখ্যা হাজার ছাড়াল কিনা, অস্ত্র বহন করা হল কিনা, উত্তেজনা ছড়াল কিনা, এগুলো তো দেখার দায়িত্ব বিচারপতির নয়। এই দায়িত্বহীন ক্ষমতা কি এক বিপজ্জনক দিক নয়? 

আমাদের নজর থাকবে পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে। আগ্রহ থাকবে ৭ এপ্রিল নেতাজি ইন্ডোরে চাকরিহারা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের জমায়েত ও সিদ্ধান্তে। নজর থাকবে সরকারের পদক্ষেপেও। আইনি কোনও সুযোগ আর আছে কিনা সে কৌতূহলও থাকবে। একজন সহ-নাগরিক হিসেবে এতগুলি পরিবারের অনিশ্চয়তা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি আশঙ্কিত। স্পষ্টতই এ রাজ্যের বিরোধী রাজনৈতিক দল সমূহ আহ্লাদিত; তারা ভাবছে কিছু মানুষের চাকরি গেলে যেটুকু ক্ষোভ অসন্তোষ হত, সমগ্র প্যানেল বাতিল হওয়ার ফলে অসন্তোষের আকার অনেক বাড়বে। কম্বলটা যত ভিজবে ততই ভারী হবে। সমাজ মাধ্যমে অসংখ্য পোস্ট দেখতে পাচ্ছি। আন্তরিকভাবে এতগুলি পরিবারের ভয়ঙ্কর দুরবস্থার কথা কেউ বলছেন না। খুব স্বাভাবিক, সরকার কোনও ভুল করলে, তদুপরি সেই ভুলের কারণে বিচার ব্যবস্থা বিরূপ হলে, বিরোধীরা ঝড় তুলবেন। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, ক্ষমতালাভের তড়িঘড়ি বাসনায় অসহায় মানুষের লাশের ওপর দিয়ে সে ফায়দা তুলতে হবে, অথবা, গুজবের মধুভাণ্ড নিয়ে মাঠে নামতে হবে। প্রতিটি ঝড়েই 'অতি ভোরে উঠে তাড়াতাড়ি ছুটি আম কুড়াবার ধুম'। কিন্তু শেষাবধি ঝুলি ফাঁকাই থেকে যায়, বেলা ফন্ট'এর সেই গানই সত্য হয়, 'There is a hole in the bucket.'। 

চাকরিহারা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা কী ভাবছেন বা কোন পথে নিজেদের জীবন-জীবিকার লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন, সহমর্মিতার দৃষ্টি নিয়ে সেদিক পানেই অধীর আগ্রহে তাকিয়ে রইলাম। 


Thursday, 3 April 2025

'পরিপূরক শুল্কের' গুঁতোয়

ভারত কি শুধু দেখবে?

অনিন্দ্য ভট্টাচার্য


 

মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প ২ এপ্রিল ২০২৫’কে ‘মুক্তির দিন’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন। অস্যার্থ, ওইদিন তিনি মার্কিন জনগণকে বিশ্বের অর্থনৈতিক জাঁতাকল থেকে মুক্তি দেবেন। ‘আমেরিকাকে আবার সেরা বানানো’র অভিলাষে তিনি ওইদিন নিজ দেশে বিদেশি আমদানির ওপর এমন শুল্ক চাপাবেন যে বাকী দেশ সব হাহাকার রবে পিষ্ট হবে এবং ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ বলে তাঁর চরণতলে আছাড়িবিছাড়ি খাবে! বিশেষ করে চীন, কানাডা, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও ভারতকে (প্রিয় বন্ধুবর মোদীজীর কথা ভুলে মেরে) এমন শিক্ষা দেবেন যে এরপর আর আমেরিকাকে তার চলার পথে কেউ রুখতে পারবে না।

ক্ষমতায় আসার পর ট্রাম্প যে ভাবে গ্রিনল্যান্ড ও কানাডা’কে নিজের দেশে অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের তামাম আশঙ্কাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে প্যারিস চুক্তি থেকে সটান পিঠটান দিয়েছিলেন, ধরে ধরে ‘বেআইনি’ অভিবাসীদের প্লেনে তুলে তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাচ্ছিলেন (ভারতীয়দের হাতে-পায়ে শেকল পরিয়ে), সরকারি কর্মচারীদের লাটে ছাঁটাই করছিলেন, এমনকী বিচারকদের ‘মার্কিনী স্বার্থ’ বিষয়ে সবক শেখাচ্ছিলেন, এলন মাস্কের বাচ্চা ছেলে নাক খুঁটে তাঁর টেবিলে হাত রাখলে সেই ১৫০ বছরের পুরনো রাষ্ট্রপতির টেবিলটাকে পর্যন্ত বিসর্জন দিয়েছিলেন, সর্বত্র প্রত্যাখ্যাত এলন মাস্ক’এর টেসলা গাড়ি এক পিস কিনে বন্ধুকৃত্য অবধি করেছিলেন, তাতে বোঝাই যাচ্ছিল যে এমন এক ‘ম্যানিয়াক’ লোককে আমেরিকার মানুষজন এমনি এমনি রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত করেননি (অনেকটা ঠিক হিটলারের নির্বাচনের মতো)। আমেরিকার অর্থনীতি যে ধ্বস্ত হয়ে পড়েছে, ভেতরটা একেবারে ছিবড়ে, দেশে হু হু করে বাড়ছে দারিদ্র্য ও বেকারত্ব, বিশ্ব জুড়ে জোগান-শৃঙ্খলে আমেরিকান ব্র্যান্ড বলে আর কিছুই নাই, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নবরঙে আমেরিকা ক্রমশই পিছিয়ে পড়ছে, তখন খুব স্বাভাবিক যে অতি-জাতীয়তার শীৎকারে আকণ্ঠ নিমজ্জিত হওয়া ছাড়া তাদের আর তেমন কিছু করারও ছিল না। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর এই একই ঘটনা জার্মানিতেও ঘটেছিল ‘ভার্সাই চুক্তি’ পরবর্তী হিটলারের অভ্যুদয়ে। বাকীটা ইতিহাস। তবে, ইতিহাসের নাকি পুনরাবৃত্তি হয় না বলে বলা হয়ে থাকে, তথাপি যদি হয়, তাহলে তা কেমনতর সে বিষয়েও মহাজনেদের মতামত সুবিদিত।

তবুও, ২ এপ্রিল ট্রাম্প সাহেব সত্যি সত্যিই ‘reciprocal tariff’ বা ‘পরিপূরক শুল্ক’ সম্পর্কে বেশ এক বড় ঘোষণা দিলেন! হোয়াইট হাউজের রোজ গার্ডেনে সাংবাদিকদের সামনে হাতে একটি বোর্ড তুলে ধরে সেখান থেকে পড়ে পড়ে তিনি কয়েকটি দেশের নাম করে তাদের ওপর চাপানো শুল্কের হার বেশ সদর্পে ঘোষণা করলেন। যেমন, প্রথমেই বললেন চীনের নাম এবং তাদের ওপর শুল্ক চাপানোর হার ৩৪ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি শুল্ক চাপানো হল কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডের ওপর যথাক্রমে ৪৯, ৪৬ ও ৩৬ শতাংশ হারে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও ইংল্যান্ড’ও বাদ যায়নি, তাদের ওপর চাপানো হার যথাক্রমে ২০ ও ১০ শতাংশ। আর ভারত? ভারতের ওপর মোদীজীর অতি প্রিয় বন্ধু ট্রাম্পের শুল্ক হার চাপলো ২৬ শতাংশ। এবং এই প্রতিটি শুল্কই নাকি ‘ডিসকাউন্ট’এ দেওয়া, আসল হার আরও বেশি (উনি সে সব কমিয়ে দিয়েছেন)। ভারতের কথা বলতে গিয়ে তিনি অবলীলায় বললেন, ‘very tough, very tough’। অর্থাৎ, তিনি বোঝালেন যে, তাদের দেশের পণ্য যদি অন্য দেশে উচ্চ শুল্ক হারের কোপে পড়ে দুর্মূল্য হয়, তাহলে তিনিও সে দেশের পণ্যকে উচ্চ শুল্ক হারের গুঁতো দিয়েই সবক শেখাবেন। একদা মুক্ত বাণিজ্য ও বিশ্বায়নের ধ্বজা ওড়ানো দেশ আমেরিকা কি সত্যিই কোনও বিপদে পড়ল যে উলটো পথে হেঁটে এখন দুয়ার আঁটা ছাড়া তার সামনে আর কোনও উপায় নেই?

বলাই বাহুল্য, এই নতুন ‘পরিপূরক শুল্ক’র দাপটে প্রায় প্রতিটি দেশই যারপরনাই ক্ষুব্ধ ও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। এমনকি রাজনৈতিক ভাবে ট্রাম্পের অত্যন্ত কাছের জন, ইতালির চরম দক্ষিণপন্থী প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি পর্যন্ত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ওপর চাপিয়ে দেওয়া শুল্ক হারের কড়া ভাষায় নিন্দা করেছেন। চীনের বিদেশ মন্ত্রক তো তীব্র ভাষায় প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছে যে, মার্কিন দেশের এই শুল্ক নীতি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য রীতিকে লঙ্ঘন করছে এবং চীন নিজেদের অধিকার ও স্বার্থরক্ষায় এর বিরুদ্ধে পালটা ব্যবস্থা নিয়ে শেষ পর্যন্ত এই বাণিজ্য যুদ্ধে লড়ে যাবে। পাশাপাশি, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে জাপান, ইউকে থেকে অস্ট্রেলিয়া— প্রায় প্রত্যেকটি দেশই এই নীতির নিন্দা করেছে। অথচ, একমাত্র ভারতই এখনও পর্যন্ত গলা তুলে তেমন উচ্চবাচ্য কিছু বলেনি। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী আমতা আমতা করে জানিয়েছেন যে বিষয়টি ভেবে দেখার মতো(!)। অবশ্য, এর প্রকোপে ভারতীয় শেয়ার বাজার আজ (৩ এপ্রিল ২০২৫) দিনের শুরুতেই ভালই গোত্তা খেয়েছে এবং দিনের শেষে এসে সেনসেক্স’এর পতন ৩২২ পয়েন্ট। বোঝাই যাচ্ছে, ভারতের ওপর ২৬ শতাংশ শুল্ক হার ভারতীয় শিল্পের এক বড় অংশকে বেশ বিপদে ফেলে দিয়েছে। ভারত এখন ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এলন মাস্ক’এর টেসলা গাড়ির ওপর ১১০ শতাংশের শুল্ক প্রত্যাহার করে তুষ্টিকরণের রাজনীতি করবে, নাকি, অন্যান্য দেশগুলির মতো চোখে চোখ রেখে আমেরিকার রক্ষণশীল অর্থনীতির সমালোচনা করার হিম্মত দেখাবে, তা ‘ডোলান’ ট্রাম্পের বিশ্বস্ত বন্ধু মোদীজীই জানেন।

তবে এ কথা অনস্বীকার্য, ট্রাম্পের নয়া শুল্ক নীতি বিশ্বের অর্থনৈতিক শৃঙ্খলে এক আমূল পরিবর্তন আনবে এবং আমেরিকার পক্ষে তা অশনি সংকেত। আজ কোনও পণ্যের ওপরেই কোনও দেশের একচেটিয়া অধিকার আর মান্যতা পায় না, কারণ, বিশ্বায়নের ফলে যে অর্থনৈতিক জোগান-শৃঙ্খল তৈরি হয়েছে, সেখানে একেকটি দেশে একেকরকম পণ্যাংশ নির্মিত হয়ে আরেক দেশে গিয়ে assembled হয়। ফলে, কোনও পণ্যেরই আজ সে অর্থে নিজ দেশ নেই, কোনও পণ্যকেই বলা যাবে না যে তা অমুক দেশের। নিজে একজন সফল ব্যবসায়ী হয়ে ট্রাম্প কি আজকের অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের এই খবরটুকু রাখেন না? তা বিশ্বাস করা কঠিন। আসলে, বিশ্ব বাজারে আমেরিকা আজ ধীরে ধীরে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। তাঁর নিজ দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ সঙ্গীন। প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে সঙ্গী করে অর্থনৈতিক বিজয় রথে চীন আজ অনেকটাই এগিয়ে গেছে। পাশাপাশি, আজকের বিশ্ব বাজারেও চীন নানান উপায়ে নিজেদের উপস্থিতিকে আরও গ্রহণীয়, লাভজনক ও সর্বজনীন করে তুলেছে। ইতিমধ্যেই ভিয়েতনাম ও চীনে প্রচুর পরিমাণে রফতানিমূলক ম্যানুফ্যাকচারিং ক্ষেত্র গড়ে ওঠায় তারা বিশ্বকে বহুল পরিমাণে সস্তায় পণ্যের জোগান দিতে পারছে, যেখানে আমেরিকার পক্ষে নতুন করে সেই জায়গায় পৌঁছনো আর সম্ভব নয়; কারণ, তাদের দেশের বড় বড় কোম্পানিগুলিও উক্ত দেশগুলিতে (এমনকি তাইওয়ান’এও) ম্যানুফ্যাকচারিং হাবকে রফতানি করে নিজ দেশের ম্যানুফ্যাকচারিং অর্থনীতির সক্ষমতাকে ইতিমধ্যেই খুইয়ে বসে আছে। অথচ ট্রাম্পের মনে হয়েছে, এখন পথ বিদেশের পণ্যের ওপর চড়া শুল্ক চাপিয়ে তাদের দুর্মূল্য করে তুলে নিজের দেশের উৎপন্ন পণ্যগুলিকে আপেক্ষিক সস্তা দরে ব্যবহারের মাধ্যমে নতুন করে ম্যানুফ্যাকচারিং হাব গড়ে তোলা ও আমেরিকাবাসীকে কাজ দেওয়া। কিন্তু পুঁজিবাদের আবহে এর ফলে যে মুদ্রাস্ফীতি ও অকর্মণ্যতা চেপে বসবে সে কথা তিনি বিস্মৃত হয়েছেন। উগ্র জাতীয়তাবাদীরা এইভাবেই ভেবে থাকেন এবং শুরুতে জনতার বেশ বাহবাও পান, তারপর আমরা জানি, সে সব কল্পকথা কীভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে।

সবচেয়ে বড় কথা, ভারতের মোট রফতানির ১৮ শতাংশ আমেরিকার সঙ্গে। ২৬ শতাংশ শুল্ক চেপে বসায় এই রফতানি নিশ্চিত ভাবে ধাক্কা খাবে। বিশেষ করে, আইটি, ওষুধ, পোশাক, গাড়ি ও অলঙ্কার— এইসব শিল্প  বেশ কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হবে বলে অনুমান। তবে বিশ্বায়নের আবহে আমেরিকা যদি সত্যি সত্যিই মুক্ত বাণিজ্য ও প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতিকে অস্বীকার করে, তার বিপ্রতীপে আজ অনেকগুলি দেশ এক জায়গায় এসে এমন ভাবে দাঁড়িয়ে পড়ছে যে নতুন কোনও অর্থনৈতিক অক্ষরেখা গড়ে ওঠাটা অবান্তর কিছু নয় আর। হয়তো দেখা যাবে, ডলারের সে জোরও আর আগামী দিনে থাকবে না। কিন্তু প্রশ্ন হল, ভারত এই জায়মান গতিশীলতাকে কতটা বুঝতে ও ধারণ করতে সক্ষম। কারণ, আমাদের বর্তমান শাসকও তো সমান ভাবেই উগ্র ধর্মীয় জাতীয়তাবাদী, যাদের বরং ট্রাম্পের অমূলক চিন্তার সঙ্গে ভালো মেলে।

           

Wednesday, 2 April 2025

নীল অর্থনীতি

সমুদ্র উপকূলে রাজ্যেরও অধিকার থাকা উচিত

দীপঙ্কর দে



আগামী দিনে যে বিষয়ে ভারতের সমুদ্র উপকূলবর্তী রাজ্যগুলির সঙ্গে ভারত সরকারের বিরোধ অবশ্যম্ভাবী, সেটি হল, 'কন্টিনেন্টাল শেলফ' বা মহীসোপানকে কেন্দ্র করে যে বিশাল অর্থনীতি তৈরি হচ্ছে তার ভাগ-বাঁটোয়ারা কী ভাবে হবে তা নিয়ে! তবে আগে বোঝা উচিত, 'কন্টিনেন্টাল শেলফ' বা মহীসোপান কাকে বলে। 'কন্টিনেন্টাল শেলফ' বা মহীসোপান হচ্ছে সমুদ্র তীরবর্তী দেশগুলোর সমুদ্রের দিকে জলের নীচে যে ভূখণ্ড ধীরে ধীরে ঢালু হয়ে নেমে যায়; ভূগোলের ভাষায় 'মহীসোপান', যাকে উপকূলীয় ওই দেশের বর্ধিত অংশ বলে ধরা হয়ে থাকে।

এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক আইন কি বলে? ১৯৫৮ সালের কনভেনশন অনুযায়ী, সমুদ্র তীরবর্তী দেশগুলোর স্থলভাগের বেসলাইন থেকে লম্বালম্বিভাবে সমুদ্রের ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত এলাকার মালিকানা সম্পূর্ণ ওই দেশের। একে বলা হয় Exclusive Economic Zone (EEZ) বা একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল, যেখানে সমুদ্রের জল ও তলদেশের ওপর ওই দেশের একচ্ছত্র অধিকার থাকে। সেখানকার সমুদ্রে অন্য কোনও দেশ মাছ ধরতে পারে না। এরপর থেকে দেড়শো নটিক্যাল মাইল সীমা পর্যন্ত সমুদ্র তলদেশের খনিজ সম্পদের মালিক হবে ওই দেশ, তবে সমুদ্রের জলে থাকা মাছ ধরতে পারে অন্য দেশও। এই পুরো সাড়ে তিনশো নটিক্যাল মাইলকে ওই দেশের 'মহীসোপান' বলা হয়।

এই যে মহীসোপানকে কেন্দ্র করে ক্রম-নির্মিত বিশাল অর্থনীতি, তার সঙ্গে কীভাবে আমাদের দেশে কেন্দ্র-রাজ্য বিরোধ তৈরি হচ্ছে তা উদাহরণ দিয়ে বললে বুঝতে সহজ হবে! যেমন, এখন যেহেতু উপকূল সংক্রান্ত যাবতীয় সিদ্ধান্তের একচেটিয়া অধিকারী ভারত সরকার তাই বোম্বে হাই থেকে যে তেল ও গ্যাস উৎপাদন হয় তা থেকে মহারাষ্ট্র সরকার রয়্যালটি বাবদ এক কানাকড়িও পায় না! সবটাই যায় কেন্দ্রের পকেটে; যেমন, ২০১২-১৩ সালে ONGC সমুদ্রতল থেকে তোলা তেলের রয়্যালটি বাবদ ৩৯৪০ কোটি টাকা ভারত সরকারকে দিয়েছে। অথচ, অসম বা ত্রিপুরার স্থলভূমি থেকে উৎপাদিত তেল ও গ্যাসের রয়্যালটি কিন্তু পায় সংশ্লিষ্ট রাজ্য। কয়লার ক্ষেত্রেও রাজ্যগুলি রয়্যালটি পায়। তাহলে একইভাবে মহীসোপানে প্রাপ্ত সম্পদের ওপরেও রাজ্য সরকারের রয়্যালটি পাওয়ার ন্যায্যতা থাকবে না কেন? স্বভাবতই, বাংলার সমুদ্র উপকূলে যদি তেল ও গ্যাসের সন্ধান মেলে সেই সম্পদের উপর বাংলার কোনও অধিকার কি থাকা উচিত নয়? 

ভারতের নয়টি উপকূল রাজ্যগুলির সমুদ্রতটের দৈর্ঘ্য ৫৪২২.৬ কিমি। মনে রাখতে হবে, নয়টি উপকূলীয় রাজ্য ছাড়াও ভারতের বিভিন্ন দ্বীপপুঞ্জকে ঘিরেও যে মহীসোপান বিদ্যমান, সেগুলির মালিকানাও ভারত রাষ্ট্রের! এই সংখ্যাকে ৩৫০ নটিক্যাল মাইল দিয়ে গুন করলে যে বর্গ ক্ষেত্রটির আয়তন পাওয়া যাবে সেটি আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে ভারত রাষ্ট্রের অংশ। এই বিশাল মহীসোপান অঞ্চলের সম্পদের মালিক ভারত রাষ্ট্র। মোট মহীসোপান অঞ্চলের আয়তন ভারতের মোট স্থলভূমির (৩২,৮৭,২৬৩ বর্গ কিমি) প্রায় সমান।

কিন্তু অদ্ভূতুড়ে বাস্তবতা হচ্ছে, এই বিশাল নীল অর্থব্যবস্থায় (Blue economy) বাংলার মতো উপকূলবর্তী রাজ্যগুলির কোনও ভাগ নেই। ভারতের নয়টি রাজ্যের সবচেয়ে বড় উপকূল রয়েছে গুজরাতে (দৈর্ঘ্য ১২১৪.৭ কিমি)। সবচেয়ে ছোট উপকূল গোয়ার (দৈর্ঘ্য ১০১ কিমি)। আর পশ্চিমবঙ্গের উপকূলের দৈর্ঘ্য ১৫৭.৫ কিমি। তাহলে বাংলার সামুদ্রিক অঞ্চলের (মহীসোপান) আয়তন কত? মনে রাখতে হবে, উপকূল থেকে মহীসোপানের ব্যাপ্তি ৩৫০ নটিক্যাল মাইল। এক নটিক্যাল মাইল সমান ১.৮৫২ কিমি। তাই অঙ্কের হিসেবে বাংলার সমুদ্র অঞ্চলের আয়তন হচ্ছে: ১৫৭.৬ x ৩৫০ x ১.৮৫২ বর্গ কিমি, মানে, ১০২০৯১.৫ বর্গ কিমি। আর বাংলার স্থলভাগের পরিমাণ মাত্র ৮৮,৭৫২ বর্গ কিমি। 

ভারতের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৯৭ বলছে, (১) ভারতের আঞ্চলিক জলসীমা, মহাদেশীয় তাক অথবা একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে সমুদ্রের নীচে অবস্থিত সমস্ত জমি, খনিজ ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র কেন্দ্রের অধীনে থাকবে এবং তাদের উদ্দেশ্যে অধিকৃত হবে; (২) ভারতের একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলের অন্যান্য সমস্ত সম্পদও কেন্দ্রের উপর ন্যস্ত থাকবে এবং তাদের উদ্দেশ্যে ধারণ করা হবে। তাই বোঝাই যাচ্ছে, মহীসোপানের সব সম্পদের একচেটিয়া মালিক কেন্দ্রের সরকার। উপকূলবর্তী রাজ্যের কোনও অধিকার নেই। বলাই বাহুল্য, সংবিধান রচিত হয়েছিল ১৯৫০ সালে। গত ৭৫ বছরে সমুদ্র বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে সমুদ্রাঞ্চলের অর্থনৈতিক গুরুত্ব দিন দিন বেড়েছে। আগেই বলেছি, ব্লু ইকোনমি বা নীল অর্থনীতি নামে তৈরি হয়েছে একটি স্বতন্ত্র অর্থনীতির পরিসর। এই বিশাল সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র থেকে রাজ্যগুলিকে বঞ্চিত করা অনৈতিক। তাই যুক্তরাষ্ট্রীয় মতাদর্শের স্বার্থে সংবিধানের ২৯৭ অনুচ্ছেদ নতুন করে লিখতে হবে। এটা সময়ের দাবি !

আরও একটি কারণে মহীসোপানের সুস্থায়ী উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণে উপকূলবাসী ও রাজ্য সরকারের অংশগ্রহণ খুব জরুরি। সেটি হল, সমুদ্রের গভীর বা তলদেশ থেকে যদি অত্যধিক মাত্রায় খনিজ সম্পদ উত্তোলনের কাজ শুরু হয়, তাহলে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস হয়ে যাবে, যার ভয়াবহ প্রভাব মানবজাতিও এড়াতে পারবে না। এ নিয়ে ইতিমধ্যেই বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করতে শুরু করেছেন। বিশ্ব জুড়ে প্রতিবাদ আন্দোলনও চলছে। ইতিমধ্যে ভারতের আওতাধীন সামুদ্রিক এলাকায়, যেমন, কেরালা, গুজরাত এবং আন্দামান ও নিকোবরের উপকূলীয় অঞ্চল বরাবর দূরবর্তী গভীর জলভাগ থেকে সামুদ্রিক খনিজ উত্তোলনের জন্য খনন কাজ শুরু করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এমনকী, এই মর্মে টেন্ডারও ডাকা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু উপকূলবাসীর কোনও মতামত গ্রহণ করা হয়নি। উপকূলে বসবাসকারী আমজনতা এই খনন কাজ শুরু করার পক্ষপাতী নয়। তাদের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। কিন্তু সাংবিধানিক অধিকারের বলে কেন্দ্রীয় সরকার তাদের সিদ্ধান্তে অটল। এখানেই বিপদ লুকিয়ে।

তাই, নীল অর্থনীতিতে উপকূলবর্তী রাজ্যগুলিরও সমান হক আছে, সে দাবি এবার সজোরে ওঠা উচিত।